সে কে ছিল ভৌতিক গল্প – সৌমিক পাহাড়ী
পল্লবগঞ্জ গ্রামটা ছোট হলেও বেশ ভালো। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, রাস্তার দুইপাশে বিস্তির্ণ ধানক্ষেত এবং সে সবের মাঝেই গড়ে উঠেছে কিছু ছোট ছোট বাসভবন।
বসন্তের আবহাওয়া গ্রামের পরিবেশটিকে আরো মনোরম করে তুলেছে। মানুষজনের হৃদয়ের অলিন্দে জন্ম নিয়েছে খুশির আমেজ।
সেই সঙ্গে ওখানকার অমৃত ক্লাবের সান্ধ্যকালীন আড্ডাও হয়ে উঠেছে জমজমাট। ক্লাবে জমায়েত হয়েছে আজ সমস্ত সদস্যরা একমাত্র সৌরভ ছাড়া। গত মাসে ওদের ক্লাস টুয়েলভ এর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। হাতে সময় ও অঢেল তাই অমৃত ক্লাবে আছ যেন বসেছে চাঁদের হাট। উপস্থিত হয়েছে বাঞ্ছা, পটলা, অমল, সন্দীপ আরো অনেক সদস্যরা। সৌরভ গেছে তার পিসির বাড়ি।
পল্লবগঞ্জের তরুণদের ক্লাব বলতে এই একটাই। এই কম বয়সেও গ্রামের মানুষদের সেবা করার ব্রত নিয়েছে এই ক্লাবের সদস্যরা। সারাবছর ধরে নানা সামাজিক কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে এরা। রক্তদান শিবির, ত্রাণ বিতরণ,সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নানা ধরণের প্রতিযোগিতা এবং আরও কত কি যে করে এরা, তার ইয়ত্তা নেই।
যদিও বা এসবের মাঝে ওদের নিজেদের ফূর্তি থাকে অব্যাহত।
অমল, ওরফে অমলকান্তি সোম হচ্ছে ক্লাবের হেড।
আজ অনেকদিন পরে আবার ক্লাবঘরটি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
পটলা সবার জন্য দোকান থেকে মশলামুড়ি আনতেই, বাঞ্ছা শুরু করল ওদের আড্ডা।
অমলকে উদ্দেশ্যে করে ও জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা অমল তুই ভূত তত্ত্বে বিশ্বাস করিস?”
অমল প্রতিবাদী সুরে বলল “না, ওই সব ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই, আর
কে বলেছে যে ভূত আছে ওই সব আমাদের মনের ভুল”।
বাঞ্ছা একটু গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো, “তাহলে অনেকজন যে বলে ওরা স্বচক্ষে ভুত দেখেছে, ওদের কথা কি তাহলে ভুল?”
অমল এবার একটু বিরক্তির সুরে বলল
” আঃ, ওরা সত্যি কথা বলছে না মিথ্যা কথা বলছে, সেটা তো বিচার্য বিষয় নয়। আসল কথাটা হল এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান ই হলো ধ্যান জ্ঞান। আগে বিজ্ঞানের যুক্তিযুক্ত প্রমাণ দেখা, তারপর বরং ভাবব। “
” প্যারানরমাল বলে যে একটা বস্তু আছে, সেটা তো মানবি? নাকি সেটাও……”
বাঞ্ছার কথা আর সমাপ্ত হলো না কারণ ক্লাবে ততক্ষণে ক্লাবে এসে উপস্থিত হয়েছে সৌরভ। ওরা সবাই স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে সৌরভের কপালে, পায়ের হাঁটুতে ও হাতে ব্যান্ডেজ বাধা রয়েছে।কাঁধে ঝোলানো রয়েছে ব্যাগ।
ওকে দেখে সব্বাই প্রায় স্তম্ভিত।
অমল বিস্মিত কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করল
“সৌরভ তুই তোর পিসির বাড়ি গেছিলি না? কখন এলি? ও তোর এই অবস্থা হলই বা কিভাবে ?রাস্তায় কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি রে? “
সৌরভ প্রথমে এসে, বোতল থেকে কিছুটা জল পান করল। তারপর মাদুরের ওপর বসে বললো,
“সে এক কান্ড হয়েছে রে। “
পটলা আর ধৈর্য রাখতে না পেরে বলল,
” কি কান্ড বলতো, হেঁয়ালি করিসনা। “
সৌরভ বলল,
