কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » ভৌতিক গল্প » শ্বাসকষ্ট

শ্বাসকষ্ট

শ্বাসকষ্ট ভৌতিক গল্প – শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়

অরূপ সমাদ্দার সবেমাত্র গতকালই রসিকগঞ্জ পোষ্ট অফিসে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। জয়েন করেই কাউন্টারে বসে টাকা পয়সা লেনদেন করছিল, হঠাৎ তখনই এক ভদ্রলোক টাকা তোলার ফর্মটা অরূপের হাতে দিয়েই বলল, “নমস্কার, আপনি কি এখানে নতুন জয়েন করলেন নাকি?” অরূপ স্মিত হেঁসে নমস্কার জানিয়ে বলল, “হ্যাঁ, কয়েকদিন আগে জয়েন করেছি।” ভদ্রলোক হেঁসে জিজ্ঞেস করল, “আপনার বাড়িটা তাহলে কোথায়?” অরূপ টাকা গুনতে গুনতেই বলল, “আমার বাড়ি মণিরামপুরে।” ভদ্রলোক উৎসাহিত হয়ে বলল, “ও তাহলে তো আপনি বাড়ি থেকে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে পারবেন না।” এইবার একটু অবাক হয়েই অরূপ তাকাল ওনার দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই ভদ্রলোক বলল, “যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি?” অরূপ তো আরও অবাক হয়ে গিয়ে বলল, “বলুন।” ভদ্রলোকটি বলল, ” আমার নাম রামতনু পাকড়াশি, আসলে এই পোষ্ট অফিসে বা পাশের ব্যাঙ্কে যখনই কেউ দূর থেকে বদলি হয়ে আসেন তারা প্রায় সবাই আমার বাড়িতেই ভাড়া থাকেন। তাই বলছিলাম আপনি এলাকায় নতুন, কোথায় ভাড়া বাড়ি খুঁজবেন, তার চেয়ে আমার বাড়িতেই স্বচ্ছন্দে ভাড়া থাকতে পারেন, আর তাছাড়া আমার বাড়ি এখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ, আপনার কোনও অসুবিধা হবে না।” এইভাবেই রামতনুবাবুর সঙ্গে আলাপ হয়ে যায় অরূপের। অরূপ তখন সবেমাত্র এসে জয়েন করেছে, সত্যিই তো কোথায় ঘর খুঁজতে যাবে সে কিছুই তো চেনেনা এইখানে। আর তাছাড়া এই পোষ্ট অফিসের বাকি স্টাফেরাও কেউ স্থানীয় নয়, সবাই বাইরে থেকে এসে চাকরি করে আবার ফিরে যায়, তাই তাদের কাছ থেকেও কোনো খবরাখবর পাওয়া যায়নি। ফলে রামতনুবাবুর প্রস্তাবটা যেন মেঘ না চাইতেই জল। ফলে সেইদিনই অফিসের পরে ঘর দেখে নিয়ে পছন্দ করে থাকতে শুরু করেছিল অরূপ। ঘরটা দেখে অরূপের মোটামুটি পছন্দই হয়েছিল, কারণ দক্ষিণ খোলা জানালা দিয়ে বেশ হাওয়াও খেলে। অবশ্য পছন্দ হওয়ার আর একটা কারণও ছিল, অরূপের পাশের ঘরের ভাড়াটে ছিল পোষ্ট অফিসের পাশে অবস্থিত ব্যাঙ্কের একজন স্টাফের। সেই ব্যাঙ্ক কর্মীর সাথে আলাপ জমাতে অবশ্য অরূপের কোনো অসুবিধাই হয়নি, কারণ লোকটা বেশ আলাপি আর হাসিখুশি। আর তার কাছ থেকেই সে জেনেছে যে বাড়িওলা লোকটাও মন্দ নয়। যাইহোক, প্রথম দিন বলে অরূপ সন্ধ্যায় একবার বেরিয়ে বাজার থেকে খাবার কিনে এনে খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ ম্যাগাজিন পড়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। আর যেহেতু শরীরে ক্লান্তি ছিল ঘুমিয়ে পড়তে দেরি হয়নি। কিন্তু ঠিক মাঝরাতে হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ শুনে অরূপের ঘুমটা ভেঙে যায়। অরূপ চমকে উঠে শুনল, একটা খুব জোরে জোরে গোঙানির শব্দ। যেন