অন্তরীক্ষ কথা কবিতা – স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়
অর্ধেক করে ফেললে, তবে তো ভোজের পৃথিবীতে সুস্বাদু হয়ে উঠি।
আমরা মানুষজন লোহার কড়াইয়ের ওপর ব’সে হেসে মাপজোক করছি,
বাকি অর্ধেকের ওপর আরো কয়েকশো কোটি-ভাগ রোডম্যাপ খুঁজছি।
শতাংশে হিসেব হবে কে কতো কম দিনে আশারও অনেক বেশি বাতাসা পেয়েছি,
লুঠ, লুঠসর্বস্ব হওয়ার ছবি কতোবার অন্তরীক্ষ ঘেঁটে দেখেছি।
তার আগে শূন্য সময়ের দিকে হাঁটি।
লোহার কড়াইদুটো এক ছিলো, মানে পৃথিবী শূন্য ছিলো…নিষ্প্রাণ।
ভেতরের খণ্ড-খণ্ড লোহার তন্ত্র ও শরীরে কি বাসনা তোর ছিঁচকে অঘ্রাণ?
কেউ কোনোদিন একসাথে থাকতে চাইনি।
ও রাঁধুনি, তুমি কি পূর্ণ গোলকে রান্না করবে শুনি?
জলে আঁইঢাঁই করে, নড়েচড়ে ওঠে প্রাণ, আহা, কি প্রাণ ছিলো গো জড়ের ভেতরে ভেতরে!
এতো কথা একালে বলে না, আঙুলে আঙুলে নির্দেশের মতো বন্ধুত্ব করে যাও ফসলের জ্বরে।
ওহো, ফসল না ফললে কিসে রান্না হবে?
তুমি কড়াই দেখে লোভে গর্তে লাফ দিতে যাবে,
কিন্তু গর্ত শুধু কালো – তার আগে বিভাজন করতে হয়েছে।
তোমার আসার আগেই পৃথিবীতে মন্বন্তর লেগেছে।
যাই হোক, হে বিজয়ী, এই তো মানবধর্ম…আসা মানে যোনি-নাড়ি ছিন্ন করে আসা,
যাতে গর্ভিণী টের পায়, হ্যাঁ, কেউ তো এসেছিলো…ঝড়-বৃষ্টি, মাথামোটা চাষা।
খাসা মরদের মতো এখন যদি না তাকিয়ে থাকো, তবে ডাল-ভাত ফুটবে না, কষা মাংস বাদ যাবে।
অনাহারে মরার চেয়ে এসো না দুজনে গল্প করে, আরো কিছু কিছু করে রাত জাগা হবে।
রাতে তো চাঁদ নেই, লাগেও না, কালো গর্ত হাঁ করে দেনায় পড়ে আছে।
দেনা মানে ব্রহ্মাণ্ডে একেশ্বরী হবে, আর বাসনা-কামনায় নতুন ঈশ্বর হয়ে কেউ কি হাসছে?
ওই দ্যাখো, বৃষ্টি আসে, আয় বৃষ্টি ঝেপেঝুপে মুখ থুবড়ে পড়, ধর,
তোরা বৃষ্টি ধর, লোহার কড়াইটাকে বৃষ্টির নিচেতে গিয়ে বসা, মর
খোক্ষসের বাসা, আর রাক্ষস-রাক্ষসীরা শিকারের খোঁজে গেছে বন্য বর্বর।
আয় প্রাণ, তোতে ও আমাতে আজ ধ্বংসের গল্প করি, খেলা করি – জল খেলা, বল খেলা,
মুণ্ড লোফালুফি খেলা…বস্ত্র ও অলংকার ধরে টানি, দ্যাখ তো, তারা মানে শিকার ও নরমাংসঢেলা।
খেলা কিছু বাকি পড়ে আছে নাকি, তাহলে কড়াইয়ে চাপিয়ে দে, তার আগে গরম তেলে মশলা
ও মানুষের রক্ত এক করে ঢেলে দে…নারী ও পুরুষ, ক্লীব সব এলেবেলে মালা।
শোন, লোহার পূর্ণতাল জোড়া ছিলো, দেবতার হিংসে হলো, তার চেয়ে অনেক বেশি
হিংসে করলেন দেবীরা… দাস-দাসী, নর্তক ও নর্তকীরা ধীরে-সুস্থে খেয়েদেয়ে শেষে
হিংসেয় ফেটে পড়লেন, এবার তৈরি করো রণক্ষেত্র রণে-বনে-ঝোপে ও জঙ্গলে।
দুর্বলতা ছিলো, তাই অম্ভি ও পুরুর মতো আড়াআড়ি দেব্তাদের ঝগড়ার তলে তলে –
স্বর্গের সিঁড়ির নিচে অসুরেরা লুকিয়ে ছিলো…ভাঙ ভাঙ এবার ব্রহ্মাণ্ড।
অসুরও দেবতা নয়, দেবতাও অসুর নয় – দুজনেই দুজনার শিকড় ও কাণ্ড।
তাই ফুল ফোটে, ফুটে পায়ে পিষে যায়, কিম্বা বিকেল হলে জলে ও ছায়ায়
ভিজে-শুকনো; ভিজে-শুকনো ন্যাতা ও ন্যাকড়ার মতো পড়ে থাকে, দুঃখ পায়।
ফুল তো মানুষ, আর ফুল তো শিশু, তাই দেবতার বিচারের সব দোষ ওরাই নিলো।
আর পূর্ণ লোহার তাল – দুভাগে, দুদিকে…দ্যাখো, কিভাবে গর্তে ওই মানুষ দাঁড়ালো?
