হ্যাপি টিচার্স ডে ছোট গল্প – দিয়া সামন্ত
দেশের মাটিতে পা রাখার পর প্রাণ যেন জুরালো। জন্মস্থান বলে কথা। মনে হচ্ছে এখানকার বায়ু, গাছপালা, নদ-নদী, মাটির সোঁদা গন্ধ, পাখির কলরব সবাই মিলে আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।দুপুরে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে সবেমাত্র চোখ বুজেছি, কিছুক্ষন ধরে ফোনে রিং হওয়ার শব্দে কাঁচাঘুমটা ভেঙে গেল। হাতে নিয়ে দেখি চারটে missed call, তাও আবার unknown number। call back করব কিনা ভেবেচিন্তে করেই ফেললাম। কোনো আকস্মিক ঘটনায় হাসপাতালে যেতে হতে পারে।
ফোনের ওপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এল, “কেমন আছিস ইন্দ্রাণী? চিনতে পারছিস? অনেক বড়ো হয়ে গেছিস বল? “এরূপ অপ্রত্যাশিত অবস্থায় আবেগপ্রবণ হয়ে বলে উঠলাম, “দিদিমণি আপনি !”হঠাৎই স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গেলাম।ইস্কুলে ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে কিংবা লাস্ট বেঞ্চে অংকের ক্লাসে বোর্ডে অংক কষার ডাক আমারই পড়বে। খুব রাগ হত তখন। বেছে বেছে আমাকেই পায় কেন? অনেকেই তো ক্লাসে আছে। আর অংক কষতে না পারলে ঠাস্ ঠাস্ চড় মারতেন। দিদিমণির কাছে অংক জলভাত।আমি ১,২,৩,৪ ছাড়া অংক কিছুই বুঝতাম না।
ফোনের এপাশের নিস্তব্ধতা শুনে দিদিমণি অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়ে বললেন, “হ্যালো ইন্দ্রাণী? আমার কথা শুনতে পারছিস? ফোনটা কেটে গেল নাকি? “আমি হকচকিয়ে বললাম,”অ্যাঁ…না না দিদিমণি…শুনছি।”এবার নিশ্চিন্তে দিদিমণি বললেন, “শোন্ তাহলে ,কাল বিকালে ৫ টা নাগাদ সোনাঝুড়িতে আমার বাড়ি একবার আসবি ,জরুরী দরকার।ঠিকানা message করে দিচ্ছি।” “অবশ্যই যাব দিদিমণি” বলে ফোন রাখলাম।
আমার সাথে দিদিমণির জরুরী কি দরকার খুঁজে পেলাম না ! যাই হোক, দিদিমণির সাথে অনেক দিন পর দেখা সাক্ষাৎ হবে এই ভাবনায় মন আনন্দে ভরে উঠল।
এত দেরি হয়ে গেল বাড়ি থেকে বেরোতে শীতকালের বেলা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে এল। এটাই তো সোনাঝুড়ি গ্রাম। হাঁটা পথ। রাস্তায় কাউকে দেখতে পেলে ঠিকানাটা জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যাবে। অল্প বিস্তর এগিয়ে বটগাছের সামনে একটা জীর্ণ দোতলা বাড়ি,বহুদিন বাড়িটার পরিচর্যা করা হয়নি।
মরচে ধরা গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকতে যাব এমন সময় পিছন থেকে “এই যে গ্রামে নতুন নাকি? “ফিরে তাকিয়ে কুন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “এ বাড়িতে কি মায়ারানী মিএ থাকেন?” উওরে বললেন, “নাম জানি না তবে এখন কেউ থাকে না।”
আমি অবাক ! এই বাড়ির ঠিকানাটাই তো মায়া দিদিমণি দিয়েছেন। ভদ্রলোকের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লাম। ঘরের ভিতর থেকে সেই চেনা শিক্ষিকার সুর, “কে? “আমি সোয়াইন গ্রাম অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী ইন্দ্রাণী। ” শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন চুলে পাক ধরা ,চোখে চশমা সেই রাগী অংকের দিদিমণি। এত অন্ধকারে সব অস্পষ্ট দেখছিলাম। মায়া দিদিমণি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে হাতে একটা রঙিন কাগজে মোড়া উপহার তুলে দিয়ে বললেন, “জীবনে যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষায় নম্বর কম-বেশি হলেও, মানুষ হিসেবে নম্বর যেন না কমে।”
পুলিশের টহলগাড়ি এসে জ্ঞানশূন্য পরিস্থিতিতে উদ্ধার করার পর থানায় গিয়ে জানতে পারি একবছর হল দিদিমণি গত হয়েছেন। তারিখটা ঠিক খেয়াল না থাকায় ফোনের ক্যালেন্ডারে চোখ পড়ে আজ ৫ ই সেপ্টেম্বর টিচার্স ডে।।
হ্যাপি টিচার্স ডে ছোট গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভরুয়া
উদ্বর্তিনী
নীলবাস্প