কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » পুজো সংখ্যা ১৪২৮ » ছোটগল্প » তারাদের দেশে

তারাদের দেশে

তারাদের দেশে ছোটো গল্প –

কসবা, কলকাতা

এখন আকাশে রোদের বহর দেখলে কেউ বলবে যে একটু আগে অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে । ওই দেখো আবার টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। মা যেন কি একটা কথা বলে.. হ্যাঁ,মনে পড়েছে ! ‘শিয়াল কুকুরের বিয়ে’ ! ‘বিয়ে !’.. হ্যাঁ বাড়িতে বিয়ে নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু মিঠুন কি বিয়ের জন্য এখনও এলিজেবেল? ‘এলিজেবেল’ শব্দটার সাথে মিঠুন চাকরি পরীক্ষা দিতে দিতে বেশ পরিচিত হয়েছে। কতগুলো তো পরীক্ষা দিল এখনো রেজাল্টই এল না। নামেই ও মিঠুন ভাগ্যে নয়।

  • দাদা এই নিন হালতু মোড়ে যাব।

মিঠুন নিজের ভাবেই বিভোর ছিল।খেয়াল করেনি পাশে বসে থাকা মেয়েটিকে। মেয়েটা আর কেউ নয় মিঠুনের এত বছরের ভালোলাগা মৃদুলা! মৃদুলা কে দেখলে মিঠুন যেন কেমন অস্থির হয়ে পড়ে। অস্থিরতার ভাব কাটিয়ে মৃদুলাই মিঠুন কে জিজ্ঞেস করে।

  • আরে মিঠুনদা যে..কোথায় গিয়েছিলে?
  • এই একটা চাকরির পরীক্ষা দিতে। তুই বল কোথায় গিয়েছিলিস?

এরপর কথা চলতে থাকে, ওই পাড়ার কথা নয়তো বৃষ্টির কথা। প্রসঙ্গ মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নেয় মিঠুন নিজেই কিন্তু তাতে কিছু লাভ হয় না।

অটো হালতু মোড়ে থামল। এখান থেকে দুজনের বাড়ি পায়ে হেঁটে চার মিনিট। মিঠুনের মাথা কাজ করছে না এতদিনে জমিয়ে রাখা কথা যেন আজ দেহের এক কোন গোপন গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মৃদুলা এমনিতেই দেখতে সুন্দর, বৃষ্টিতে ভিজে হ্যান্ডলুম শাড়িতে যেন অপরূপা দেখাচ্ছে!

এই ভালোলাগার সূত্রপাত পাঁচ বছর আগে, যখন মৃদুলা মিঠুনের কাছে ইকোনমিক্স পড়তে ভর্তি হয়। চমৎকার পড়ায় মিঠুন। ও একটা কলেজের পার্টটাইম লেকচারার। এই পুষে রাখা ভালোবাসা যেন আজ মানতে চাইছে না একদম! আবার বলারও সাহস পাচ্ছে না। কি আছে ওর যে মৃদুলাকে বলবে? অত বড় অফিসারের মেয়ে।

আবার মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। মৃদুলা আর মিঠুন ফুটপাথের একটা দোকানে আশ্রয় নিল।

মিঠুন ঠিক করে নিল আজ নয় ইস্পার তো উসপার! ভগবান এরকম সুযোগ প্রতিদিন করে দেন না। বুকে সাহস আনতে জোরে নিঃশ্বাস নিল মিঠুন, তারপর বলল –

  • মৃদুলা তোকে একটা কথা বলবো? আসলে অনেকদিন ধরে ভাবছি কিন্তু সাহসে কুলায় নি.. তুই আমার ওপর রাগ করবি না প্রমিস কর।
  • তোমার মত মানুষের কথায় রাগ করা যায় মিঠুনদা! সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি কি নির্লিপ্ত তুমি। তোমার মত মানুষের সাথে দুটো সময় কাটালেও মনে হয় কিছু ভালো করলাম।

মৃদুলার মুখে কথাটা শুনে বুকের সাহস যেন শতগুণ বেড়ে গেল মিঠুনের। আবার আরেকটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে মিঠুন বলল,

  • আর আমি যদি বলি সারাজীবনের মতো সময় কাটাতে হবে?
  • মানে?
  • মানে মৃদুলা তুই যখন আমার কাছে প্রথম দিন পড়তে এলি,সেই দিন থেকেই তোর মধ্যে অন্য কিছু একটা দেখেছিলাম। আমি না একটা কেলেঙ্কারি করে ফেলেছি। তোকে খুব ভালোবাসি… দেখ সব কথাগুলো কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে,গুছিয়ে বলতে পারছিনা। মৃদুলা আমি তোকে ভালোবেসেছি প্রথম দিন থেকেই। অনেক ভেবেচিন্তে কথাটা বলছি.. তুই কি আমাকে বিয়ে করবি?

