কোলকাতা থেকে বাহরিন ভ্রমন কাহিনী -প্রবোধ চন্দ্র দাস
যাত্রার শুভ সূচনা ২০২১ সালের ২৫শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্এটারন্যাশানাল এয়ার পোর্ট। এই উদ্দেশ্যে পার্ক সার্কাস থেকে যাত্রা বিকাল ৪টায়।পাঁচটা নাগাদ এয়ার পোর্টে পৌছানো, প্রথমে ওয়েব চেক-ইন, তারপর ফিজিক্যাল চেক-ইন, লাগেজ জমা দেওয়া হলো, এবং লাগেজ ক্লেইম স্লিপও নেওয়া হলো। আমরা চারজন, আমি (প্রবোধ চন্দ্র দাস), আমার ওয়াইফ ( পূর্ণিমা, দাস),আমার বড় শ্যালক (প্রদীপ দে) এবং ওর স্ত্রী ( অনিতা দে),সবাই যাচ্ছি ট্রাভেল করতে। যাবার টিকিট ভায়া হায়দরাবাদ এবং ফেরারটা ভায়া দিল্লী।
যাত্রার ২৪ঘন্টা আগে কোলকাতা এয়ার পোর্টে HindLab এ
RT-PCR টেস্ট করানো হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়াতে যাত্রার পথে কোন বাধা থাকলো না। যথারীতি সন্ধ্যা ৭টায় প্লেন ছাড়লো। হায়দরাবাদ পৌছোলো রাত ৯-১৫ মিনিটে। সেখানে লাগেজ নেওয়ার নেই, শুধু হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হোটেলের উদ্দেশ্যে, কারন connecting flight পরের দিন বিকাল ৫-১৫ মিনিটে। হোটেল বুক করাই ছিলো, ওদের ফোন করে একটা গাড়ি এনে পৌছে গেলাম। রাত্রে dinner এর আগে জানা গেল পূর্ণিমা insulin দেয়ার পেনটা নিয়ে আসেনি। আবার ছোটা হলো পেন ও needle কেনার জন্য , তবে অত রাতেও পাওয়া গেল, এপোলো ফার্মাতে, একটাই ছিলো, কোন অপসানের ব্যাপার নেই। যাই হোক খাওয়ার পর যথারীতি ঘুম, দুটো স্যুট ভালোই, দক্ষিনা মোট ₹২০০০/-plus GST.
Fontana Towers( Manama ), Bahrain
পরদিন হোটেলে লান্চ সেরে রওনা হলাম দুপুর একটায়, সেইমত গাড়িকে ডাকা হয়েছিল।এয়ার পোর্টে এসে বোর্ডিং পাস immigration, security check, তারপর check-in করে 33A গেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম প্রায় এক ঘন্টার ওপর। পরে ঠিক টাইমেই প্লেন টেক অফ করলো Flight no- AI- 1939. বাহরিন ( Manama Airport)পৌছালো ভায়া ভাইজ্যাক হয়ে এটা আমাদের জানা ছিলো না।বাহরিন পৌছালো রাত ২-৩০ মিনিটে ( লোকাল টাইম) কোলকাতা থেকে মাইনাস ২ঘন্টা ৩০মিনিট, অর্থাৎ west এ আছে।
বাহরিনে নেমেই লাগেজ নেওয়ার আগেই RT-PCR এর টাকা জমা দিয়ে টেস্ট স্যাম্পল দিয়ে তবে রেহাই। জন প্রতি তিনটে করে টেস্টের টাকা( 144 BD per head) জমা নিল, পরেরটা 5th ডেতে এবং তার পরেরটা 10th ডেতে sample দিতে হবে, result 12ঘন্টার মধ্যেই এসে যেতো।এরপর লাগেজ নিয়ে বাইরে বেরোনো। আমার মেয়ে Paramita Das গেটেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। সবাই গাড়িতে উঠে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা। অবশেষে পৌছানো মানামায় Fontana Towers এ।
বিশাল বড় কমপ্লেক্স, ওর 26th floor এ পারমিতা থাকে।ঘরে এসে ঢুকলাম ভোর বেলা, সবাই স্নান সেরে বিস্কুট আর চায়ে চুমুক দিয়ে ঘুমোতে যাওয়া, জেট ল্যাগিং এর ব্যাপারটাও তো থাকে।
