ভয়ানক সেই রাত ভৌতিক গল্প – শুভঙ্কর ভট্টাচার্য
অবিনাশ যখন দমদম বিমানবন্দরে নামে তখন রাত হয়ে গেছে । বেশ অনেক দিন পরে বাবা মা আর ভাইয়ের সাথে দেখা হবে ভেবেই মনটা খুশিতে নেচে ওঠে, দিল্লি তে একটি বহুজাতিক সংস্থা তে চাকরি পেয়ে প্রায় বছর খানেক আগে যাওয়ার পর কলকাতা তে একবারও আসতে পারেনি , অফিসের ছুটি পাইনি বলে । এমনকি দুর্গা পূজা তেও আসেনি বলে মা বাবা সকলেরই মন খারাপ হয়েছিল, অবশেষে কালীপূজার ছুটি পাওয়ায় দিন তিনেকের জন্য কলকাতা তে আসে ও। কালীপুজোর আগের দিন বিকেলের ফ্লাইটে কলকাতা তে আসে , মা বাবা কে আগেই সব জানিয়ে দেওয়াতে বাবা মা ও ভাই খুব খুশি হয় বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকে । এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই অবিনাশ বাবা কে ফোন করে জানালো ” কোনো টাকসি তে করে ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই বাড়িতে আসছে “। এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে অবিনাশ দেখে টাকসির লাইনে বেশ ভালো ভিড় আসলে কালীপুজো, ভাইফোটার সময় তাই সবাই যে যার বাড়িতে ফিরছে তাই এত ভিড় , এদিকে ওদিকে তাকাতেই টাকসির স্টানড থেকে দূরে একটা ফাঁকা টাকসি দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবিনাশ ভাবে হয়তো কোনো যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে, কাছে এগিয়ে গিয়ে ও জিজ্ঞাসা করে ” দাদা আপনার টাকসি কি বুক করা ?” পিছনের দিকে মুখ করে থাকা লোকটি অবিনাশের দিকে তাকাতেই অবিনাশ একবার আতকে ওঠে, কারন লোকটির চোখের মনি দেখা যাচ্ছে না , লোকটির শরীরে মাংস বলতে কিছুই নেই আর গায়ের জামা কাপড় অনেক পুরোনো । লোকটি বিকট শব্দে বলে ” অপেক্ষা করছি কে আজকে আমার গাড়িতে উঠবে, অনেক সময় ধরেই দাড়িয়ে আছি কিন্তু কেউ আমার পুরোনো গাড়িতে উঠছে না “। অবিনাশ একবার ভাবলো লোকটির হাব- ভাব সুবিধের নয় , গাড়িটাও তো মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো । তখনই গাড়ির লাইনে চোখ পড়তে দেখলো , ওই লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়িতে ফিরতে অনেক রাত হবে । বাবা মা আর ভাইকে দেখার জন্য অপেক্ষা না করতে পেরে , বাড়ির ঠিকানা জানিয়ে ওই গাড়িটাতে উঠে পড়লো । ওর গাড়িতে যাবে শুনে লোকটি একটা বাঁকা হাসলো , যেন অনেকটা অপেক্ষার পর কিছু পেয়েছে । অবিনাশ সেদিকে তেমন নজর না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো । এক দু কথাতে অবিনাশ জানলো লোকটির নাম সীতেশ । সীতেশ হঠাত্ করেই অবিনাশ কে বলে বসলো , জানেন তো আজ ভূত চতুর্দশীর রাত “। অবিনাশ এমন কথাতে একটু অবাক হয়ে বলে ” ভূত চতুর্দশীর রাত কিনা তা আমার যেনে কি হবে ?” সীতেশ সামান্য হেসে বলে ” আজকে রাতে ইললোক এবং পরলোকের দরজা খুলে যায় এবং ওই দুনিয়ায় আত্মারা এই পৃথিবীতে আসার সুযোগ পায় এবং তাদের কোনো আকাঙ্খা অপূর্ণ থাকলে তা পূরণ করার চেষ্টা করে “। সীতেশর বলার ভঙ্গিমায় অবিনাশের বেশ অসসতি লাগতে থাকে । নিজেকে একটু শক্ত করে সীতেশ কে বলে ” ওইসব মানুষের মনগড়া কাহিনী আজকের দিনে আত্মারা আসে, ওইসব কিছুই হয়না “। সীতেশ কেবল একবার অবিনাশের দিকে তাকায় আর কোনো কথা বলে না । আরও কিছুটা গাড়ি এগোতেই সীতেশ মেন রোড ছেড়ে, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে, অবিনাশ জিজ্ঞাসা করে ” মেন রোড ছেড়ে তুমি এটা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছো?” সীতেশ বলে ” চিন্তা করবেন না সর্টকাটে নিয়ে যাচ্ছি , এইপথে তারা তারি বাড়িতে পৌছে বাবা মা , ছোট ভাইকে দেখতে পাবেন ।” এইকথা শুনে অবিনাশ বেশ অবাকই হয় , ওর বাড়িতে কে কে আছে ওতো একবারও এই সীতেশ কে বলেনি তাহলে ও জানলো কি করে ! পড়ে নিজেই নিজেকে বোঝালো হয়তো কথা বলতে বলতে বাড়ির কথা বলে ফেলেছে এখন ওর মনে নেই । গাড়ি কিছুটা চলার পড়েই একটা বাড়ির কাছে এসে সীতেশ গাড়ি দার করিয়ে বললো ” বাবু আপনি একটু গাড়িতে বসুন