মৃদুলা হাসতে থাকে। হেসে প্রায় গড়িয়ে পড়ে।সামলে নিয়ে বলে,

  • তুমি একটু আগে বলতে পারলে না মিঠুনদা! আমারও তো তোমায় খুব ভালো লাগে। কিন্তু জানো তো আমি ইন্ট্রোভার্ট। মিঠুনদা তোমায় আমি বিয়ে করতে পারবোনা! আমার বিয়ের সম্বন্ধ দেখা হয়ে গেছে.. আর কিছু মনে করো না আমি একদম বাস্তব কথাটাই বলছি, তোমার তো কোনো স্টেডি চাকরিও নেই। আমি অপারগ। আমার এই অপরাগতাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ।

এতক্ষণ বৃষ্টি পড়ছিলো না আকাশ গুমোট করেছিল। মুষলধারে আবার বৃষ্টি পড়া শুরু হল।

সিরুসেরি, চেন্নাই

ডিসেম্বরে বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে এবার চেন্নাইতে। সিরুসেরি চেন্নাইয়ের আইটি হাব হিসেবে বিখ্যাত। ক্যান্টিনে কফি খেতে খেতে কাচের দেওয়াল থেকে মেট্রোরেলের চলাফেরা দেখছিল রজত। প্রায় ছুটতে ছুটতে এলো শুভলক্ষী।

শুভলক্ষী রজতের মেসের উল্টোদিকে একটা লেডিস হোস্টেলে থাকে। বাড়ি চেন্নাইতে হলেও বাবা মার অমতেই প্রায় চাকরি করতে এসেছে এখানে। আর রজত মধ্যমগ্রামের এক ছোট্ট পাড়ার বাসিন্দা। যার বাস বিগত তিন বছর চেন্নাইতে। এখানে একটি আইটি ফার্মে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। অনেক অধ্যাবসায়ের পরেই এই জায়গায় পৌঁছেছে রজত। কিরকম অধ্যাবসায় রজত ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারে না। ওই একটা দুটো ইঞ্জিনিয়ারের জীবনে যেরকম স্ট্রাগল থাকে, সেরকমই। অন্য শহর থেকে নতুন একটা শহরে এসে চাকরি,নতুন মানুষজন,নতুন জীবন, নতুন আদব-কায়দা। রজতের এই স্ট্রাগলের মধ্যে নতুন কিছু খুঁজে পায়না শুভলক্ষী।

খানিকটা রেগেই আছে আজ শুভলক্ষী। শুভলক্ষী আয়াপ্পান। রজতকে দক্ষিণী টানে প্রায় ধমক দিয়ে বলল যার বাংলা তর্জমা করলে হয়,

  • তুই অফিসে এসেছিস, এক অফিসে থেকে আমিই জানি না। হঠাৎ এত দূরত্ব তৈরি করেছিস কেন? দেখ আমার মনে হয় এখন বিষয়টা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা দরকার। কারণ এরপর আমাদের আরও বড় আইটি ক্যারিয়ার আছে। তাছাড়া কতদিন এভাবে থাকা যায়?
  • মানে? খারাপ আছি কি আমরা?
  • দেখ রজত। আমি জানি you will not confess it all.. কিন্তু দেখ অফিসের সবাই জানে ইভেন এটা আমাদের কাছেও পরিষ্কার যে আমরা যেভাবে থাকছি সেটাকে লিভ-ইন বলে। দেখ আমার বাড়ির কথা বাদ দে.. কিন্তু তোর বাড়িতে তো এবার জানানোর দরকার।
  • দেখ আমি এসব নিয়ে কিছু ভাবি নি এখনও। নতুন প্রজেক্ট নিয়েছে চাপে আছি। I hope you also… আর প্লিজ এভাবে এখানে চেঁচামেচি করিস না।
  • ওকে ফাইন.. তুই তো জানিস আমি তোকে নিয়ে খুব possesive আর এই possesiveness আমায় আরো short-tempered করে দেয়। I’m sorry। বাই দা ওয়ে তুই টরন্টোর কোম্পানিতে যে সিভি টা পাঠিয়েছিলিস সেটার কি হল রে? Any Update?

শুভলক্ষীর স্বভাব টা একদম রজতের মায়ের মত। যতই রাগ দেখাক রজতের খোঁজ না নিয়ে থাকতে পারে না। সেই প্রথম যেদিন থেকে পা রাখল নতুন শহরে। মফস্বল থেকে আসা ছেলেটাকে আপন করে নিয়েছিল শুভলক্ষী। সেখান থেকে তৈরি হয় একটা সম্পর্ক। যে সম্পর্কের নাম সহজে শুভলক্ষ্মী খুঁজে পেলেও রজত এখনো খুঁজে পাইনি। বলা ভালো খুঁজে পেতে চায় না। রজত চায় শুধু এগিয়ে যেতে, কোথাও থামলে একেবারে থেমে যেতে হবে!

