ভুবন যায় ভুবন আসে প্রেমের গল্প – ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
ভুবন সারাদিন নিঃশব্দে ঘোরে ফেরা করে। বহু দূরে থেকেও দিনের প্রতিটি মুহূর্তে উঁকি দিয়ে যায় শ্যামার মনে। কারণে অকারণে ভিড় করে চোখের পাতায়। গুনগুন করে কানের পাশে। উদাসী হয় শ্যামা। অঝোরে বৃষ্টি নামে দুই চোখে। তখন বৃষ্টি ভেজা দৃষ্টি নিয়ে শ্যামা চেয়ে থাকে ভুবনের দিকে। অভিমানের অর্গল যায় খুলে।
রায়পুর থেকে সুধা ফোন করে মাঝে মধ্যেই। কেমন আছিস শ্যামা? খবর নেয়। দুই বন্ধুর কথার স্রোতে ভেসে আসে ভুবন। জানিস সেইদিন ঘোষ পুকুরের পাড়ে…। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বলে চলে সুধা। এই প্রান্তে তখন শ্যামার মনে ভুবনের উপস্থিতি। বাগ মানে না চোখের জল। শ্যামা থামাতে চায় সুধাকে। কি হবে সুধা এ সব কথা শুনে। চোখের সামনে থেকেও যা হারিয়ে গেছে তাকে খোঁজা অর্থহীন। ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে সুধার কান্না। তুই কেনো কাঁদিস সুধা? জিজ্ঞাসা করে শ্যামা। সুধা বলে তুই পাথর প্রতিমা। এতো কিসের অভিমান তোর! ফোন কর ভুবনকে। না, বলে শ্যামা।
ছোটমামী বলে, তোকে নিষেধ করেছিলাম পোড়ামুখি। আমার কথা আর শুনলি কই! ভালোবাসার জ্বালা এইবার হাড়ে হাড়ে টের পাবি। আপসোস হয় শ্যামার। ছোটমামীর নিষেধ তখন কেনো শোনেনি। ভাবনা আসে ধেয়ে। আর ভুবন আসে। শালের বনে ভুবনের সঙ্গে হারিয়ে যায় শ্যামা। পাশে হেঁটে ভুবনের পায়ে পা ফেলে। অনাবিল আনন্দ ঝেঁপে আসে মনে। ক্ষণস্থায়ী সেই সুখের বুদবুদ। মিলিয়ে যায় বাতাসে।
মেয়ের সর্বক্ষণের নীরবতায় মেজাজ হারায় কমলা। গাল মন্দ করে। কমলার কথার খুঁট ধরে কত কথা শ্যামার মনে এসে ভিড় করে। ভুবনকে দূরে রাখার চেষ্টা করে শ্যামা। পারে আর কই! অভিমানের প্রাচীর এত পলকা! সেই বাধা অতি সহজেই ভেঙে হুড়মুড়িয়ে আসে ভুবন। রোজ। রোজ। প্রতিদিন।
শ্যামা স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। সেই চেয়ে রায়পুর থেকে উপহার পাঠায় ছোটমামা। তখনও শান্তি নেই শ্যামার। ভুবন আসে তখনও। ভুবন ভুবন আর ভুবন। ফুরিয়ে যাওয়া ভালোবাসার হাত থেকে নিস্তার নেই শ্যামার। ভুবন চলে গিয়েও ফিরে ফিরে আসে।
আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত কমলা। হবু বেয়াই আর বেয়ান আসবে শ্যামাকে দেখতে। পাত্র আগেই দেখে গেছে। তার পছন্দের কথা গোপন রাখেনি। শ্যামার বিয়ের ফুল ফুটলো বলে। আজ অতিথি আপ্যায়নের কোনো রকম ত্রুটি যেনো না হয়। সে কথা ভেবে সাত সকালে বাজারে পাঠিয়েছে কার্তিককে। সব কিছু দেখে শুনে নিয়ে আসবে। স্বামীকে বলে কমলা।
শ্যামার মন নেই সে সবে। আজও মেশিনে বসে শালপাতা সেলাই করছিল। পাতার গায়ে পাতা দিয়ে এক সুতোয় গেঁথে রাখছে। মেশিনের ডাইসে ফেলে থালা বানাবে দুলাল।
