ডাকাতের গল্প ছোট গল্প – চিত্ত রঞ্জন গিরি
গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতেই খোকনদা তার ভাগ্না বন্টু কে- চল গাড়ি এসে গেছে ।বলেই ব্যাগ হাতে নিয়ে লাইনের দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। মামার কথা মত হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে লাইনের পাশে এসে দাঁড়ায় ।রাত তখন এগারোটা পনেরো ।শঙ্করপুর হাওড়া বাস টি প্রতিদিন রাত্রে এই সময় এই রাস্তা দিয়ে হাওড়া যায়। খোকন দার বাড়িটা লাইনের গায়। 1 কিমি দূর থেকে বাসের হর্ন শোনা যায়। বাসের সামনে হাত তুলতেই দাঁড়িয়ে যায় ।বন্টু কে নিয়ে খোকন দা বাসে উঠে। গেটের সামনাসামনি 3 সিটের আসনে বসে ।জানলার সাইডের দিকটায় খোকনদা বসে ।আর তার পাশেই বসে বন্টু ।পরের সিটটা ফাঁকা ।ব্যাগগুলোকে যে যার পায়ের কাছে রাখে । বন্টু কলকাতা তে পড়াশোনা করে ।আর খোকনদা ওইখানে টিউশন পড়ায় ।সাইন্সের স্টুডেন্ট। খোকনদা টিউশন পড়িয়ে মোটামুটি ভালো টাকা কামায়। বাইরের নম্রতার সাথে ভিতরে বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা প্রখর ।সেই বুদ্ধির দ্বারা অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করে।
শীতের রাত ।মধ্যে মধ্যে কুয়াশায় রাস্তা ঢাকা। তবুও দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে। বাসের জানালা গুলো সব বন্ধ। গাড়ির মধ্যে মৃদু সবুজ আলো জ্বলছে ।তার সাথে চলছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হারানো দিনের গান ।সেই গান বাসে কেউ শুনছে কিনা সন্দেহ ।সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন। হঠাৎ প্রবল এক শব্দ ও গাড়ির ঝাকুনি ।অন্য সকলের মত ঘুম ভেঙ্গে যায় খোকন দার ।সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতটা দিয়ে জানলার কাঁচ খুলে বাইরের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।
মনের ভিতর প্রথমেই দুশ্চিন্তা।
যদি বাস ব্রেক ফেল করে ।নদীতে বা অন্য কোন জলাশয়ে পড়ে যায় ।তাহলে জানালার ভিতর দিয়ে তার ভাগ্নাকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে ।তাতে
হয়তো প্রাণে বাঁচা যাবে। কিন্তু জানালা একটু খুলতেই খোকনদা দেখতে পায় কয়েকজন সান্ডা মার্কা লোক হাতে রিভলভার, লোহার ডান্ডা ,ভোজালি নিয়ে দাঁড়িয়ে। বাস কে আটকাচ্ছে। খোকনদা র বুঝতে অসুবিধা হলো না- যে এরা ডাকাত! সঙ্গে সঙ্গে জানালার কাঁচ টেনে পাশে ভাগ্নাকে ফিসফিসিয়ে বলে। বন্টু ডাকাত আক্রমণ করছে ।ভয় পাবার কিছু নেই। বলবি আমরা স্টুডেন্ট ।কলকাতায় হোস্টেলে থাকি ।আমাদের কাছে টাকা পয়সা নেই। এই কথা বলার ফাঁকে খোকনদা হাত ঘড়ি টা বার করে ।আর পকেট থেকে 25 হাজার টাকা বার করে ।ভাবে টাকা ঘড়ি পায়ের বুট এর মধ্যে রেখে দেবে। খোকনদা রাখতে গিয়েও রাখল না। পুরনো পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ডাকাতদের চেনা ।ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।তারপর তার লক্ষ্য যায় জানলার দেওয়াল ও বসার সিট এর স্পাঞ্জের সংযোগস্থল। হাত দিয়ে জোর করে স্পঞ্জ কে টেনে তার মধ্যে টাকা ও ঘড়ি ঢুকানোর সময় ভাবে। সব টাকা যদি রেখে দিই। তাহলে ভুল হবে ।পকেট এ 50 টাকা আর 10 টাকা নোট রেখে বাকি টাকাটা ওইখানে রেখে দেয়।
ডাকাতের সংখ্যা ছিল কুড়ি পঁচিশ !রাস্তার ওপর ধারালো লোহার ফলা বসিয়ে গাড়ির চাকা বাস্ট করে দেয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রকাণ্ড আওয়াজের বোমা ফাটায় ।যা বাসের যাত্রী ও ড্রাইভারের মনে ভয়ের সঞ্চার করা।
চাকা বাস্ট হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ড্রাইভার বাস কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ।একজন ডাকাত তা দেখে ।ড্রাইভার এর হাতে ভোজালি চালিয়ে দেয় ।তাতে ড্রাইভার এর ডান হাতের পেশি কেটে রক্ত ঝর ঝর করে পড়তে থাকে ।ব্যথার স্থানে বাম হাত দিয়ে চেপে রেখে গাড়ি বন্ধ করে। এমনিতেই চাকা বাস্ট হওয়াতে গাড়ির গতি কমে গেছে ।যাই হোক গাড়ি বন্ধ হতেই ডাকাতদের মধ্যে একজন ড্রাইভার কে বলে ।গাড়ি বন্ধ করে দিলে ভজালি চালানো হতো না।
শীতকালের রাত্রি। গাড়িতেই সব কাচের জানলা বন্ধ। বাসের দুটো দরজার কাছে ডাকাতরা “দরজা খোল ।”বলে চিৎকার করে ।ঠিক সেই সময় কন্ডাক্টর টাকার ব্যাগটি লুকিয়ে রাখার জন্য ,ড্রাইভার এর বগীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ।সেই সময় হেলপার দুজন ডাকাতের চিৎকারে আপাদ-মস্তক কাঁপুনি নিয়ে কন্ডাক্টার কে জাপটে ধরে চিৎকার করতে থাকে ।ডাকাতের ভয়ে তাঁদের ভাষা বেরোচ্ছিল না। দুজনের জাপটাজাপটি তে তিনজনে নিচে পড়ে যায়।
ভিতর থেকে কেউ দরজা খুলছে না দেখে, ডাকাতরা মোটা লোহার ডান্ডা দিয়ে বাসের জানালার কাচঁগুলো ভাঙ্গে। লোহার ডান্ডার জোর আঘাতে কাঁচের টুকরোগুলো অন্যান্য যাত্রীদের সাথে খোকন দা ও বন্টুর গায়ে ছিটকে আসতে লাগলো ।দু-একটা জানলার কাঁচের সাথে দরজার কাঁচ ভাঙ্গে ।বাহির থেকে বাসের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটা ডাকাত দরজা খুলে দেয়। এরপর ঢুকতে থাকে ওই দরজা দিয়ে 11 জন সান্ডা মার্কা ডাকাত। সবাইকে সান্ডা মার্কা বললে ভুল হবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রোগা পাতলা ।এদের মধ্যে একজন খোকনদার গলায় ছুরি টা ধরে বলে। যা আছে বার কর ।খোকনদা বলে -আমরা দুজন ছাত্র ।কলকাতায় পড়ি। আমাদের তেমন টাকা পয়সা নেই।
–পকেট দেখি? বলে ওরা পকেট সার্চ করে । খোকন দার পকেটের 60 টাকা দেখতে পায়।ওরা 60 টাকা নিয়ে নেয়। জুতো প্যান্ট সার্চ করে। কিছুই পায় না ।আবার বলে -অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছিস ।
–আরে দেখুন, আমরা ছাত্র। আমাদের হাতে কি বেশি টাকা পয়সা থাকতে পারে ?
খোকন দার মাথার উপর ভোজালি রেখে খোঁজার চেষ্টা করে ।তারা কিছুই পায় না ।তাদের মধ্যে একজন ততক্ষনে দুটো ব্যাগ উল্টে ঢেলে দেয় ।দেখে -শুধু বই আর বই ।তার সাথে চানাচুর প্যাকেট ।নারকেল সন্দেশ ছিল ।টাকা কিছু না পেয়ে, তাদের গায়ের কোট পকেট এ চানাচুর আর সন্দেশ নিয়ে ঢুকাচ্ছে। সাথে সাথে মুখে দু একটা ঢুকাচ্ছে ।বন্টুর একটা জামা খোকনদার একটা প্যান্ট নিয়ে নিল ।বন্টু তখন আকুতি করে জানায় ।একটা জামা আমার শীতের সময় পরতে হয় ।ওটা নেবেন না ।কে কার কথা শুনে ?