  • Nothing! কোন আপডেট থাকলে আমি জানাতাম না তোকে! দেড় মাস হল সিভি পাঠিয়ে রেখেছি এখনো পর্যন্ত একটাও মেল এল না। মনে তো হয় সিলেক্ট হয়নি।
  • হতেও তো পারে? Why do you think negetive all the time? আরো দু-চারটে কোম্পানিতে সিভি পাঠা। আচ্ছা রজত তুই আমায় একটা কথা বলতো যদি তুই বিদেশে চাকরি পেয়ে যাস চলে যাবি?
  • Off course.. দেখ এতদূর আসতে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। সেখানে তুই এই শহরেরই মেয়ে। তোর কাছে চাকরি জোগাড় করা আমার থেকে অনেক সোজা। আমার ক্ষেত্রে জিনিসটা এক নয় শুভ। বিদেশে চাকরি পেলে তুই কি করতিস? ছেড়ে দিতিস?
  • না। কখনোই না। আমি বিদেশে সেটেল হলে তোকে নিয়ে সেটেল হব। তোরও কি সেরকম প্ল্যান?
  • দাঁড়া! চাকরিটা তো পাই আগে..

এই একই প্রশ্নও বহুবার ছুড়েছে শুভলক্ষী রজতের দিকে। কিন্তু ঘুরে ফিরে এক উত্তরেই থেমেছে রজত। শুভলক্ষ্মী বুঝতে পারেনা রজতকে ভালোবাসার জন্য ওর মধ্যে যে ডেসপারেশন আছে রজতের তার বিন্দুমাত্র নেই কেন? ভালোবাসা কি আদায় করার বস্তু!

অনেক কথা জমাট বাধল শুভলক্ষ্মীর মনে। কিছু বলতে পারলো না। নিষ্পলক হয়ে তাকিয়ে রইল কাঁচের দেওয়ালে ভেসে ওঠা চেন্নাইয়ের স্কাই লাইন এর দিকে।

প্যাটেল নগর, দিল্লি

নিজের চেম্বারে বসে এক মনে ফাইলগুলোকে দেখছিল অমৃতা। BDO হিসাবে দিল্লির এই ছোট্ট অঞ্চলের দায়িত্ব তার। কদিন ধরেই একটা জটিল কেস এসেছে। তারপর মেয়ে নীতির শরীর খারাপ। একা মা হিসেবে এতগুলো দায়িত্ব সামলে মেয়েকে দেখা কার্যত খুবই কঠিন। তবুও ওই নরকপুরে মেয়েকে রাখার থেকে একা থাকা অনেক ভালো!

নিজের মধ্যেই একটা আচ্ছন্ন ভাব কাজ করছিল অমৃতার। সম্বিত ফিরল দেবরাজের কথায়,

  • ম্যাডাম আজকেই আমাদেরকে নারকটিকস গ্রুপ টাকে ধরে ফেলতে হবে। উপর মহল থেকে চাপ আসছে। শুনছি নাকি মন্ত্রী সাহেব বেশ উদ্বিগ্ন এই বিষয়টা নিয়ে!

দেবরাজ হল এখানকার লোকাল থানার এসপি। খুবই দায়িত্ব পরায়ন এবং কম কথার মানুষ। অমৃতার কেন জানেনা দেবরাজ কে খুব পছন্দ হয়। আবার অনেক সময় এত বেশি দায়িত্ব দেখানোর জন্য রাগ হয়। যেমন এই সময়টা।

  • সারা প্যাটেল নগরে এই একটাই কেস আছে নাকি? আপনি হাত ধুয়ে এটার পিছনে লেগে আছেন! শুনুন আমায় অনেক মিটিংয়ে থাকতে হয় কালকে একটা কালেকশনে যেতে হবে। গোটা ব্লকের দায়িত্ব আমার ওপরে। তাই কাজের প্রেশার আপনার থেকে আমার অনেক অনেক বেশি।
  • সে তো বটেই ম্যাম ! কিন্তু এটাও তো একটা ক্রাইম.. আর এটাকে যদি আমরা দমন না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে এই গ্রুপ আরও ডানা মেলতে পারে!
  • ঠিক আছে। আজকে রাতে তাহলে একটা এটেম্পট নেওয়া যেতে পারে !

