প্রেমের কাহিনি প্রেমের গল্প – অভিষেক ঘোষ
(১) আমি কফির কাপ নামিয়ে রেখে, মুচকি হেসে প্রশ্ন করি, “দু-হাতে কী মেখেছ?”
ও উত্তর দেয় একটু সময় নিয়ে। আমাদের হারানো সময়ের স্মৃতির বুকে পালকের মতো ভাসিয়ে দেয় একটা শব্দ, “রক্ত!”
“সত্যিই! তোমাকে হত্যাকারীর মতো দেখাচ্ছে…”
“স্বাভাবিক। আমি অপরাধী আর তুমি আমার অপরাধ। আতস কাচে খুঁজলে আমি নিশ্চিত, তোমার ফরসা গলায় আমার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে।”
“খোঁজার কী দরকার! আমি তো দিব্যি টের পাই।”
“তাই বুঝি! ঠিক কী টের পাও জানতে ইচ্ছে করে।”
“তাহলে শোনো… তুমি আমাকে দেখতে বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে। আমি ছিলাম তোমার আবিষ্কার, অন্তত প্রথম দিকে। তুমি আমাকে নিয়ে পরীক্ষা চালাতে। তোমার কোনো কোনো রিসার্চ পেপার হয়তো ইতিহাসে থেকে যাবে। তারপর হঠাৎ একদিন তুমি বুঝলে তোমার এবার চাই নতুন কোনো প্রোজেক্ট, নতুন প্রকল্প। ব্যাস আমার হয়ে গেল। তারপর পেটের মধ্যে কংক্রিট আর মগজে অজস্র গিঁট! বুঝলে?”
“বুঝলাম। অলস মস্তিষ্ক…”
“একটা সেরিব্রাল কথোপকথন উড়ে গেল মাঠের বাইরে। তোমার হল ছক্কা, আমার বোধহয় পুট অথবা ফক্কা!”
“এতটা হতাশ হওয়ার কিছু আছে কি! আমি গেলাম বটে। কিন্তু কত কিছু যে শিখিয়ে গেলাম?”
“যেমন?”
“যেমন… রাতের সব তারাই আছে.. দিনের আলোর গভীরে।”
“খটকা লাগছে না? বানিয়ে বললে কিনা?”
“ছাড়ো… এবার উঠতে হবে।”
“বেশ। তবে তাই হোক্।”
(২) “বিলটা না হয় তুমিই মেটাও।” – আমি বললাম।
“কীসের আনন্দে?”
“তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, সেই দুঃখ কিছুটা কমবে তুমি পেমেন্ট করে দিলে।” – আমিও অম্লানবদনে বললাম।
“লজ্জা করে না, না?” – বলল বটে, তবে টাকাটা ওই বের করল। তারপর পায়ে পায়ে ফুটপাথে। এই যে পাশাপাশি হাঁটার সময় কখনও আলতো, কখনও ঘনিষ্ঠ স্পর্শ, দেখলাম এতদিন পরে আবার সেটা উপভোগ করতে পারছি। শরৎ কাল, চারিদিকে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে। পুজো এল বলে। ক’দিন পরেই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়বে বাড়িগুলো, গলিগুলো অচেনা লাগবে আর চলন্ত বাস থেকে বোঝা দুষ্কর হবে এলেম কতদূর। মিহি রোদ খেলা করছে ওর চুলে আর ও হাঁটছেও বেশ ধীরে, যেন কোনো তাড়া নেই। আমার হঠাৎ একটা কথা মনে গেল।
“একটা কথা মনে পড়ল… ক’দিন আগে একটা মুভি দেখছিলাম। তাতে একটা অদ্ভুত রোগের কথা বলেছে। এস.টি.বি.ও.। মানে এই রোগটা তখনই হয়, যখন প্রেম-ভালোবাসা ছাড়াই কেউ সেক্স করে! ভাবো! মানে ধরো তুমি তোমার হবু স্বামীকে বিয়ে করলে বড়ো গাছে মই বাঁধবে ভেবে অথবা একান্তই বাবার ইচ্ছায়। তারপর যথারীতি ওইসব করলে। তারপর কিন্তু ওই রোগ অবধারিত। হেব্বি কনসেপ্ট, তাই না!”
“বাহ্ চমৎকার। হাবিজাবি এসব তো ভালো লাগবেই। কী নাম ছবিটার?”
“এই রে! সেটাই তো ভুলে গেলাম, কিছুতেই মনে করতে পারছি না।”
“বাঁচা গেছে। খালি সিনেমা আর সিনেমা। গান-টান গাইছ না আজকাল?”
“আমি গান শোনাবো একটি আশা নিয়ে… এ গান যেন তোমার ভাল লাগে..” – একেবারে দু’কলি শুনিয়ে দিলাম, তারপর বললাম, “কিন্তু বিয়ের সানাইয়ের শব্দে এবার সে সুর চাপা পড়ে যাবে মনে হয়।”
“মনে হয় কেন? একেবারে নিশ্চিত।”
“ইস্ কি নিষ্ঠুর!”
“হয়েছে… এবার চলি” – বলেই একটা বাসকে থামার ইঙ্গিত করল, আমায় আর কিছু বলার সুযোগও দিল না।
আমি অপ্রসন্ন সুরে শুধু বললাম, “অগত্যা”।
(৩) একাই হাঁটছিলাম। ভাবছিলাম, টাকা যখন বেঁচেই গেল, নন্দনে ঢুঁ মারি। ‘মায়ার জঞ্জাল’-টঞ্জাল কিছু একটা দেখে নিই… এমন সময় হোয়াটস্ অ্যাপে মেসেজ এল.. “I Really Miss You…” পা-দুটো অমনি হালকা হয়ে গেল। ভাবলাম, যাই ঘটুক… আমাদের গল্পটা তা-হলে প্রেমের কাহিনিই রয়ে গেল।
প্রেমের কাহিনি প্রেমের গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
জ্বর
ভুবন যায় ভুবন আসে
প্রেম চিরন্তন