পিছনের সিট গুলোতে চলছে বড় ধরনের অপারেশন ! ডাকাত গুলো প্রত্যেকের হাতে পাঁচ ব্যাটারির লম্বা টর্চ। গায়ের শালটা সিটের উপর রেখে ডাকাতদের দেখার চেষ্টা করে। ঘাড় টাকে ঘুরায় ।খোকনদার ঠিক পিছনের সিটে -যাত্রীটি মাথার উপর রাখা একজন 30 হাজার টাকার বান্ডিল খোঁজ করতে গিয়ে একটা ডাকাত দেখতে পায় ।তখন ডাকাতের রুদ্রমূর্তি কাকে বলে! –টাকা লুকিয়ে রেখে -বলছিস, টাকা নেই ।হাতে থাকা লম্বা টর্চটা নিয়ে এমন মার !যাত্রী টা ভাও ভাও করে কাঁদতে থাকে। আরো পিছনের দিকে একজনকে পেটাতে পেটাতে একটা ডাকাতের ভাষা কানে আসে। শূন্য পকেটে নিয়ে তুই বাইরে বেরিয়েছি ? এইসব দেখে বন্টুর শরীরে কাপুনি !খোকনদা তাকে আশ্বাস দেয় ।ভয় কি ?আমি আছি তো। এইরকম পিছনের দিকে আরো কত কি চলছে !সবুজ আলোয় ততটা বোঝা যাচ্ছে না ।এইরকম আধঘণ্টার চলার পর ডাকাতরা জিজ্ঞেস করে। ঠাকুরচকের গাড়িটা কখন আসে রে ?ভয়ে অর্ধেক জিরিয়ে যাওয়া -কন্টাকটার ,কাঁপুনি গলায় বলে- এখন যাওয়ার কথা ।10-15 মিনিট এর মধ্যে চলে আসবে। আরে আমরা তো ওই বাসটা ধরার জন্য এসেছি। কিন্তু এলি তোরা ।সব আলো বন্ধ করে দে। আর আওয়াজ করবিনা । বাইরে থেকে কাউকে যদি আওয়াজ করতে দেখি। বোমা মেরে বাস সহ তোদেরকে যমালয়ে পাঠিয়ে দেবো। আলো তাড়াতাড়ি বন্ধ কর।
আলো বন্ধ হয়। সবাই চুপচাপ ।পিন পড়লে শব্দ হয়। কিন্তু এখানে কোন শব্দ নেই ।বাসের চারপাশে ওই ডাকাতের ফিসফিসানি আওয়াজ ।খোকনদা জানলার ফাঁক দিয়ে দেখতে পায়। ডাকাতেরা টর্চ জ্বালিয়ে বাবলা গাছের নিচে কি খুঁজছে ।ওদের একজন বলছে দেখ ভাল করে এদিকে ঘড়ি বা টাকা পয়সা ছুঁড়েছে কিনা কিছুক্ষণ খোঁজার পর, না তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। বস। আবার একবার ঢুকে তল্লাশি করতে হবে। অন্য একজন বলে -ঠাকুর চকের বাসটা ধরি। তারপর এটা। উত্তর আসে হ্যাঁ ।এই কথা শোনার পর খোকন দার শরীরটা যেন কাঁপতে শুরু করেছে আবার যদি আসে। টাকাটা যদি খুঁজে পায়। তাহলে পিছনের লোকটির মত আমার দশা ও একই হবে! অজানা আশঙ্কায় শরীরটা কাঁপতে থাকে। বন্টু যাতে বুঝতে না পারে তাই একটু সরে বসে খোকন দা। ঠিক সেই সময় পিছনের থেকে গাড়ির লাইট !বাসে সকলের মতো উৎসুক হয়ে পিছনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সকলে ।কাচের ভিতর দিয়ে পরিষ্কার সবকিছু দেখতে পায় ।এই গাড়ির মতো ওই গাড়িটা রাস্তায় ফলার দ্বারা বাস্ট হয় !গাড়ি থেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে একটি বোমা বাস্ট হয়! গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই ডাকাতরা ছুটে আসে ।ওই বাসের যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি ।ডাকাতেরা ওই বাসে ঢুকে অপারেশন চালাতে থাকে ।ঠিক এই সময় পিছনের সিটে যে ছেলেটি মার খেয়েছিল ।সে উঠে দাঁড়ায় ।বলে- চিৎকার করবো ।শালারা আমাকে মেরেছে !বলে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। কন্ডাক্টর বলে –যা গেছে তা গেছে ।শেষে তোমার জন্য সকলের প্রাণটাও যাবে! —না আমি চিৎকার করব ।খোকনদা জোর করে টেনে তাকে পাশে বসিয়ে হাত দিয়ে তার মুখটা চেপে ধরে ।ফিসফিস করে বলে- তাদের হাতে বোমা বন্দুক আছে! আমাদের হাতে ওগুলো কিছু নেই ।ওদের দয়া মায়া ও নেই !তোমার চিৎকারে সকলের প্রাণ যাবে ! ওই যাত্রীর বয়স 35 খানি হবে। ও বলে -মুখটা ছেড়ে দেন। লাগছে! আমি চিৎকার করব না।
খোকনদা ছেড়ে দেয়। চুপচাপ মিনিট কুড়ি কেটে যায়। এমন সময় দূর থেকে যেন জনকোলাহল ! কোলাহল টি
ক্ষিন থেকে ক্রমশ জোর হতে থাকে । খোকন দার হাতটি ছুঁড়ে দিয়ে লোকটি বাসের বাইরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলে, কন্ডাক্টার জোর করে তার মুখটি চেপে ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দেয় ।খোকনদা ফিসফিস করে বোঝায় –ওদের হাতে বোমা বন্দুক আছে গতকাল পেপার দেখনি ?হাওড়ায় এক ডাকাতের দল বাসের 5 যাত্রী কে গুলি করে মেরেছে !লোকটি উত্তেজনায় বলে আমার এতগুলো টাকা নিয়ে লাইফটাকে শেষ করে দিল! কোলাহল ক্রমশ বাসের চারপাশে ঘিরে ফেলে। তখন লোকটি লাফ মেরে দরজা খুলে বাইরে বেরোয়। অন্যরা তা দেখে সাহস পেয়ে বাইরে বেরোয়। বাইরে দেখে ডাকাতরা চম্পট !শয়ে শয়ে গ্রামবাসী ছুটে আসছে কারোর হাতে লাঠি !কারোর হাতে বটি !যে যা পারে হাতে নিয়ে ছুটে আসছে !খোকনদা ঘড়িতে দেখে রাত সাড়ে তিনটে ।গ্রামবাসীর একজনকে জিজ্ঞেস করতে বলে- আমরা ক্লাবে বসে ছিলাম ।প্রথমে একটা বোমার আওয়াজ !আমাদের মনে সন্দেহ হলো। তাস খেলা বন্ধ করে গ্রামের বেশ কয়েকজনকে ডাকলাম। দ্বিতীয় বোমার আওয়াজ হতে আমরা সিওর হয়েছি ডাকাত পড়েছে! তারপর চিৎকার করে ছুটে এলাম। আমরা বেশিরভাগ এই সময় জেগে থাকি। এই শীতকালে এই অঞ্চলের ডাকাতি বেশি হয় ।তাছাড়া এই এক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার এই অঞ্চলে বাস ডাকাতি হয়েছে।
এরপর সময় যত এগোয় একটার পর একটা বাস লরি এসে পিছন পিছন সারি হয়ে দাঁড়ায়। লোকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে ।কিন্তু পুলিশ এসে পৌঁছয় না! এমনিভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাটে। রাতের আঁধার কাটিয়ে দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে ।এমন সময় হাজির হয় একটি পুলিশ ভ্যান। ভ্যান থেকে পুলিশ নামলে জনগণ লাঠি ঢিল পাটকেল যে যা পারে তা নিয়ে তাড়া করে ।সবার একই কথা -এই শালাগুলো বদমাশ !এরা এতক্ষণ কি করছিল ? শালা গুলো শুধু ঘুষ খেয়ে বাড়ি গাড়ি করছে।
মার ! মার শালাগুলোকে!জনতার তাড়া খেয়ে পুলিশ ভ্যান নিয়ে পালায়! কেউ বলে- ওরা পালাবে না তো কি ?শালা ডাকাতের সাথে এদের যোগসাজশ আছে! এই কদিনেই চার পাঁচ বার ডাকাতি হয়ে গেল । এরা কোথায় ছিল ?
কয়েক মিনিটের পর দুটো পুলিশ ভ্যান আসে। আবার জনতার তাড়া !পুলিশরা দৌড়তে দৌড়াতে বলে– আমাদের কোনো দোষ নেই। একটু বোঝার চেষ্টা করুন। যে সময় ডাকাতি হয় আমাদের ভ্যান তার একটু আগে এই রাস্তায় ঘুরে গিয়ে অন্য রাস্তায় ডিউটিতে ছিল। আপনারা অকারণে দোষ দিচ্ছেন।
কথাগুলো শুনে জনতার মধ্যে একজন বলে ওঠে- এ এ তো বড়ো বাবু রে! অন্যজন বলে -শালা ।সব বাবু ই ঘুষখোর!
আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি ডাকাতদের ধরার আমি আপ্রান চেষ্টা করব ।এর আগে ডাকাতি হয়েছে কিন্তু এত বড় ডাকাতি হয়নি। দুটো বাস এক সঙ্গে !আমি কথা দিচ্ছি আমি আপ্রান আমি চেষ্টা করব। আর যাদের চুরি হয়েছে তারা যেন থানাতে গিয়ে চুরি হওয়া জিনিস পত্রের নাম লিখে দিয়ে আসে ।যাতে ডাকাত ধরা পড়লে সেই সব জিনিসপত্র যেন তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি। খোকন দার পাশে বন্টু ততক্ষণ শুনছিলো। সে খোকনদাকে শুনিয়ে বলে -শুধু জনগণকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
খোকনদা বন্টুকে টান মেরে বলে- চল ।রাস্তা তো পুরো বন্ধ !সামনে রিকশা পেলে অন্য রাস্তা দিয়ে কলকাতায় চলে যাব । বাসের মধ্যে লোকের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। বাস থেকে বের হয়ে- বন্টু খোকন দা কয়েক পা হাঁটতে থমকে দাঁড়ায় !একটা বয়স্ক লোককে ঘিরে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে ।কাছে যেতে জানতে পারে লোকটি জমি বিক্রি করে 60 হাজার টাকা পেয়েছিল মেয়ের বিয়ে দেবে ।ডাকাতিতে তার সব টাকা গেছে। মেয়ের বিয়ে মাসখানেক বাকি! খোকনদা লোকটিকে ধমক দেয় ।এত টাকা নিয়ে রাত্রে এলেন কেন ?লোকটি কানতে কানতে বলে ডাকাতি হবে জানলে কি রাত্রে বেরোতাম ?মাথা চাপড়ে বলে সবই আমার কপাল! —আপনার ঠিকানাটা আমাকে একবার বলুন তো? লোকটি নাম ঠিকানা বলে যায় ।আর খোকনদা খাতা পেন বের করে তা লিখে নেয়। বিস্ময়ে মামার দিকে তাকায় বন্টু।
বল্টুর তাকানো দেখে খোকনদা বলে- চল ।এগোতে এগোতে বলে -একটু ফোন করে দি ।আমরা যাব না । বন্টু বলে –আমরা থাকবো কোথায় ?