সেই রাতে খুব সাহসিকতার সঙ্গে কেসটা হ্যান্ডেল করে দেবরাজ ও অমৃতার টিম। সরকারও প্রশংসা করে তাদের।

পুরো কাজটাই সফল হয়েছে দেবরাজের বুদ্ধিমত্তায়। অমৃতার আনন্দে দেবরাজের পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সেটা করা অশোভনীয়। অন্তত এই রকম ক্ষমতায় থেকে। মাঝে মাঝে ক্ষমতার জন্য অমৃতা নিজেকে খুব শক্তিশালী ভাবে। আবার কখনও কখনও সেই ক্ষমতার জন্য চরম অসহায়ত্ব অনুভব করে! কিন্তু দেবরাজের প্রতি কেন এই অনুভূতি? এই অনুভূতি কি একটা মানুষের আরেকটা মানুষের প্রতি থাকাটাই স্বাভাবিক? নাকি…

এসব ভাবতে ভাবতে কখন ক্লান্ত শরীরে ঘুম নেমে এসেছিল টের পায়নি অমৃতা। ঘুম হঠাৎ ভাঙলো মাঝরাতে মেয়ে নীতির কান্নায়।

বান্দ্রা, মুম্বাই

প্রিয়ম যেন যে কোনোভাবেই ভালোবাসাটা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। হিন্দি সিরিয়ালের এক নম্বর নায়িকা প্রিয়ম খান্না। ছেলেটা কি গবেট নাকি হাতে সোনার চাঁদ পেয়ে বাক্য হরে গেছে? প্রিয়ম চেঁচিয়ে উঠলো,

  • তুমি কোন দিনও কল্পনা করতে পেরেছ টেলিভিশনের নাম্বার ওয়ান হিরোইন তোমায় প্রেম নিবেদন করতে এসেছে। রাহুল কিছু বলছ না কেন?
  • ম্যাডাম আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন কেন? আমি সামান্য একটা চ্যানেলের কর্মচারী। আপনার সাথে আমি? আপনার রেপুটেশন টা কোথায় দাঁড়াবে ভাবুন তো।
  • রাহুল, যে ভালোবাসে সে কোন রেপুটেশনের কথা মাথায় রেখে ভালবাসেনা। আমি তোমায় ভালোবেসে ফেললে এতে আমার কি করনীয়? আর এতে ক্ষতিটা কোথায়?
  • ম্যাডাম লোকজন এটাকে ভালোবাসা বলবেনা স্ক্যান্ডাল বলবে! তাছাড়া আমার মধ্যে কি আছে? চ্যানেলে সামান্য কনটেন্ট অ্যাসিসটেন্টের কাজ করি। আর আপনার শোয়ের টিআরপি সবথেকে হাই। এই বম্বেতে কত নাম ডাক আপনার। শেষে কিনা আপনি আমার সঙ্গে জড়িয়ে আপনার ক্যারিয়ারটা…
  • শোনো আমার কেরিয়ার টা আমি তোমার থেকে ভালো বুঝি। আর বিষয়টা যদি আমরা নিজেই অফিশিয়ালি অ্যানাউন্স করে পাবলিক করে দিই তাহলে দেখো কে স্ক্যান্ডাল বলে এটাকে!
  • ম্যাডাম এটা হয় না। আপনি এখনো কেন বুঝতে পারছেন না আপনি কোথায় আর আমি কোথায়।
  • আবার তুমি নিজেই নিজের বার তৈরি করছ। আমি তোমার স্ট্যান্ডার্ড দেখে তোমায় কখনও ভালোবাসিনি। তোমার মধ্যে যে সহমর্মিতা অপরের জন্য যে অনুভূতি আমি তার প্রেমে পড়েছি রাহুল।
  • ভুল করেছেন ম্যাডাম। আমার সাথে জড়িয়ে পড়া মানে নিজের জীবনকে নষ্ট করা। আর আমার পার্সোনাল লাইফ খুব ডিস্টার্বড। প্লিজ ম্যাডাম আমি আপনার ভালো চাই বলেই বলছি!
  • তোমার কি মনে হয় আমার নিজের পার্সোনাল লাইফ খুব ভালো? ওই উঁচু ইমারতে থাকি বলে তোমার ধারনা আমি খুব ভালো আছি। আর তুমি আমায় ম্যাডাম বলা বন্ধ করো প্লিজ। আমি একটু ভালোবাসা চাই রাহুল, কেন বুঝতে পারছ না। আমি তোমায় ভবিষ্যতে আমার সাথে থাকলে নানা বিষয়ে সাহায্য করতে পারব। এখন এইসব গরিব বড়লোক সেকেলে সেন্টিমেন্ট। আচ্ছা রাহুল তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসো না?
  • ওসব গল্পেই শুনতে ভালো লাগে ম্যাডাম। কিন্তু সত্যি কথা কি বলুন তো এখনও কোনো সম্পর্কে জড়াতে গেলে সেগুলোই বাধা হয়ে আসে না?
  • আমি তো আমার উত্তর পেলাম না তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না?
  • জানিনা।