এখানে এসেছি আমরা ঘোরা এবং থাকার জন্য মোটামুটি আড়াই মাসের মতো, এর মধ্যে দুবাই এবং ইজিপ্ট যাওয়া হবে, সবই প্রিপ্লান্ড।পরের দিনই সবাই মিলে গ্রসারি করতে বেরোলাম।জুফেয়ার মলের ওপরে লুলু-হাই টেক মার্কেটে যাওয়া হলো। কবিড বিধি চালু আছে, তাই নিয়ম সবাইকে মানতে হলো। এখানে কড়া কড়িটা একটু বেশী।মার্কেট করে ফিরে আসার পথে হাঁটা হলো। সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য আর আবহাওয়া, দেখতে দেখতে চলে এলাম ফন্টানা টাওয়ারে।
২৮/১১/২০২১, দুপুর ২টোর পরে বেরোনো হলো Dilmora Mall, Bahrain, ওর ভেতরে Fish Aquarium, খুবই সুন্দর, মনে দাগ কাটার মতো। Aquarium টা তিন তলা তক ব্যাপৃত, ভেতরে একজন ডুবুরি অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে মাছেদের দেখা শুনা ও আদর যত্ন করছিলো। Visit করার পর American restaurant এ যাওয়া হলো সেখান থেকে sawarma ( chicken preparation) নিয়ে বাড়িতে এসে মৌজ করে খাওয়া হলো।
03/12/2021, সকাল ৯.৩০শে বেরোনো হলো Tasneem Farm & Zoo at the far end of Bahrain.অনেকটাই বিস্তৃত জায়গা mainly পশু ও পাখি হরেক রকমের রাখা হয়েছে। তার মধ্যেই restaurant চলছে। টিকিট ১/২ BD মানে 500 Fill / per head. এখানেই পশু-পাখিদের খাবারও উৎপাদন করা হয়।
সেখান থেকে যাওয়া হলো Bahrain National Museum দোতলা ভিলা বিশাল পরিসর, পুরোনো দিনের গ্রাম্য শিল্প কলা, আচার ব্যবহার মাটির statue দিয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতি সাজানো। English & local language দিয়ে সব বোঝানো আছে। পুরোনো স্থাপত্য প্রভৃতির প্রদর্শ-শালাও আছে, free entry-
Bahrain National Museum
তারপর যাওয়া হলে Seef Mall, ঘোরা ও পরে KFC তে খাওয়া হলো। One plate of chicken, 15 pcs with ancillaries costs 10.50 BD ,that’s equivalent to ₹ 2100/- খাওয়ার পর কিছু balance ছিলো সেটা আবার ওরা pack করে দিলো। এ সব টুরই পারমিতার প্রইভেট কারে সম্পন্ন হচ্ছে।গাড়িটা US make Ford Fiesta, এখানে আসার পর Registration change করা হয়েছে।
০৪/১২/২০২১, , সকালবেলা যাওয়া হলো মানামায় কৃষ্ণ মন্দিরে। সেখানে পূজো দেওয়া হলো পারমিতার নামে। পরিচালক মন্ডলি সবই মথুরা থেকে আগত, বাকি সবাই Indian বটে তবে বিভিন্ন প্রদেশের। Breakfast হলো Swagata Restaurant এ সব South Indian dishes, তারপর ঘরে ফেরা।
Next launch এর জন্য বেরোনো হলো ১২.৩০ মিনিটে কারন টেবিল বুক করা ছিলো ১.০০টায় Copper Chimney তে। আমরা পাঁচজন ছাড়া আরও একজন invitee ছিলো, ওর নাম Bilal Chowdhury আমাদের অতি পরিচিত সজ্জন। খাওয়ার পর সেখান থেকে যাওয়া হলো Lu-lu hyper market এ। এর পরে back to pavilion at about 5.00 PM.
