কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » অণুগল্প » অধিকার

অধিকার

রুদ্রনীল আর শ্রেয়া জামাই-ষষ্ঠীতে গিয়েছে । রুদ্র দু’দিন থেকে ফিরেছে। শ্রেয়া তার মায়ের কাছে ক'দিন থাকবে। ছেলে অফিস যাওয়ার আগে খেতে বসল।

অধিকার অণুগল্প – সংযুক্তা পাল

রুদ্রনীল আর শ্রেয়া জামাই-ষষ্ঠীতে গিয়েছে । রুদ্র দু’দিন থেকে ফিরেছে। শ্রেয়া তার মায়ের কাছে ক’দিন থাকবে। ছেলে অফিস যাওয়ার আগে খেতে বসল। লতিকা তার পছন্দের বাটার পনীর আর পারশে মাছের ঝাল বানিয়েছেন। লতিকা রান্নাঘরের দায়িত্ব ছাড়তে রাজি নন কখনোই। শ্রেয়া চাইলেও তিনি বলেন, ‘সবে তোমাদের বিয়ে হল , এখন কেন রান্নাঘরে আসবে’?  শ্রেয়ার শাশুড়ির প্রশংসা শ্রেয়ার মা পর্যন্ত করে। লতিকা বাড়ির বৌ’কে চাকরি বা রান্না দুই-ই করতে দিতে নারাজ। এ’যুগের মেয়ে শ্রেয়া বোঝে, দু’দিকেই তার শাশুড়িমা অভিভাবকত্বের অধিকার খাটান।

       মায়ের সামনে খেতে খেতে রুদ্র তার শাশুড়ি-মায়ের রান্নার প্রশংসা করল। পারশের ঝাল তিনি নাকি দারুণ করেন। লতিকা প্রতুত্তরে ‘ওহ তা…ই’ বলে এড়িয়ে গেলেন। রুদ্র বেরিয়ে গেলে লতিকার সময় কাটে শ্রেয়ার সাথে। শ্রেয়া মায়ের কাছে গেলে স্বামীহারা লতিকার সময় কাটতে চায় না। তবু যেতে তো দিতেই হয়। খারাপ তিনি কারো চোখেই হতে চান না। কিন্তু শ্রেয়ার মতো আজকালকার মেয়েদের অতটাও বোকা ভাবেন না। তবে ছেলে আর বৌ তার আয়ত্তে আছে বলেই ধারণা। ধারণার একটু সুর কেটেছে আজকে ছেলে তার শাশুড়ির রান্নার খুব প্রশংসা করে ফেলেছে বলে।

  লতিকা সেলাইয়ের কাজ জানেন। সহজেই তার হাতে কাশ্মীরী স্টিচ, পান্ঞ্জাবী ফুলকারী, লখনৌ চিকন ফুটে উঠে। আত্মীয় মহলে বেশ সুনাম। টুকটাক ঘরের বিভিন্ন চাদর, কভারে তিনি কাজ করেন। হাতের কাজকে কখনোই পেশা হিসেবে ভাবতে পারেননি,কারণটা রুদ্রর ঠাকুমা। তিনি বলতেন ‘অর্থ অনর্থের কারণ’। সবই তিনি শ্রেয়াকে গল্প করেছেন। আজ সেলাই নিয়ে বসতেই মনে হাজার চিন্তা ভিড় করছে। ছেলেটা তবে শ্রেয়া আর তার মায়ের ন্যাওটা হয়ে যাবে না’তো? শুধুমাত্র রান্না করে খাইয়েই বাজিমাত? শ্রেয়া ফিরলে একটু কম কথা বলবেন, পাত্তা দেবেন না বোধহয় লতিকা বোধহয় স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। নয়তো কন্যাসমা ছেলের বৌকে নিয়ে এইসব ভাবনা-চিন্তা!! হিংসুটে কাদের বলে? ধুর, অন্যমনস্কতায় হাতে ছুঁচ ফুটল।অস্ফুটে ‘উঃ’ শব্দটা বেরিয়ে এল। শ্রেয়া থাকলে ছুটে এসে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে দিত।

  দুপুরের দিকে বেয়ানের ফোন। ‘‘দিদি এ’বছর জামাইষষ্ঠীতে এলেন না, সামনের বছর কিন্তু রুদ্র আর শ্রেয়ার সাথে আসতে হবে। আর রুদ্র তো আপনার রান্নার সব সময় এত প্রশংসা করে যে কি বলব! সাথে এখন শ্রেয়াও বলে, তুমি মামণির মত অত ভালো রান্না করতে পার না’। আপনার কাছ থেকে ভাবছি রান্নার টিপস্ নেব’’। হেসে সৌজন্য বিনিময়ের কথাটুকু বলে ফোন রাখলেন লতিকা। ফোনে বেশি কথা বলার অভ্যাস নেই। লতিকার মাথায় একটা শব্দই ঘুরপাক খাচ্ছে ‘হিংসুটে’।

অধিকার অণুগল্প – সমাপ্তি

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!