মুকেশ ভাটের হৃদপিন্ড ছোটগল্প – সুবীর মজুমদার
“ডাঃ বোস, আমার অপারেশনটা কবে করছেন?”-“ডঃ সরকারের যন্ত্রটার আরও একটু পরীক্ষার প্রয়োজন। পরীক্ষা কমপ্লিট হলেই অপারেশন শুরু করবো।”-“ভেরি গুড।”
ডাঃ বোস কথা বলছিলেন শহরের নামী ধনকুবের মুকেশ ভাটের সঙ্গে। ভদ্রলোক বিগত তিন পুরুষ ধরে কলকাতায় আছেন। তাই বাংলাটা ভালোই রপ্ত করেছেন। হিরের বিজনেস ওঁদের। কোটি কোটি টাকার লেনদেন।
এই মুকেশ ভাটের হঠাৎ খেয়াল হ’ল, মানুষের স্বাভাবিক হৃদপিন্ড অনেক রকমের ত্রুটিতে ভরা। রক্তে স্যাচুরেটেড কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে হার্টের রোগ হবেই। এছাড়াও অধিক উদ্বেগ, অতিরিক্ত এলকোহল ও ড্রাগ সেবন, ধুমপান, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার জন্য হার্টের রোগ হতে পারে। তাই তিনি ঠিক করলেন, শহরের নামজাদা সায়েন্টিস্ট ডঃ অমিয়রঞ্জন সরকারের সাথে কথা বলবেন। তিনি তাঁকে একটা কৃত্রিম হৃদপিন্ড তৈরির কথা বলবেন।আপনারা ভাবছেন, পেসমেকার তো আছেই। তাহলে নতুন হার্টের কী প্রয়োজন? কিন্তু তা নয়। মিঃ ভাট চান, তার নিজের হার্টকে রিপ্লেস করে কৃত্রিম হার্টকে প্রতিস্থাপন করতে। এই নতুন হার্ট এমনভাবে তৈরি হবে যাতে কোনও কিছুতেই এর কাজের কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, অর্থাৎ রক্তে স্যাচুরেটেড কোলেস্টেরল বেশি থাক, বেশি ড্রিংক, সিগারেট বা ড্রাগ সেবন করা হোক, অতিরিক্ত টেনশন অথবা অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া – কোনও কিছুই এর কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না।
শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম হৃদপিন্ড তৈরি হ’ল। ডঃ সরকারই তৈরি করলেন। সঙ্গে তাঁর দু’জন হেল্পারও ছিলেন। সেটি তৈরি করতে পঞ্চাশ লাখ টাকা মত খরচা হ’ল। ধনকুবের ভাটের কাছে এই টাকাটা হ’ল নস্যির সমান। তিনি ওই টাকার সাথে আরও পঞ্চাশ লাখ টাকা জুড়ে ডঃ সরকার ও তাঁর সহযোগীদের গিফ্ট করার কথা ঘোষণা করলেন। তার আগে যন্ত্রটা অবশ্যই তার শরীরে ফিট হওয়া চাই। এই দায়িত্বটা নিলেন বিশ্বের দশজন শ্রেষ্ঠ শল্যচিকিৎসকের মধ্যে অন্যতম ডাঃ মৃত্যুঞ্জয় বোস। মিঃ ভাট ডাঃ বোস ও তাঁর সহযোগীদেরও এক কোটি টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
ডাঃ বোসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে লাগল। তিনি প্রথমে যন্ত্রটাকে ভালোভাবে চেক করে নিলেন। তারপর ছোট-ছোট প্রাণী যেমন ইঁদুর, খরগোশ, গিনিপিগের শরীরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জিনিসটা ফিট করে সাফল্য পেলেন। এরপর কুকুর ও শিম্পাঞ্জির শরীরেও ফিট করে দেখা হ’ল। তাতেও সাফল্য এল। অবশেষে একজন দুস্থ মানুষকে গোপনে অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করিয়ে তার দেহেও যন্ত্রটা বসিয়ে সাফল্য পাওয়া গেল। টাকাটা অবশ্যই মিঃ ভাট দিলেন।