দ্যাখো, আর ছিটকে ছিটকে আসা মশলার গন্ধ শোঁকো…ভালো-মন্দ দুই-ই পাওয়া যাবে।
ভালো তো সবাই নেয়, মন্দ নেবে কে কে – ওই শিশুটাকে ডাকো, ছুটে আসবে।
ও আমার, ও তোমার, ও সবারই… ব্রহ্মাণ্ড-ছেদ হওয়া গ্রহের দুঃখী।
তাই অচ্ছেদ্য বন্ধনে ওকে প্যাঁচ-পয়জারে ভুগিয়েছি… আহা, স্বার্থপর কি?
না না, আসলে ফকির ও ফন্দি দুই-ই থাকে, দুই-ই আছে, কর্মসিদ্ধি
ছাড়া তোমার আমার দরকার কি…যতো প্যাঁচ, যতো স্বার্থ, ততো বাড়ে বৃদ্ধি।
জল আঁইঢাঁই ক’রে নড়েচড়ে ওঠে।
আবার একটা জোড়াতালি লেগেছে।
সেরেছে, আবার একটা পৃথিবীই বটে।
সংসার থেকে পালানোর সময় এসেছে।
জল তো সন্ন্যাসী। শুধু মাঝে মাঝে তার ভোগ লাগে…দু্র্ভোগও থাকে,
কেন না, জল যেহেতু গড়িয়ে গড়িয়ে যায়…ব্যথা থাকে। দাগ লাগে
পর্বত ও মৃত্তিকায়। জলের কষ্ট কে বোঝে? ঘোড়া বোঝে, বোঝে আস্তাবল।
এছাড়া হস্তি-মাতঙ্গ, কেঁদো বাঘও বোঝে… অন্ধকারে মানুষও গড়িয়ে গড়িয়ে আরো দুর্বল।
আমি গুরু শুনি, গুরু পাঠ করি। সুর ও স্বরের যতো বিদ্যা ও রীতি
গুরু লেখে, গুরু কন…দেখে-শুনে ভুল করি। মাঝে মাঝে অন্য হিতে গতি…
ভালো লাগে, মন্দ লাগে…চেনা মাটি, অচেনা মূর্তি, সমারোহ, দুষ্প্রাপ্য ছবি…
দূর থেকে গুরুদের শান্ত-অশান্ত মুখ দেখি। দ্বিধায় বাক্যিই ব্যয় করে সব ভবি।
তারা দিয়ে ঘর করবো, বেড়া দিয়ে ঘর বাঁধবো, সন্ধ্যা হলে মশা ও মাছিরা জ্বালাবেন।
তাড়াবো খানিকটা, আর জ্বলবো দংশনে…এই ক্ষণ ও মুহূর্তে তারা রক্তে হুল ফোটাবেন।
তারপর চালের ফুটো দিয়ে উড়ে যাবেন তারায় তারায়। আমার ঘরেতে আলো
…অন্ধকারই বেশিটা কাটায়। তবে দু-চারজন তারার দূর থেকে আসা-যাওয়া ঘনালো।
দূর থেকে সবাই ভালোবাসবে, লোহার কড়াই ও বাসরঘর
দূর থেকে হাসে, দূর থেকে হাত নাড়ে বেহুলা ও চাঁদ সদাগর।
তুমি বেহুলা নও গো, এঁদো-গৃহবঁধু, তবু চোখে চোখে খোঁজো লখিন্দর।
আহা, কি রুপ ছিলো গো, তবু দুব্বল দুব্বল ছিলো, অতো ট্যাহা-পয়সা…
কি গো, কালনাগিনীটা কে ছিলো, সর্প না বেহুলা নিজেই ডাকিনী ছিলো!
হতাশা জেদ ধরে ঘাটে ঘাটে কলার ভেলাতে ভেসে যায়। সময়, সর্বনাশে –
সনকা গো, ও পৃথিবী, বাগ্দেবী – দূর থেকে সবাই ভালবাসা দিয়েছিলো।
কাছে গেলে আমৃত্যুবদনগুলো এর ওর গায়ে ঢলে প’ড়ে বিনা মেঘে বজ্রপাতে হাসে।
সেই থেকে গুরু শুনি, একা-একা থাকি, কম খাই, কম পয়সা পাই…
লোকে আরো কম দেয়, কম দিতে চায়, কেন না, খুব বেশি চাহিদা তো নাই!
আপন-গুরুকে, ভুলে, আপ-উন-কা চ্যালা ডেকে উঠি – ভাবি এলো মাহেন্দ্রক্ষণ।
আবার জন্ম দে, মৃত্যু দিস না – একই জন্মে, ভজহরি, করে ফেলি ব্রহ্মাণ্ডভক্ষণ!
অন্তরীক্ষ কথা কবিতা – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভালোবাসার দেবালোকে
বিজয়া দশমী
এক চিলতে রোদ্দুর