“তোরা নিশ্চই জানিস, আমি গতকাল গেছিলাম আমার সিসির বাড়ি, রতনপুর। উনি ছিলেন আমার একজন দুঃসম্পর্কের পিসি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দু একটা চিঠি বাবার কাছে আসত পিসেমশাই এর কাছ থেকে। ওনারাও আগে কালেভদ্রে আসতেন আমার বাড়িতে, তিন বছর আগে বাবার সঙ্গে প্রথম গেছিলাম পিসির বাড়ি। তখন অবশ্য আর পিসেমশাই নেই, অনিলদা অর্থাৎ পিসির ছেলের বয়স তখন ছিল চব্বিশ। ওর সঙ্গে অনেক জায়গা ঘুরে ছিলাম তখন। সেই থেকে অনিলদা আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছিল। গত সপ্তাহে আমাকে অনিল দা ফোন করে ওখানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠায়। তাই আমি গতকাল রওনা দিয়েছিলাম রতনপুরের উদ্দেশ্যে। রতনপুর এখান থেকে যেতে লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। আমি রওনা হয়েছিলাম বিকেল পাঁচটায়। ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম। যাত্রাপথে কেবল একটাই দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিভাবে পৌঁছাব পিসির বাড়ি। কারণ, তিন বছর আগেকার রাস্তাটা প্রায় কিছুই মনে নেই, আর ফোনের চার্জও শেষ, তাই অনিলদার সাথে যোগাযোগ ও করা যাচ্ছিল না। এই সব সাত-পাঁচ যখন ভাবছিলাম তখন আমার সিটের পাশে বসে থাকা এক ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কোথায় যাওয়া হবে?”
আমি একটু ইতস্তত হয়ে তখন বললাম,
“রতনপুর”
লোকটি যেন একটু অবাক হয়ে বললেন,
” রতনপুর!! রতনপুরের কোথায়?”
” অনিল চক্রবর্তীর বাড়ি। উনি সম্পর্কে আমার দাদা হন।”
লোকটি এবার বললেন, “আরে তুমি আগে বলবে তো, আমার বাড়িও তো রতনপুরে আর অনিল আমার ছাত্র ছিল। আমি হলাম রতনপুর হাই স্কুলের প্রাক্তন হেডমাস্টার। আমার নাম অসমঞ্জ রায়”।
কথাটা শুনে আমি ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আমার পরিচয়টা দিলাম। উনি আমার সমস্যার কথাটা শুনে আমাকে একটা প্রস্তাব দিলেন, আমি যেন রাতটা ওনার বাড়িতেই কাটিয়ে যাই।
এমনিতে অপরিচিত মানুষের বাড়িতে আমি থাকতে ভালোবাসি না কিন্তু আমি তখন নিরুপায়। তাই আর ওনার কথায় অমত করলাম না। রতনপুর স্টেশনে যখন নামলাম তখন ঘড়িতে বাজে রাত নটা।
গ্রামের রাস্তাঘাট প্রায় অনেকটাই বদলে গেছে। কিছুই চেনা যাচ্ছিল না।
স্টেশনটা একবার ভালো করে ঘুরে দেখে নিলাম।
শুনলাম অসমঞ্জ বাবুর বাড়িটা নাকি স্টেশনের প্রায় কাছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাঁটা পথ পেরিয়ে ওনার বাড়ি পৌঁছে গেলাম। রাস্তায় যাওয়ার সময় ওনার থেকে জানতে পারি যে ওনার বাড়িতে আছে ওনার পুত্র, পুত্রবধূ, এক ছোট নাতনী ও একটা চাকর, নাম লক্ষণ।
ওনার বাড়ির কাছাকাছি আর কোনো বাড়ি নেই। চারিধারে জঙ্গল। তারই মাঝে একটি দোতলা পাকা বাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে ওনার বাড়ির সবার সঙ্গে পরিচয় ও হয়ে গেল।
রাত্রে আহারের পর,
অসমঞ্জ বাবু আমাকে বললেন,
” শোনো সৌরভ, আগামীকাল সকালে লক্ষণ গিয়ে তোমাকে তোমার পিসির বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসবে। আজ রাতটা বরং এখানে বিশ্রাম করে নাও।”
অসমঞ্জর বাবু নিজেই আমার জন্য দোতলায় একটি রুমের বন্দোবস্ত করে দিলেন।
খাটে আরাম করে শুয়ে পড়তে কখন যে নিদ্রাদেবী আমার ওপর সদয় হলেন তা নিজেই জানিনা।
হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে এলো এক অদ্ভুত দৃশ্য।”
