ভালোবাসা ডট কম প্রেমের গল্প – অন্তরা সরকার
ট্রেন ছাড়তে আর পাঁচমিনিট বাকি এমন সময় অভীক স্যার বললেন____একটু চা হলে ভালো হতো।
ট্রেনের কামরার জনা কুড়ি ছেলেমেয়ে দেখলো ঠিক এক সেকেন্ডে টিনা নিজের সিট থেকে ট্রেনের দরজায় এক লাফ দিলো তারপর আরেক লাফ দিয়ে প্ল্যাটফর্মে এবং ছুটে দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো।ছেলেমেয়েরা হই হই করে উঠলো,কুড়ি জোড়া চোখ জানলা দিয়ে তাকিয়ে রইলো আর কামরা টা চীৎকার চেঁচামেচিতে ভরে গেলো।কেউ বলছে__ওরে পালিয়ে আয়,কেউ বলছে _কী বোকা মেয়ে ট্রেন ছেড়ে দিলে কী হবে ইত্যাদি।
ঠিক তিনমিনিট পর দেখা গেলো এককাপ চা হাতে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে টিনা।যেন এভারেস্ট জয় করে ফিরেছে।অভীক একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন,সামলে নিয়ে বললেন__আরে দোকানটা তো দূরে ছিলো,তুমি গেলে ,যদি ট্রেন ছেড়ে দিত ইত্যাদী।তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন __আহ।দুজনের মুখেই পরিতৃপ্তির আভাস।যদিও কারণটা দুজনের ক্ষেত্রে আলাদা।
টিনা খেলাধুলায় খুব ভালো কথাবার্তাতেও চৌকোস।নিজের সিটে বসে মাথাটা পিছন দিকে এলিয়ে দিলো ও।এক অজানা সুখে ভরে উঠেছে ওর বুক।স্যার চা খেতে খুব ভালোবাসেন।ট্রেন চলতে শুরু করেছে,পল্লব ওর পাশে এসে বসলো।টিনার মুখের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে গেলো।ওকে দেখে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো টিনার।ও বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো___কী রে সারার কাছে পাত্তা পেলিনা?
পল্লব শান্তশিষ্ট,একটু ভীতু ,পড়াশোনায় মাঝারি কিন্তু দারুন কবিতা লেখে।সারা সেনগুপ্ত ওদেরই ব্যাচের একজন ছাত্রী ,উঠতি কবি।কলেজে ওর একটা দল আছে যারা লেখালেখি করে।পল্লব ও ওদের সাথেই থাকে।পল্লব একটু তোতলা,টিনার প্রশ্নে আরও তুতলে গেলো____ না না না ,কই কই ?সারা?না না
টিনা খিঁচিয়ে ওঠে,_____ কী তো তো করছিস?
তু-তুই মানে ওরম ভাবে স্যারের জন্য…..।পল্লব মাটির দিকে তাকিয়ে বলে।
কেন যাবোনা?আমরা যে পিকনিক করতে যাচ্ছি সেখানে উনি ই তো গার্ডিয়ান তাইনা?
___ কেন লুকোচ্ছিস তু তুই স্যারকে ভা ভা..।
___কী লুকোচ্ছি?যাহ ভাগ এখান থেকে।
পুরো ঘটনাটায় সবাই টিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে রইলো সারাটা রাস্তা কিন্তু দুজন মুখ গোমড়া করে রইলো কুর্চি আর পল্লব।অভীক একটা ম্যাগাজিনের পাতায় কিসব অংক করতে লাগলেন।বোধ হয় কোয়ান্টাম মেকানিকসের। তিনি ছাত্রছাত্রী মহলে খুবই জনপ্রিয় এমন কি আর্টসের ছাত্রছাত্রীরাও ওঁর ফ্যান।
পিকনিকের জায়গাটা সুন্দর ছবির মতো।একটু দূরে একটা শীর্ণকায়া নদী।রান্নার সুগন্ধে চারিদিক ম ম করছে।ওদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী কুর্চি বারবার নিজে হাতে স্যারের জন্য চা বানাচ্ছে।একবার ওর হাত ও পুড়েছে তবুও কুর্চি চা নিয়ে যাচ্ছে স্যারের কাছে।ও মনে মনে ভাবে বুক পোড়ার চেয়ে হাত পোড়া ভালো।হাতের মুঠোফোনে একবার গুছিয়ে নেয় নিজেকে।মুচকি হেসে ভাবে স্যার আর কত বড়ো হবেন ওর চেয়ে?