দীর্ঘ চার মাস পর ডাঃ বোস মিঃ ভাটকে গ্রিন সিগনাল দিলেন। আগামী চার জুলাই তার শরীরে কৃত্রিম হৃদপিন্ডের প্রতিস্থাপন হবে। অস্ত্রোপচার সফল হলে তিনি এক অভূতপূর্ব হৃদপিন্ডের অধিকারী হবেন। অবশেষে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হ’ল। মি. ভাটের শরীর থেকে তার স্বাভাবিক হৃদপিন্ড বাদ দিয়ে কৃত্রিম হৃদপিন্ড বসানো হ’ল। নতুন হৃদপিন্ড ঠিকঠাক সেট হয়ে গেল। তবু সাবধানতা অবলম্বন করে পুরনো হৃদপিন্ডকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হ’ল। কোনও কারণে যান্ত্রিক হৃদপিন্ড ঠিকঠাক কাজ না করলে তার জায়গায় পুরনো হৃদপিন্ড ফিরিয়ে আনা হবে। এই জন্যে ডঃ সরকার, ডাঃ বোস এবং মি. ভাট নিজে টেনশনে আছেন। তাকে আগামী এক সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হবে। তার দেখাশোনার জন্য দু’জন লোক সবসময় তার সাথে থাকবে। তাছাড়া তার বাড়ির লোকজন সবসময় তার শরীরের দিকে নজর রাখবে।
অস্ত্রোপচারের পর এক সপ্তাহ কেটে গেল। মি. ভাট সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন। যান্ত্রিক হৃদপিন্ড কোনও সমস্যা সৃষ্টি করে নি। অবশেষে সবার মনে স্বস্থি ফিরে এল। মি. ভাট তাঁর প্রতিশ্রুতি-মত ডঃ সরকার, ডাঃ বোস ও তাদের সহকারীদের মোটা অংকের ইনাম দিলেন।
মি. ভাট খুব ভালো আছেন। খুশিতে জীবনযাপন করছেন। নিজের ইচ্ছেমত তেলেভাজা খান। মাঝে মাদকদ্রব্যের সেবন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ধুমপানও একপ্রকার বন্ধ ছিল। এখন যত খুশি মদ খান, সিগারেট ফোঁকেন। ইদানিং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ড্রাগস আনিয়ে সেবন করেন। হার্টের রোগ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
দেখতে-দেখতে মাস ছয়েক কেটে গেল। মি. ভাট খুব ভালো আছেন। তাঁর হার্টে কোনও সমস্যা নেই। নিয়মিত চেক আপ করে ডাক্তাররা কোনও রকম সমস্যা খুঁজে পান নি। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ভাট নিজে ভালো থাকলেও তাঁর পরিবার একদমই ভালো নেই। মিসেস ভাটের শরীরটা খারাপ। হাত-পায়ের গাঁটে-গাঁটে খুব ব্যথা। অনেক দিন ধরে ওষুধ খাওয়ার পরেও রোগ সারছে না। তাদের দুই মেয়ে কান্তি আর কণিকা মায়ের শরীর নিয়ে খুবই চিন্তিত। কিন্তু মি. ভাটের তাতে কোনও মাথাব্যথা নেই।পরে কান্তির একমাত্র ছেলে আরিয়ার ম্যালেরিয়া হ’ল। চিকিৎসার আর একটু দেরি হলেই প্রাণ যেতে পারতো। তবু মি. ভাট নিশ্চিন্ত। একমাত্র নিজেকে ছাড়া আর কারও ব্যাপারে চিন্তা করার ইচ্ছেই তার হয় না। বিশ্বে একমাত্র তিনি নিজে ভালো আছেন, এটাই তাঁর কাছে বড় ব্যাপার। আর কেউ থাকল, কি থাকল না – সেসব নিয়ে চিন্তা করার তার কোনও দরকার নেই। এই হ’ল তাঁর বর্তমান ফিলোসোফি।