গতকাল শরীর বেতালে ছিল শ্যামার। হাতের কাজ জমেছে অনেক। খানিক পরেই সেলাই করা পাতা নিতে আসবে দুলাল। একমনে কাজ করছে তাই। রান্নাঘর থেকে কমলা বলে, আজকে আর ওই সব না করে আমার সঙ্গে হাত লাগলে তো উপকার হয়।
সেলাই মেশিনের ঘড় ঘড় শব্দ। একাত্ম শ্যামা। কানে আসেনি কমলার কথা। রান্নাচালা থেকে উঠানে নেমে আসে কমলা। বলে, রাত দিন তার চিন্তাতেই বিভোর তুই। হায় ভগবান। কোন কুক্ষণে যে রায়পুরে রেখেছিলাম মেয়েকে। আমার যে কি সর্বনাশ হলো। হাতের কাজ থমকে দাঁড়ায় শ্যামার। মায়ের কথায় ভেসে যায় শ্যামার মন। ‘ তার ‘ হাত ধরে ভুবন আসে। ছিনিয়ে নিয়ে যায় শ্যামাকে। ‘ সর্বনাশ ‘ এর মুহূর্ত গুলি ভেসে ওঠে দুচোখের পাতায়। রায়পুর, খোলা আকাশ, শালবন, সুধা, ছোটমামী, মামাবাড়ির বাইরের ঘর, শালপাতা বানানোর মেশিন, ছোটমামার নজর চুরি করে উঁকি দিয়ে দেখা আর ভুবন। আরো একটা কথা খুব মনে আসে। মেশিনের গায়ে লুকিয়ে ভুবনের নাম লিখেছিল শ্যামা। সেই দেখে খুব ভয় পেয়েছিল ভুবন। অবশ্য সে নিয়ে ছোটমামা বলেনি কিছু। হয়তো চোখে পড়েনি। তাই। তবে ভুবনের শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখে হেসেছিল শ্যামা। পর পর ভেসে আসে সব কিছু। মনের আনন্দ ঝিলিক দিয়েই হারিয়ে যায়। আকাশের বিদ্যুৎ বিকাশ যেনো। সে সবই তো ছিল একদিন। আজ তো আর নেই। শেষ হবার যন্ত্রণা ছাড়া আর নেই কিছুই।
রোজ দিনের মত আজ সকালেও মনে মনে বলেছিল শ্যামা, না আর নয়। কিছুতেই নয়। ভুলেই যাবো তোমায় ভুবন। নীরবে নিভৃতে রোজ রোজ এ যন্ত্রণা সইতে পারি না আর। অভিমানের প্রাচীরে ঘিরে ফেলে নিজেকে। মন জাঁকিয়ে কাজ করে। সে আর কতক্ষণের জন্য! কমলার কথা টলিয়ে দিয়ে গেলো। মায়ের কথায় উত্তর দেয় না শ্যামা। নিজেকে ব্যস্ত রাখে।
বাজার থেকে ফিরে আসে কার্তিক। বলে, এই নাও ধরো। দীনুকে সঙ্গে নিয়ে রায়পুর যাবো। খুব প্রয়োজন।
— মানে?
—মানে কিছু নেই। আজকেই যেতে হবে। দীনুকে বলে আসি।
— আজ শ্যামা কে দেখতে আসবে, তুমি থাকবে না! মেয়ের দায় কি আমার একার?
কমলার অভিযোগ শোনার সময় নেই কার্তিকের। দীনুকে খবর দিতে বাড়ির বাইরে পা রাখে। উঠানে দাঁড়িয়ে গজ গজ করতে থাকে কমলা। আজ মেয়েকে দেখতে আসবে। আর সকাল বেলায় বাড়ির লোক মুখে কিছু না দিয়ে বাইরে যাবে। অমঙ্গল হবে না? রায়পুর কি এখানে! কাঠের উনুনে দু মুঠ চাল ফুটিয়ে দিতে হবে। উনুনে হাঁড়ি বসিয়েছি। খেয়াল রাখিস। বলে পুকুর ঘাটে যায় কমলা। বাবার রায়পুর যাবার কথা শুনে চিন্তা হয় শ্যামার। আবার কি ঘটল কে জানে!
একা বসে শ্যামা। দুলাল আসে। স্নান করে ফিরে আসে কমলা। দেখে দুলাল কথা বলছে শ্যামার সঙ্গে। ওদিকে ভাতের ফ্যান পড়ে চুলো নিভে গেছে কখন। মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে কমলার। কোন রাজ কাজ করা হচ্ছে শুনি? উনুনের দিকে খেয়াল নেই! কমলার গলায় ভীষণ ঝাঁজ। দুলালের সামনে বিব্রত বোধ করে শ্যামা। নতুন করে কাঠ দেয় চুলায় কমলা। পরিস্থিতির ভার বুঝে চলে যায় দুলাল।
—কি গল্প হচ্ছিলো শুনি?
— গল্প কোথায় দেখলে তুমি!
