বশিকরণ ছোটো গল্প – অঞ্জলি দে নন্দী
মেয়েটার বয়স ৪৫ বছর। এমে পাস। হতকুৎসীতা দেখতে। বিয়ে হচ্ছে না। একজন দেখতে এসে মোটা, কালো, মুখশ্রী বাজে বলে চলে গেল। পাত্র সুন্দর, ফর্সা, স্লিম। কলকাতার ব্যাবসাদার। এর আগেও অনেক পাত্রই না করে দিয়ে গেছে।
তো, মা আর এই পাত্রটিকে ছাড়ল না। মরা শশ্মানে এক তান্ত্রিক সব সময় সাধনা করে। সে উলঙ্গ। জটা মাটিতে লুটোয়। চোখ রক্তবর্ণ। খুব নেশাও করে। মা তার কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে গেল। বলল, “আমার মেয়েটার সঙ্গে যাতে এই পাত্রের বিয়ে হয় তার ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। যা লাগবে আমি তা-ই দব। বাবা দয়া কর!” সে তখন তার পাশে রাখা লোহার ত্রিশূল দিয়ে অন্য পাশে রাখা একটি মরার খুলির ওপরে কি যেন লিখল। তারপর বলল, “হয়ে যাবে।” এই বলে সে একটি লাল শুকনো জবাফুল মায়ের হাতে দিয়ে বলল, ” ওম্ ক্রিং কালিকায়ৈ নমঃ! এই পুষ্প নিয়ে পাত্রের মাথায় ঠেকাবি, তাহলেই তোর বশ মেনে যাবে সে, আর তখন তাকে দিয়ে হ্যাঁ করিয়ে নিবি! যাঃ এখন এখান থেকে! ” মা পুষ্প নিয়ে বাড়ি ফিরল। ভেবেই পায় না যে কি করে সে পাত্রের মাথায় এই পুষ্প ঠেকাবে? এরপর একদিন ঘটক মুখে জানল যে পাত্রের খুব জ্বর। টাইফয়েড হয়েছে। এই ছুঁতোয় এবার পাত্রীর মা ও বাবা একগাদা ফল নিয়ে তাকে দেখতে গেল। আর কথায় কথায় তার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর দেখার নামে ঐ পুষ্প ছুঁইয়ে দিল। আর বলল, “হ্যাঁ বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে উদ্ধার কর বাবা! ” ও তখন জ্বরের ঘোরে অস্ফুট স্বরে বলল, “হ্যাঁ!”
এরপর একমাস কাটল। সে সুস্থ হয়ে ব্যবসায় বসল। পাত্রীর বাবা গেল ও বলল, “তাহলে কবে পাকা কথা হবে? পরের মাসে ভালো দেখে একটা দিন দেখে আমার মেয়েটাকে তাহলে বিয়ে কর!”
এরপর পাত্রের বাবা খবর পাঠালো। তারপরে বিয়েও হল।
তখন পাত্রীর মা আবার সেই তান্ত্রিকের কাছে গেল। দুটো পাঁঠা তাকে পূজো দিল। পরের অমাবস্যাতে ওগুলোকে বলী করল। তান্ত্রিক তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে এগুলি দিয়ে রাতে পূজো করল। তারপর রেঁধে খেল।
বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই পাত্রীর ভাই পাগল হয়ে গেল। মা তখন আবার তাকে নিয়ে তান্ত্রীকের কাছে গেল ও বলল, ” একে ঠিক করে দাও বাবা! ” বাবা বলল, ” এ তো হবার নয়! একটা ভালো নিলে সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা খারাপও যে নিতেই হয়। ” মা খুব কাঁদল। কিন্তু কোনও ফল হল না। বাড়ি ফিরল। দিদি বাবার বাড়ি এসে সিঁদুর পড়ে যখন তখন পাগল ভাই আনন্দে হাসে আর হাততালি দিয়ে বলে, ” মা দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। ” মা আর দিদি শুধুই কাঁদে।
বশিকরণ ছোটো গল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভালোবাসার দেবালোকে
বিজয়া দশমী
এক চিলতে রোদ্দুর