আমি বাড়ি থেকে আসছি “। এই বলে সীতেশ বাড়িটার ভিতরে চলে গেল । অবিনাশ গাড়িতে বসেই দেখলো সীতেশ বাড়িটা ছোট কিন্তু বেশ সুন্দর, কালীপুজোর উপলক্ষে টুনি লাইট এবং বাইরে ছোট ছোট প্রদীপ জলছে । বেশ অনেকক্ষণ বসে থাকার পড়েও সীতেশ বাড়ি থেকে আসছে দেখে বিরক্ত হলো, কারন ওর এতে নিজের বাড়িতে পৌছাতে দেরী হচ্ছে । অবিনাশ আরও একটা জিনিস খেয়াল করে সীতেশর বাড়ির সব দরজা, জানালা খোলা কিন্তু বাড়ি থেকে কাউর কোনো আওয়াজ আসছে না, অবিনাশ ঠিক করে সীতেশর বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখবে ও এখনও আসছে না কেন ।গাড়ি থেকে নেবে এদিকে ওদিকে তাকাতেই অবিনাশ দেখলো সীতেশর বাড়ির আশে পাশে আর একটাও বাড়ি নেই কেবল বড়ো বড়ো গাছপালা আর একটি কবরখানা । অবিনাশ সীতেশর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বাড়িটার ভিতরে গিয়ে ঢুকলো , বাড়িতে ঢুকতেই অবিনাশ ধাধাতে পড়ে গেল , বাইরে থেকে যে বাড়িটা লাইট, প্রদীপ দিয়ে এত সুন্দর করে সাজানো আর সেই বাড়িটার ভিতরে একি অবস্থা , চারিপাশে মাকড়সার জাল, জিনিসের ওপরে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ধূলো , আর বিকট গন্ধ যার ফলে অবিনাশের দুপুরে করা লাঞ্চের খাবার যেন বমি হয়ে বেরিয়ে আসছে। এমন সময় যে দরজা দিয়ে অবিনাশ সীতেশর ঘরে ঢুকেছিল সেটা হঠাত্ শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল । চারিপাশে এখন কেবল অন্ধকার, এইবার সত্যি সত্যিই অবিনাশের ভয় করতে শুরু করেছে; পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার টর্চ জ্বালিয়ে ঘরের একপাশ থেকে অন্যপাশে ঘোরাতে ঘোরাতে সীতেশর নাম ধরে ডাকতে শুরু করে । ঘরের এক কোনে টর্চের আলো পরতেই অবিনাশের শরীরে বরফ কুচি বয়ে যায় ও দেখে ঘরের এক কোনে সীতেশ দাড়িয়ে আছে, এ কোন সীতেশ!! ওর মাথাটা সামনের দিকে হলেও শরীর টা পিছনের দিকে, দুটি চোখে মনি বলে কিছু নেই শুধু অন্ধকার, পা দুটি বাঁকা আর হাতে একটা ধারালো ছুরি যাতে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত লেগে আছে, সেই অবস্থায় সীতেশ হাসতে হাসতে বলে ” বলেছিলাম যে ভূত চতুর্দশীর রাতে আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসে যেমন আমি প্রতি বছর এইদিনে ফিরে আসি “। অবিনাশ কাঁপতে কাঁপতে বলে ” তবে তুমি কি ইচ্ছে করে আমাকে এখানে এনেছো ?” সীতেশ জানায় ” প্রতি বছর ভূত চতুর্দশীর রাতে আমি একজন জীবিত মানুষের রক্ত পান করি , আর পাঁচ জন জীবিত মানুষের রক্ত পান করলে আমি শয়তানের আশীর্বাদ পাবো , আর অমরত্ব পেয়ে যাবো , মরার আগেও আমি এই কাজ করে গেছি , তখন রক্তহীন মৃতদেহ মাটিতে পুতে দিতাম , কয়েক বছর আগে গাড়ি একসিডেনটে মরার পরেও প্রতি বছর এই ভূত চতুর্দশীর রাতে পৃথিবীতে ফিরে আসি আর তোর মতোই কাউকে আমার এই বাড়িতে নিয়ে এসে তার গলা কেটে রক্ত পান করি ।” অবিনাশের এখন মাথা ঘুরছে, তা সততেও দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে যাবে দেখে আগেই সীতেশ না না পরলোকের কেউ দরজার দিক থেকেই হাতে সেই শুকিয়ে যাওয়া ধারালো ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসছে, আর তারপরেই সব শেষ। সারারাত বাড়িতে না ফেরায় অবিনাশের বাবা মা পুলিশকে খবর দেয়, ওর মোবাইলের লাস্ট লোকেশন টেরেস করে পুরোনো, ভাঙা সীতেশর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে অবিনাশের গলা কাটা রক্তহীন ছিবড়ে হয়ে যাওয়া দেহ খুঁজে পায় । পুলিশ মাথা নিচু করে জানালো বিগত কয়েক বছর এই সময় এই বাড়িতে এক জনের রক্তহীন দেহ খুঁজে পাওয়া যায়, এই বাড়িটা সীতেশ নামে এক ড্রাইভারের ছিল যে কয়েক বছর আগে গাড়ি একসিডেনটে মারা গেছে , আর তবে থেকেই এই বাড়িটা ফাঁকা পড়ে আছে; কিন্তু কি ভাবে এখানে এই সময়টাতেই মৃতদেহ আসে কেউ বুঝতে পারে না ।
ভয়ানক সেই রাত ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
রাজবাড়ী রহস্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন