কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

মাধুরি

মাধুরি প্রেমের গল্প – চিরঞ্জিৎ সাহা

ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যে গভীর রাতে এসে নামলাম ড্যাফোডিল হোটেলের সামনে। ম্যালের ঠিক পাশেই সাজানোগোছানো ছোট্ট হোটেল। জীবনে প্রথমবারের জন্য দার্জিলিং , তাও আবার বান্ধবীকে নিয়ে ; থ্রিলটাই আলাদা। কিন্তু এসে পড়লাম বড্ড এক ফাঁপড়ে। শিলিগুড়ি পৌঁছনোর পর থেকেই বৃষ্টি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না আমাদের। যাও বা এসে পৌঁছলাম ম্যালে, সমস্ত হোটেল বন্ধ। এত তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে যে হোটেল বুকিংয়ের সময়টুকু অবধি পাইনি। অবশেষে পরিত্রাতা হয়ে হাজির হলেন আমাদের ড্রাইভার। ওনার দয়াতেই শেষমেষ ভোর চারটেয় পেলাম মাথা গোজার আস্তানা — হোটেল ড্যাফোডিল। এই কাকভোরে রুমের চাবি দিতে এসেও হোটেল মালিকের মুখে বিরক্তির ছিটেফোঁটা নেই , তবে তার ফর্সা নেপালি গালে বিস্ময়ের লাল ছাপ বেশ স্পষ্ট। রেজিস্টারে আমাদের নামধাম লিখে নিয়ে এলেন দোতলার একটা ঘরে। নিচের রিসেপশন রুম থেকে দোতলায় আসার সিঁড়ি — সবেতেই স্পষ্ট প্রাচীনত্বের ছাপ। সংস্কারও হয়নি বোধ হয় বহুদিন। ঘোমটার চাকচিক্য দেখে যেমন মুখের সৌন্দর্য্য বিচার করা যায় না , তেমনি ড্যাফোডিল হোটেলের বাইরের আড়ম্বর দেখে ভিতরের স্যাঁতস্যাঁতে সিঁড়ির কথা কল্পনা করাও রীতিমতো দুঃসাধ্য। একরাশ বিরক্তি নিয়েই তালা খুলে আমি আর অমৃতা ঢুকে পড়লাম ঘরে। চমকের শুরু ঠিক সেখানেই। দৈনিক এক হাজার টাকার স্যাঁতস্যাঁতে সিঁড়ির এই হোটেলে আমাদের রুম যেন সাক্ষাৎ তাজপ্যালেস! কফি মেকার থেকে রুম হিটার , এসি মেশিন থেকে ঝকঝকে বেসিন, ফলস সিলিং থেকে বার্জার কোটিং — কি নেই! গোটা ছাদ জুড়ে যেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কৃতিত্বময় কারুকার্য , দেয়ালে কৃত্রিম ঝরণার স্রোত। পর্দা সরাতেই দেখা মিলল — কাঞ্চনজঙ্ঘার কুমারী কপালে সূর্যের প্রথম সোনালি আলোর চুম্বন। ভোররাতের বৃষ্টি মুছে তখন ডানা মেলেছে সুয্যিমামা। গিজারের গরম জলে স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং ভ্রমণে। হোটেল থেকে রাস্তায় পা রাখতেই সারথি হিসেবে পেলাম গতরাতের ড্রাইভারকে। এর আগেই হোটেলের মালিক নাদান শেরপা ব্রেকফাস্টে আমাদের সার্ভ করে গেছেন ভুট্টার খিচুড়ি। সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার অমায়িক সৌন্দর্য্যের পর গরম পাহাড়ি খিচুড়ি — আমি আর অমৃতা যেন এক স্বর্গীয় মুগ্ধতার সাগরে ভাসছি।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা বাঁক পেরিয়ে এসে পৌঁছলাম দার্জিলিং জুতে। পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানার বিশাল খাঁচায় প্রকৃতির সন্তানদের অবাধ বিচরণ। জন্মজন্মান্তরের জীবনসঙ্গিনী মিষ্টি পাণ্ডাটার হাত ধরে হাসতে হাসতে দেখলাম গাছের আড়ালে তুলতুলে জায়ান্ট পাণ্ডার আদুরে চলাফেরা — আনন্দ যেন আর বাঁধ মানছে না কিছুতেই। ” পাণ্ডাতে দেয় হামা, সাদা লোম বাঘ মামা ” — চিড়িয়াখানা ঘুরে সোজা চললাম পিস প্যাগোডায়। ভগবান বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা অবিরাম লড়াইয়ের অবসানে এবার স্থির এক শান্তিময় জীবনের। আশেপাশের পাহাড়ি সবুজ ততক্ষণে আমাদের মনকে টেনে নিয়েছে সতেজতার এক নতুন দেশে। চোখ ঘোরালেই পাইনের আঁকিবুকি। অচেনা পাখিদের গান। পায়ে পায়ে ঘুরছে লম্বা পশমওয়ালা কুকুর। প্রকৃতির চেয়ে বড়ো জাদুকর বোধ হয় এ ব্রহ্মাণ্ডে আর কেউ নেই। মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি আর পশলা বৃষ্টিকে গায়ে মেখে পাহাড়ি ঘূর্ণি ধরে এগিয়ে চলল আমাদের গাড়ি। সাথে দোসর ড্রাইভার মাধুরি শেরপার নিখুঁত কমেন্ট্রি। হ্যাঁ ,আমাদের ড্রাইভার একজন মেয়ে। দুর্ঘটনায় দাদার মৃত্যুর পর থেকেই বয়স্ক মা-বাবা আর বোনের দায়িত্ব ওর কাঁধে , পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা তো রয়েইছে। আর তাছাড়া অতিথিদের কাছে নিজের শহরটাকে চেনানোটাও বেশ গর্বের মনে করে মাধুরি। তাই-ই বেছে নেওয়া এই পেশা — এমনটাই হাসিমুখে ও জানাল আমাদের। তিনদিনে প্রচুর ঘুরলাম মাধুরির সাথে। বাতাসিয়া লুপ থেকে ভগিনী নিবেদিতার আশ্রম — কোনোকিছুই বাদ দেয়নি মেয়েটা। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাবে বলে গাড়ি নিয়ে এসে হর্ণ বাজিয়েছে ভোর সাড়ে তিনটেয়। উপোস থাকতে বলে রেখেছে তখনই। ফিরে এসেই সোজা নিয়ে গেছে মহাকাল মন্দিরে। কপালে ছোট্ট সিঁদুরের টিপ আর মাথায় লাল ওড়না দিয়ে টানা ঘোমটা, ঠান্ডায় রক্তিম, তুলতুলে গাল থেকে ঠিকরে আসা সূর্যের সোনালি আভা, বন্ধ চোখে পাহাড়ের স্তব্ধতা, সামনে বুকের কাছে জড়ো করা শান্ত দুটো হাত — অমৃতাকে এতটা সুন্দরভাবে আগে কখনও দেখিনি আমি। সমস্ত মেয়ের মাঝেই বোধ হয় একটা মা লুকিয়ে থাকে। কলেজবেলার সেই ছটফটে অমৃতা সত্যিই আজ অনেক পরিণত। পাহাড় যেন আমার আট বছরের প্রেমটাকে আবারও আবিষ্কার করতে শেখাল নতুনভাবে।

