উত্তরমেঘ ও অসুখের অসমাপ্তি কবিতা – স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়
(মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্য-এর অংশভাগের অনুকরণে লেখা)
অক্ষরের ভেতরে অনেক নদী।তার ভেতরে কে গো তুমি, সুন্দরীতমা!কলাময় মৃদঙ্গ শিকলে আহত!তোমার গলার স্বর স্নিগ্ধ গম্ভীর!পর্বত হয়ে আকাশে দাঁড়িয়ে আছো আহ্লাদি!
(২)
ফুলের পরাগে এতো দুঃখের রঙ, রেশ!হাতে নেই লীলাপদ্ম, কুরুবক নতুন করে ফুটবে না।তোমার দু-কানে সুন্দরী শিরীষ ফুল নাকি!না ব’লবো, এ বর্ষার নাম কদম্ব! ব’লবো না, এই তো সেই অলকার দেশ?
(৩)
এইসব গাছ নাকি কোনোদিন ফুলছাড়া হয়নি।ভ্রমররা পাগলামি করে, চারদিক গুনগুন করে ওঠে!তোমাদের সরোবরে পদ্মফুল ফোটে,হাঁসের দল মেখলার মতো জলে ভাসে?জ্যোৎস্নার ময়ূরী মিষ্টি স্বরে ডেকে ওঠেনি!
(৪)
আনন্দে কেউ কেউ কাঁদে!ভাবনার ফুলের আঘাতে যতো দুঃখ,কাছের মানুষ এলে সেইসব ঘোচে?গতি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো জীবন নেই যক্ষ?ঝগড়া ছাড়া অন্য কোনো মিল নেই রাধে?
(৫)
অলকা, তুমি এক সাদা মেয়ে – মাথায় মণি,পায়ে দুর্লভ ফুল ছড়ানো, তবে তারারা মাটিতে কেন প’ড়ে?যক্ষেরা মধুপায়ী, তুমি তাদের মোহিনী – মৃদঙ্গের গম্ভীর ধ্বনি – এ কি ইন্দ্রপুরী, না বধের?তারাদের ছায়া যেন মাটিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, শুনি!
(৬)
এই নদীটার নাম মন্দাকিনী?সোনালী বালির ভেতরে লুকনো মণি…প্রেমিকরা মণি খোঁজার খেলায় মেতেছে।মন্দার ছায়ায় খেলা আরো রোদ হয়ে উঠেছে। তোমার নিঃশ্বাসে ওরা বিশ্রাম পেয়েছে যক্ষিণী!
(৭)
এতো টান, গায়ের পোশাক খুলে ফেলো চাওয়া! আলগা কোমর ছুঁয়ে ফেলো, লজ্জায় সে তোমার চোখে ধুলো দেবে।দিক, ওই তো খেলার খেলা, পরম জাগতিক!ধুলো দিয়ে সোনার প্রদীপ নেভানো যায়? ওদের লজ্জা তোমাকেও পাগল করে হাওয়া!
(৮)
বেশ তো সুন্দর ছিলো ওরা।কেন ছুঁয়ে দিলে মেঘ – ওরা জলকণা – অলকার ঘরে ঘরে ওরাই তো হঠাৎ-ছবি।এখন পালিয়ে গেলে হবে কি?
নিজের শরীর দেখে এতো ভয়, শঙ্কিত মেঘেরা?
(৯)
এ কি রতির মন্দির, বিছানায় চাঁদের শান্তির আলো,যেন রত্ন, তাকে মেঘেরা যখন ঘিরে ধরে – বিন্দু বিন্দু জলকণা ঝরে,মেঘ, আরো-ভালোবাসায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।তখন বৃষ্টি চাই – ঠাণ্ডা বৃষ্টি চাই-ই!এ কি রতির মন্দির – মেঘেদের ঘরবাড়ি কোথায় গেলো!
(১০)
বৈভ্রাজে নিয়ে চলো কুবের!কথা হবে শুধু ঠোঁটে ঠোঁটে।তোমার যশের গান কারাই বা গাইবে?তেমন বাগান আজ পৃথিবীতে কোথায় রয়েছে?
