কবিতায় রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ নামটার সঙ্গে ‘ রবি ‘ শব্দটা জড়িত। ‘ রবি ‘ অর্থে সূর্য। ভারতবর্ষের এক নতুন সূর্যের নাম রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবি নামে খ্যাত আমাদের চিরকালীন রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের দরবারে সাহিত্যের এক নতুন দ্বার কে উন্মোচন করেছিলেন। তাঁর কবিতা ধর্মী উপন্যাস গুলি আমাদের দর্শনের মননকে সমৃদ্ধ করেছে।তাঁর প্রত্যেকটি কবিতায় পুঞ্জীভূত হয়েছে রস। শুধুমাত্র যে কবিতায় রসজ্ঞ ব্যক্তিরাই তাঁর অধিকারী হবেন সেটা কখনই নয়। তবে সর্বজন বোধ্য না হলেও একথা বলা যেতে পারে যে প্রত্যেক মানুষের সূক্ষ্ম মননে রয়েছে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। অপূর্ণতা কে তিনি পূর্ণতা দান করেছেন।
“মোর চিত্ত
সচকিবে আলোকে-আলোকে।
বিরহ, বিচিত্র খেলা
সারা বেলা
পাতিবে আমার বক্ষে চোখে। ”
তিনি চিরকাল ই সত্যান্বেষী মানুষ। যাঁর পথ ধরেই চিরকালীন সত্যের সন্ধানে ছুটে চলি আমরা। অচেনা কে তিনি সর্বদাই মুষ্ঠিবদ্ধ করতে চেয়েছেন।
তাই তিনি বলছেন –
“ওরে, অচেনা, মোরা মুষ্ঠি ছাড়াও কী ক’রে
যতক্ষণ চিনি নাই তোরে? ”
সত্যের সন্ধানী রবীন্দ্রনাথ সত্যের দ্বার উন্মোচন করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। নিজেকে তিনি অন্বেষণ করেছেন।নিজের অন্বেষণে ব্রতী থাকায় সত্যকে অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি জেনেছেন সত্য বড়ই কঠিন।
তাই তিনি বলছেন –
” সত্য যে কঠিন
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম
সে কখনো করেনা বঞ্চনা। ”
রবীন্দ্রনাথের প্রত্যেকটি কবিতায় জীবন – মৃত্যুর প্রসঙ্গ যেমন প্রচ্ছন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার সাথে রয়েছে ইহলোক ও পরলোকের প্রাসঙ্গিকতা তাঁর প্রত্যেক ঋতুকে নিয়ে লেখা কবিতা, গান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও দ্রুতময় ও প্রাণস্ফূ্র্ত করে তুলে জীবনবোধ কে জাগ্রত করেছে আমাদের চেতনায়, চিন্তায়, জাগরণে, অন্তসত্ত্বা য় সেই রবীন্দ্রনাথের দর্শন। রবীন্দ্রানুসারী ছাড়াও বাকিরা তাঁকে অসম্পূর্ণ। কিছু না হোক রবীন্দ্রনাথের কবিতার হাতেখড়ি বিশ্বের প্রত্যেক টা ঘরে ঘরে। সত্যান্বেষী রবীন্দ্রনাথ সত্য অনুসন্ধানে সফল হয়েছিলেন। যে প্রেমের তিনি সন্ধানী ছিলেন তাঁর প্রত্যেকটা কবিতা ও গানে তা ছিল ঈশ্বর প্রেম। যেটায় তিনি সফলতা অর্জন করেছিলেন। যে সত্যের সন্ধানী টুকু হয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথ কে কিছুটা হলেও ছুঁতে পেরেছি আমাদের মননে তাঁর কবিতার মাধ্যমে। তিনি প্রকৃত সুন্দরের সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। যা ছিল ঈশ্বরের সাধনা। তাঁর ‘আমি’ কবিতায় তিনি বলছেন –
“গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ” সুন্দর ” ।
সুন্দর হলে সে ।
তুমি বলতে, এ যে তত্ত্ব কথা।
এ কবির বাণীর নয়।
আমি বলব ,এ সত্য,
তাই এ কাব্য। ”
কবির মতে , যা সত্য তাই, সুন্দর এবং সেটাই হল কাব্য।
তিনি তাঁর দার্শনিকতায় আমাদের বুঝিয়েছেন যে প্রত্যহ আমাদের নতুন সত্তার আবির্ভাব ঘটে। নতুন সূর্য এক নতুন সকাল এনে দেয়।
তাঁর ‘ প্রথম দিনের সূর্য ‘কবিতাটি তে তিনি বলছেন –
” প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নতুন আবির্ভাব –
কে তুমি
মেলেনি উত্তর।
বৎসর বৎসর চলে গেল,
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় –
কে তুমি।
পেল না উত্তর। ”
অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব সত্তাকে প্রশ্ন করলে এই উত্তর মেলে না যে ‘ আমি ‘ কে।
এক মহা আকস্মিকতায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। যেখানে সমস্ত বাধা বন্ধন ছিন্ন করা যায়। তাই তিনি বলছেন-
” হে অচেনা,
দিন যায়, সন্ধ্যায়, সময় রবে না,
মহা আকস্মিক
বাধা বন্ধ ছিন্ন করি দিক,
তোমারে চেনার অগ্নি দীপ্ত শিখা উঠুক অঞ্জলি
দিব তাহে জীবন অঞ্জলি। ”
হতাশায় তিনি কোনোদিনই ক্লান্ত হননি। তিনি বারংবার জেগে ওঠার আশ্বাস দিয়েছেন তার কবিতায়। তাঁর দার্শনিক চেতনা আমাদের সূদুর দিগন্তে নিজেদের উন্মুক্ত করতে সর্বদাই পরিপন্থী। তাই তিনি বলছেন –
“আবার জাগিনু আমি
রাত্রি হল ক্ষয়।
পাপড়ি মেলিল বিশ্ব
এই তো বিস্ময়।
অন্তহীন। ”
তিনি হয়ত ‘ আমি ‘ র সন্ধান পেয়েছিলেন। তাই বিশ্ব মাঝারে তিনি ‘আমি’ – কে তাঁর ক্যানভাসে এক নতুন চিত্র দান করেছিলেন।
” আমার মন হয়েছে পুলকিত
বিশ্ব আমি -র রচনায় আসরে
হাতে নিয়ে তুলি, পাত্রে নিয়ে রঙ। ”
বিশ্বকবির কবিতা, তাঁর দার্শনিক চেতনা সারাজীবন আমাদের জীবনের পাথেয়।
নাম -সাহানা হাজরা।
ঠিকানা : ১৬,ঈশ্বর দত্ত লেন। হাওড়া – ৭১১১০১।
ফোন নং – ৯৮০৪৭৫৩২৭০।
ইমেইল আইডি : [email protected]
অন্যান্য
শতরূপে সত্যজিৎ
আদ্যাশক্তি জগজ্জননী দেবী দুর্গা
ক্রিড়াপ্রেমী সত্যজিৎ