কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » পুজো সংখ্যা ১৪২৮ » লুয়াং প্রবাং

লুয়াং প্রবাং

luang_prabang

লুয়াং প্রবাং ভ্রমণ –

আগের বছর   পুজোর সময়ে   আমি গিয়েছিলাম লুয়াং প্রবাং।  লুয়াং প্রবাং পৌঁছনোর সবথেকে আকর্ষণীয় পদ্ধতি হল পুরানো কাঠের বজরা ভাড়া করে, উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই শহর থেকে মেকং নদীর ওপর ভেসে চলা। কিছুদিন আগে অব্দিও এইসব জায়গাতে খুব বেশি টুরিস্ট আসতেন না। কিন্তু দিন পাল্টেছে, মানুষের উৎসুক্য অনেক বেড়েছে।  এই ভ্রমণের আগে জায়গা সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা নিয়েছিলাম বিভিন্ন ট্রাভেল ব্লগ থেকে।
ব্যাংককে আমার দিদির বাড়ি।  তাই দমদম থেকে ফ্লাইট করে ওখানে উঠেছিলাম।  তারপর লুয়াং প্রবাং কিভাবে ঘুরবো , কাদের সাথে ঘুরবো সবটাই ঠিক করে দিয়েছিলো আমার জামাই বাবু।
ব্যাংকক থেকে ভোটের ফ্লাইট ধরে সকাল-সকাল পৌঁছে গেলাম লুয়াং প্রবাং।
 লাও গভমেন্টের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে গেলাম , এদের কথা আমি ট্রাভেল ব্লগ থেকেও জেনেছিলাম।একটি পুরনো ফরাসি গভর্মেন্টের বাংলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি হয়েছে এই আধুনিক হোটেল। বিলাসিতা এখানে সহজ এবং সাবলীল, উচ্চকিত নয়।
 আমার খাটের চারদিকে সাদা নরম কাপড়ের আবরণ দেওয়া মশারি। খাটটি সেগুন কাঠের। ঘরের পাশেই একটি ছোট্ট বাগান, সেই বাগানে একটি খোলা বাথটাব। উঁচু দেয়াল। একদম রূপকথার মতো।
  প্রাতঃরাশের জায়গা আলাদা , সকালে উঠে যে যার মতো সেখানে চলে এসেছে । বিশাল প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা, দুধ কনফ্লেক্স, প্যানকেক, বিভিন্ন রকমের মৌসুমী ফল, ভাত মাংস মাছ নুডুলস, মাফিন, ব্যাগেত নামের ফরাসি রুটি, বিভিন্ন ধরনের চিজ: পাওয়া যায় না এমন কিছুই নেই। আমি সব অল্প অল্প করে খেয়েছি। হোটেলের মাঝে একটি সুইমিং পুল।  
একদিন বিকেলে আমরা ব্যাকস্ট্রিট একাডেমী নামে একটি স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থার সাথে বের হলাম।
 বিলাসীতা পূর্ণ হোটেলের কোন অভাব নেই এখানে, খুব ছোট ছোট হোটেলও ভালো, মানে অত্যন্ত ভালো ফরাসি খাওয়া পরিবেশন করে থাকে। যেখানেই যাই না কেন , আমি সেখানকার স্থানীয় খাবার খাবই। তাই  স্থানীয় খাবারের খোঁজ করতে লাগলাম , যা লাও মানুষজন খেয়ে থাকেন।
পাহাড়ি ছত্রাক, পুকুরের এবং নদীর মাছ, বিভিন্ন ধরনের সবজি, হাজার বছর পুরনো ডিম আর মোষের মাংস এখানকার প্রধান খাবার। অবশ্যই ভাত মানে যাকে স্টিকি রাইস বলা হয় তাছাড়া লাও মানুষের খাওয়ার পাত পূর্ণ হয়না।
 আমাদের কপাল ভালো ছিল তাই  গলদা  চিংড়ি পেয়ে গিয়েছিলাম । যেহেতু চারদিকে চারটি দেশ এবং সমুদ্রের কোন চিহ্ন নেই লাও-য়ের মাছের স্বাদ অনেকটা আমাদের বাংলাদেশ এর মতনই। মিষ্টি জলের মাছ ও এখানে পাওয়া যায়। এখানে নাইট মার্কেট খুব ফেমাস। দূর দূর থেকে পাহাড়ি আদিবাসী গ্রামের মানুষজন পসরা সাজিয়ে আসেন। মোষের শিং থেকে তৈরি শি্ংগা, বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের চামড়া দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র, সাপ এবং কাঁকড়া বিছে ভিজিয়ে রাখা হুইস্কি, পুরনো মন্দিরের ভগ্নাংশ, এইসব অদ্ভুত জিনিস বিক্রি হয় লুয়াং প্রবাং এর রাতের বাজারে। এই বাজারের ই এক ধারে বসে খাওয়া নিয়ে কিছু মানুষ। একে বলা হয় লাও বুফে। বুফে ভর্তি বিভিন্ন রকমের খাওয়া, মাছ মাংস ডিম তো আছেই, তার সাথে আছে বিভিন্ন রকমের ফল আর সবজি। আমার মতে সস্তায় পুষ্টিকর। রাতের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে বাইরে বেরিয়ে আসুন। 