২
ক্লাব ঘরে এক থমথমে পরিবেশ। সবাই যেন একাত্ম মনে সৌরভের বলা ঘটনা গুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে যাচ্ছে।
সৌরভ গল্পটা কিছুটা থামাতে হঠাৎ এক তীব্র উত্তেজনা শুরু হলো ক্লাব ঘরের মধ্যে। সবাই প্রায় সমস্বরে চিৎকার করে উঠল,
” তারপর, কি দেখেছিস? “
সৌরভ আবার বলা শুরু করল,
” দেখলাম, চারিদিকে গভীর অমাবস্যার অন্ধকার।
রাত্রের ঝিঁঝিঁ ও পেঁচার ডাক কানে ভেসে আসছে।
চোখের সামনে একটা আবছা বাড়ি ফুটে উঠেছে, হঠাৎ তারই মাঝে দেখলাম কয়েকজন ডাকাত মুখ চোখ বেঁধে, হাতে মশাল নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে বাড়িটার মধ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির অন্দর থেকে শোনা গেল কিছু মানুষের ভয়ার্ত আর্তনাদ।
হঠাৎ চোখের নিমেষে দেখলাম বাড়িটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুনে। সে এক বিভৎস দৃশ্য। আর যেন তাকাতে পারছিলাম না।
ধড়ফড় করে উঠে বসতে যাচ্ছি এমন সময় শুনতে পেলাম কে যেন বলছে,
” বাবু উঠে পড়ুন, অনেক বেলা হয়ে গেল। পিসিমার বাড়ি যাবেন যে। “
চোখ খুলে দেখলাম বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে লক্ষণ। জানালা দিয়ে সূর্য কিরণ ততক্ষণে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। টেবিল ঘড়িটায় দেখলাম সকাল আটটা বাজে। এতো বেলা কিভাবে হয়ে গেল বোধগম্যই হলনা।
উফফ, কি দুঃস্বপ্ন ছিল সত্যি!!
তারপর আর বসে না থেকে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে, অসমঞ্জ বাবুকে বিদায় জানিয়ে, লক্ষণের সাথে পিসিমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
লক্ষণ আমাকে পিসির বাড়িটা দূর থেকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল। বাড়ির সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করতে অনিলদা বেরিয়ে এল। আমাকে দেখে অনিলদা ও পিসি মা দুজনেই খুব খুশি। সবাইকে প্রণাম করে প্রথমে একটু কিছু পেট পূজা করে নিলাম। তারপর অনিলদার সঙ্গে শুরু করলাম আড্ডা, দুপুরে পিসিমার হাতে তৈরী, মাংস ভাতও খুব তৃপ্তির সঙ্গে খেলাম। প্রথমে ভাবলাম অসমঞ্জ বাবুর কথাটা সবাইকে বলি তারপর ভাবলাম না এখন থাক, বিকেল বেলা বরং অসমঞ্জ বাবুকে এখানে এনে সবাইকে চমকে দিব।
ভাবনা মত বিকেল তিনটার দিকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লাম অসমঞ্জ বাবুকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
স্টেশনের কাছে এসে যখন অসমঞ্জ বাবুর বাড়ির গলির দিকে এগোচ্ছি ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
“ওদিকে যাবেন না,বাবু।”
পেছনে তাকিয়ে দেখি কথাটা বলেছে এক দোকানের মালিক।
আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললাম,
” কেন, কি হয়েছে? “
” ভয়ানক জায়গা বাবু ওটা, যাবেন না।”
” কেন অসামঞ্জুবাবুর বাড়ি তো রয়েছে ওখানে, ভয়টা কিসের? “
অসমঞ্জ বাবুর নাম শুনে যেন দোকানদারটি আকাশ থেকে পড়ল। এমনভাবে মুখভঙ্গি দেখালো যেন অসামঞ্জ বাবুর নাম ও কস্মিনকালেও শোনেনি।