কোনো হাপানি রুগির প্রবল শ্বাস কষ্টের মধ্যে জোরে জোরে শ্বাস টানার চেষ্টা করছে। ঘুমের মধ্যে আচমকা শব্দটা শুনে তার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠেছিল, খানিক পরে প্রাথমিক ভয়, বিহ্বলভাব কাটিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, “কে? কে ওখানে?” কিন্ত কোনো সাড়া পেল না। তারপরে আর কোনো আওয়াজ না পেয়ে সে ভাবল হয়তো ঘুমের মধ্যে ভুল শুনেছে, তাই আবার ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন সকালে বাড়িওলা রামতনুবাবু এসে তার কাজের লোককে দেখিয়ে বলে গেল, “ওর নাম নরহরি ও আপনার বাড়ির যাবতীয় কাজকর্ম যেমন রান্না করা, বাজার করা সব করে দেবে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে একটা কথা খেয়াল রাখবেন, সন্ধ্যার আগেই সব কাজ করিয়ে নেবেন কারণ ও রাতে চোখে দেখতে পায় না।” মনে মনে খুশি হয়ে সে ভাবল, না সত্যিই বাড়িওলা লোকটা ভালো, কত খেয়াল রাখে ভাড়াটের।

   পরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা চায়ের দোকান দেখে অরূপ সেখানে চা খেতে ঢুকল। চা খেয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে চা-দোকানি হাসিহাসি মুখে জিজ্ঞেস করল, “বাবু আপনি কি নতুন এসেছেন এখানে?” মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই আবার বলল, “তা এখানে কোন বাড়িতে উঠেছেন?” অরূপ খানিকটা অবাক খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, “ঐ রামতনুবাবুর বাড়িতে।” এইকথা বলতেই হঠাৎ অরূপ দেখল চা দোকানির মুখের হাসিটা শুকিয়ে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। শুধু “ও আচ্ছা” বলেই আবার নিজের কাজে মন দিল। অরূপের একটু খটকা লাগল, রামতনুবাবুর বাড়ি শুনেই চা দোকানির মুখটা ওরকম ফ্যাকাশে হয় গেল কেন? এরমধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে বাসায় এসে পড়ল সে। এসে দেখল নরহরি দরজার বাইরে বাজার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই একগাল হেঁসে বলল, “আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।” অরূপ নরহরিকে আগে এক কাপ চা করে দিতে বলে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসেই দেখল চা টেবিলের উপর রাখা আছে। সে অবাক হলেও কাজের দ্রুততার প্রশংসা না করে পারল না। ব্যাগ থেকে খবরের কাগজটা বের করে খানিকক্ষণ পড়তে না পড়তেই নরহরি এসে বলল, “বাবু রান্না করে রেখে দিয়েছি, এখন আমি আসি।” অরূপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সে কি! এরমধ্যেই তোমার রান্না শেষ!?” নরহরি একগাল হেঁসে বলল, “আজ্ঞে একজন মানুষের রান্না আর কতক্ষণ লাগবে? ঠিক আছে, আমি চলি এখন‌।” অরূপ নরহরির তাড়াহুড়ো করার কারণ জানত বলেই আর কথা বাড়ায় না, ঘরে এসে আবার খবরের কাগজটা খুলে বসল। কিছুক্ষণ পড়তে পড়তেই হঠাৎ আবার সেই চা-দোকানির কথা মনে পড়ল। ঐ লোকটা কিছু একটা কথা লুকোচ্ছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রাতে খেতে খেতে হঠাৎ তার মনে একটা কথা আসল আচ্ছা চা-দোকানির মুখটা