টিনা চেষ্টা করছে অভীকের কাছে যাওয়ার।একবার ওকে দেখেই অভীক বললেন___দেখতো অঙ্কটা কোথায় ভুল হলো?টিনার মুখটা শুকিয়ে এতটুকু।যেন জলের মাছকে ডাঙায় তোলা হয়েছে।কোন রকমে এ ডাকছে ও ডাকছে বলে ওখান থেকে পালিয়ে বাঁচলো।ফাঁকা জায়গায় এসে কেঁদে ফেললো ও।মনের কথা স্যারকে কোন দিনই বোধ হয় বলতে পারবেনা।
পরাগ একটা চিঠি লিখেছে খুব যত্ন করে।এখন ওরা সেকেন্ড ইয়ার ফিজিক্স অনার্স।ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ইংলিশের কুর্চিকে দেখলেই ওর বুকে তির তির করে একটা নদী বয়ে যায়।আজ ও চিঠিটা কুর্চিকে দেবেই।
অভীক একটা বড়ো পাথরের উপর আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে আছেন।টিনা অভীকের পিছনের বড়ো বড়ো গাছগুলোর একটার পিছনে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে অভীককে দেখছিলো।কুর্চি চা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তাঁর দিকে।
পরাগ কুর্চির পিছনে অনেকটা দূরত্ব রেখে আসছিলো,পকেটে হাত দিয়ে একবার দেখে নিলো চিঠিটা।আরে কুর্চি স্যারকে কী বলছে?একটু এগিয়ে একটা বড়ো উঁচু পাথরের আড়ালে বসে পড়লো সে।কুর্চি কাঁদছে,আর স্যার বিব্রত মুখে বসে আছেন।একটু পর উনি নরম গলায় বললেন,____কুর্চি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,সামনের মাসে।তুমি এখন অনেক ছোট ,ভালো করে পড়াশোনা করো।জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হও।খুব ভালো একজন জীবন সঙ্গী পাও এই কামনা করি।উনি কথাগুলো বলে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে গেলেন যেখানে রান্না হচ্ছিলো।
পরাগ আড়াল থেকে দেখলো কুর্চি কেমন যেন করছে।ও ছুটে বেরিয়ে এসে কুর্চির হাত ধরলো,____কী হলো তোর?
___আমার বমি পাচ্ছে,মাথা ঘুরছে রে।
পরাগ ওর মুখ মাথা জল দিয়ে ধুইয়ে দিয়ে পাথরে শুইয়ে দিলো।কুর্চির চোখ দিয়ে জল পড়ছে,ও পরাগের একটা হাত ধরে আছে।ওর হাতটা নিজের দুহাত দিয়ে ধরে পরাগ বললো,___চোখ বুজে শুয়ে থাক,আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।তোর কিচ্ছু হতে দেবোনা আমি।খুব ভালোবাসি রে তোকে।
কুর্চি মুখে কিছু বলেনা,দুহাত দিয়ে পরাগের হাত ধরে থাকে।
নদীর একদম ধারে দাঁড়িয়ে টিনা।স্যারের কথা সেও সব শুনেছে।তারও দুচোখে বর্ষার মেঘ।হঠাৎ পিছন থেকে কে ওকে হ্যাঁচকা টানে জলের ধার থেকে সরিয়ে আনলো।টিনা ঘুরে দেখে পল্লব।হাঁফাতে হাঁফাতে পল্লব বললো____তু তু তুই জলের এতো ধারে?কী কী কচ্ছিস?খবরদার কিছু উউউল্টো পা পাল্টা ভাববিনা।তোর কিছু হ হলে আমি ম মরে যাবো।
চোখের জল মুছে ফেলে টিনা।বলে___তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস তাইনা?
পল্লব আনন্দে অনেক কিছু বলতে যায় কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা।শুধু মাথা নাড়ে।
ভালোবাসা ডট কম প্রেমের গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
জ্বর
ভুবন যায় ভুবন আসে
প্রেম চিরন্তন