—চল। এখানে হোটেল আছে নিশ্চয়ই ।এবার বন্টুর দিকে তাকিয়ে খোকনদা বলে -তুই তো সেদিন বড় করে বলছিলি ।তোদের বাড়ির নারকেল চোরকে ধরে ছিলি! বন্টু অবাক হয়ে বলে -তাই বলে ডাকাতদের ধরা যায়! কোথায় নারকেল চোর আর কোথায় শক্তিশালী ডাকাত! কেন ডাকাত ভেবে ভয় পাচ্ছিস ?জীবনে যদি অ্যাডভেঞ্চার নাই পেলাম ,সে জীবনে মূল্য কতখানি বাড়ে ?এবার বল্টুর দিকে তাকিয়ে- কিরে? ভয় পেয়ে গেলি?
—- না ।ভয় পাওয়ার কি আছে ?তুমি যখন আছো।
শহর থেকে মিনিট 5 হাঁটা পথের দূরত্ব পুলিশ স্টেশন। দোকানে দুজনে কিছু টিফিন খায়। মামা কোথায় থাকবো? অনেক তো হোটেল দেখলে ! থানার কাছে যে হোটেল ওটা ভালো নয়! অপরিষ্কার !বাজার এর কাছে হোটেল টা খারাপ নয় ।
–কোনটায় থাকলে ভালো হয় বলতো?
— আমাকে একটু ভাবতে দাও ।
দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে দুজন ।ঘাড়ে হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বন্টু বলে —-থানার কাছে থাকলে ভালো হয় ।বাহ! ভালো বলেছিস ।এই তোর বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা!
—-মামা ।আমি কিন্তু কম ডিটেকটিভ বই পড়িনি। তুমি যদি আমাকে একটু হেল্প করো ।তাহলে আমি ডাকাত ধরে দিতে পারি।
খোকনদা তাকে সাহস দেয়–আমি তো আছি । তুই চেষ্টা করে যা ।
সূর্য তখন মাথার উপর উঠে এসেছে ।থানার সামনে রাস্তার ওপারে হোটেল । দোতালায় ওদের আস্তানা ঘরের জানলা থেকে থানার ওসির রুমটা পরিষ্কার দেখা যায়। ওরা চান খাওয়া করে থানায় যায় ।থানার বাইরের বারান্দায় অনেকে বসে ।ওসি রুমের জানালার কাছে ওদের অনেকে এগিয়ে করুন আর্তনাদ প্রকাশ করে- স্যার ।আমার ব্যবসার সব টাকা চুরি হয়ে গেছে !পুলিশ সকলকে সান্তনা দেয় -আমি চেষ্টা করছি ।বারান্দার সামনে একটি পান্থ প্রদীপ এর গাছ ।তার পাশে সিমেন্ট এর বাঁধাই করা বসার আসন ।ছায়াও পড়েছে সেখানে। থানার এদিক ওদিক কৌতুহলে চোখ বুলিয়ে নেয় খোকন দা। তারপর ওই ছায়ার কাছে এসে বসে ।
যাদের গাড়ি ভাড়া নেই থানা থেকে ওসি তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। মামাকে বন্টু বলে –আমাদের এই সুযোগ টা নষ্ট হলো। আমরা না থাকলে কলকাতা যাওয়ার টাকা টা পেতাম ।
—-তা পেতাম কিন্তু ওই কটা টাকার জন্য আমি আমরা খুঁটি গাড়লাম না ।টাকা খরচা করার জন্যই খুঁটি গাড়লাম।
ঠিক সেই সময় একজন ছুটতে ছুটতে থানার ভিতরে ঢুকে । রুমে ঢুকে চিৎকার করে বলে-একজন সাইকেলে এক ব্যাগ বোম নিয়ে যাচ্ছিল, ব্যাগটা ছিঁড়ে পড়তে; বোম গুলি বাইরে গড়িয়ে পড়ে। নিশ্চিত ওরা ডাকাত! স্যার, চলুন । কয়েকজন লোক তা দেখতে পেয়ে ওকে পাকড়াও করে । খবরটা পেয়ে ওসি তাড়াতাড়ি ছুটে এবং টেনে নিয়ে আসে ।মারমুখী জনতার চিৎকার, এটাকে পেটালে সব বলে দেবে আসল খবর ,কারা কারা ডাকাতের দলে জড়িয়ে আছে । পুলিশের সামনে কান্না। স্যার ।আমি ডাকাতের দলের লোক নই ! কে কার কথা শোনে। পুলিশ পেটাতে পেটাতে লকআপে ঢুকায় ।কিছুক্ষণের পর প্রাইভেট কারে আসে রাজনীতির নেতা । দাঁড়িয়ে থাকা জনগণের ফিসফাস ,এ এই সময় এখানে ! কেউ কেউ বলে ,ডাকাত পড়া ঘটনা র এদের যোগাযোগ আছে ।সামনে ভোট, টাকা তোলার জন্য কোন রাজনীতির নেতারা নানান ভাবে টাকা সংগ্রহ করে ।
বন্টু বলে, মামা , এটা যদি হয় এ থেকে কিছু সূত্র বেরোবে না ?
কেন বেরোবে না ?আমি এর শেষ দেখার চেষ্টা করব । বলেই উঠে পড়ে বলে,চল । রুমে চল ।
বিকেল তিনটে বাজতে না বাজতেই ধড়পড় করে উঠে পড়ে দেখে বন্টু অঘোর ঘুমে ঘুমোচ্ছে ।দু তিনবার ডাকলেও সাড়া না দিতেই খোকনদা দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে গেল।
ডাকাতি যাতে না হয় পুলিশ টহলের ব্যবস্থা অথচ ডাকাতির সময় পুলিশ এলো না! তার মানে এদের সাথে বড় কেউ জড়িয়ে! পুলিশ না রাজনীতির নেতা ? কে হতে পারে ।অবশ্যই বড় কেউ জড়িয়ে ! ভাবতে ভাবতে বাজার এর কাছে চলে আসে খোকন দা। একটা ইলেকট্রনিক্স দোকান দেখতে পেয়ে টর্চ কিনে নেয় তারপর যেখানে ডাকাতি হয়েছে সেখানে যায় ।রাস্তার দুই পাশে বাবলা গাছের সারি আর মধ্যে দাঁড়িয়ে ইউক্যালিপটাস ।এমনি করেই যেন মাইল খানি বিস্তৃত। আর রাস্তার এদিক ওদিক কোন লোকালয় নেই ।বেশ অনেক দূর ফাঁকা আর ফাঁকা। শুধু ধানের ক্ষেত। মধ্যে মধ্যে ডোবা ।কচুরিপানা ।কিন্তু এ সময় মাঠ ফাঁকা ।ধান চাষ নেই ।মনে হয় এক ফসলি চাষের জমি। বেশ কিছুদূর হেঁটে এদিক ওদিক ভালো করে নিরীক্ষণ করতে থাকে ।খোকনদা হঠাৎ রাস্তা পেরিয়ে মাঠের দিকে এগোয় ।একটা লোক চাষের জন্য মাটি কুপাছিল।
–দাদা ।এখানে ডাকাতির সম্বন্ধে কিছু জানেন?
লোকটি তাকাল ।কোদাল টাকে পাশে রেখে বলে– তোমাকে আগে কখনো দেখিনি!