06/12/2021, went for RT-PCR 3rd test to the river driven spot for giving samples on vehicle.ওখান থেকে খেতে যাওয়া হলো Bahrain City centre Mall এ । Enjoy করা হলো, কফি শপে কফি আর স্ন্যাক্স নেওয়া হলো।
Bahrain City Centre Mall
10/12/2021, went to central Bahrain & taken breakfast at Hazee Cafe, তারপর যাওয়া হলো Bengali market এ, মাছ এবং অন্য সব্জি কেনার জন্য।
১২/১২ /২১থেকে ১৭/১২/২১, দুবাই যাওয়া এবং ফিরে আসা।
দুবাই থেকে ফেরার পর আবার তিনটে করে টেস্ট করতে হয়েছে।
দ্বিতীয় বার টেস্টের রেজাল্ট এলো পারমিতার +ve , ওকে compulsory home quarantine এ থাকতে হলো ১০ দিন।
এটা Beware of Bahrain app থেকে সব জানা যায়। সেই সাথে আমরাও খোঁড়া হয়ে গেলাম, শুধু বাজার করা আর খাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ থাকলো না।
পারমিতা সুস্থ্য হবার পর আবার বেরোতে আরম্ভ করলাম, প্রথমে গেলাম Al-Areen Park যেখানে দেখা হলো হাঁস, মুরগি, পাখি, হরিণ, ছাগল, গরু, মহিষ, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক উল্লুক, বন মানুষ,সাপ প্রভৃতি। তবে এরিয়া অনেক বড়ই acquire করা হয়েছে, পরে হয়তো extension এর উদ্দেশ্যে। Battery operated car এঘুরলাম, কফি খেলাম আর ফিরে এলাম।
০৭/০১/২০২২, Sitra sea beach এ যাওয়া হলো, ওখানে Fish catching centre আছে, সারিবদ্ধ ট্রলার দাঁড়িয়ে আছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে, মাছ তো চালান চলে গেছে, কিছু মাছ ওখানে লোকাল মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। আমরা মাছ, সবজি সব বাজার করে আনলাম।ফিরতি ট্রিপে আমরা Jolly Bee restaurant এ গিয়ে lunch করে বিকাল চারটে নাগাদ ঘরে ফিরলাম।
12/01/2022 to 16/01/2022 Egypt tour.
ইজিপ্ট থেকে ফেরার পর তৃতীয় টেস্টটা আমরা American Mission Hospital থেকে করাই। ভীড় ভাট্টা নেই সুন্দর পরিষ্কার পরচ্ছন্ন, রেজাল্ট ও তাড়াতাড়ি পাওয়া গেলো তবে যেখান থেকেই করাও না কেন রেট ঐ একই নবাবের বেঁধে দেওয়া আছে, যা app এ দেখায়।
একদিন Al-Kala fort এ যাওয়া হলো, পুরোনো দিনের ঐতিহ্য রক্ষা করছে সিফ মলের কাছা কাছি।তবে বলে রাখি এখানে বালির ওপরে সব স্থাপত্য, কত রকম ডিজাইনের সব বাড়ি, দেখলে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যেতে হয়। আর সমুদ্রকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্থাপত্যকে দৃশ্যায়নে সুন্দর করা, উড়ন্ত বালিকে জলে absorb করা প্রভৃতি নিখুঁত ভাবে architect করে দূষন মুক্ত রাখা সবই প্রশংসার দাবি রাখে।
Bahrain mosque