— আমার সাত কথায় একটারও উত্তর নেই। আর দুলাল এলেই কথার খই ফোটে।
এরপর কথা বাড়ালে সেই চেনা খাতে বইবে কমলার মুখের তোড়। তাই চুপ থাকে শ্যামা। দুলাল তো আর এমনি এমনি আসে না। প্রয়োজনে আসে। বাড়ি বাড়ি শাল পাতা পৌঁছে দেয় দুলাল। সেলাই হলে আবার সংগ্রহ করে নেয়। মেসিনে শালপাতার থালা ডিস বানায় । শ্যামার মতো অনেকেই দুলালের কারবারের সঙ্গে যুক্ত।
শ্যামা বড় হয়েছে রায়পুরে। মামাবাড়িতে। মামাদের কারবার কাছে থেকে দেখেছে শ্যামা। শালপাতা সেলাই থেকে মেশিনের ডাইসে চাপ দিয়ে থালা তৈরি সব কিছুই জানে। রায়পুর থেকে ফিরে এসে রাতদিন থম মেরে বসে থাকতো মেয়ে। পাতা সেলাইয়ের মেশিন কার্তিক কিনে দিয়েছে । কাজের মধ্যে ডুব দিয়ে ভালো থাকবে, সেই ভেবে।
— পই পই করে বলি বাইরের লোকের সঙ্গে বেশি কথা বলিস নে। কখন কোন কথার সঙ্গে কি বলে ফেলবি আর পাড়া ঘরে জানাজানি হবে। বলে কমলা।
কমলার এই এক ভয়। এই বুঝি সবাই জেনে যাবে শ্যামার কাণ্ড। আর মেয়ের বিয়ে ভেস্তে যায়। মায়ের কথা শুনে অবাক হয় শ্যামা। কষ্টও পায়। কি পাপ করেছে শ্যামা? ভুবনকে ভালোবেসে যদি পাপ করেই থাকে তার প্রায়শ্চিত্তও তো শ্যামা নিজেই করছে। নির্মম দহনে দগ্ধ হয়ে চলেছে নীরবে। দিন রাত্রির প্রতিটা মুহূর্ত রায়পুরের কথা ভেবে ছটপট করে শ্যামা। ভুবনকে মনে পড়ে। খুব খুব মনে পড়ে। সারাদিন সেলাই মেশিনের সামনে বসে শুধু ভুবনের কথা ভেবে চলে। আর ছোটোমামীর কথা মনে আসে। আজ বোঝে সত্যি কথা বলত ছোটমামী। শ্যামা, ভালোবাসার আরো এক সুর শোনা যায় ভালোবাসার স্রোত থমকে যাবার পর। মনের টানে ভেসে চলার আনন্দ – সময়ে অধরা থাকে প্রেমের অন্য এক অনুভূতি। অগাধ আনন্দে প্লাবিত মনের অবসর কোথায় সে সব কথা ভাবার। ভালোবাসার নদীটি যখন গতি হারায়, দিশাহীন হয়ে অন্ধ আবর্তে ঘুরপাক খায়, সেই নিস্তরঙ্গ জলাশয়েই প্রেমের অন্য রূপের প্রকাশ। নির্মল উচ্ছাসের দিনগুলি তখন দুর্দিনের মাঝে ভিড় করে মনে। গুনগুন করে পুরানো কথা শুনিয়ে যায়। তখন এক পাহাড়ে বসে বহু বহু দূরের অন্য এক অজানা পাহাড়ের দিকে ঝাপসা চোখে চেয়ে থাকা শুধু। ভাবনা ভাবনা আর ভাবনা। শুধুই ভেবে চলা। কোনটা ঠিক। বেঠিক কোনটা সে হিসাব চায় না মন। শুধু বিভোর থাকে অবশ ভাবনায়। সে যন্ত্রণা ভয়ংকর বড়। শ্যামা, ভালোবাসার অনেক কথা বোঝা যায় ভালোবাসা হারিয়ে যাবার পর। সে যে না ফুরিয়েই ফুরিয়ে গেছে সে কথা মনে করিয়ে দেয় আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে। তার বেদনা বড্ড করুন হয়ে বাজে বুকে।