অথচ আগে এমনটা ছিল না। নিজের পরিবারের ব্যাপারে মি. ভাট বরাবরই খুব দায়িত্বশীল ছিলেন। আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে তিনি যখন কাদম্বরী দেবীকে বিয়ে করে ঘরে এনে তুলেছিলেন, তাঁর বাবা মনিন্দর ভাট তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, “এর দায়িত্ব এখন থেকে তোর উপর। একে কখনও কষ্ট দিস না, বুঝলি।”সেই থেকে মুকেশ তাঁর বাবার কথা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করে আসছেন। আজ পর্যন্ত তার উপর কারও অবহেলা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ ছিল না। এমনকি তিনি যখন হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন, তখনও পরিবারের প্রতি তিনি যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন।কিন্তু যান্ত্রিক হৃদপিন্ডের সফল প্রতিস্থাপনের পর তিনি যেন নিজেও যান্ত্রিক হয়ে গেছেন। মানসিকভাবে তিনি যেন অমানুষ হয়ে উঠেছেন। তাঁর হৃদয়ঘটিত আবেগ লোপ পেয়েছে।
ব্যাপারটা যদি শুধু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে তেমন চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু ইদানিং পরিবারের গন্ডি ছাড়িয়ে মুকেশবাবুর অমানবিকতা বাইরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।মুকেশ ভাট যাদের সঙ্গে বিজনেসে জড়িত আছেন, অর্থাৎ তাঁর পার্টনার ও কর্মচারীরা তাঁকে এতদিন একজন সহৃদয় ব্যক্তি বলে জেনে এসেছে। ভাট এতদিন কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন নি। কর্মচারীদের উপযুক্ত বেতন দিয়ে এসেছেন। ফেসটিভ্যালের সময়ে বোনাস দিয়েছেন। এমনকি কারও কোনও সমস্যা হলে অগ্রিম বেতন দিয়ে সাহায্য করেছেন। তাতে অবশ্য ফলও মিলেছে। ভাটের বিজনেস দিনের পর দিন আরও ফুলেফেঁপে উঠেছে।অথচ এখন তাঁর চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি নিজেকে একজন মহাশক্তিধর মানুষ বলে মনে করেন। আশপাশের মানুষজনকে তাঁর নিতান্তই তুচ্ছ, অপাংক্তেয় বলে মনে হয়। সেই তালিকা থেকে তাঁর নিজের স্ত্রী, মেয়ে, নাতি বা আত্মীয়-স্বজনরাও বাদ যায় না। এদের দেখে তাঁর ভারী রাগ হয়। এমন তুচ্ছ জীবনযাপন করে কী লাভ হয় একজন মানুষের! সারাটা জীবন হয় অন্যের গোলামী করে, নয়তো সাদামাটা-অনাড়ম্ভরভাবে কাটিয়ে দিচ্ছে এরা! এভাবে বেঁচে থেকে কী লাভ?! তাঁর মনে হয়, এদের আরও মেহনত করা উচিত।কীসের দয়াদাক্ষিণ্য?! তিনি কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দিলেন। পার্টনারদের সন্দেহ করতে শুরু করলেন।
ঘরে ফিরে এসে নিজের স্ত্রী কাদম্বরীকে দেখে মেজাজটা আরও বিগড়ে যায় তাঁর। এ কেমন মেয়েমানুষ?! একজন পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে আছে! নিজের কোনও কিছু করার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা নেই! খালি দিনের পর দিন তাঁর পয়সায় গিলে চলেছে! কাদম্বরীকে দেখে, তার কথা ভেবে অসহ্য লাগে তাঁর। মাঝেমাঝে তাঁর মনে হয়, এই মহিলাকে তিনি ডিভোর্স দিয়ে দেবেন।
