কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

শ্যামলী

শ্যামলী সায়েন্স ফিকশন গল্প – রিমা ঘোষ

( )

— এই গরমে হাত পুড়িয়ে রান্না করতে আর ভালো লাগেনা, বিরক্তিকর….
রান্না করতে করতে নিজের মনেই গজগজ করে চলেছেন প্রফেসর মুখার্জি, মানে ড. সোমনাথ মুখার্জি। তিনি বিজ্ঞানের অধ্যাপক। কলেজ শেষে বাড়ি ফিরে এখন নিজের জন্য রান্না করছেন ।
প্রফেসর মুখার্জী অবিবাহিত , বাবা মা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন। বর্তমানে বাড়িতে উনি একা থাকেন, এবং ওনার সাথে থাকে বেশ কিছু কেমিক্যাল, কিছু যন্ত্রপাতি এবং ওনার আবিষ্কার করা কিছু জিনিস । বাইরের রান্নার লোকের বানানো খাবার তার মুখে রোচে না, তাই বাধ্য হয়ে নিজেকেই নিজের জন্য রান্না করতে হয়। ইদানিং গরমটা বড্ড বেশি হওয়ায় ওনার কষ্টটাও বেড়েছে।

— সারাদিন কলেজে ছাত্র পড়িয়ে বাড়ি ফিরে রান্না করতে আর ভালো লাগেনা। এটার কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে , যাতে আমাকে রান্না করতেও না হয় আবার আমার খাবারটা তৈরিও হয়ে যায়। আচ্ছা এবার যদি একটা রান্নার মেশিন বানাই? আপাতত গিয়ে এই রুটি আর আলুর তরকারি টাই খাই ।

বিজ্ঞানী মানুষ হলে যা হয় আরকি, প্রফেসর মুখার্জি এখন রান্না নিয়েও নতুন আবিষ্কারের কথা ভাবছেন। অথচ বাজারে যে রুটি মেকার, মাইক্রোওভেন পাওয়া যায় সেগুলো কিনে নেওয়ার কথা উনি কিন্তু একবারও ভাবলেন না । এখন নতুন কিছু আবিষ্কারের দিকে ছুটে চলেছে ওনার মস্তিষ্ক । খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে ঘুমোতে গেলেন প্রফেসর মুখার্জি। ওনার ঘরে কিন্তু A.C নেই, আছে ওনার আবিষ্কার করা বিশেষ একটি মেশিন যেটি ওনার ঘর ঠান্ডা রাখে বরফ আর জলের মাধ্যমে।

— ভাবছি রান্নার জন্য কোনটা তৈরি করলে ভালো হবে – কোনো রোবট নাকি রান্না করার কোনো মেশিন ? যাকগে পরে দেখা যাবে, এখন তো ঘুমাই ।

( ২ )

” ইউরেকা ইউরেকা” বলতে বলতে ছুটে চলেছেন প্রফেসর মুখার্জি।
— আরে হলো কি মুখার্জি বাবু এত চিৎকার করতে করতে দৌড়াচ্ছেন কেন?
— আরে ….. চ্যাটার্জি বাবু দেখবেন চলুন আমার শ্যামলীকে।
— শ্যামলী মানে , সে আবার কে? আপনি কি এই বয়সে বিয়ে করলেন নাকি মুখার্জি বাবু ?
— আরে নাহ্ নাহ্ , এই বয়সে আবার বিয়ে ? এই বয়সে এসে বলির পাঁঠা হবার সাধ আমার নেই ।
— তাই এই দু-তিন মাস তো আপনাকে দেখাই যায়নি মুখার্জি বাবু , কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন নাকি আপনার শ্যামলী কে নিয়ে ?
— আরে মশাই আপনি যা ভাবছেন তা নয় ,শ্যামলী আমার নতুন আবিষ্কার । চলুন , দেখবেন চলুন।

চ্যাটার্জি বাবু প্রফেসর মুখার্জির বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, কোন মানুষ নয় এক বিশালাকৃতি মেশিন হল শ্যামলী। গোটা ঘর জুড়ে রয়েছে সেই মেশিন । প্রফেসর মুখার্জি মেশিনের এক প্রান্তে আলু , পটল , আদা , রসুন, জল সবকিছু ঢুকিয়ে দিলেন।

— এবার একটু অপেক্ষা করে দেখুন চ্যাটার্জি বাবু কি হয়।
যা ঘটল তা দেখে তাজ্জব হয়ে গেলেন চ্যাটার্জি বাবু , এ যে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ! মেশিন এর অপরপ্রান্ত থেকে বাটির ওপর আলু পটলের তরকারি এসে পড়ছে।
—- কি করেছেন মুখার্জি বাবু , এ যে অতুলনীয় , অবিশ্বাস্য! কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে কারেন্টে চলছে তাহলে কারেন্ট না থাকলে তো আপনার খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
— আমাকে কি এতটাই বোকা মনে হয় চ্যাটার্জী বাবু? এই মেশিন ডাইরেক্ট ইলেকট্রিসিটি তে চলে না , এর জন্য ব্যাটারী আছে । ব্যাটারীতে চার্জ দেওয়া থাকলে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলেও মেশিন বন্ধ হবে না।
— দুর্দান্ত মুখার্জি বাবু , আপনাকে কুর্নিশ !

প্রফেসর মুখার্জি প্রথম যৌবনে শ্যামলী নামের একটি মেয়েকে ভালোবেসে ছিলেন । কিন্তু তাকে জীবনসঙ্গী করা আর হয়ে ওঠেনি। তাই বোধহয় এই মেশিনটার নাম ‘ শ্যামলী ‘ -র নামে রেখেছেন প্রফেসর মুখার্জি। মানুষ শ্যামলী না হোক এই যান্ত্রিক শ্যামলীই ওনার জীবন সঙ্গী হয়ে থেকে যাবে।

শ্যামলী সায়েন্স ফিকশন গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!