তারপর একদিন বাহরিন মসজিদে যাওয়া হলো। সত্যি দেখার মতো। ভেতরে প্রবেশের জন্য entry fees আছে, লাইব্রেরি, প্রেয়ার রুম, যেন ঝক ঝক তক তক করছে, আবার দর্শনের জন্য টাইম করা আছে, আমরা তো দ্বিতীয় দিনে ঢুকতে পারলাম। আজানের উচ্চারণ এবং আওয়াজ এত মধুর অকল্পনীয়।
29/01/2022, সকালবেলা সবাই স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম
প্রথমে রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে ( constructed and maintained by ISKCON located at Kanoo garden, Bahrain ঠাকুর কে প্রনাম করে সবাই প্রসাদ খেলাম।প্রসাদ মানে ক্ষীর, -পায়েস, একদম বাঙালীর মিস্টান্ন কোলকাতার মতো। ওখান থেকে breakfast করতে যাওয়া হলো Mysore restaurant এ, ধোসা আর কম্বো প্লেট যাতে ৫/৬ টা item ছিলো, ভালো, মনে হলো আর lunch করতে হবে না কিন্তু কয়েক ঘন্টা ঘোরার পর ঠিক খিদে পেয়ে গেলো। ঘোরাটা হলো ফোর্টের চারপাশ কারন ভেতরে ঢোকা গেল না construction work চলছিলো, ফোর্টের চার দিকে পরীখা কাটা আছে। এরপরে মল ঘোরা, সব রকমের জিনিষই আছে, made in Bahrain, Dubai, Saudi Arabia, Oman, Kuwait etc.
কিছু কিছু নেওয়া হলো গাঁটের কড়ি খরচা করে বাড়ি যাবার আগে যা ব্যালান্স টাকা পকেটে ছিলো। খিদে কম থাকলেও করো কারো demand ছিলো খাবো। সেই অগত্যা restaurant ( Al- Nafur-restaurant) সাউথ ইন্ডিয়ান ফুড, খাবার পর এক গ্লাস করে লস্যি and then back to pavilion মানে Fontana Towers.
30.01.2022, যাওয়া হলো Juffair city , for visiting Dragon city mall and then Chinese big market.
এটা নতুন খুলেছে, দেখার পর আমরা তো অবাক, কারন আমরা যা যা কিনলাম এখানে এক জায়গাতেই সব পাওয়া যাচ্ছে এবং নতুন নতুন ডিজাইনের। কিছু করার নেই আমরা
তো কিনে ফেলেছি আর ডিমান্ড নেই। আমি একটা মোবাইলের কভার কিনলাম তারপর বাড়িতে ফেরা।
01/02/2022, RT-PCR sample দিয়ে টেস্ট করানো হলো বাহরিনের লোকাল প্রাইভেট হসপিটালে, পরদিন সকালে রেজাল্ট পাওয়া গেলো, চারজনেরই নেগেটিভ। ০২/০২/২০২২, সন্ধ্যা ৭-৩০ এ ঘর থেকে রওনা হলাম কোলকাতার উদ্দেশ্যে, রাত ১১টায় flight ছিলো। পরদিন দুপুর একটায় পৌঁছালাম কোলকাতাAirport এ ভায়া নিউ দিল্লী। ব্যাস লাগেজ নিয়ে ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি অর্থাৎ পার্ক সার্কাস ॥
যদিও ট্যুরটি বড়ই expensive তবুও আমি বলবো খুব দেখার এবং বোঝার ব্যাপার আছে। মুসলিম কান্ট্রি হলেও শৃঙ্খলাবদ্ধতা আছে এমন কি অজান যে দেওয়া হয় সুর করে পড়া হয় এবং তা শ্রুতিমধুরতা বর্তমান।
কোলকাতা থেকে বাহরিন ভ্রমন কাহিনী – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
অদৃশ্য সৈকত চাঁদিপুর
পরবাসী টুসুর দেশে
ভরুয়া