সত্তা ছোটো গল্প – সন্দীপা মনি চ্যাটার্জী
ঘিঞ্জি বস্তি..
গঙ্গার পাড়ের চুল্লির ধোয়ার গন্ধ….
লঞ্চ ছেড়ে দেবে বলে দৌড়চ্ছে মানুষ…. এপার থেকে ওপারে যাবে বলে। নির্মল প্রশান্ত জলে কতো কিছুইনা ভেসে যাচ্ছে।
বাচ্চাগুলো জলে ঝপাং করে লাফ দিচ্ছে, কোনো কোনো বাচ্চার হাতে গোটানো সুতো, তার আগায় বড়ো একটা চুম্বক,দাড়িয়ে দেখছিলাম।
কি ভাবে সুতো ছুড়ে জল থেকে পয়সা তোলে। একটু অন্য মনষ্ক হয়ে গিয়েছিলাম।এমন সময় পাশে এক বয়ষ্কা মহিলা তার সারা গা ভেঁজা, হাতে বাচ্চাদের মতো সুতোয় বাধা চুম্বক।
বললো গঙ্গার জল তুলে দেবো ????
আমি বললাম হ্যাঁ দিন,
আবার ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম -অতো ধোঁয়া আর গন্ধ কিসের?
একটু সময় চুপ করে থেকে বললো ওখানে মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি মানুষ তৈরী করা হয় …
আমি যখন ছোটো ,বাবা কবে মারা গেছে আমার মনে নেই।
মা আর আমি ….
মা পৃথিবীর আলো চোখ দিয়ে দেখতে পায় না। মন দিয়ে জগৎকে দেখার চেষ্টা করে।
নিশিকাকু মাঝে মাঝে গ্ৰামে আসতো, আমাদেরকে কিছু সাহায্য করতেন, এভাবে কতদিন চলে।
একদিন মাকে বললো, আমি আর আসতে পারবো না, কারণ আমার বদলি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি যদি চাও তোমার ছেলেকে আমার এক বন্ধু শহরে থাকে, ওর বাড়ীতে খাওয়া পরায় থাকবে, মাসে কিছু টাকা পাঠাবে, তাতে করে তোমার এতো কষ্ট আর থাকবে না। তুমিও ভালো থাকবে।কিছুতেই মা আমার রাজী হচ্ছিল না। তবু অনেক ভেবে রাজী হলো।
দৈনন্দিন জীবনের অভাব, অভিযোগ, অসম্মান আর অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়, গোটা সমাজের মানুষ ভরসার স্রোতে এগিয়ে চলেছে …
বাবুদের বাড়ীতে এসে পৌঁছলাম বেশ কিছুদিন হলো। গঙ্গার কাছেই বাড়ীটা, মাঝে মাঝে সময় পেলে এই গঙ্গার পাড়ে বসে জলের দিকে তাকিয়ে দেখি, আর নিঃশব্দে হারিয়ে যাই। মাঝে মাঝে বোতলে গঙ্গার জল ভরে নিয়ে যাই।
যে বয়ষ্কা জল ভরছিলো, সে অনেকক্ষণ ভিজে থাকার কারনে হাত, পা সাদা হয়েগেছে। পায়ে জুতো নেই।
তাকে দেখে আমার সুধামার কথা খুব মনে পড়ছিলো।
কতোদিন দেখিনি।
মা তুমি কেমন আছো?
আমাকে দরজা বন্ধ করে রেখে …
খালি পায়ে কতোবার দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করতে …
পা ফেটে রক্ত ঝরতো….
পায়ের ব্যথায় বড্ড কস্ট পেয়েছো ….
তোমার যে জুতো নেই …
মাঝে মাঝে এখনো জ্বর হয়???
শীতের সময় যে চাদরটা গায়ে দিয়ে বার বার শরীরটা ঢাকার চেষ্টা করতে, সেটাতে যে পুরো গা ঢাকতো না।
তোমাকে চেনা বড় শক্ত কাজ। তুমি যদি আমায় জগৎ না চেনাতে, তবে কি আমি তোমায় চিনতাম???
তোমার জন্য যে অনন্তের আনন্দ পাই, সে কি কম প্রাপ্তি। তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই …
বুকের গভীরে যে বার বার তোমার ডাক আসে, আমি যে তোমায় দেখতে পাই মাগো, অন্য কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ….
তুমি যখন ঘুমাও পরম ঘোরে, আমি তখন, তোমার পরশের মাঝে হারিয়ে যাই ….
প্রতিটা দিন এই ভাবে জীবনের বেদনা আঁকি …
এখানে এসেও মনের ঘরে জমা থেকে যায় শূন্য কতো আশার স্বপ্ন।
নিমেষে চোখের কোনে জল মুছে উঠে দাড়িয়ে পথ ধরে চলেছি তো চলেছি… কানে ভেসে আসছে জল ভাঙ্গার শব্দ শুধু। যে পথে আমার মায়ের পায়ের সহস্র ধূলো লেগে আছে, সেটাই আমার দেশ, সেটাই আমার পৃথিবী ……
সত্তা ছোটো গল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
১৪ই ফেব্রুয়ারি
বৃষ্টি-উৎসব | পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বর্ষা | প্রশান্ত কুমার বাছাড়