এদিকে বেতন কমিয়ে দেওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হ’ল। তারা ইউনিয়নের দারস্থ হ’ল। ইউনিয়ন মিটিং, মিছিল, ধর্মঘট করে প্রডাকশনের বারোটা বাজাতে লাগল। দেখতে-দেখতে ভাটের কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগঠন আরও জোরালো হ’ল। মুকেশ ভাটের বিজনেস পার্টনাররা হাওয়া বুঝে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করল। ফলে তাঁর বিজনেস বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হ’ল।
এতদিন নিজের ক্ষমতার বাহারে মুকেশ ভাট দাম্ভিকতার চূড়ায় পৌঁছে গেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর কপালেও চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। ধীরে-ধীরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও নিজের বিজনেসকে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হলেন না। এদিকে সংসারে অশান্তি বাড়ছিল। তাই অনেক ভেবে-চিন্তে তিনি একদিন ডাঃ বোসের স্মরণাপন্ন হলেন।
মোবাইল ফোনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে মিঃ ভাট নিজেই বোসের চেম্বারে হাজির হয়েছেন। ডাঃ বোস যদিও সময় করে নিজেই তাঁর বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে মিঃ ভাট আপত্তি করলেন। যাইহোক, ভাট এসেছেন খবর পেয়ে ডাঃ বোস নিজেই চেম্বারের বাইরে বেরিয়ে এলেন।-“আরে, কী সৌভাগ্য আমার! আপনি নিজে কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন! আসুন, ভিতরে আসুন।”মিঃ ভাট তাঁর মেরুন রঙের সুদৃশ্য গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে-আসতে ডাঃ বোসের আতিথেয়তায় একটু শুকনো হাসলেন মাত্র। মুখে কিছু বললেন না।
ডাঃ বোসের চেম্বারে ঢুকে মিঃ ভাট কোনরকম রাখঢাক না করে তাঁর গোটা সমস্যাটা খুলে বললেন। বোস পুরোটা মনযোগ সহকারে শোনার পর মন্তব্য করলেন,”সত্যিকথা বলতে কি জানেন মিঃ ভাট, একবার মানুষের যে বিশ্বাস নষ্ট করেছেন আপনি, এখন শত চেষ্টা করেও সে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারবেন কি-না সন্দেহ!”একটুক্ষণ ভেবে নিয়ে তিনি আরও বললেন, “আপনি বরং আমার বন্ধু, কলকাতা শহরের একজন নামকরা সাইক্রিয়াটিস্ট ডঃ চিন্তামণি করের সাথে কথা বলুন। তাঁকে নিজের সমস্যার কথা জানান।”ডাঃ বোসের পরামর্শ শুনে মিঃ ভাট ডঃ করের সাথে কনটাক্ট করলেন ও তাঁর এপয়েন্টমেন্ট নিলেন।
ডঃ কর মুকেশ ভাটের মুখে গোটা ঘটনার বিবরণ আগাগোড়া শুনে খানিকক্ষণ চিন্তা করলেন ও তারপর মন্তব্য করলেন, “দেখুন মিঃ ভাট, আপনার সাথে যেটা ঘটেছে, সেটা আমি পুরোটাই বুঝতে পেরেছি। আসলে টোটালটাই সাইকলজিক্যাল ব্যাপার। যখন আপনি নিজের হার্ট নিয়ে কনসার্ন ছিলেন, তার প্রতি যত্নশীল ছিলেন, তখন আপনার ভিতর একটা স্নেহময়তা কাজ করতো। আপনি মনে করতেন, বেশি বাড় ভালো নয়। প্রত্যেকেরই একটা লিমিটেশন আছে। সেই লিমিটের বাইরে কখনই বেরনো উচিত নয়। সবকিছু প্রকৃতির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই প্রকৃতিকে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। কিন্তু যখন