আমাদের টয়ট্রেনেও চড়িয়েছে মাধুরি। রাজ-সিমরান পোজে চা বাগানে ছবি তুলিয়েছে একরকম জোর করেই। বোটানিতে মাস্টার্স করেছি শোনামাত্রই অনেকটা পাহাড়ি চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিয়ে গেছে স্থানীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনে। ক্যাকটাসের এত বৈচিত্র্য চাক্ষুস করার সৌভাগ্য আমার আগে কখনও হয়নি। ফেরার পথে পরিচয় করিয়েছে লোকাল ফুড — আলুভুজার সঙ্গে। পাহাড়ি লঙ্কার চাটনি দিয়ে আলুর এমন মনকাড়া প্রিপারেশনের স্বাদ জীবনে প্রথমবার। দুদিনেই মেয়েটা যেন অদ্ভুত রকম একাত্ম হয়ে পড়েছে আমাদের সাথে। লাভজার্নিকে আরও মধুর করে তুলছে ওর মুখের নানান পাহাড়ি প্রেমকথা। আমাদের প্রেমের অকুণ্ঠ তারিফও করছে বারংবার। মেয়েটার আন্তরিকতায় সত্যিই যেন নাম না জানা পাহাড়ি নদীর চঞ্চলতা। মুখ জুড়ে সদ্য ফোঁটা জুঁইয়ের আবেগী সারল্য।