লোকটি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, তবে আমি ওর কথায় আর কান না দিয়ে এগিয়ে গেলাম অসমঞ্জ বাবুর বাড়ির দিকে। দূর থেকে দেখলাম বাড়ির সামনের একটি খাটিয়াতে বসে আছেন স্বয়ং অসমঞ্জ বাবু। ওনার কাছে গিয়ে প্রণাম করতে আমার কাছে ছুটে এল ওনার আদরের ছোট্ট নাতনী অনীলা। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, ভালোভাবে আগেরদিন রাতে। আমার হাত ধরে টেনে সে নিয়ে গেল তাদের বাড়ির তিনতলার বারান্দায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম লক্ষণ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, আর ওর পায়ের কাছে পড়ে আছে একটা লাটাই। অনীলা আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে লক্ষণ এর দিকে এগিয়ে গেল। লক্ষণও ঘুড়িটা অনীলার হাতে দিয়ে আমার দিকে এসে দাড়িয়ে বলল,
“মেয়েটা ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালোবাসে। আপনি বাবু বরং কিছুক্ষণ ওর নজর রাখুন, আমি একবার নীচ থেকে ঘুরে আসছি।”
এই বলে লক্ষণ চলে গেল নীচে।
এদিকে ঘটল তখন এক অপ্রত্যাশিত কান্ড। অনিলা যে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে কখন বারান্দার কিনারায় চলে গেছে তা আমি খেয়ালই করিনি। যখন আমার নজরে এলো তখন বিপদ আসন্ন আর এক পা যদি অনীলা বাড়ায় তাহলেই সর্বনাশ। অনিলার কিন্তু সেদিকে কোনো হুশ নেই। আমি চিৎকার করে ছুটে গেলাম অনীলার দিকে। আর সেই সময়ের মধ্যে ঘটে গেল এক ভয়ানক কান্ড। মেয়েটা চিৎকার করতে করতে নীচে আছাড় খেয়ে পড়ল। আমি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারলাম না। হঠাৎ সেই সময়ে শুনতে পেলাম কারা যেন আমার দিকে চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি যখন পেছন ফিরে তাকালাম তখন আমার চক্ষু চড়কগাছ। কারণ আমার সামনে তখন এসে উপস্থিত হয়েছে অসমঞ্জ বাবু, ওনার পুত্র ও পুত্রবধু আর লক্ষণ। কিন্তু ওরা কেউই স্বাভাবিক নয়, ওদের চোখের বদলে রয়েছে দুটি করে জ্বলন্ত কয়লাপিন্ড আর মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ফোঁটা। ওরা সবাই একজোট হয়ে চিৎকার করে বলছে,
“তুই, আমাদের বাড়ির ছোট সদস্যটাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিস, তুই খুনি।”
আমি তখন নিরুপায় হয়ে কি করব ভাবছি। ওরা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
আমি তখন আর কোনো রাস্তা না পেয়ে পিছাতে লাগলাম। কিন্তু খেয়াল করলাম না যে আমিও একদম বারান্দার কোনায় এসে দাঁড়িয়েছি। আমি তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে বললাম, “না না আমি খুন করিনি।”
কিন্তু ততক্ষণে আমার পা গেছে পিছলে। আর আমি আর্তনাদ করাকালীন ওই তিনতলা থেকে সোজা গিয়ে পড়লাম নীচে।
ভাগ্যিস, নীচে ছিল একটা পুষ্করিণী। গিয়ে পড়লাম
একদম ওর মধ্যিখানে।
সেইমুহুর্তে যেন আমার জ্ঞানবুদ্ধি সব লোপ পেতে বসেছে। কোনোমতে সাঁতরে, পাড়ে উঠে
দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে ছুটতে লাগলাম।
তখনও পেছন থেকে ভেসে আসছিল অসমঞ্জ বাবু ও ওনার বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের চিৎকার
” তুই খুনি.. তোর নিস্তার নেই “
যেন মনে হচ্ছিল ওরাও আমার পেছন পেছন ছুটছে।
এইভাবে অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম স্টেশনে। সেখান থেকে একটা ট্রেন ধরে উঠে বসলাম। স্টেশনেই এসব ব্যান্ডেজ গুলো বেঁধে নিয়েছিলাম তাই আর বেশী যন্ত্রণা করেনি।
এখন বরং থাক সেসব কথা, এবার আমাকে উঠতে হবে, মা হয়তো বাড়িতে চিন্তা করছে। “
