কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » অণুগল্প » অপেক্ষা

অপেক্ষা

অপেক্ষা ছোটগল্প – অরুণিমা ব্যানার্জী


Resignation টা কমকরে দিল শ্রী আজ, খুব আনন্দ আজ ওর ফাইনালি নতুন চাকরির অফার লেটার টা এসে গেছে, এই অফিস এর বস বেশ আপসেট হয়ে ওকে ডেকে পাঠায় নিজের কেবিন এ, শ্রী কে বোঝায় স্যালারী বাড়িয়ে আর প্রমোশন দিয়ে আটকে রাখতে চায়, কিন্তু শ্রী এই পরিবর্তন টা অনেকদিন ধরে ই চেয়েছিল, তাই পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ও এই অফার টা অ্যাকসেপ্ট করে নিয়েছে। খুব খুশি মনে পিঠের ও হাত ব্যাগ টা নিয়ে বাড়ি যাবার জন্য উঠতে ই তুমুল বৃষ্টি নামে। ছাতা টা বার করে বাস স্ট্যান্ড এর দিকে হাটা দেয়। মোড়ে র মাথায় এসে রাস্তা টা পাড় করলে ই বাস স্ট্যান্ড, অর্ধেক রাস্তা পেরোতে ই চোখে পড়ে একটা ট্রাক ,দৌড়ে রাস্তা টা কোনো মতে পেরোতে চায় শ্রী, পা টা মুচকে যায় উল্টে পড়ে যায় রাস্তার ধারে, ট্রাক টা গা ঘেঁষে বেড়িয়ে যায় । হাফ ছেড়ে বাঁচে শ্রী , উঠে দাড়াতে চায়, বাম পা টায় কোনো সাড় পায় না। অসম্ভব একটা ব্যথা অনুভব করে, কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়ায়, অসহ্য ব্যথায় কাতর হয়ে গেলে ও বাড়ি ফিরতে হবে,সময়ে বাড়ি না পৌঁছলে আয়া র দেরি হয়ে যাবে, কষ্ট করে এক পা দু পা হেঁটে বাস স্ট্যান্ড অবধি পৌঁছয়। বাসে উঠে seat এ বসে বাড়িতে জানায়। বাড়ি পৌঁছতে একটু দেরি ই হয়, বৃষ্টি তে কলকাতা কেমন যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়।বাড়ি এসে আয়া কে বিদায় দিয়ে মেয়ের কাজ কম্ম সেরে ভলিনি লাগিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।
ঘুম থেকে উঠে অফিস এ জানায় যেতে পারবে না পায়ে ব্যথা, নোটিশ পিরিয়ড এ ছুটি নেওয়া যায়না বস ও তাকে জানায়, অগত্যা leave without pay হিসেবে মেডিকেল গ্রাউন্ড এ ছুটি নিতে পারে। ভেবেছিল মুচকে গেছে বিকেল অবধি কমে যাবে, যত বেলা বাড়ে, ব্যথা ও বাড়তে থাকে, একটা পেন কিলার খায়, না বিকেল অবধি একটু ও কমে না ব্যথা,অগত্যা ক্রেপ ব্যান্ডেজ জড়িয়ে ডক্টর এর কাছে যেতে ই হয় । ডক্টর এক্সামিন করে জানায় মনে হচ্ছে ACL tear, akta MRI না করলে ঠিক বোঝা যাবে না, দু চারটে ওষুধ দিয়ে রেস্ট নিতে বলে।
সাত দিন পড় MRI report নিয়ে যখন ডক্টর এর কাছে যায়, ডক্টর জানায় তার আশংকা ঠিক ছিল, হাঁটু সঞ্চালক লিগামেন্ট টা ১° ছেঁড়া, পায়ে চাপ পড়ে এমন সব কিছু বারণ, শ্রী জিজ্ঞাসা করে নাচ?ও নাচ টা শ্রী এর ভীষণ প্রিয়,ওটা ছাড়া থাকা ওর জন্য বেশ কষ্টের, প্রায় ১৬/১৭ বছর শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রশিক্ষণ নেওয়া শ্রী এর। ডক্টর জানিয়ে দেয় , না! এই অবস্থায় আর কিছুতে ই নাচ করা যাবে না। কিছুটা মর্মাহত হয় নিরুপায় শ্রী বাড়ি ফিরে আসে।
আরো দিন সাতেক পরে
একটু একটু physio therapy করে পা টা নিয়ে সাধারণ হাঁটা চলা করতে পারে শ্রী এখন, অফিস ও যায়, ও হ্যাঁ এই কটা দিন মেডিক্যাল গ্রাউন্ড এ শ্রী কে স্পেশাল পারমিশন দেওয়া হয় বাড়ি থেকে কাজ করার।
দুই মাস পর
শ্রী এর হাঁটু তে মাঝে মধ্যে এ ব্যথা হয়, একটু আধটু এদিক ওদিক পড়ে গেলে পা টা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, বাম পা টা যেনো অত্যন্ত সন্তর্পণে ফেলতে হয়। আর একজন নামী ডক্টর এর পরামর্শ নেবে বলে ঠিক করে। নাচ টা করতে পারবে না এটা যেনো মেনে ই নিতে পারে না শ্রী ।
স্পোর্ট মেডিসিন এর ডক্টর কে দেখায়, উনি জানান অপারেশন করলে নাচ করা যাবে কিন্তু চোট টা খুব একটা বড় না যে অপারেশন টা এক্ষুনি করতে হবে।
নাচ করা যাবে যদি একটু সতর্কতা আর কিছু strengthning এক্সারসাইজ করা যায়।
শ্রী একটু ভরসা পায় , একটু একটু করে সব কিছু করে নাচ টা আবার শুরু করে..
৫ বছর পর
আজ রবীন্দ্রসদন এ শ্রী এর নাচের অনুষ্ঠান শেষে দিদিমনি জানান এতদিনের কষ্ট সার্থক, সবাই খুব প্রশংসা করেছে। শ্রী এখন নিয়মিত নাচ করে, গত তিনমাস ধরে অফিস, বাড়ি সামলে রোজ অভ্যাস করেছে ও, নিজের গ্রুপ এর সাথে। ক্লান্ত সবাই ১৫ দিনের ছুটি পায়।
১৫ দিন পর
আবার নতুন করে শুরু , নাচের ক্লাস এ পরবর্তী অনুষ্ঠান এর আলোচনা।
প্রাকটিস এর মাঝে খুব জোড়ে চোট পায় শ্রী সেই বাম হাঁটুতে, বসে পড়ে,অতি কষ্টে ক্লাস শেষ করে বাড়ি আসে।
১৫ দিন পর
ব্যথা একটু ও কমেনি, অগত্যা ডক্টর , MRI সব করে জানতে পারে ACL টা পুরো ছিড়ে গেছে, অপারেশন ছাড়া নাচ ট দূরের কথা, সাধারণ হাঁটা চলা ও করা আর সম্ভব নয়।
৫ বছর ধরে পিছিয়ে আসা ঘটনা টা ঘটবে ই এবার।
আবার নতুন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখতে হবে শ্রী কে..আর কোনো ভাবে ই এড়িয়ে যেতে পারবে না।
ভেঙ্গে পড়ে, যে নাচ করবে বলে এতদিন সে জোর করে পা এর চোট টা অবহেলা করে আসে, আজ নাচ ই ওকে এই পরিণতি উপহার দেয় ।
শ্রী এখনও অপেক্ষা করে আবার সে নাচ টা শুরু করবে..কোনোদিন খুব শীঘ্রই..।

অপেক্ষা ছোটগল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!