খোকনদা আগের দিন থেকে আজ পর্যন্ত সব ঘটনা বলে । লোকটি বলে–, বছর বছর এই রকম শীতের সময় ডাকাতি হয় ,হতে দেখেছি ।
—পুলিশ কিছু করেনা ।
কথাটি কেড়ে নিয়ে লোকটি বলে –সবগুলো শয়তান। শুধু পুলিশ নয় ।রাজনীতির নেতারাও কম যান না! এখানকার পঞ্চায়েত প্রধান বেশ দুরন্ত!সরকারি অনুদান লোন সব পার্টির ছেলেদের দেয় তাতেও কমিশন নেয়। এখানে দুটো পার্টির মধ্যে বোমাবাজি খুন খারাপ লেগেই আছে।
কিছুক্ষণ উনার কাছে যা যা জানার জেনে নিয়ে এগোতে থাকে খোকন দা ।কিছুদূর হাঁটার পর আর কোন লোকজন দেখতে না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ।নানান চিন্তা কপালের শিরা গুলো যেন উদ্বিগ্ন ।হঠাৎ চোখ যায় দূরে এক বড় বট গাছের দিকে ।ফাঁকার মধ্যে বটগাছ। বহু দূরে হলেও চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না। এগিয়ে যায় খোকনদা বেশ পুরনো আমলের বটগাছ। প্রকাণ্ড তার শাখা-প্রশাখা। কিছুক্ষণ এখানে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকায়। কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করে -ডাকাতি কারা কারা করতে পারে ? নানা রকম ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে ।না -কোন কিছু সন্ধান পাওয়া গেল না । তবুও খোকনদা চেষ্টা চালায় ।রাজনীতির নেতাদেরকে নিয়ে আলোচনা করে এখানকার কি কি পার্টি কেমন কেমন নিজেদের মধ্যে অবস্থান ।কেমন কেমন ওদের দ্বন্দ্ব ।তা জানার চেষ্টা করে ।খোকনদা বুঝতে পারে এই বোমা কাণ্ডটি পার্টিগুলোর নিজেদের মধ্যে রেষারেষির জন্য একদল অন্য দলের কারোর বাড়ীর ঘর ভেঙ্গে দেয় তো অন্য দল তার প্রতিহিংসার জন্য পার্টি অফিস বা কাউকে বোম মেরে উড়িয়ে দেয়। এটাই এখানকার রাজনীতির সমীকরণ । মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় মনে হয় রাজনীতি নেতারা এই ডাকাতির পিছনে জড়িয়ে নেই ।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে হাতে ঘড়িরটার দিকে তাকায়। রাত সাড়ে আটটা । বন্টু কী করছে কে জানে। তাড়াতাড়ি পা চালায় বাড়ির দিকে ।এখানে বাড়ি বলতে হোটেলের দিকে বুঝায় ।দু একটা রাস্তা বাঁক নেওয়ার পর বেশ কিছুটা সোজা অথচ নির্জন রাস্তা। রাস্তাটা নীচে পাশের দিকে মধ্যে মধ্যে আলো দেখা যাচ্ছে। সন্দেহ হলো খোকন দা র। আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় ওই দিকেই চুপি চুপি করে ওদের ঠিক পিছনের দিকে এসে দাঁড়ায়। কানটা খাড়া করে রাখে। দুজনে বসে। বিড়ি টানতে টানতে বলছে- কখন আসবে বলতো, আটটা তো বাজতে যায়। অন্যজন বলে দাঁড়া একটু ।ছোট বাবু এক্ষুনি চলে আসবে। –
-আসবে তো !
–আসবে না মানে ? টাকার জন্যই আসবে।
—তা ঠিক বলেছিস একটা টাকা খোর মাইরি !শুধু ঘুষ খেয়ে খেয়ে নিজের ভুঁড়িটা বাড়িয়ে নিল।
— সে বাড়ালে তো তোর অসুবিধা কোথায়? আরে ওর জন্যই তো আমাদের জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে না ।
— তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। পাঁচুর দোকানটায় আগুনটা লাগিয়ে দিলাম ।দাদার কথায় ছোট বাবু আমাদের ছেড়ে দিল।
—সেদিন আগুন দিয়ে আমরা ঠিক করেছি। পাচুঁটা বহুত বাড় বেড়ে গেছিল! শালা দাদার খেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য পার্টিতে কাজ করবি ।দাদাকে তো চিনিস না ।পোড় খাওয়া মাল ! তোকেও বলি ভুলেও এই কাজটা করতে যাবিনা ।মনে পড়ে তিন বছর আগে হারু এই কাজ করতে গিয়ে দাদার বিষ নজরে পড়ল। কি হল তো জানিস-।
—- তা আবার জানব না! পশ্চিম পাড়ের ভাগাড়ের গায়ে পুকুরে তার লাশ ভাসছিল ।বিরোধী পার্টি তো দাদার বিরুদ্ধে কত রকম কেস সাজাচ্ছিল। কি হলো লবডংকা! দাদার কিছুটা করতে পারলো না ।
ঠিক সেই সময় একটা বাইক ওইদিকে আসছিল। তা দেখে—- ছোট বাবু এসে গেছে! তারা উঠে দাঁড়ায়। বাইক এসে দাঁড়ালো। এরা ছোট বাবুকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। –কত আছে ?– দশ হাজার ।— 15 বললাম, দশ পাঠিয়েছে ? —এবারের মত এটা নেন উনি বলেছেন পরে বাড়িয়ে দেবে। ছোট বাবু বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে”” এত বড় বড় রিস্ক নিয়ে কাজ করছি টাকা কমালে আমি আর পারব না”” বলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় । ছোট বাবু চলে যাওয়ার পর দুজনের মধ্যে একজন বলে এর মত ঘুষখোর খুব কম দেখেছি। —আরে তুই বুঝলি না, এই রকম ঘুষখোর আছে বলেই তো আমাদের বস ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে যাচ্ছে ।কেন বিরোধীরা স্বপন নস্কর কে খুব সমীহ করে । পিছনের যত বড় বড় বকবক করুক না কেন ওর নামে যতই যে যা বলুক না কেন। কোন বিরোধীরা ওর কোন চুলকে বাঁকা করতে পারবে না ।প্রতিটা ইলেকশন আসবে প্রত্যেকটা তেই স্বপন নস্কর জিতবে।
কে এই স্বপন নস্কর ! রাজনীতির নেতা আবার প্রতিটি ভোটে যেতেন । আগে জানতে হবে এই এই নেতা টি কে!
না ,বাড়ি ফেরা যাক। ওরা কোথায় গেল ? এদিক ওদিক তাকায়, খোঁজার চেষ্টা করে। না চোখে পড়লো না। এরপর হোটেলে ফেরার জন্য পা বাড়ায়। ফেরার পথে মোড় পড়ে। ওখানে কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করে কেএই স্বপন নস্কর ? কেউ কেউ বলে পার্টির বড় নেতা শয়তানের একটা গাছ! কত জনকে খুন করেছে তার ঠিক নাই !শুধু দুষ্টু বুদ্ধি ও টাকার জোরেই সব কাজ হাসিল করে নেয়। খোকনদা ওদেরকে জিজ্ঞেস করে এই ডাকাতির পিছনে এই স্বপন নস্করের কি হাত থাকতে পারে ?
কেউ কেউ বলে –হ্যাঁ হতেও পারে ।ভোট আসছে। ভোটের জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয় ।হতে পারে। ডাকাতি টা স্বপন নস্করের পরিকল্পনা ও হতে পারে। থানায় যে রাজনীতির নেতা এসেছিল ।সে কে ? তার নামটা জানা হয়ে ওঠেনি ।তাহলে তিনি কি এই স্বপন নস্কর ?কি জানি! থানার কাছাকাছি কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিতে পারবে ।এরকম ভাবতে ভাবতে থানার ঠিক কাছে একটা পান বিড়ির দোকানে র ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে। উত্তর আসে -না। উনি অন্য লোক !
উনার নাম রতন সিং। আরো জানতে পারে রতন সিং ও স্বপন নস্কর এ এরা কট্টর পরস্পর বিরোধী । দুজন দুজনের নামে নানা রকম কাদা ছোড়াছুড়ি করে ।
ডাকাতের সাথে কে বা কারা জড়িয়ে আছে । কিভাবে ডাকাতের সন্ধান করা যায় এই ভাবতে ভাবতে হোটেলে পৌঁছে যায় ।
হোটেলে ঢুকতেই বন্টু জিজ্ঞেস করে- কি মামা ,কিছু সন্ধান পেলে ?
না কিছু সন্ধান পাইনি। একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে জানিস- এই রাজনীতির নেতারা কি তাহলে এই ঘটনায় জড়িয়ে ?