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে মাধুরির সাহচর্য্য আর ড্যাফোডিলে ফাইভ স্টারকে হার মানানো নাদানবাবুর লা-জবাব আড়ম্বরের সঙ্গে রান্নার হরেনডাস হাত। নুডলস দিয়ে বানানো তিব্বতি থুকপার স্বাদ সত্যিই জিভ থেকে মোছা দায়। এক সন্ধ্যায় রেঁধে খাওয়ালেন ধোঁয়াওঠা গরম স্যুপ আর জায়ান্ট “সুমো-মোমো”। চিকেন, চিজ, ব্রোকলি থেকে শুরু করে মাশরুম, ডিম — কী নেই ভিতরে ; সাইজে যেন বার্গারকেও হার মানায়। দেখতে দেখতে তিনদিন পেরিয়ে চেক আউটের সময় হয়ে এল।

বারবার ফোন করেও মাধুরিকে পেলাম না সেদিন। দার্জিলিং-এ আসার পর থেকেই যে ফোনে নেটওয়ার্ক চলে গেছিল , আজ তাতে ফুল টাওয়ার। কিন্তু মাধুরির ফোন সুইচড অফ। বেরোনোর সময় রিসেপশনে ইতস্তত নাদানবাবু হঠাৎ বললেন — ” একটা কথা বলি বাবা , কিছু মনে কোরো না , তোমরা কি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো? “
আমি কিছু বলার আগেই মুখ খুলল অমৃতা — ” হ্যাঁ , গোপনে আমাদের রেজিস্ট্রিও হয়ে গেছে। কিন্তু ও এখনও তেমন কিছু জব পায়নি বলে
আমার বাড়ি থেকে মেনে নেয়নি সম্পর্কটাকে , অন্যত্র বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে হঠাৎ। তাই এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না আমাদের। নেক্সট ডব্লু বি সি এস-এর রেজাল্ট বেরোলেই ও সিওরলি গ্রুপ ‘এ’ পেয়ে যাবে আর আমিও এসএসসি-এর রেজাল্টের অপেক্ষায়; কিন্তু বাড়ির লোক এসব শুনতে নারাজ। প্রেমের তুলনায় আর্থিক নিরাপত্তাই অনেক বেশি জরুরি ওদের কাছে। কিন্তু আপনি এসব বুঝলেন কী করে? পুলিশ ডাকার প্ল্যান করে কোনো লাভ হবে না কাকু, আমাদের কিন্তু রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। “
—– ” ছি! মা! এসব তুমি কী বলছো? তুমি আমার নিজের মেয়ের মতো। আচ্ছা বাবা ! তুমি অমৃতাকে খুব ভালোবাসো, না? “
—- ” নিজের চেয়েও বেশি। ” উত্তর দিলাম মেজাজের সাথেই।
—- ” তোমরা যেদিন এলে , দার্জিলিংয়ে সেদিন প্রবল ধস। তিন-চারটে ট্যুরিস্ট কার তলিয়ে গেছে খাদে। সমস্ত রাস্তা বন্ধ। জানি না , ওই দুর্যোগের মধ্যেও আমার মেয়ে মাধুরি তোমাদের কোথা দিয়ে নিয়ে এল এই হোটেলে! “
—- ” মাধুরি আপনার মেয়ে ? “
—- ” হ্যাঁ ! আমি-ই সেই হতভাগ্য পিতা যে সরলতার মায়াজালে ভুলে আশ্রয় দিয়েছিলাম নিজের মেয়ের হত্যাকারীকে। “
— “মানে? মাধুরি এখন কোথায়?”
— ” বছর পনেরো আগের ঘটনা। কলকাতা থেকে একটি ছেলে এসে ওঠে আমার হোটেলে। বাংলা নিউজ চ্যানেলের রিপোর্টার। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন তখন চরম পর্যায়ে। এখানকার বেশিরভাগ হোটেলই সেসময় বাঙালিদের আশ্রয় দিতে চাইত না কিছুতেই। কিন্তু ছেলেটির একান্ত অনুনয় বিনয় আমার মন জিতে নেয়। গোর্খা আন্দোলনে প্রশাসন তখন রীতিমতো ব্যাকফুটে। বিক্ষুব্ধদের সাথে বুদ্ধিতে পুলিশ পেরে উঠছে না কিছুতেই।

এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছিল আমার মেয়ে মাধুরি। প্রশাসনিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না নিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ও। প্রতিটি অপারেশনের নিখুঁত ছক বেরিয়ে আসত ওর মাথা থেকেই। পুলিশ ওকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেনি , তা নয়। কিন্তু ওর ধুরন্ধর মস্তিষ্কের কাছে বারংবার হার মানতে বাধ্য হত সরকারের তাবড় গোয়েন্দারাও ; তাই প্রমাণসমেত আমার মেয়েকে হাতকড়া পড়ানোটা ক্রমেই রূপান্তরিত হয় দিবাস্বপ্নে।

এরপর গোর্খারা পাশে পেল সেই রিপোর্টারকে। জোয়ার এল আন্দোলনে ; আর মাধুরির মনে এল প্রেমের সুনামি। এক বৃষ্টির রাতে গোর্খাদের গোপন ক্যাম্পে বসল মাধুরি আর কলকাতার রিপোর্টার চিরঞ্জিতের বিয়ের আসর। ইতিমধ্যেই গোর্খাদের প্রিয় জিজুজি হয়ে উঠেছে চিরঞ্জিত। সেদিন ছিল তার আনুষ্ঠানিক শিলমোহর। দুজনকেই সাজানো হল রাজবেশে। কন্যাদানে উপস্থিত ছিলাম আমিও। নিয়ম মেনে প্রথমে কুশ ঘাসের আংটি হাসিমুখে বদল করল ওরা দুজন। তারপর পুরোহিতের উপস্থিতিতে দুহাত জড়ো করে হাঁটু মুড়ে কলস পূজা। মুঠোভরা গোলাপের পাপড়ি হাতে চিরঞ্জিতকে মাঝখানে বসিয়ে তিনপাক ঘুরল মাধুরি। মেয়েটার দুচোখে তখন একরাশ লজ্জা। বারমুডা ঘাসের তৈরি লম্বা মালা গলায় পরে নিল ওরা দুজন। চলল মালাবদল। লাল পুঁতি আর সোনা দিয়ে বানানো ” পটে তিলহারি ” গলায় মেয়েটাকে সাক্ষাৎ যেন রাজরানি লাগছিল সেদিন। এরপর সিঁদুরদান। মেয়ের বান্ধবীরা সুর তুলেছে নেপালি গানে। এক কথায় উৎসব পুরো মধ্যগগনে। হঠাৎ খবর পেলাম গোটা ক্যাম্প ঘিরে ফেলেছে বিশাল পুলিশবাহিনী। সিঁদুরদানের আগেই ভয়ার্ত পরিবেশে গুলি চলল বেশ কয়েক রাউন্ড। মারা গেল আমার মেয়ে সমেত আরও তিরিশ জন গোর্খা।

পাঞ্জাবির নিচে লোকানো ধারালো ভোজালি বের করে পাশবিক হিংস্রতায় সেদিন মাধুরির বুকের বা পাশে বসিয়েছিল চিরঞ্জিত। আক্রমণকারীরা ওকে ‘ স্যার’ বলে সম্বোধন করছিল। ও আসলে কোনো রিপোর্টার ছিল না , ছিল রিপোর্টারের ছদ্মবেশে আন্দোলন নিকেশের দায়িত্বে থাকা প্রধান গরিলা জওয়ান। নিজের উদ্দেশ্য সফল করতেই মিথ্যে পরিচয়ে আশ্রয় নিয়েছিল আমার হোটেলে আর আমার মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে জেনে নিয়েছিল আন্দোলনের যাবতীয় খুঁটিনাটি। এই ঘটনার বছর দুয়েক আগে পুলিশের হাত থেকে পালাতে গিয়েই খাদে তলিয়ে গিয়েছিল গোর্খা বীর মালসোয়ামা শেরপা। ওই হতভাগাটাও আমারই ছেলে, মাধুরির দাদা।

মেয়ের মৃত্যুর পর পাহাড় শান্ত হল বটে ; আন্দোলনকারীদেরও জোরজবরদস্তি জেলে ঢোকানো হল ঠিকই কিন্তু পরবর্তী এক বছরে আমার হোটেলে আসা সাত দম্পতির মধ্যে ছয়টি ক্ষেত্রেই হোটেলের ঘরে সুইসাইড করে কেউ না কেউ। ব্যতিক্রম হয় কেবল একবার , সেবারও ড্রাইভারের আসনে ছিল আমার মেয়ে মাধুরি । সে-ই প্রথমবার! প্রায় এক বছর পর নিজের মৃত মেয়েকে দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে যাই আমি। মলিন হাসিতে সেদিনের সেই ড্রাইভার আমাকে বলে গেছিল — ভালোবেসে মরণেও সুখ। স্বীকার করেনি নিজের প্রকৃত পরিচয়।

এতগুলো দুর্ঘটনার পর পুলিশ সিল করে দেয় আমার হোটেল। সেই ড্রাইভারের দেখাও পাইনি আর। তারপর দিন তিনেক আগে হঠাৎই তোমাদের আগমন। দুর্যোগের রাতে চালকের আসনে আবারও সেই পরোপকারী ড্রাইভার, যাকে দেখতে হুবহু মাধুরির মতোই। বন্ধ হওয়া রেজিস্টার খাতা খুলল পনেরো বছর পর। মুহূর্তে দোতলার তালাবন্ধ রংচটা ঘর হয়ে গেল রঙিন। আমাকে স্তব্ধ করে চলতে থাকল মাধুরির অদৃশ্য ম্যাজিক। আসলে বেঁচে থাকতে মেয়েটা ভালোবেসে হারিয়েছিল সব , তাই হয়তো আজও বারবার ফিরে ফিরে আসে প্রকৃত ভালোবাসার সাক্ষী হতে। মিথ্যে ভালোবাসার শাস্তি ওর কাছে নির্মম মৃত্যুদণ্ড আর প্রকৃত প্রেমে উপহার আজও আন্তরিক আতিথেয়তা। মেয়েটা আমার বড্ড বোকা ছিল যে ….আন্দোলন শুরুর আগে মাধুরি পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ছোটো ওমনিও চালাত। ওর জ্ঞানের জন্য ট্যুরিস্টরা ভালোবেসে নাম দিয়েছিল ‘লেডি গুগল’। “

আমাদের মনকে গ্রাস করেছিল এক বিষাদময় শূন্যতা। দার্জিলিংয়ের প্রবল ঠান্ডাতেও কপাল ভিজে গেছিল ঘামে। এ যেন এমন এক ভয় যাকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করে বারংবার।
নাদানবাবুর ভাড়া করা গাড়িতে চড়ে আমরা নেমে এলাম শিলিগুড়ি। সাথেসাথেই ফোনে খবর এল , নেক্সট মান্থে বিডিও ট্রেনিংয়ে আমাকে জয়েন করতে হবে বাঁকুড়ায়।

আজ আমি আর অমৃতা তিন বছরের বিবাহিত দম্পতি। দুই বাড়িতেই মেনেও নিয়েছে সব। আমাদের কালনারই একটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে এখন শিক্ষকতা করে অমৃতা। গতরাতে ওর কোল আলো করে জন্ম নিয়েছে আমাদের ফুটফুটে মেয়ে — নাম রেখেছি ‘ মাধুরি’।

মাধুরি প্রেমের গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!