যেন আগে কোথাও দেখেছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারল না। সে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু আবার  মাঝরাতে সেই বিকট শ্বাসকষ্টের আওয়াজ, অরূপ চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে গেল কে ওখানে কিন্তু ভয়ে তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বেরলো না। টর্চটা কোনোরকমে জ্বালিয়ে দেখল, না কেউ কোত্থাও নেই। সে ভাবল, আজ তো আর ভুল হয়নি সে স্পষ্ট শুনেছে, আর আওয়াজটা ঠিক ঘরের বাইরে দরজার পাশ থেকেই আসছে। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে একটু জল খাওয়া দরকার, কিন্তু ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে খাট থেকে নামতেই পারল না সে। বাধ্য হয়ে প্রবল তৃষ্ণা চেপে রেখেই আবার শুয়ে পড়ল। শুয়ে শুয়ে ভাবল নাঃ কালকেই বাড়িওলাকে জিজ্ঞেস করবে। টর্চ জ্বেলে হাতঘড়িটা দেখল ঠিক রাত দুটো বাজে। 

                                পরদিন সকালেই সোজা দোতলায় উঠে রামতনুবাবুকে গত দুরাতের অভিজ্ঞতার কথা জানাল আর ঠিক যে আশঙ্কা করছিল তাই হল। রামতনুবাবু হেঁসেই উড়িয়ে দিয়ে বলল, “নিশ্চয়ই আপনি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন, আমার কোনো ভাড়াটে আজ পর্যন্ত এই কমপ্লেন করেনি। আপনি পাশের ভাড়াটের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।” অরূপ আর কোনো কথা না বলে দোতলা থেকে নেমেই পাশের ভাড়াটের কাছে গিয়ে সবকথা খুলে বলল। কিন্তু ঐ ভাড়াটে বলল, “কই আমি তো কোনো শব্দ টব্দ শুনিনি।” হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে আসতেই দেখল নরহরি এসে হাজির। নরহরি ঝড়ের গতিতে রান্না করে, বাসনপত্র ধুয়ে এসে বলল, “বাবু আমি চলি।” অরূপ তার কাজের গতি দেখে আবারও অবাক হয়ে বলল, “রান্নাটা ঠিকঠাক করেছ তো?” নরহরি একগাল হেঁসে বলল, “আজ্ঞে খেয়েই দেখবেন।” অরূপের হঠাৎ কি মনে হল বলল, “আচ্ছা নরহরি তুমি তো এই বাড়িতে অনেক দিন কাজ কর, এই বাড়িতে রাতে কোনো ভয়ংকর ভুতুড়ে আওয়াজ হয় বলে শুনেছো?” নরহরি বলল, “আজ্ঞে আমি তো  কখনো এরকম কিছু শুনিনি।” বিকেল বেলা অফিস থেকে ফেরার পথে আবার ঐ চায়ের দোকানে গেল অরূপ। তাকে দেখেই চা-দোকানি চমকে উঠল। অরূপ দেখল দোকানে সেই মুহূর্তে আর কোনো খদ্দের নেই আর সেই সুযোগেই আলাপ জমানোর জন্য তাকে বলল, “আমায় এক কাপ স্পেশাল চা দাও আর সঙ্গে বিস্কুটও।”  দোকানি চা দিতে এলে তাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমার নাম কি?” দোকানি তার দিকে না তাকিয়েই বলল, “রাখহরি।”  অরূপ বলল, “আচ্ছা রাখহরি তুমি এই রসিকগঞ্জে কতদিন আছো?” রাখহরি বলল, “তা এই ধরুন তিরিশ বছর তো হবেই।” চায়ে চুমুক দিয়ে অরূপ বলে, “তাহলে তো এই অঞ্চলের সব খবরাখবর রাখ।” একটু সহজ হয়ে রাখহরি বলল, “তা আর বলতে।”  অরূপ আর একধাপ এগিয়ে বলল, “আচ্ছা তুমি রামতনুবাবুকে চেনো?” এইকথা বলতেই হঠাৎ ভ্রূ কুঁচকিয়ে রাখহরি বলে ওঠে, “আপনার চা খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ি যান।”  