লুয়াং প্রবাং

মেকং নদী


পরদিন সকালে উঠে আমরা সোজা চলে গেলাম স্যাফরন ক্যাফে। স্যাফরন ক্যাফে থেকে আমরা একটি ছোট সরু কাঠের নৌকো পাড়ি দিলাম মেকং নদীর বুকে। মোটামুটি পাঁচ মিনিট নৌকো চললেই আপনি লুয়াং প্রবাং এর শহরে মুখ ছেড়ে শান্ত সুন্দর লাও গ্রাম্য সভ্যতায় পদার্পন করবেন। তার সৌন্দর্য অসাধারণ । নদীমাতৃক দেশ হলো লাও।
লাও মানুষজন অ্যানিমিস্ট। তারা পূর্বপুরুষ এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে পূজা করে থাকেন আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব তো আছেই এখানে বুদ্ধিস্ট মনাস্তেরি গুলিতে বাচ্চাদের পড়ানো হয়।মনাস্তেরিতে প্রবেশ করলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। এরপর  আমরা রওনা দিলাম কুয়াংশি জলপ্রপাতের দিকে। এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই।  আমার ব্যক্তিগত মতামত , বর্তমানে আমরা যেখানেই যাই না কেন আগেই ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলতে শুরু করি।  আজকাল সেই রকম আমরা আর ”  দেখিনা” ।  এই জায়গায় যদি কোনো পাঠক যান তাহলে ফটো যত সম্ভব কম তুলে একটু মনোযোগ দিয়ে জলপ্রপাত এর শব্দ শুনবেন।  
ছোট ছোট মাছ আছে এই জলপ্রপাতে। আপনার পায়ে হালকা হালকা কামড়াবে। আশেপাশে প্রচুর ঘনসবুজ জঙ্গল। দিদির বাড়ি থেকেই শুনে ছিলাম  নং খিয়াও নামে একটি জায়গা আছে। এখানে কিছু হোমস্টে আছে।  পুরনো একটি গ্রাম। নীল চাষ এখানকার অন্যতম ব্যবসা। দেড় হাজার ভারতীয় টাকায় আপনি যা অসাধারণ হাতে বোনা স্কার্ট বা কাপড়ের টুকরো পাবেন তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারা সম্ভব নয়। আপনি যদি গ্রামীন ভ্রমণ  পছন্দ করেন অবশ্যই এই গ্রামে কিছুদিন থাকতে পারেন ।  পর্যটনের জন্য আস্তে আস্তে নং খিয়াও পৃথিবীর কাছে পরিচিতি পাচ্ছে। অনেক গেস্ট হাউস হোটেল তৈরি হচ্ছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট এবং বেকারি। আমার মতে একটি ঠান্ডা বিয়ার নিয়ে নদীর ধারে বসে থাকলেই নং খিয়াও ভ্রমণ সার্থক। নং খিয়াও – তে প্রচুর জায়গা আছে , যেখানে আপনি অ্যাডভেঞ্চার করতে পারেন। যেমন ধরুন , আমি এক দিন  পাঠক গুহার রাস্তায় গিয়ে ছিলাম । ভিয়েতনাম যুদ্ধকালীন লাউ কিছু কম আমেরিকান বোমের উৎপাত সহ্য করেনি। প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলগুলি তখন এই গুহার মধ্যে থেকে যুদ্ধ এবং সরকার চালাতেন। পাঠক এরকম একটি গুহা। এর মধ্যে হসপিটাল ব্যাংক স্কুল সমস্ত ছিল। উল্টো দিকে আরেকটি গুহা আছে, যেখানে তিনদিন ধরে আগুন জ্বলেছিল। এ গুহা তে প্রবেশ করলে একটি অনুভূতি যা ভাষায় বোঝানো যাবে না।  
একটি ইউনেস্কো দ্বারা চিহ্নিত প্রাচীন শহর হলো লুয়াং প্রবাং।  এই জায়গা ইতিহাসের অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে এসেছে। কখনো চীন, কখনো জাপান এবং দীর্ঘকালীন ফরাসি কলোনি শাসন সহ্য করেও, লুয়াং প্রবাং কিন্তু নিজস্বতা ভুলে যায়নি।
তাহলে আর কি , পুজোতে বেরিয়ে পড়ুন লুয়াং প্রবাং – এর উদ্দেশ্যে। 

লুয়াং প্রবাং ভ্রমণ – সমাপ্তি

যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!