প্রিয়ম আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর ডাক পড়লো শট এর জন্য।

চ্যানেলের অফিসে একদিন এখনকার হিন্দি টিভি জগতের এক নম্বর ধারাবাহিক ‘পেয়ার কে রিস্তে’-র কন্ট্রাক্ট ফাইনাল করতে গিয়ে রাহুলের সঙ্গে পরিচয় প্রিয়মের। রাহুলের পোস্টটা প্রিয়মের খুব সুন্দর লেগেছিল ‘কন্টেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট’। তখন থেকেই হালকা ভালোলাগার সূত্রপাত। তারপরে নানা পার্টি, সিরিয়ালের কাজের সূত্রে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। রাহুল তখন থেকেই একটা অশনিসংকেত আঁচ করেছিল। যা আজ দাবানলের সৃষ্টি করেছে।

ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলেই শোনা যায় প্রিয়মের নাকি ক্লাস নষ্ট হয়ে গেছে। নইলে কোনো নায়িকা একজন চ্যানেলের কর্মচারীর সঙ্গে প্রেম করে!

ভালোবাসা অদম্য। কোন বাঁধন মানতে চায় না। এই মুম্বই শহর ছুটছে, তার সাথে ভালবাসাও। কিন্তু এ তো এক অসম প্রতিযোগিতা। কখনো কি এক সরলরেখায় এসে উপস্থিত হতে পারবে রাহুল আর প্রিয়ম?

কসবা,কলকাতা

  • কি কম্পিউটারে দেখছিস বল তো?
  • আজকে SET এর রেজাল্ট বেরোবে।

কম্পিউটারের থেকে চোখ না সরিয়েই মাকে বলল মিঠুন।

  • এই পরীক্ষাটায় পাশ করলে প্রফেসরের চাকরি হবে? দেখিস মিঠুন এটা ঠিক হয়ে যাবে। তুই তো কারো কোনদিনও ক্ষতি করিস নি বাবা। উলটে লোকের ভালোই করেছিস সব সময়। দেখিস ঠিক হয়ে যাবে। ভগবান তোকে আর নিরাশ করবে না। শোন আজকে কিন্তু তোকে দেখতে পাত্রীপক্ষ আসবে।

কথাটা শুনে দুটো কারণে হোঁচট খেলো মিঠুন। প্রথমত ‘পাত্রীপক্ষ’ কথাটা শুনে। সমাজ কত বদলে গেছে। এখন ছেলের বাড়িতে মেয়েরা দেখতে আসে! দ্বিতীয়তঃ মিঠুন কে দেখতে আসবে শুনে! কি বা আছে ওর? টিউশনিতে শ’দেড়েক ছাত্র পড়ায়, আর পার্ট টাইমে কলেজে চাকরি। কিন্তু এটাই বা আর কী?

  • মা আমি বিয়ে করবো না।
  • হ্যাঁ সেই বাবার মত আমিও মরে যাই! সম্বন্ধটা দেখিস তারপর বলিস। মার পছন্দ কিন্তু এত খারাপ নয়।
  • আরে বাবা মেয়েটা কে সেটা তো বল?
  • তখনই দেখে নিস। সন্ধ্যাবেলায়।

মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে কখন কম্পিউটার স্ক্রিনে রেজাল্ট এসে গেছে খেয়াল করেনি মিঠুন। আবার চোখ ফেরালো স্ক্রিনে। চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে স্বপ্নে। এটা কি দেখছে ও? ‘SET QUALIFIED’ ! এই কয়েক বছরে unsuccessful, not cleared এই শব্দবন্ধ গুলোই তো ওর বেশি পরিচিত। এর মানে মিঠুন এবার প্রফেসর হবে। আর কেউ বেকার বলতে পারবেনা মিঠুন কে!

সন্ধ্যেবেলায় বাড়িতে তোড়জোড় দেখে তাক লেগে যায় মিঠুনের। একই মনে জমাট বেঁধে আছে আনন্দ আর বিষাদ। প্রথমবার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে মায়ের উচ্ছ্বাসের বাঁধ মানছে না আর ছেলেকে দেখো !

পাত্রীপক্ষ চলে এসেছে। মিঠুনের মা প্রায় টেনে মিঠুনকে বসবার ঘরে নিয়ে গেল। পাত্রীকে দেখে মিঠুনের চোখ কপালে উঠল। সোফায় যে মেয়েটা বসে আছে তাকে মিঠুন খুব ভালো ভাবেই চেনে। এই মেয়েটার থেকে দু’দিন আগেই মিঠুন পেয়েছিল জীবনের প্রথম বসন্তের প্রত্যাখ্যান। মৃদুলা !