খাটের উপর গা এলিয়ে বসে ছিল বন্টু। মামার কথা শুনে উঠে পড়ে । বলে, হ্যাঁ হতেই পারে সকালে ওই রাজনীতি নেতা রতন সিংকে দেখে আমার সন্দেহ হচ্ছিল । কিন্তু,,,,– কিন্তু কি ? তাকায় খোকন দা ।
— তুমি চলে যাওয়ার পর আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ।অনেকেই বলল এখানে রাজনীতির সংঘর্ষের জন্য ওরা বোমা ব্যবহার করে ।অনেকেই বলছে ডাকাতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। রাজনীতি এমন একটা নীতি শিয়ালের ধূর্ততা বেশি প্রকাশ পায়। সেখানে সাধারণ মানুষ গুলো তার কূল খুঁজে পায় না।
কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ। খোকন দা সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে আপন মনে আনমনা হয়ে ভাবতে শুরু করেছে। বন্টু পায়চারি করতে করতে জানলার দিকে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ।ওখান থেকে থানাটা পরিষ্কার কিন্তু দেখা যায় ।হঠাৎ চোখ যায় একটা ছেলে র দিকে। মামা শোনো তাড়াতাড়ি শোনো। খোকনদা তাড়াতাড়ি উঠে আসে।– দেখো ।দেখো। ওই ছেলে ওই ছেলেটাকে দেখো ।গাছটার ঠিক পাশেই এখন বসেছে । বিকেলের দিকে ঘুরঘুর করছিল। থানার কোন কারোর জন্য অপেক্ষা করছিল। অনেক লোক ছিল মনে হয় সেজন্য ঢুকতে পারেনি।
— দাঁড়া তুই খেয়ে নে ।আমি একটু আসছি। বলেই হাতে টর্চটা নিয়ে খোকন দা খুব দ্রুত বেরিয়ে যায় ।নিচে আড়ালে ওই ছেলেটা কে ফলো করে। উপরের জানলা থেকে বল্টু তা দেখে। ছেলেটি এদিক ওদিক কখন একটু সামনে এগিয়ে কখন একটু পিছিয়ে থানার অফিসের দিকে তাকায় যেখানে বড় বাবু ছোট বাবু রা বসে। আগের মত বেশ কয়েকবার উঁকিঝুঁকি মারার পর অফিস থেকে বেশ কয়েকজন বেরোতেই ও আড়াল হওয়ার চেষ্টা করে । ওরা চলে গেলে হতাশ হয়ে ওদের দিকে তাকায়। তারপর আর উঁকিঝুঁকি না মেরে ওখান ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। খোকন দাও তাকে অনুসরণ করে। বেশ কিছুক্ষণ অলি গলি পথ বেয়ে তার পিছু পিছু গিয়ে একটা বেশ বিশাল বাড়ির নিচে ছেলেটি পৌঁছয় তারপর দরজা নক করে ঢুকে গেল । কিছু লোকজন আর নেই। একটু দূরে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খোকন দা। না ছেলেটাও আর বেরোচ্ছে না ।পাশ দিয়ে এক ভদ্রলোক যাচ্ছিল ।তাকে জিজ্ঞেস করে ,এই বাড়ি টা কার ? ভদ্রলোক টি বলে পার্টির বড়নেতা স্বপন নস্কর। ভালো করে বাড়ি টাকে পর্যবেক্ষণ করে ফেরার জন্য পা বাড়ায়। ছোট বাবুর সাথে এত যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও আবার থানাতে লোক পাঠাতে হল । জানি স্বপন নস্কর খুব ধুরনধর কিন্তু কোথাও যেন অন্য কিছু মনে হচ্ছে । তার মানে অন্য কারো সাথে কোন যোগাযোগ !এখানে অন্য বলতে বড় বাবু ছাড়া আর কে আছে তা ছাড়া এত বড় ধুরন্দর নেতা নিশ্চয়ই ছোটখাটো কনস্টেবল এর সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবে না ।কি জানি এইরকম নানা সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সেদিনের রাত কেটে যায় ।
পরের দিন সকালে উঠেই থানার সামনে চা দোকানে চা খেতে খেতে পেপার পড়ছে আবার সেই ছেলেটি কে দেখতে পায় ।পেপারের ফাঁক দিয়ে খোকনদা দেখার চেষ্টা করে। ছেলেটি এদিক ওদিক তাকায় ।দেখে নেয় তাকে কেউ ফলো বা লক্ষ করছে কিনা। ঐরকম 10-15 মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে ।তারপর একটা কনস্টেবল বেরোতেই তার চোখে চোখে কথা হয় ।কনস্টেবল ইশারায় বলে- হ্যাঁ আছে ।ছেলেটি ইশারায় বলে ওখানে দেখা করতে। বারবার আকাশে সূর্যর দিকে ইশারা করে। কনস্টেবল মাথা নেড়ে বলে- হ্যাঁ। বলে দেব। তারপর ছেলেটি চলে যায়। ছেলেটি কি বলল নানা রকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হোটেলে ঢুকে দুজন মিলে টিফিন করে । টিফিন করতে করতে বন্টুকে সব কথা বলে। বন্টু বলে, মামা নিশ্চিত তোমার সন্দেহ বড়বাবুকে। কিন্তু আমি সবার মুখে শুনেছি বড়বাবু প্রচন্ড স্ট্রিক্ট নিপাট ভদ্রলোক ও সৎ ।প্রত্যেকের সুখ দুঃখের কথা শুনে। এলাকার সবাই উনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।নিশ্চিতই নোংরা কাজের সাথে যুক্ত থাকবেন না। ওই কনস্টেবল টাই হয়তো নোংরা কাদের সাথে যুক্ত ।কখন কি করছে বড় বাবুরা তার খবর হয়তো ডাকাত বা অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। মাথা নেড়ে সায় দেয় খোকন দা।– ঠিক বলেছিস ।তোর ভাবনাটাও ঠিক হতে পারে ।বলেই ও বেরিয়ে পড়ে। ওই নেতার আশেপাশে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে ।খোকনদা সময় বুঝে যাকে তাকে নানা রকম প্রশ্ন করে –স্বপন নস্কর বা ডাকাতির কথা জানার চেষ্টা করে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কি হতে পারে সূর্য না চন্দ্র বা কোন তারা কি ক্লু হতে পারে ? আকাশের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি কি নির্দেশ করে ছিল? অনেক ভাবতে ভাবতে মাথায় কিছু এলো না এলোমেলো কত আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে একটা বস্তির মতো জায়গায় এসে দাঁড়ায় ।একটি বড় প্রকান্ড নিম গাছ তার নিচে বসে ভাবতে থাকে ।ঠিক পাশেই একটা পচা ড্রেন । ড্রেন টার অনতিদূরে একটা ভাঙ্গা মন্দির এর মত। কিছুক্ষণ পর খোকনদা উঠে দাঁড়ায়, না কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছেনা। কয়েক পা হাঁটতেই পিপাসা পেল এদিক ওদিক তাকায় কোন কল আছে কি না। পাশে একটা মহিলা ছাগল চরাচ্ছিল ।তাকে জিজ্ঞেস করে জল কোথায় পাওয়া যাবে ? মহিলা টি হাতের ইশারায় বলে —ওই ভাঙ্গা মন্দির একটা আছে ওইখানেই কল। আবার ব্যাক করে কলের দিকে আগে যেখানে বসে ছিল ওইটার উপরে যে ভাঙ্গা মন্দির দেখা যাচ্ছিল সেই মন্দিরের গায়ে কল । কিন্তু আশ্চর্য কলে টিপতেই কোন জল পড়ছে না কলটা ভাঙ্গা। বিরক্ত হয়ে কলের ডান্ডা কে দু তিনবার নেড়ে দিল । ধুর কল টা দেখে মনে হয় তো 5-10 বছর আগেই ভেঙ্গে পড়ে আছে । তাহলে মহিলা টা মনে হয় ঠিক জানেনা । মন্দির টার দিকে চোখ যায় অনেক পুরনো আমলের মন্দির। অনেক অংশই ভাজ্ঞা মধ্যে মধ্যে বট অশষ্থ দেয়াল বেয়ে উঠে গেছে। হঠাৎ চোখটা যায় মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দিকে। কি যেন একটা লিখা আছে ।এগিয়ে যায় খোকন দা। প্রতিষ্ঠাতার নাম সূর্য নারায়ন বোস । সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এদিক ওদিক তাকায় কোন কল আছে কিনা না কোন কল চোখে পড়ে না। আবার কয়েক পা এগোতেই একটা মহিলাকে দেখতে পেয়ে কল কোথায় আছে জানতে চায়। ।
মহিলাটি হাতের ইশারায় দেখায় যেখানে আগে নিম গাছের নিচে বসে ছিল তার ঠিক পিছনের দিকে। ওখানে পৌঁছতে দেখে -এবার সত্যিকারে ভালো কল। জল পান করে সবে মুখ মুছছে রুমাল দিয়ে পাশে এক বয়স্ক লোক জিজ্ঞেস করেন তোমাকে এখানে নতুন দেখছি ।মাথা নেড়ে হাঁ জানায় খোকন দা। লোকটি বলে এ সূর্য পুরের প্রায় সকলকে আমি চিনি। কথাটা শুনে খোকন দার মাথায় হঠাৎ শক খেলো !কি বললেন ? আপনি এই গ্রামটার নাম সূর্যপুর ? লোকটি বলল হ্যাঁ। খোকন দা বলল– হ্যাঁ। এখানে আমি নতুন একটা কাজে এসেছি বলতে পারেন। এই যে ভাঙ্গা মন্দির টা দেখা যাচ্ছে ওখানে কি কেউ থাকে ?লোকটি বলেন– না না কেউ থাকেনা। মদ মাতালরা সকাল বিকেল হাজির হয়। কিন্তু সন্ধ্যার সময় আর কেউ থাকেনা তারও কারণ আছে। রাতের বেলায় নাকি অনেকে এখানে ভুত দেখেছে কিন্তু আশ্চর্য ওই বাড়িটা চারদিকে কোন লোকজনের বাড়ি নেই ।
লোকটার কথা শুনে আনমনা হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবতে থাকে খোকনদা । লোকটি বলে -বছর দেড়েক আগে একজন ভুত বিশ্বাস করে না এই গ্রামের একজন শিক্ষিত ছেলে। সে এটা পরখ করার জন্য রাত বারোটা একটার সময় এই মন্দিরের কাছেই দাঁড়িয়েছিল কিন্তু আশ্চর্য পরের দিন মন্দিরের গায়ে তাকে চৈতন্য হীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে প্রথম যখন জ্ঞান ফেরে- ভুত ভুত বলে চিৎকার করে !তারপর পাগলের অবস্থা হয় ! পরে তাকে পাগলা গারদে ভর্তি করে দেওয়া হয় ।এখনো রাঁচিতে পাগলা গারদ ও আছে ।তারপর আর কেউ সাহস দেখায়নি এখানে রাত্রে এসে ভূত আছে কিনা পরীক্ষা করা। কথাগুলো শুনে খোকন দার মনে আরো কৌতুহল বাড়ে। আবার মন্দিরে যায় চারদিক টা ভালো করে খুঁটিনাটি দেখে। কিছু পুড়া বিঁড়ি। কয়েকটা বোতল দেখে বোঝা যায় জলের বোতল কিছু আছে কিছু মদের বোতলও আছে । মন্দিরের ঠাকুর ঘর টির ঠিক পাশেই একটা অন্ধকার মতন ছোট ঘর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দরজা বন্ধ ।দরজাটা একটু ভাঙ্গা ফাঁকফোকর আছে। খোকনদা ওখানে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে। ইচ্ছা হচ্ছিল ভাঁগা ইট এনে তালা ভেঙে ঢুকি। তারপর সিদ্ধান্ত বদল করে ভাঙ্গা অংশে চোখটাই এনে ভিতরে কি আছে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু না। কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনি ঘরটা ছোট অন্ধকার। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক পায়চারি করে ভালো করে চারদিকে ঘুরে তারপর হোটেলে ফেরে। হোটেলে গিয়ে দেখে বন্টু তারই বয়সে একটা ছেলের সাথে রুমে গল্প করছে । ছেলেটার নাম আসিফ। এখানে ক্রিকেট ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য 15 দিন থাকবে এরই মধ্যে পাঁচ দিন কেটে গেছে। ছেলেটা বেশ চালাক চতুর। বন্টু র কাছে সব শুনেছে। খোকনদা তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝে নিল ছেলেটাকে বিশ্বাস করা যায়। তারপর খোকনদা বলে তোমাকে আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিমে রাখতে চাই। তুমি কি ইচ্ছুক ?