আপনার শরীরে একটি যান্ত্রিক হার্টের সফল প্রতিস্থাপন হ’ল, আপনি মনে করলেন, আপনি প্রকৃতিকে জয় করেছেন! এই পৃথিবীতে আপনি মহাশক্তিমান! আপনি যা চান, তা-ই করতে পারেন! আর আশেপাশের মানুষগুলোকে আপনি তুচ্ছজ্ঞান করতে শুরু করলেন! তাই তাদের রুটিরুজিতে আপনি হস্তক্ষেপ করলেন। আপনার পরিবারের প্রতি আপনি যে অন্যায় করে আসছিলেন, সেটা তারা মুখ বুঁজে সহ্য করলেও বাইরের লোক তা করবে কেন?! তাই এখন নিজেকে শোধরাতে হলে আপনার মানসিকতার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু সেটা যে চটজলদি হওয়ার নয়, এটা তো বুঝতে পারছেন।”দীর্ঘ ভাষণ দেওয়ার পর ডঃ কর চুপ করলেন।এবার ভাট আকুল গলায় বললেন, “তাহলে আমার কী করণীয়?”ডঃ কর একটু ভেবে নিয়ে বললেন, “আপনি নিজের হার্টকে তার জায়গায় ফিরিয়ে আনুন। মনে হয়, তাতেই কাজ হবে।”
মুকেশ ভাট ডঃ করের পরামর্শ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করলেন। তাঁর নিজের হৃদপিন্ড সংরক্ষিত ছিলই। ঠিক হ’ল, আগামী মঙ্গলবার ডাঃ বোস তাঁর সহকারীদের সাহায্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মিঃ ভাটের শরীরে তাঁর নিজের হৃদপিন্ডের প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করবেন।
মঙ্গলবার এসে গেল। মুকেশ ভাটের সফল অস্ত্রোপচারও সম্পন্ন হ’ল। এই খবর মিঃ ভাট তাঁর কয়েকজন বিশ্বস্ত সহকর্মীর সাহায্যে চারিদিকে প্রচারের ব্যবস্থা করলেন। আশা, এতে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষের অনেকটা লাঘব হবে, কেননা যান্ত্রিক হার্ট বসানোর খবরে একটা চাপা গুঞ্জন ছিল, ‘যার নিজের হার্টের প্রতি বিশ্বাস নেই, সে অন্য মানুষকে কী বিশ্বাস করবে?!’প্রচারে কাজও হ’ল। মানুষ মনে করল, মিঃ ভাট তাঁর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন।
এর দিনকতক পরে মিঃ ভাট একটু সুস্থবোধ করতে নিজের কর্মচারীদের একটা মিটিংয়ে আহ্বান করলেন। সেই মিটিংয়ে তিনি তাদের বেতন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন। এমনকি এতদিন তাদের বেতনে যতটা ঘাটতি হয়েছিল, সেটাও সুদসমেত ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। মিটিংয়ের পর কর্মচারীদের মধ্যে সন্তোষ ফিরে এল। ভাটের বিজনেস পার্টনাররাও একে-একে ফিরে আসতে লাগলেন।
এদিকে নিজের বাড়ির লোকজনের প্রতিও তাঁর আগের ব্যবহার ফিরে এল। তিনি তাদের প্রতি আগের মতই সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন। ফলে তারাও তাঁর সঙ্গে আগের মত ব্যবহার করতে শুরু করল। এতে ভাটের মনে আগের প্রশান্তি ফিরে এল। এতদিনে তিনি অনেকদিন আগের একটা পুরনো প্রবাদকে নিজের জীবনে উপলব্ধি করে মনে-মনে একটু হাসলেন। প্রবাদটি নিম্নরূপ,”অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে।অতি ছোট থেকো না, ছাগলে মুড়ে খাবে।”
মুকেশ ভাটের হৃদপিন্ড ছোটগল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
নবমীর শেষরাত