অবিশ্বাসের ঘোর কেটেছে অনেকক্ষণ। তাও মিঠুনের মনে হচ্ছে যেটা ঘটেছে সেটা রূপকথা! মৃদুলের বাবা হো হো করে হেসে বলে,

  • কেমন ঘোল খেলে বলো? শোনো মা-বাবারা কিন্তু সব বোঝে। মৃদুলা আমায় বলবে কি, ওর মুখ চোখ দেখে আমি নিজেই বুঝে ছিলাম কিছু একটা ব্যাপার ঘটেছে। ওর ভয় ছিলো আমায় নিয়ে। আরে বাবা তোমার মত ছেলেকে জামাই হিসেবে পাওয়া আমার বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার! আজ শুনছি তো তুমি প্রফেসর হবে দুদিন পর। না হলেও কোন ক্ষতি ছিল না। দিদি বিয়ের দিনটা তাহলে আজই ফাইনাল করে ফেলি?

মিঠুন মনে মনে ভাবে ‘মৃদুলা কি শয়তান মেয়ে! আমায় কিছু বলেনি। আচ্ছা যেটা হচ্ছে রূপকথার থেকে কম কিসে?’

রূপকথাই বটে! কলকাতা তো রূপকথারই শহর। City of Joy ! এই আনন্দের শহরে ভালোবাসা হারায় কিভাবে?

সিরুসেরি, চেন্নাই

যাওয়ার আগে শেষ কয়েকটা জিনিস চেক করে নিচ্ছিল রজত। রাতেই ফ্লাইট। রজতের স্বপ্নের উড়ান! যে উড়ান থামতে শেখেনি।

  • এরপরও আমি কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবো রজত? তুই চলে যাচ্ছিস একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না আমাকে।

রজতের মেসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল শুভলক্ষী। রজত বলল,

  • তুই তো জানিস আজকে আমার ফ্লাইট। আর আমি কখন বেরোবো সেটা আমি নিজেই জানিনা। মোটামুটি হাতে সময় রেখে বেরোনো ভালো তাই ব্যাগ গুছিয়ে রাখছিলাম।
  • রজত তুই আদৌও আমাকে তোর জীবনে কনসিডার করিস? রজত তুই ফাঁকি দিয়ে পালাচ্ছিস !
  • কিসের ফাঁকি? আমার জায়গায় থাকলে তুই এক কাজ করতিস না?
  • তোর জায়গায় থাকলে আমিও নিশ্চয়ই বিদেশে যেতাম কিন্তু একা যেতাম না। তোকে বিয়ে করে তোর সাথেই যেতাম।
  • তারপর বিদেশে গিয়ে বউ রোজগার করবে আর আমি ক্ষ্যাপা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবো!

কথাটা শুনে রাগে নিজেকে সামলাতে পারল না শুভলক্ষী প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে উঠলো,

  • তুই বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ানোর মতো ছেলে নস! আর কথাটা হচ্ছে তুই আমায় জাস্ট সিম্পলি নিজের ঘাড় থেকে নামিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস!
  • এই চিনেছিস তুই এতগুলো বছরে আমাকে?
  • ভুল চিনেছি। তোকে একদমই আমি চিনতে পারিনি! You all bengalis are same… নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝিস না.. A selfish frickle minded character you are…
  • আমায় এভাবে তুই জাজ করতে পারিস না শুভ! আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছিনা কারণ বিদেশে আমি নিজেই কোথায় থাকব তার ঠিক নেই… ওখানে গিয়ে আমি তোকে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারিনা! আর সব থেকে বড় কথা আমি তো তোকে assure করছি যে তোকে আমি তিন মাসের মধ্যে ফিরে বিয়ে করে এখান দিয়ে নিয়ে যাব।
  • এ সব তোর এক্সকিউজ! ওই তিন মাস তিন শতাব্দীতেও আসবেনা!
  • তো তুই কি বলতে চাইছিস?
  • আমি এটাই বলতে চাইছি যে এভাবে আমি ঝুলে থাকতে পারবো না বছরের পর বছর।
  • So you are breaking up with me?
  • আমি জানিনা। কিন্তু তুই তোর স্ট্যান্ড পয়েন্টে অনড় থাকলে আমি এতটুকু বলতে পারি এই সম্পর্ক আমার পক্ষে আর রাখা সম্ভব হবে না। ভালো থাকিস নতুন দেশে, নতুন সঙ্গিনীর সঙ্গে!
  • শুভ তিন বছর ধরে একটা সম্পর্ককে শিশুর মত লালন পালন করেছি আমরা। একটা সম্পর্কের প্রথম লেয়ার হলো বন্ধুত্ব। তারপর সেই বন্ধুত্বে নানা স্তর যোগ হয়ে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। তুই বন্ধুত্বটাকে অস্বীকার করছিস!
  • তোরা বাঙালিরা মানুষকে বড্ড কথার জালে ফেলতে পারিস। আমি আর তোর ওই ট্র্যাপে পা ফেলছি না। ভালো থাকিস!