সমুদ্রে নতুন পার সাজানো হয়েছে ফের?
(১১)
রাতে বুঝি পালাও, তাই মন্দার খসে পড়ে?তাড়াহুড়ো করো, চন্দনের কল্কা শরীর চুঁইয়ে পড়ে!অভিসারে যাবেই যদি, এতো ভয় কেন?মুক্তোর মালা, কানের দুল, স্তনের হাঁসফাঁস নিঃশ্বাস,সব কেন ফেলে রাখো অন্ধকারের অভিসারে?
(১২)
তুমি কি চাঁদের শিখর, বলছি পাহাড়কে।গুহার ভেতরে কি কুবেরের ধন আছে?ফুলধনু নিয়ে কে ঋতু সাজায়?ওখানে কি চালাক মেয়েরা ভুরুর খেলা দ্যাখায়?ফুলধনুতে খেলা শুরু হয়, কটাক্ষে কোকিল ডাকে!
(১৩)
কি গো কল্পতরু…কল্পনা দাও!চয়নে যা লিখছি, সেই পাহাড় দ্যাখাও!পোশাক, ফ্যাশন, চোখে ভুল দ্যাখা, মদ, ফুটে ওঠা ফুল, পায়ের আঙুল সাজানোর আলতা…কিছু রত্ন দাও, কিছু পাগল বুকের মেয়ে দাও!
(১৪)
কুবেরের বাড়ি কোথায়, আমারও বাড়ি নেই!ইন্দ্রধনুর দরজা কবে থেকে বন্ধ হয়ে আছে।আমার শব্দ এইসব কল্পনালতা, মন্দার ফুল – আরো দাও, দেখি আর চয়ন করে লিখি।পাতার নাগাল না পাই, পায়ের আঙুল রাখি চুমুতেই।
(১৫)
জলাশয়, তুমি মরকত পাথরের সিঁড়িতে অক্ষয়।শরীর খুব ঠাণ্ডা, ফোটা পদ্মের শান্ত বৈদুর্যলতা জল-ঢলঢল করছে।এখানে হাঁসেরা থাকে।তোমাকে দেখলে নাকি ক্লান্তি দূর হয়?আমার বাড়ি কোথায় – মনোসরোবর, না মেঘের জলাশয়!
(১৬)
পাহাড় তৈরি করেছে কোনো খেলাই।মন দিয়ে তার চূড়ায় ইন্দ্রনীল মণি রেখেছি। সোনালী কলাগাছ-ঘেরা পাহাড় মনের খুব আদরের।তোমার নীল শরীর থেকে তড়িৎ ছলকে পড়ে। আমি কাতর হয়ে মনপাহাড়ের আরো কাছে চলে যাই!
(১৭)
মাধবী কুঞ্জ, আমি তোমার বেড়ায় আমাকে বেঁধেছি।দুটো গাছ, একটা রক্তাশোক, আর একটা বকুলসুন্দর!হাওয়াতে কাঁপছে পাতা; অশোক, আমি জানি তোমার কথা! তুমিও নারীর পায়ের আঙুল চেয়েছিলে।আমিও তোমার মতো বকুলসখির মুখ দেখতে চেয়েছি।
(১৮)
নীলকণ্ঠী ময়ূর, সেতুর ওপরে এসে এখানে বসলি?
অশোক আর বকুলের মাঝখানে কচি বাঁশ আর সবুজ মণির মনোময় সেতুবাঁধানো, গায়ে গায়ে স্ফটিকের দাঁড়গুলো বসানো। পাখিজন কি তোমারই – সেও যেন আমারই বন্ধু!তালে তালে হাততালি দেওয়া শুরু হলো – প্রেমিকার হাততালি!
(১৯)
কোথায় থাকি, কিভাবে চেনাবো?উঠোনে শাঁখ বাজে, ফোটে স্থলপদ্ম?
এখন এই মনঘর এমন শ্রীহীন,যেন নগরের মতো প্রমত্ত, উদাসীন!আসলে আমার কোনো আয়ু নেই, তাই ফুলও অলভ্য!
উত্তরমেঘ ও অসুখের অসমাপ্তি কবিতা – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
আসমান সে ভি উঁচা