অরূপ বুঝতে পারে ঐ বাড়ি সম্বন্ধে কিছু বলবে না দোকানি। আর রাখহরি নামটা থেকে হঠাৎ অরূপের নরহরির কথা মনে পড়ল। সে কোনকিছু না ভেবেই হাল্কাভাবে বলল, “জানো আমার বাড়ি যে লোকটা কাজ করে তার নাম নরহরি, সে তোমার কেউ হয় নাকি?” এইকথা শোনার পরই দোকানি চমকে উঠে তার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ! তারপরে হঠাৎ দৌড়ে এসে সোজা পা জড়িয়ে ধরে বলল, “দয়া করে দাদাকে আমার কথা কিছু বলবেন না।”  অরূপ হতচকিত হয়ে বলল, “আরে পা ছাড়ো! কি করো কি?”  রাখহরি পা ছেড়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতেই থাকে, “দয়া করে দাদাকে আমার সম্বন্ধে কিছু বলবেন না।”  অরূপ অবাক হয়ে গেলেও এইটুকু বুঝতে পারে যে নরহরি বোধহয় সত্যিই রাখহরির দাদা, কিন্তু এত ভয়ই বা পাচ্ছে কেন নরহরিকে সেটা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা। তাই আবার একটু চালাকি করে গম্ভীর মুখে সে বলল, “আমি একটা শর্তেই নরহরিকে কিছু বলব না, যদি তুমি রামতনুবাবুর বাড়ি সম্বন্ধে সবকথা এখনি খুলে বলো।”  এইকথা শুনেই রাখহরি কাঁপতে কাঁপতে বলে, “আগে কথা দিন দাদাকে কিছু বলবেন না।” অরূপ গম্ভীর মুখে বলল, “আমি তো বললাম, যদি সবকথা আমাকে খুলে বলো তাহলে কথা দিচ্ছি কাউকে বলব না, কিন্তু কথার অন্যথা হলে বুঝতেই পারছো…”  তখন দোকানি চারপাশটা দেখে নিয়ে বলতে শুরু করল, “প্রায় বছর কুড়ি আগের কথা, রামতনুবাবু, আমার দাদা, আর এক ব্যাঙ্ক কর্মী তিনজনই ঐ বাড়িতে থাকত আর প্রত্যেকদিন মাঝরাত অবধি জুয়া খেলত আর চিৎকার চেঁচামেচি করত। এতে পাড়ার লোকেরা খুব বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারত না কারণ রামতনুবাবুর সাথে থানার বড়বাবুর খুব দহরম মহরম ছিল, আর কথায় কথায় থানায় ডায়রি করার হুমকি দিত। কিন্তু হঠাৎ আমার দাদার টিবি রোগ ধরা পড়ে, আর সেটা গোপন করেই সে প্রতি রাতে জুয়ার আসরে যেত। ফলে ক্রমেই বাকি দুজনও টিবি রোগে আক্রান্ত হয় পড়ে একে একে। আর সেইসময় ঐ জুয়াড়িরা ঐ বাড়িরই আর এক ভাড়াটেকে ডাক্তার, বদ্যি ডেকে সাহায্য করতে বলে। কিন্তু সেই ভাড়াটের সঙ্গে মাঝরাতের জুয়ার আসর বসানো নিয়ে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। ফলে ঐ ভাড়াটে বিরক্ত হয়েই ডাক্তার বদ্যি না ডেকেই তীব্র বিতৃষ্ণায় সরে পড়েছিল। ক্রমেই তাদের অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে তাদের নিজেদের পক্ষে আর হাঁটাচলার ক্ষমতাও চলে যায়। পাড়াপড়শিরাও কেউ এগিয়ে আসেনি রাগে, ফলে  কিছুদিন পরই একে একে তিনজনই ঐ বাড়ির মধ্যেই মারা যায়। আর তখন থেকে ঐ তিনজনের আত্মা ঐ বাড়িতে  ঘুরে বেড়ায়। আর সুযোগ পেলেই অন্য কোনো মানুষের বেশে এসে নিত্য নতুন ভাড়াটে জোগাড় করে এনে কিছুদিনের মধ্যেই তাকে মেরে প্রতিশোধ নেয়।”  কথা শেষ করেই রাখহরি আবার অরূপের পা জড়িয়ে ধরে বলে, “তবে বাবু এইকথা যেন কিছুতেই দাদা জানতে না পারে।”  কিন্তু ততক্ষণে অরূপের মুখ থেকেই ভয়ে আর কোনো আওয়াজই বেরোচ্ছে না।

শ্বাসকষ্ট ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!