এই শহরে ভালোবাসা খুঁজতে এসেছিলাম। না কলকাতার মতো ভালোবাসা পেলাম না। সারি দিয়ে থাকা ইমারতের মত সবাই আকাশ ছুঁতে চায়। তাই এই শহর ভালোবাসা পেয়েও ভালোবাসা হারায়!

প্যাটেল নগর, দিল্লি

সেই রাতে অমৃতার ওপর দিয়ে কি ঝড়টাই না বয়ে গেছে। দেবরাজ না থাকলে হয়তো নীতি কে বাঁচানো যেত না।

নীতির একদম ছোট বয়সে মায়োলেমা ধরা পড়ে। অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার। তাই ওই রাতে বাড়াবাড়ি শুরু হয়। ঝড় জলের রাতে একা মেয়েকে নিয়ে বিরাট সমস্যায় পড়ে অমৃতা। হাতের সামনে একমাত্র দেবরাজ এর ফোন নাম্বার পাওয়ায় তাকে ভরসা করে ফোন করে বসে।

অসুস্থ নীতির খালি মনে হয় দেবরাজ বুঝি ওর বাবা। অমৃতা বারণ করতে চাইলেও দেবরাজ বাধা দেয়। সেই থেকে নীতি দেবরাজ কে বাবা বলেই ডাকে।

চার বছর হল দেবরাজের স্ত্রী একটা অ্যাক্সিডেন্টে গত হয়েছে। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো দেবরাজ।
সেদিন হাসপাতালে নীতির কেবিনের সামনে বসে দেবরাজ এর খালি স্ত্রীর কথা মনে পড়ছিল। নীতি কে বাঁচাতে হবেই।

সেই নীতির সূত্রেই দেবরাজ আর অমৃতার সম্পর্ক অফিসের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর এগিয়েছে।

দুজনেই সম্পর্কের নতুন সমীকরণের অংক কষছে। শুধুমাত্র নীতির জন্য। আজ অমৃতা আর দেবরাজের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ।

অমৃতা অনুষ্ঠান শেষে দেবরাজ কে একটাই কথা বলল,

  • আমরা শুধুমাত্র নীতির জন্য এই সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছি। যদি নীতির কোনদিনও কিছু হয়ে যায় আমি কিন্তু আর একদিনও এই সম্পর্কে থাকতে পারবো না।
  • নীতির কিছু হবে না। নীতিকে বাঁচতে হবেই। আমাদের জন্য। আমাদের ভালোবাসা নীতি কে বাঁচিয়ে রাখবেই।

ইন্ডিয়া হয়তো কোন একটা ম্যাচ জিতেছে। আতস বাজির শব্দ ভেসে আসছে। আর একটা মন ভালো করা সুবাস।

দিল্লি শহরের এই ছোট্ট অঞ্চলের দুজন অফিসারের এই বিয়েতে কোন প্রেম নেই,কোন ভালোবাসার ব্যাপার-স্যাপার নেই ,শুধু আছে একটা দায়বদ্ধতা যার নাম নীতি!

তবুও প্যাটেল নগরে আবার আতসবাজি ফেটে উঠলো। ভালোবাসার উদযাপনে?

বান্দ্রা, মুম্বাই

রাত বাড়ছে। মুম্বই শহরে রাত বাড়লে যেন দিনের থেকে আরও বেশি জমকালো হয়ে ওঠে। আজ প্রিয়মের জন্মদিন। বাকি অভিনেত্রী, কলিগ এরা সবাই আসবে। তাই জানে রাহুল। প্রিয়ম আসার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে। ফেলতে পারেনি রাহুল।

প্রিয়মের বারো তলার ফ্লাটে কলিং বেল টিপতে দরজা খুলল প্রিয়ম। পরনে একটা ছোট স্লিভলেস পাতলা টপ। এসব আয়োজন কিসের জন্যে? রাহুলকে পাবার জন্য? এভাবে রাহুলকে পেলেই কি প্রিয়ম খুশি?

রাহুল ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়। ফ্ল্যাট একটুও সাজানো-গোছানো নেই। ড্রইং রুমের এককোণে পড়ে আছে আধখাওয়া মদ। রাহুল বুঝতে পারে আজ প্রিয়মের জন্মদিনই নয়।

  • এসব কি মশকরা ম্যাডাম! আপনি আমায় মিথ্যে বলে কেন এখানে এনেছেন?

প্রিয়ম রাহুলের মুখের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বলে,

  • এইটুকুনি মশকরা না করলে তুমি কি আসতে আমার কাছে?