–হ্যাঁ ।আমি আগেই রাজি। ওর কাছ থেকে যখন শুনলাম তখন আমার ইচ্ছে করছিল আমিও এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি। বাচ্চা কাল থেকে অনেক ডিটেকটিভ বই পড়েছি। ফেলুদা, কিরিটি রায় ,শার্লক হোমস পড়তে পড়তে ইচ্ছা ও হত ,আমিও এরকম একটা ডিটেকটিভ যদি হতে পারতাম। এবার খোকনদা বলে আমি তোমাদের যা যা করতে বলব তোমরা তাই করবে। তুমি তো আমাদের উপর তলায় থাকো তাইনা ? মাথা নেড়ে হাঁ বলে আসিফ।
— তুমিতো বন্টু র মুখ থেকে সব শুনেছো। এমন ভাবে ইনভেস্টিকেশন করবে তোমাদেরকে কেউ যেন বুঝতে না পারে। তুমি শুধু দূর থেকে থানার অফিসারদের ফলো করবে। আর বন্টু। তুই কোন রাজনীতির নেতা বা কেউ আসছে কিনা ফলো করবি। তোমরা দুজন দুজনকে চেনো বা বন্ধুত্ব হয়েছে এটা যেন হোটেল বা অন্য কেউ না জানতে পারে ।তোমরা যা নিজেরা কথা বলবে এই ঘরের মধ্যে এসে। তোমরা এখন থেকে ফলো করো ।আমি একটু বিকেল বেলা একটু ঘুমাবো। সন্ধ্যে হলেই আমি যা ভেবেছি সেই কাজটা করতে এগিয়ে যাব।
— কি কাজটা করবে মামা ? কিছু কি সন্ধান পেয়েছ ?
এখন কিছু বলবো না তোদেরকে যা দায়িত্ব দিয়েছি সেটা কর। সব সময় একটা কথা মনে রাখবে তোমরা আলাদা আলাদা থাকবে কখনো কেউ যেন বুঝতে না পারে তোমরা পরস্পরের পরিচিত। মাথা নেড়ে তারা সায় দেয় । সন্ধের সময় টিফিন করে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে খোকনদা। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে নানা রকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তারপর চলে যায় ওই সূর্য মন্দির এর কাছে ।তখন রাত প্রায় সাড়ে সাতটা ।গুটি গুটি হালকা পায়ে টিপে টিপে ওই মন্দিরের কাছে আসে। না কেউ নেই। টর্চের আলো টিপাতে সাহস পায় না। যদি কেউ দেখে ফেলে। শীতের রাত চারদিকে নিঝুম দূরে ঘর গুলো যেন অন্ধকারে পরিণত হয়েছে। এখানে কারেন্টের আলো আসে নি। রাস্তায় আসার সময় কয়েকটা ঘরে লণ্ঠন বা হারকিন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল ।এখন কিছুই তা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। মনের মধ্যে ভয়ও আসতে আরম্ভ করলো ।চোর ডাকাতের নয় ভূতের ভয়! গাঢ় অন্ধকারে ভুতের ই তো যাওয়া আসা বেশি হয়। তারপর নিজেকে সান্ত্বনা দেয় অ্যাডভেঞ্চারে নেমে ভূতের ভয়ে থমকে দাঁড়ালে জীবনে কিছুই করা যাবে না। না ।ভুতের চিন্তা দূর করে এদিক ওদিক আস্তে আস্তে করে চোখ মেলাতে থাকে। এমনি করেই পনেরো-কুড়ি মিনিট কেটে যায়। তারপর হঠাৎ চোখ যায় দূরে একটা টর্চ লাইটের দিকে ।হ্যাঁ এই দিকেই তো আসছে ।খোকনদা তাড়াতাড়ি এই মন্দিরের পিছনে ঝোপের কাছে লুকিয়ে বসে থাকে ।মিনিট পাঁচেক পর ওই লাইট গুলো ওই মন্দিরের ঘরে ঢুকে। বেশ কয়েকজনের কথাবার্তাও কানে আসে । ওরা ঘরে ঢুকে ত্রিপল এর মত একটা পাশে ছিল ওটা পাতালো। তার আগেই ওরা কয়েকটা বড় মোমবাতি জ্বালিয়েছে । মোমবাতির আলোয় ওদেরকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ।এদের কে আমি চিনি। চিনি এরা তো সেই সব ডাকাতেরা! গায়ে কাঁপুনি আসতে আরম্ভ করল। তবুও সন্তর্পণে মন্দিরের দেয়ালের ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে আলো গড়িয়ে পড়ছে। খোকনদা সেখানে গিয়ে উঁকি মারতে আরম্ভ করলো। এক বয়স্ক লোক ।পরনে পাঞ্জাবি ।চোখে বেশ মোটা ফ্রেমের চশমা ।কানের কাছে পাকা চুল ।দেখলেই তো মনে হয় বড় রাজনীতিবিদ! কথাবার্তায় তো তাই ঝরে পড়ছে।খোকনদা কান চোখ দুটোই ভালো করে সজাগ করে রাখে।
দেখ টুডু ।তোকে এক লাখ টাকা দিয়েছি ।এর বেশি কিছু দেয়া যাবে না ।
—অনেক খরচা আছে– স্যার। একবার ভেবে দেখুন। প্রায় 9 লাখ টাকা মতন তুলে দিয়েছি। আমরা সকলে জান বাজি করে এ কাজগুলো করি। ধরা পড়লে জনতার মারে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হতে পারত ।আর কিছু বাড়িয়ে দেন স্যার ।
—না ।না ।না ।আর হবে না ।
— স্যার একটু ভেবে দেখুন স্যার। আমাদের দিকটা একটু খেয়াল রাখুন।
— ঠিক আছে ।যখন বলছিস, কালকে আসিস। থানার অফিসার কে তো দিতেই হবে ।কালকে উনি এলে কিছু বাড়িয়ে দেব ।কাল রাত নটার সময় হাজির হবি– সকলে বলে আচ্ছা স্যার। টুটু বলে আমাদের কথা একটু ভাববেন স্যার —হ্যাঁ ঠিক আছে দেখছি দেখছি। বলেই ভদ্রলোক চলে যায়। দুই একজন তার সাথে উনাকে ছাড়তে যায়।
অন্যান্যরা টুডুর দিকে তাকিয়ে বলে– বস। স্বপন বাবুটা কেমন !আমরা এত পরিশ্রম করে জান বাজি দিয়ে এত পাপ করছি। মানুষের কত ক্ষতি করছি ।আমাদের ভাগ্যে ক টাকা মাত্র জুটছে!
