পারফেক্ট ছোটো গল্প – পৌলমী মিত্র
সুজনবাবুর শ্রাদ্ধের কার্ডটা হাতে নিয়ে নিজের অজান্তেই গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়েন অজিতবাবু । পুরোনো কত স্মৃতি যেন ভিড় করে আসতে শুরু করে হঠাৎই।সুজনবাবুর সাথে ওনার পরিচয়টা সেই স্কুলজীবন থেকে । সমবয়সী হলেও সুজনবাবু তাঁর নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন অজিতবাবুর চেয়ে ঢের আগে । আর যথাযথ বয়সে বিয়ে থা করে, দুই পুত্রসন্তানের জনকও হয়েছিলেন ঠিক সময়মতো ।কিন্তু অজিতবাবু তখনও একটা সামান্য চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন । মাঝেমধ্যে সেসময় আড্ডাস্থল এ দেখাসাক্ষাৎ হলে, অজিতবাবুকে দেখে যেন চিন্তার ভাঁজ পড়তো সুজনবাবুর কপালে , যেচে এসে উপদেশ দিতেন বেশ । নিরুপায় অজিতবাবুর নীরব শ্রোতার ভূমিকা গ্রহণ ছাড়া আর করবার কিছুই থাকতো না তখন ।
আজও বেশ মনে আছে অজিতবাবুর , সুজনবাবুর ছোটছেলের অন্নপ্রাশন এর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন তিনি । ঘর ভর্তি লোকের সামনে সেদিন সুজনবাবু এক অদ্ভুত কৌতুক মেশানো তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিলেন -‘ তা অজিত…. কাকা তো হয়ে গেলি , আর কত দিন ?এবার বিয়েটিয়ে করে সংসার টংসার কর। আমরাও একটু ভালো মন্দ খাই তবে ! ‘ – ঘরে উপস্থিত সকলেই প্রায় সমস্বরে‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক ঠিক’ বলে সায় দিয়েছিল সে কথায় । অথচ অজিতবাবু তখনও চাকরি জোটাতে পারেননি , বাড়িতে তার চরম অনটন । আর কেউ না হলেও সুজনবাবুর একথা বিলক্ষণ জানা ছিল , তবুও….।
সেসময় ওই কথাগুলো তীরের তীক্ষ্ম ফলার মতো এসে বুকে বিঁধলেও , প্রায় ষাট ষাটটা বসন্ত পেরিয়ে আসার পর, আজ আর ওসব কথা মনে পড়লে কষ্ট পান না অজিতবাবু। সময় তাকে ভরিয়ে দিয়েছে , সঠিক সময়মতো । জীবন ঘড়ি আর দেওয়াল ঘড়ির মধ্যে এটাই তো পার্থক্য । দেওয়াল ঘড়ির কাঁটা সবার দেওয়ালে একই সময় মেনে চললেও, জীবন ঘড়ি সবার জন্যই আলাদা । এ ঘড়ির কাঁটা যে ওপরওয়ালার ইশারায় নড়ে ! এ কথা ভুললে চলবে কেন ?
তুলনা করতে মন সাড়া না দিলেও , পুরোনো কথা ভাবতে বসলে তুলনাটা যেন এসেই পড়ে অজিতবাবুর মনে । সুজনবাবুর পুত্রসন্তানেরা কেউই লেখাপড়ায় তেমন জুতসই হয়নি । কোনো মতে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে আজ তারা দিশাহীন। অথচ এমনটা তো হবার কথা ছিল না ।
একটু বেশি বয়সেই চাকরি আর তারপর সংসার পেতেছিলেন অজিত বাবু । আজ ওনার একমাত্র মেয়ে রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাশ করে, দেশের এক নামজাদা কলেজে পড়ছে ।ওর ভবিষ্যত চাকরিটাও প্রায় একরকম নিশ্চিতই বলা চলে । তবে কি অজিতবাবুই শেষ বিজয়ীর হাসিটা হাসলেন? না না… এভাবে কক্ষনো ভাবতে চান না অজিতবাবু । তাহলে, সুজনবাবুদের মত মানুষ গুলোর সাথে যে আর কোনো তফাৎই থাকবে না ।
বড্ড যেন তাড়া ছিল সুজনবাবুর ! জীবনে সবকিছুই তার পারফেক্ট চাই … সে যত ছোট বিষয়ই হোক না কেন ! আর তা কিছুটা করতে পেরেছিলেনও বৈকি । তবে সেকারণে ,গর্বেরও অন্ত ছিল না ওনার। কিন্তু শেষ অব্দি সবটা আর পারফেক্ট হলো কই! চাকরি জীবন শেষ করার একটা মাস যেতে না যেতেই, এক দূরারোগ্য ব্যাধি যেন হারিয়ে দিল সুজনবাবুকে , চিরকালের মতো! নাহ্!… শেষটা যেন কিছুতেই আর পারফেক্ট হলো না !আসলে পারফেক্ট বলে যে কিছুই হয় না , সবটাই আমাদের মনের ভুল… অনেকটা মরীচিকার মতো ।
পারফেক্ট ছোটো গল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভালোবাসার দেবালোকে
বিজয়া দশমী
এক চিলতে রোদ্দুর