প্রিয়মের মুখের থেকে তীব্র মদের গন্ধ ভেসে আসছিল। মুখ সরিয়ে নিয়ে রাহুল বলে,

  • ম্যাডাম প্লিজ আমি এখান দিয়ে চলে যাব।আমায় যেতে দিন।
  • তোমায় কী চলে যেতে দেবো বলে এত আয়োজন করেছি? রাহুল তুমি কেন বুঝতে পারছ না আমি শুধু তোমাকেই চাই,

রাহুল কোনো কথা বলবার আগেই প্রিয়ম মদ্যপ মুখটাকে রাহুলের মুখে নিয়ে নিল। মদের গন্ধে রাহুলের গা গুলিয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ পর এই গন্ধে যেন একটা সুন্দর আবেশ সৃষ্টি করল রাহুলের মধ্যে। নিজেকে সরিয়ে নিতে পারল না। এভাবেই প্রিয়ম রাহুলকে চায়? তাহলে তাই হোক!

মধ্যরাতে যখন এই মারন খেলা শেষ হল তখনো মুম্বাইতে গাড়ির কোলাহল কমেনি। বারো তলা থেকে দৃশ্যমান বান্দ্রা ব্রিজের দিকে তাকিয়ে প্রিয়ম রাহুলকে জিজ্ঞেস করল,

  • এখনও বলবে রাহুল তুমি আমায় ভালোবাসো না? ভালো না বাসলে তুমি এটা করতে পারলে কি করে? কি হল বল? তুমি কিছুতেই হার মানবে না জানো তো।
  • ম্যাডাম। স্ক্যান্ডাল আপনাদের অভ্যাস! আমাদের মত সামান্য মানুষদের কাছে এটা অভিশাপ। আমি আবারও বলছি আপনি আমার আর আপনার জীবন নিজের হাতে এভাবে নষ্ট করবেন না। ঈশ্বর আপনাকে সুবুদ্ধি দিক এটুকুই কাম্য। আমি আসছি।
  • মানে এত রাতে তুমি যাবে কোথায়?
  • জাহান্নমে! আমি চ্যানেল ছেড়ে দেবো ম্যাডাম অন্য কোন কাজ খুঁজে নেব মুম্বাই ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো।
  • তুমি কেন এভাবে পালিয়ে যাচ্ছো? কি হলো রাহুল কোথায় যাচ্ছ?

রাহুলকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রিয়ম। যে বড় কাঁচের জানলা টা দিয়ে বান্দ্রা ব্রিজ এর গাড়ির আনাগোনা দেখা যায় একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল সেখানে। যদি রাহুলকে দেখা যায়!

মুম্বাই শহরে বৃষ্টি মানে একপ্রকার জনজীবন বিধ্বস্ত। সেই বৃষ্টি কাটিয়েই অ্যাপার্টমেন্টে উপস্থিত হয়েছে রাহুল। যে অ্যাপার্টমেন্টে প্রিয়ম ম্যাডাম থাকে সেখানেই পাঁচ তলায় ডিরেক্টর থাকে। রেজিগনেশন দিতে। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টে এত ভিড় জমেছে কেন? এত পুলিশই বা কেন?

অ্যাপার্টমেন্টের ঢুকতে থমকে যায় রাহুল। এই মুষলধারা বৃষ্টি তে একটি ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত দেহ ভিজছে। লোকজন তাকে ঘিরে আছে অথচ কেউ তার মাথায় ছাতা ধরছেনা। মৃতদেহের কাছে যেতে চমকে যায় রাহুল। মৃত ব্যক্তিটি বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। ব্যক্তিটির নাম সম্ভবত প্রিয়ম খান্না, যার ফ্ল্যাট থেকে আগের দিন রাতে বেরিয়ে এসেছিল রাহুল !

যে প্রশ্ন ওঠার ভয় পাচ্ছিল রাহুল তা নিঃসন্দেহে উঠবে এখন। কে এসেছিল আগের দিন রাতে ফ্ল্যাটে? কি ঘটেছিল? ইত্যাদি। যদি সর্বনাশ হবারই ছিল ভালোবেসে কেন হল না? সমাজের দুটো চারটে প্রশ্ন উঠত। কিন্তু একটা মৃতদেহ তো এখানে পড়ে থাকত না!

চারটে মহানগর, চারটে সম্পর্ক, আটটা মানুষ। কোন শহরে হয়তো ভালোবাসার ভোরের আলো ফুটেছে। কোন শহরে হয়তো ভালোবাসা গভীর অন্ধকারে অতলে হারিয়ে গেছে। সব শহরকে ছাপিয়ে ভালোবাসা যেন একটা প্রশ্ন তুলেছে এত ছুটে চলার মাঝেও ভালোবাসা কোথায়? ভালোবাসা হয়তো আছে তারাদের দেশে!

তারাদের দেশে ছোটো গল্প – সমাপ্তি

যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!