— এ ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ইনারা না থাকলে তো আমরা এতদিন জেলে পচতাম । মনে আছে পাঁচ বছর আগের কথা। উনাদের সাথে গন্ডগোল করে আমরা আলাদা হয়ে গেছিলাম। কি হল -দেখতে পেলি !যেখানেই আমরা চুরি করতে গেলাম সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে ঘিরে ফেলল এবং উনার কাছে হাতে পায়ে ধরে আমরা রক্ষা পেলাম। জানি আমরা ।স্বপন নস্কর লোকটা খুব বাজে। তবুও আমাদের করার কিছু নেই। উনার জন্য তো আমরা খেতে পরতে পারছি ।বউ বাচ্চাদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারছি। টুডুর কথা শুনে সবাই চুপ।
এই তাহলে স্বপন নস্কর। নাটের গুরু! বাড়ি ফেরে বন্টুকে সব কথা বলে। আসিফ কে ডেকে বলে- কালকে তোমাদের দুজনকে দেখিয়ে নিয়ে আসব জায়গাটা। পরেরদিন দুজনকে জায়গাটা দেখিয়ে নিয়ে আসে। এমন ভাবে যায় তিন জনকে যেন একসাথে কেউ না দেখতে পায়। আগেই কিছুদূর খোকনদা গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ।পরে আসিফ গিয়ে মিলিত হয় তাদের সাথে। দুপুরের দিকে আসিফ কে যা যা বড় বাবুকে বলতে হবে তা ভালো করে বুঝিয়ে দেয়। এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ছোট বাবু না থাকে। ছোট বাবু বড্ড ঘুষখোর এবং প্রচুর দুর্নীতিগ্রস্ত জানতে পারলে কাজটা পুরো পন্ড হয়ে যাবে। সে কথা যেন বড়বাবু গোপন রেখে কাজটা করে। বন্টু প্রশ্ন করে মামা তুমি না গিয়ে আসিফ কে পাঠাচ্ছ কেন ? খোকনদা বলে বড় বাবুর লোকটা কেমন তা আমি জানিনা ।আমরা যা কিছু শুনেছি এখানকার অনেকের মুখ থেকে ।মানুষকে বিশ্বাস করা খুবই কঠিন! সবাই বলে বড় বাবু খুব ভালো লোক। ভালো হলেই ভালো। যদি না হয় ?তাহলে যে আমাদের প্ল্যান টা নষ্ট হয়ে যাবে। আসিফ বলে নষ্ট হবে কেন? ধর বড়বাবু খারাপ ।এইসব বাজে কাজের সাথে যুক্ত সে যখন শুনবে তখন ডাকাতদের কে সজাগ করে দেবে। আর সবার দৃষ্টি আমাদের উপর পড়বে। আর তখন আমরা কিছুই করতে পারবো না। আমরা কি করছি না করছি আমাদের দিকে সব সময় ফলো করবে।
কথাগুলো শুনে আসিফের মুখটা কেমন শুকনো হয়ে গেল। তা দেখে খোকনদা বলে তোমার কোন ভয় নেই আমি তো আছি। তারপর আসিফ কি একটা ভেবেই নিজে থেকে বলে অ্যাডভেঞ্চারে যখন নেমেছি ভয়ের কোন কারণ নেই। —এটাই তো আসল কথা। খোকন দা আসিফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। বাহ এই তো সাহস !
আসিফ দুপুরের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে প্রায় ফাঁকা অফিস ঘর। সেই ফাঁকে বড় বাবু উপস্থিত আছে জেনে গিয়ে খোকন দার শেখানো কথা বলেন। বড়বাবু বিস্ময় তাকায়। বলে ঠিক আছে কোন জায়গায় তুমি আমাকে রাত আটটার সময় নিয়ে চলো।
রাত আটটা বাজে। শীতের রাত নিস্তব্ধ। মন্দির টার পিছনে বড়বাবু আসিফকে নিয়ে হাজির হয়। একটু দূরে এদের আড়ালে খোকনদা ও বল্টু তা লুকিয়ে ফলো করে। কিন্তু আশ্চর্য আধ ঘন্টা এক ঘন্টা পেরিয়ে যায়। কিন্তু কারোর দেখা নেই। বড়বাবু বিরক্ত হয়ে বলে তুমি ভুল ইনফরমেশন দিয়ে আমাকে খাটিয়ে নিলে একবারে অ্যাপসার্ড ! কাচুমাচু হয়ে আসিফ বাড়ি ফেরে। তিনজন একত্রিত হয়ে বসে আছে ঘরে। বন্টু বলে ডাকাতেরা জানলো কি করে! একটু দূরে খাটের উপর মাথা নিচু করে ভাবছিল খোকনদা ।সে বলে আমিও ভাবছি কি করে জানল ।এখানে আমার মাথায় অনেক প্রশ্ন এসে গেল তাহলে কি বড়বাবু এদের সাথে যুক্ত অথবা তুমি যে বড় বাবুকে বলতে গেছিলে সেই সময় আলাদা কোনো কনস্টেবল না ছোট বাবু কি শুনতে পেয়েছিল। আসিফ বলে না-না ছোটবাবু ছিল না সেখানে ।কোন কনস্টেবলকে চোখে পড়েনি ।বড় বাবুর রুমটা তো আলাদা ছিল। সে ঘরে কেউ ছিলনা। খোকন দা-কে বেশ কিছুটা চিন্তিত লাগলো।তারপর ঘরের ভিতরে পায়চারি করতে থাকে । “আচ্ছা আসিফ তুমি ঘুমাবে যাও।” আসিফ চলে যায় ।ঘন্টা দুয়েক পর টর্চ নিয়ে খোকনদা আবার বেরিয়ে পড়ে ।ওই মন্দিরের কাছে যায় ।কারোর কোন সাড়াশব্দ নেই। তারপর ফিরে ওই ফাঁকা বড় রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ঝোপের উপর বসে বসে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। এরই ফাঁকে পুলিশের ভ্যান গাড়ি যায়। আস্তে আস্তে এক একটা গাছের ডাল ধরে খোকন দা মেইন রোডের উপর উঠলো । দেখার চেষ্টা করে পুলিশের ভ্যানটা কোথাও দাঁড়ায় কিনা। কিন্তু না দাঁড়ালো না। কেউ এসে যেতে পারে ভেবে রাস্তা থেকে নিচে গিয়ে বসলো। কি করা যায় যায় ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দেখি আর একটা গাড়ির আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে উঠে পাশেই একটা ঝোপের মত ছোট খেজুর গাছ। ওইখানে নিজেকে আড়াল রেখে গাড়িটা কে ফলো করে। আবার সেই পুলিশ ভ্যান এবার কিছুটা দূরে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। কয়েকজন নেমে চারদিকে টর্চের আলো ঘোরায়। কয়েকবার তার পাশ দিয়ে চলে যায় টর্চের আলো। খোকনদা আরো সতর্ক হয়ে নিজেকে ঝোপের কাছে আড়াল করে রাখে। তারপর টর্চ এর আলোকে আকাশের দিকে তাক করে ঘোরাতে আরম্ভ করে। খোকনদা আস্তে আস্তে করে পা ফেলে ওইখানে যাওয়ার চেষ্টা করে। খুব কাছে এসে গেছে। ওরা রাস্তায় আর খোকন দা ওদের ঠিক রাস্তাটার নিচে কয়েকটা গাছের তফাৎ ।কানটা খাড়া করে বসে থাকে ।খোকনদা চোখ দুটোর দৃষ্টি যেন স্থির। কয়েক মিনিটের পর একটা বাইকে একটা 30 -35 বছরের এক যুবক হাজির হয়।– স্বপন বাবু আসেনি? — না আসেনি। কালকে পুরনো শীতলা মন্দিরে দেখা হবে– কটার সময় ?— রাত বারোটার পর।– ঠিক আছে আসলাম। বলেই ওরা চলে যায়। তাড়াতাড়ি হোটেলে ফেরে। হোটেলের দারোয়ানকে বেশ কিছু টাকা আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে। দেরি করে ফেরা মাঝরাত্রে বেরিয়ে যাওয়া এই কথা যেন হোটেলের কর্তৃপক্ষের কানে না যায়। থানাথেকে যাতে তাকে না চোখে পড়ে তাই সে হোটেলের পিছনের দিক দিয়েই ঢোকে দারোয়ানের সাথে সেই রকমই কথা হয়েছে। রুমে ঢুকে ঘুমাতে যাবে হাতঘড়িতে দেখে রাত দুটো। নানা রকম ভাবতে ভাবতে ঘুম টা প্রায় আসতে যাচ্ছিল ।হঠাৎ একটা শব্দ হলো খুব জোরে নয় ।জানলাটা আস্তে করে খুলে দেখে, কে যেন পিছন দিয়ে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠছে। যা অল্প ফাঁক দিয়ে খোকনদা খুব ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে। নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় নিচেও কয়েকজন দাঁড়িয়ে। উদ্দেশ্য কি এদের ? এই রাত্রি বেলায়! চুপ টি করে দেখতে থাকে। লোকটি উপরে উঠে ।লোকটি ঠিক নয় ,বয়স দেখে মনে হচ্ছে 25 খানি হবে । কারেন্টের আলোয় বেশ বোঝা যায়। কিন্তু কি করতে চাইছে। আশ্চর্য জানলার পাল্লা খোলার চেষ্টা করছে ! হ্যাঁ, ওতো আসিফের ঘরের জানলা! কেন? চোর ডাকাত ! কিন্তু এত ঘর থাকতেও এই ঘরে যাবে কেন ? না ! আবার পিছন দিয়ে! আসিফ তো বিপদে পড়বে ! সঙ্গে সঙ্গে জানলার পাল্লায় আওয়াজ তুলে খোকনদা চিৎকার করে ।সঙ্গে সঙ্গে ওই ছেলেটি তাড়াতাড়ি নিচে দেয়াল বেয়ে নামতে থাকেরে । –কে কে ওখানে? জোরালো গলায় চিৎকার করে খোকনদা -চোর! চোর! চোর ! খোকনদা দেখে নিচের যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা পালিয়ে গেছে। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে খোকন দা । দারোয়ানরা ছুটে আসে। ব্যাপারটা সব শুনলো । তারা দৌড়ে গিয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল ।কয়েকজন খানার দিকে গিয়ে ঘটনাটা বলতে থাকে। ততক্ষণে আসিফ বাইরে বেরিয়ে এসে খোকন দার কাছে চলে আসে। হোটেলের ম্যানেজার খোকনদা আর আসিফ থানায় ঢুকে । বড়বাবু ছিল না। তারা সবাই ছোট বাবুকে সব বলে। ছোট বাবু কয়েকজন পুলিশ কে নিয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোকনদা জানতে চায় তোমাকে কি বলেছিল ? আসিফ বলে দরজায় টোকা মারতে আমার ঘুম ভেঙে যায় পাল্লাটা খোলার চেষ্টা করে। আমি বোকার মত পাল্লাটা খুলে দিই। সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকের রিভলবার দেখিয়ে বলে কাল থেকে যদি এখান থেকে না বেরিয়ে যাস তোকে খুন করে মাটিতে পুঁতে ফেলবো ।কেউ টের পাবেনা। যখন ছোট বাবুর কাছে ও কথাগুলো বলছিল ,খোকনদা কোন প্রশ্ন না করে চুপ করে ছিল।
পরের দিন সকাল। খোকন দার রুমে আসিফ আসতেই প্রশ্ন করে। আচ্ছা তুমি যখন বড়বাবুকে ওখানে নিয়ে গেছিলে, কোন কিছু দেখতে না পেয়ে বড়বাবু তোমায় কোন প্রশ্ন করেন?—- হ্যাঁ ।অনেক কিছু প্রশ্ন করেছিল। তুমি কোথায় থাকো ?আর কতদিন থাকবে ?ভুলভাল সব দেখে তুমি আমাকে এরকম হ্যারাস করলে । তোমার অত দিকে মন দেওয়ার দরকার নেই ।তুমি এখানে শিখতে এসছ ।সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকো। খোকনদা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলে। বুঝতে পেরেছি। যাকে সবচেয়ে ভালো ভাবছি সেই আসল নাটের গুরু। বন্টু আর আসিফ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ডায়েরীর খাতা টা বার করে। ফোন করে ছাত্রী উমাকে। সমস্ত ঘটনাগুলো তাকে শোনায়। তার কাকু লালবাজারের এক বড় অফিসার। সঙ্গে সঙ্গে উমা কাকুকে সব জানায়। উমা খোকনদাকে কাকুর সাথে ফোনে সংযোগ করিয়ে দেন । ঘন্টা তিনের মধ্যে সিভিল ড্রেসে লাল বাজার থেকে ফোর্স নিয়ে চলে আসবে বলে কথা দিয়েছে। কিন্তু আগে খুঁজতে হবে শীতলা মন্দির টা কোথায়। আসিফ কে সাবধানে থাকতে বলে খোকনদা বেরিয়ে যায়। সেই পুরনো সূর্য মন্দির পেরিয়ে আরো কিছুদূর হেঁটে যায় অনেকেই শীতলা মন্দিরের হদিস দিতে পারেনি । একজন বয়স্ক লোক কে জিজ্ঞেস করতেই বলে অনেক আগে একটা পুরনো শীতলা মন্দির ছিল ।এখন কোন সেখানে ঠাকুর নেই। বাড়িটা ভাঙ্গা অবস্থায় আছে ।পশ্চিম দিকে 10 মিনিটে হেঁটে গেলে দেখতে পাবেএকটা বড় দীঘি। তার উল্টো দিকে একটা জীর্ণ অবস্থায় ভাঙ্গা মন্দির পড়ে আছে। ওটা কি না একবার দেখতে পারো। উনার কথা মত খোকনদা এগিয়ে যায়। সত্যি দেখতে পায় একটা দিঘির পাশে একটা পুরো ভাঙ্গা আদ্দিকালের এক মন্দির। ভিতরে এদিক ওদিক করে ঢুকে গিয়ে দেখতে পায় খোকন দা একটা ভাঙা অংশে লেখা আছে তলা মন্দির। শি কথাটা ভেঙ্গে খসে পড়েছে । কিন্তু তো এখানে তো বসার জায়গা নেই। এদিক ওদিক তাকায়। মনে হয় এই মন্দিরটা নয়। তার সামনে একটা প্রকাণ্ড নিমগাছ তার বড় একটা ছায়া। ওর নিচে গিয়ে বসলো। তারপর খোঁজার দৃষ্টিতে চারদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।
না তেমন কিছুই পেল না। এবারের যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায় অন্য কোথাও কোনো শীতলা মন্দির আছে কিনা। আবার খুঁজতে হবে। তাই দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করে এগিয়ে যাবে হঠাৎ একটা গাছের শিকড়ের মতো পায়ে লেগে উল্টে পড়ে। উঠে দাঁড়ায়। শিকড় টা কেমন দেখতে গিয়ে অবাক হয়। শিকড় টাকে সরিয়ে দেখে। বেশ অবাক হয়। এটাতো মাটির নিচে কোন এক সুরঙ্গ। খুব জোরালো শক্তি প্রয়োগ করে সুড়ঙ্গের দরজা খোলার চেষ্টা করে। দরজাটা মাটির সাথে সমান্তরাল। ঠিক যেন পাম্পের টাংকির ঢাকনি। বহুকষ্টে ঠেলে ওটাকে সরায়। চারদিকে লোক বা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। প্রায় চারদিকে ফাঁকা। এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ওই সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। খুব সন্তর্পণে একটার পর একটা পা ফেলে আস্তে আস্তে করে এগিয়ে যায়। কয় পা এগুতে গিয়ে দেখে সামনের জানালার মত একটা গেট !পাল্লা দিয়ে বন্ধ করা আছে। টেনে খোলার চেষ্টা করেন কিন্তু না খুলতে পারা গেল না। একটা লোহার তালা দিয়ে আটকানো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শেষ চেষ্টা করেও তখন কিছু হলো না। উপরে ফিরতে হলো। উপরে উঠে আগের মতো সবকিছু কে সাজিয়ে রাখল। তারপর চারদিকে তন্ন তন্ন করে খোঁজার চেষ্টা করে অন্য কোন গেট আছে কিনা না । অন্য কোন গেট খুঁজে পাওয়া গেল না। তারপর বাসায় ফেরে।
সন্ধ্যা ছটা সাতটা সময় মেন রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে লালবাজার ফোর্স এর অপেক্ষায় থাকে খোকন দা । তার আধঘন্টার পর পৌঁছে যায় ফোর্স। হাজির হয় প্রায় 25-30 জন কেউ থানা মুখী হলেন না। এদের মধ্যে মেন অফিসার হল অমিতবাবু। উনি জানতে চাইলেন সমস্ত ঘটনা ।খোকনদা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব কিছু বললেন। শোনার পর উনি বললেন আমরা পাঁচ দিনের সময় নিয়ে এসেছি কোন চিন্তা করবেনা। আজকে যদি না সাকসেস হই ,আশা করি কাল পরশুর মধ্যেই সাকসেস হব।
অমিত বাবুর কথা মত দু একজন থানার কাছাকাছি থাকে ।বড় বাবু ছোট বাবু কে ফলো করার জন্য প্রত্যেকের হাতেই মোবাইল আছে ।কোন রহস্যমূলক যদি ঘটনা পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে যেন ফোন করে দেয় ।
রাত 11 টা নাগাদ থানার বড়বাবু বেরিয়ে যায় বাইক করে। পুলিশের কোন ভ্যান নিয়ে যায়নি ।খবরটা আমিত বাবুর কাছে পৌঁছে যায় । এরপর অমিত বাবু দলবল নিয়ে সুড়ঙ্গের কাছাকাছি ঝোপের আড়ালে অপেক্ষা করতে থাকে।
রাত সাড়ে এগারোটার সময় কয়েকজন হাজির হয় ওই সুড়ঙ্গের কাছে। তাদের মধ্যে একজন লম্বা টর্চ কে নিয়ে আকাশের দিকে তাক করে আলো ঘুরাতে থাকে। তার 10-15 মিনিট পরে আরো কয়েকজন এসে হাজির হয়। তারপর একে একে ওই সুরঙ্গ টার ভিতরে ঢুকতে থাকে অনেকের হাতে লম্বা লম্বা এক একটা টর্চ। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবাই ঢুকে যায়। একজনকে রিভলবার হাতে দাঁড়াতে দেখা গেল । সে আবার কিছুক্ষণ পর মাটিতে রিভলভারের রেখে বসে খৈনি খেতে আরম্ভ করলো। এমন সময় অমিত বাবুর নির্দেশে ওকে পিছন থেকে গিয়ে জাপটে ধরে। রিভলবারটা কেড়ে নেওয়া হয়। তার মুখ বেঁধে বেশ কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে উত্তম-মধ্যম কয়েকটা মার দেওয়ার পর তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। প্রাণের ভয়ে তখন সে সবকিছু বলে দেয়। থানার বড়বাবু এবং রাজনীতি নেতা স্বপন নস্কর ডাকাতির মূল কারিগর। সুড়ঙ্গের মুখে ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পর এক একজন জন বেরোলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে আটক করা হয়। আস্তে আস্তে থানার বড়বাবু থেকে স্বপন নস্কর সবাই কে আটক করা হয় বড়বাবু প্রথম প্রথম হম্বিতম্বি দেখালে উনাদের পরিচয় পাওয়ার পর চুপ হয়ে যায়। পরের দিন মিডিয়া এসে হাজির। বহু জনগণ এসে হাজির। সবাই বড়বাবু ও রাজনীতি নেতার স্বপন নস্কর কে ধিক্কার দিতে লাগলো। কেউ কেউ তাদের নিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করতে থাকলো । সকলের মুখে মুখে খোকন দার নাম প্রশংসা উচ্চারিত হলো। পরের দিনে প্রত্যেকটি পেপারে খোকন দার নামে প্রশংসিত ছবি বেরোলো। ডাকাতিতে যাদের চুরি হয়েছিল সবাইকে তাদের হারিয়ে যাওয়া টাকা অন্যান্য দ্রব্য সব ফিরিয়ে দেওয়া হল । এই দ্রব্যগুলো দিনের বেলায় সুরঙ্গ থেকে ঢুকে বার করা হয়েছিল।
ডাকাতের গল্প ছোট গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভরুয়া
উদ্বর্তিনী
নীলবাস্প