এই বলে সৌরভ ওর কথা শেষ করল।
সবাই যেন বাকরুদ্ধ সৌরভের ঘটনা শুনে।
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে অমল সৌরভকে বলল,
“হ্যাঁ তুই যা।”
এবার সৌরভের সঙ্গে অন্যান্য সবাইও একে একে বিদায় নিল। ক্লাবে শুধু থেকে গেল অমল, বাঞ্ছা ও সন্দীপ। ওরা প্রত্যেকদিনই সবার শেষে যায়। ক্লাবঘরে তালা লাগিয়ে বাঞ্ছা, ও সন্দীপ, অমল এর সঙ্গে রওনা দিল। ওদের কারুর মনের অবস্থা তেমন ভালো নেই। ওদের মনে যেমন বাসা বেঁধেছে ভয়, তেমনই রয়েছে সৌরভের ওই ভয়াবহ কান্ডের আতঙ্ক।
ওরা যখন সৌরভের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন ওরা হঠাৎ একটা কান্নার শব্দ পেল যেটা ভেসে আসছে সৌরভের বাড়ির দিক থেকেই। ওরা আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখল সৌরভের কাকু অনিরুদ্ধ বাবু চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ির ভেতর থেকে বের হচ্ছেন। ওরা অনিরুদ্ধ বাবুকে দেখে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে অনিরুদ্ধ কাকু? “
অনিরুদ্ধ কাকু তখন হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল
“নেই, অমল। সব শেষ। তোমাদের বন্ধু সৌরভ আর আমাদের মধ্যে নেই। আজ ওর বডি পাওয়া গেছে রতনপুরের একটা পুরোনো বাড়ির পেছনে। ওখানকার মানুষজন ওই বাড়িটাকে নাকি সবাই অভিশপ্ত বাড়ি বলে মনে করে। অনেক বছর আগে ওই বাড়িতে নাকি একবার ডাকাত এসেছিল এবং বাড়ির সমস্ত সদস্যকে খুন করেছিল। ওই বাড়িটা ছিল রতন পুর হাই স্কুলের প্রাক্তন হেডমাস্টার অসমঞ্জ বাবুর। এও শোনা যায় যে ওই ঘটনার পর থেকে নাকি ওদের আত্মা ওই বাড়ির মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। এর আগেও বহুলোকের প্রাণ নিয়েছে ওই বাড়িটা। সৌরভকে ওই দিকে যেতে দেখে আটকায় কিন্তু ও কোনো কথা না শুনতে,ওই দোকানদারটি ছুটে গিয়ে স্থানীয় লোকেদের খবর দেয়।ওরা যখন বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেখানে উপস্থিত হয় যখন তখন প্রায় সব শেষ।যদিও বা তখনও ওর দেহে প্রাণ ছিল, কিন্তু সন্ধ্যে সাতটার সময় রতনপুর স্থানীয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। সৌরভ যে কি করতে সেখানে গেছিল,তা কেউই জানেনা।
সব শেষ অমল… . .. “
অনিরুদ্ধ বাবুর অশ্রু যেন আর বাঁধ মানতে চাইছে না।
অনিরুদ্ধ বাবুর কথা শুনে অমল, বাঞ্ছা ও সন্দীপের রক্ত জল হয়ে গেল।
এ কিসব বলছে অনিরুদ্ধ কাকু? সন্ধ্যা ৭টা!!!
ঠিক ওই সময়েই তো ওদের ক্লাবে এসেছিলো সৌরভ।
বাস্থা আনিরুদ্ধ বাবুকে জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা, আনিরুদ্ধ কাকু, সৌরভের মৃত্যুর কারণটার ব্যপারে ডাক্তার কি বলেছেন?”
আনিরুদ্ধ বাবু বলল,
“ডাক্তার বলেছেন যে দুই-তিন তলার বাড়ি কিংবা ওইরকম কোন উঁচু জায়গা থেকে নিচে আছাড় খেয়ে পড়েছে বলে এই অবস্থা। গ্রামের লোকেরা বলছে ওই পোড়ো বাড়ির বারান্দা থেকেই পড়েছে ও। “
অমল তার মস্তিষ্ক আর ঠিক রাখতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো,
“সৌরভের যদি এই আবস্থা হয়েছে তাহলে আমাদের ক্লাবে এসে যে গল্প শোনালো – সে কে ছিল?”
সে কে ছিল ভৌতিক গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
রাজবাড়ী রহস্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন