হঠাৎ ছোটগল্প – অনিন্দিতা ঠাকুর
আজকে সকাল থেকেই কেমনযেন এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছে। বিয়াস নদীর ধারে আমি একা বসে ডায়রী লিখছি। এটা আমার একটা অভ্যাস বলা যায়। আর এই অভ্যাসই আমার সঙ্গী। দুপুর থেকেই বসে আছি। দুপুরের তপ্ত রোদমাখা নীল আকাশে সাদা মেঘ দেখতে দেখতে আর এলোমেলো হাওয়ার ধাক্কায় সময়টা যেন হুট করেই পেরিয়ে গেল। এখন প্রায় সন্ধ্যে নামবো নামবো করছে। গোধূলির আকাশ যেন কমলা রঙা চাদরে মোড়া। বেশ খানিকটা দূরে উঁচু-নিচু কতকগুলো পাহাড়ও রয়েছে। কমলা চাদরে মোড়া আকাশে ওইদূর পাহাড়ের মধ্যে সূর্যিমামা তখন লুকোচুরি খেলায় মত্ত। এই লুকোচুরি খেলতে খেলতেই সে আজকের মতো বিদায় নেবে। আবার দিনের আলো ফোটার অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুরু করবে ব্যাস্ত জনজীবন। এইসব সাত- পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে পড়েছে খেয়াল করিনি। নদীর ধারের এলোমেলো হাওয়ায় কত কথা যে কানে আসে তার হিসাব থাকে না। আজও সেরকমই হলো। শুধু কিছু মানুষের সঙ্গে সেই একদিনের পর আর কখনও দেখা হল না —- এই ভেবে মনটা যেই খারাপ হতে শুরু করবে ওমনি কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দিলো। আমি পিছন ফিরে দেখার আগেই সে বলতে লাগল — এই যে আপনি, জানেন এখন কটা বাজে রাত দশটা। আপনি এই ডায়েরিটাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে দয়া করে বাড়িতে বসে লেখালেখি করুন। এখনকার পরিস্থিতি ভালো নয়, কত খারাপ মানুষ রাত্রিবেলায় ঘোরাফেরা করে জানেন না……..এখানে এরকম ভাবে এতো রাত পর্যন্ত না থেকে ……….
আমি অবাক হয়ে গেলাম এইরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা আর এখন রাত হয়ে গেছে —- সে যাই হোক লোকটার ওপর আমার হেব্বি রাগ হলো, বেশ লিখছিলাম কবিতাখানা, দিলতো ছন্দপতন ঘটিয়ে, আমি বেজায় চটে গিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম —– হলো আপনার বলা শেষ, এবার আমি বলতে পারি কি……সে রাত হয়েছে তো কি আছে আমি আমার নিজের দায়িত্বে এখানে বসে আছি, আপনার দায়িত্বে তো নেই….আর এটা নিশ্চয় আপনার কেনা জায়গাও নই, তাই আপনি আমার বিষয়ে নাক না গলিয়ে, বরং নিজের বিষয়ে গলান , ঠিকআছে……..আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই হ্যাঁ,…… যে আপনি এতো জোর খাটাবেন আমার উপর।
এই এতো সব উটকো কথা বলে যেই আমি ওখান থেকে চলে যাচ্ছিলাম ওমনি কেমনযেন লোকটার গলার স্বরটা আমার খুব চেনা লাগল। আবছা আলোতে মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। ভাবলাম একবার দেখি তো লোকটা কে। এইভেবে যেই পেছন ঘুরলাম দেখি লোকটা আর একা নেই তার সঙ্গে একটি মেয়েও আছে। আর কিছু না ভেবেই আমি মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বালিয়ে লোকটার দিকে তাকাতেই এক ঝলকানিতে বহুকাল আগের কোনোএকদিনের কথা ক্রমবর্তমান জীবনের আঙ্গিকে যেন হঠাৎ করেই ধরা দিল। এটা অভিকদা না?…….সঙ্গে সঙ্গে আমি মোবাইলের ফ্লাশ লাইটটা নিভিয়ে দিলাম। এখন আর এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছে না। বিয়াস নদীর রাত্রিকালীন আনমনা হাওয়ায় অভিকদা এখন আদুরে-আবদারের নেশায় মত্ত। কিছু প্রতিচ্ছবি বরং না জানা চাদরের আড়ালে লুকিয়ে যাক, কিছু মুখ আবারও পুনরায় হারিয়ে যাক, কিছু জিনিস না জানায় থাক আর কিছু কথা শুধু ডায়রির পাতাতেই শক্ত করে লেগে থাক—– বিয়াস নদীর কলকল শব্দের মতোই স্মৃতি গোচরে জড়িয়ে থাক না ক্লান্ত দিনের একরাশ যন্ত্রণা আর না বলা কথার হাপিত্তেস —- যেমনটা এতোদিন ছিল, ঠিক তেমনি করে।
হঠাৎ ছোটগল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
বেড়ানোর টুকিটাকি – টিউসানের সাইকেল টুর থেকে স্কুটিতে দার্জিলিং