ঠিক ঠিক ঠিক। একদম ঠিক কথা বলতো ছোটমামী। এখন বোঝে শ্যামা। ভুবনের মনে মন দিয়ে সেদিন এসব কথা ভাবার সময় ছিল না শ্যামার। সেনালি আলোয় উড়ে বেড়াত। প্রজাপতি যেনো। ভুবনের আসা যাওয়ার পথে পথ আগলে দাঁড়িয়ে কি মজাই না পেয়েছে। আবার একটি বেলা ভুবনকে না দেখলে অপার শুন্যতা অনুভব করেছে। পরক্ষণেই সেই মনে আনন্দের জোয়ার এসেছে ভুবনের হাত ধরে হেঁটে। রাতে শাল ফুলের মিষ্টি গন্ধ অন্তরে নিয়ে তারার দিকে চেয়ে থেকেছে শ্যামা। অবাক হয়েছে। তার যে এমন একটা মন ছিলো সে বুঝি অজানাই থেকে যেত ভুবনকে না দেখলে। আজ সেই সব সদ্য অতীত হওয়া কথা ভেবে গুমরে কাঁদে শ্যামা। সেই একই তারার বুকে চোখ পেতে।
— বলি তুই আস্কারা না দিলে দুলাল কথা বলার সাহস পায় কিভাবে ? এখন বুঝি নিজের মেয়ে ঠিক না থাকলে অপরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। কথা গুলো বলে কাজে ব্যস্ত হয় কমলা।
আবার, আবার ভুবন আসে। কমলার ‘ অপরকে ‘ কাঁপিয়ে দেয় শ্যামার বুক। আস্তে আস্তে শালপাতায় ফোর তুলছে শ্যামা। ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়। আরো মন্থর হয় মেশিনের চাকা। ভাবে,শ্যামা প্রশ্রয় দিয়েছিল কি ভুবনকে? সে কি নিজের অজান্তে? হয়তো তাই। হয়তো কেনো। নিশ্চয় তাই। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা এই দুই অনুভূতির মাঝে প্রশ্রয় তো আসেই। অনিবার্য ভাবেই আসে। আজকের শ্যামা বোঝে একথা।
ভুবনকে রোজ দেখতো শ্যামা। ছোটো মামার কাছে আসতো ভুবন। কি যে মায়া ছিলো দুটো চোখে সে একমাত্র শ্যামাই জানে।
বাইরের ঘরে কাজ করতো। একমনে মেশিনের ডাইস বদলে কখনো থালা কখনো শালপাতার ডিস বানাত। প্রথম প্রথম নানান অছিলায় বাইরের ঘরে যেত শ্যামা। দেখত ভুবনকে। দৃষ্টি মেলাত ভুবন। সামান্য হাসি আর পলকের চোখ মেলানো, এতেই যেনো গল্পের পাহাড় পৌঁছে দিত একে ওপরের মনে। সে সবুজ পাহাড় ধীরে ধীরে ছায়া ফেলত শ্যামার সমগ্র ভুবনে। নিবিড় ছায়ার স্নিগ্ধতায় বিভোর হয়ে যেত শ্যামা। আর ছুটে যেত বাইরের ঘরে। ভুবনকে দেখতে চাওয়া কেমন যেনো অভ্যাস হয়ে উঠেছিল। সেই অবাধ্য অভ্যাসের খবর ছিলো ছোটমামীর কাছে। শ্যামা, পুড়ে মরতে হয় রে। ভালোবাসা কি তা ভালোবাসা হারিয়ে গেলে বুঝবি। ভগবান যেনো বিরূপ না হন তোর প্রতি। বলে শ্যামাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদত ছোটমামী। সে কান্নার অর্থ এখন বোঝে শ্যামা।
— তুই কবে ভালোবাসায় ডুব দিল শ্যামা? জানতে চেয়েছিল সুধা। উত্তরে শুধুই হেসে ছিল। এ প্রশ্নের উত্তর তো জানা নেই। কবে প্রেমে পড়লো? তিথি নক্ষত্র দেখে কি প্রেম হয়!
সে কথা নির্দিষ্ট করে কেই বা বলতে পারে? ভুবনের জন্য শ্যামার প্রেম যেনো জন্মান্তরের। শুধু হৃদয়ে ধ্বনিত হয়েছে পরে। ভুবনকে দেখবার পরে। এ বুঝি বহু বহু আলোকবর্ষ দূরের কোনো নক্ষত্র। কোন সে আদি কাল থেকে তার বিচ্ছুরিত আলো প্রবাহমান পৃথিবীর দিকে। কোনো এক ক্ষণে পৃথিবীর বুকে চুম্বন এঁকে জানান দেয় তার উপস্থিতি। শ্যামার মনের প্রেমও তেমনই কোন ভিনদেশী নক্ষত্রের আলো। অনাদি কাল হতেই প্রবাহিত। একদিন হঠাৎ শ্যামার হৃদয়ে দোলা দিয়ে বলে এই তো আমি তোমার মনেই ছিলাম। আর আজ? এই কথার সামনে নিরুত্তর থাকে শ্যামা। কিভাবে যে শেষ হলো সব, ভাবলেই যেনো মরুঝর ওঠে মনে। ছোটমামা যেদিন জানলো ভিতর বাড়িতে এসে ভীষণ মারধর করে শ্যামাকে। তারপর , তারপরের কথা শুনেছে ছোটমামীর মুখে। ভুবনকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। নির্লজ্জ, কখনো পা রাখবি না। আর কোনো ভাবেই শ্যামার সঙ্গে…।
নিজের গ্রামে ফিরে এসেছে শ্যামা। সুধার কাছে শুনেছে ভুবনের কথা। থাক না সুধা। আবার কেনো, ধরে আসা গলায় বলেছে শ্যামা সুধাকে।
এদিকে শ্যামাকে নিয়ে তটস্থ থেকেছে কমলা। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
— ওদের সামনে হাসি মুখে থাকবি। যা যা জিজ্ঞাসা করবে মিষ্টি হেসে জবাব দিবি। বলেছিল কমলা।
পাত্রের বাবা মায়ের সামনে শ্যামা ছিলো শ্যামার মতো। খুব খুশি না হলেও বিরক্ত হয়নি কমলা। মেয়ের বিয়ে এক রকম পাকা এই ভাবনায় আচ্ছন্ন এখন।
ঘরে বসে শ্যামা। চেয়ে আছে পশ্চিম দিকে। অস্তাচলগামী সূর্য। রাঙিয়ে তুলেছে আকাশ। শরতের কর্মহীন পথভোলা মেঘের দল লালচে আলোয় ভিজে ভেসে চলেছে কোন সে অচিন দেশে। শাড়ির আঁচলে চোখ মোছে শ্যামা। ফোনটা বেজে ওঠে। তন্ময়তা কাটে। গতকালও ফোন করেছিলো সুধা। ধরতে পারেনি শ্যামা। ফোনটা ধরে। কেমন আছিস শ্যামা? তুই একবার ফোন কর ভুবনকে। জানিস…। সুধার কথা শুনতে ইচ্ছে যায় না। লাইন কেটে দেয় শ্যামা। ভুবনকে সে ফোন করবে না কিছুতেই। যা শেষ হয়েছে তাকে আবার নতুন করে বাঁচিয়ে তোলা অর্থহীন। থাক। এতদিনে ভুবনের মনে পড়েনি শ্যামাকে! পারতো না একটি বার ফোন করতে। ভুবন ছাড়াই বাঁচতে পারবে শ্যামা।
পশ্চিমের দিগন্তরেখা পাড় হয়েছে দিবাকর। বেলা শেষের আলো রয়েছে তখনও আকাশে। কোন অচেনা ভাবনা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে শ্যামাকে। কার্তিক বাড়ি আসে। স্বামীকে সুসংবাদ দেয় কমলা। ওসব কথা পড়ে হবে। দেখো কি এনেছি। ততক্ষণে দীনু আর একজন ধরাধরি করে নিয়ে আসে থালা তৈরির মেশিনটা। শ্যামাকে ডাকে কার্তিক। বাবার সঙ্গে মেশিনের সামনে দাঁড়ায় শ্যামা। পুরানো হলেও বেশ যত্নেই ছিলো, বলে কার্তিক। ডাইস গুলো দেখে শ্যামা। সব কিছু খুব চেনা লাগে। খুঁটিয়ে দেখে শ্যামা। হঠাৎ করেই নিথর হয়েছে শ্যামার দৃষ্টি। মেশিনের গায়ে একপাশে লেখা রয়েছে ‘ ভুবন ‘!
কারবার বেড়েছে ছোটমামার। নতুন ডাইস আর মেশিন কিনেছে। পুরানোটা নিয়ে কাজ করুক শ্যামা। পড়ে নতুন মেশিন দেবে ভাগ্নীকে। কয়দিন ধরেই ফোন করে বলছিল কার্তিককে। নিয়ে যান জামাইবাবু। আজ সময় পেয়ে নিয়ে এসেছে কার্তিক। এতে ভীষণ বিরক্ত হয়েছে কমলা। মেয়েকে নানান কথা বলে চলে কার্তিক। এইবার নিজের কাজ তুই …। বাবার কথায় মন নেই । ‘ ভুবন ‘ এর মধ্যে হারিয়ে যায় শ্যামা। মেশিনের গায়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকে চুপটি করে। ভাবনায় ভুবন আসে। ঝাপসা হয় শ্যামার দৃষ্টি।
ভুবন যায় ভুবন আসে প্রেমের গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
জ্বর
প্রেম চিরন্তন
ভালোবাসা ডট কম