কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

নাটক

নাটক ছোটগল্প – তপন তরফদার

যে দৃশ্য কথোপকথন চটকে টকে পরিণত পরিণত হয়। তাকেই নাটক বলে। সংজ্ঞাটা দেশী না বিদেশী কোন প্রঞ্জাবান ব্যক্তি বলেছিলেন তাঁর সন্ধানে কথা খরচ করলে আসল বিষয়টাই টকে যাবে। ডকে উঠে যাবে মূল বিষয়। প্রশ্ন লিখে কোন মহান মানুষের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। কারণ মনীষীর নাম থাকলে কেউ ট্যাঁ ফোঁ করবে না। ওদিকে  মনে  হচ্ছে কোন মনীষী হবে বা ক্ষোভে বা অভিমানে কিছু কথা বলে থাকলে ওই উনি বলেছেন বলে নিজের কোর্টে বল টেনে বলিয়ান হয়ে যান। সেই বক্তা বা ব্যক্তিরা গৌরচন্দ্রিকা যদি লম্বা হয় গল্প ছোট হয়ে যাবে। ব্যাপারটা বারো হাত কাঁকুরের তেরো হাত বিচি হয়ে যাবে। খেই ধরিয়ে দিয়ে বলি পৃথিবীর আদিমতম মনোরঞ্জনের মাধ্যম হল নাটক। এই নাটকে যেমন টক ঢালা হয়, আবার টক পরিবেশনের সময় বলা হয় এমন ভাবে কথা বলা হবে তখন টক যেন নাটক কে ছাপিয়ে টকিয়ে না দেয়।

      এই নাটক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, চলবে।  কে কত বেশিক্ষণ ধরে নাটক করতে পারবে, কে কত কম সময়ে নাটক মঞ্চস্থ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা হয়। বড় বড় দীর্ঘ কাব্য নাটক লিখে অনেকে নাম কিনেছেন। আবার এদিকে সুনীল কুমার শাইকিয়া ৫৫৫৫ টি শব্দে ৫৩৪ টি কমা ও ১১ টি সেমিকোলনের মাধ্যমে অহমিয়া ভাষায় ‘দিসোই পারের মেলা’ উপন্যাস লিখে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।

      আমাদের মনোরঞ্জন খাঁড়া নাটক করেই জীবনযাত্রা যুদ্ধে এগিয়ে চলেছে। নিজের নামের সঙ্গে দলের নাম খুব বুদ্ধি করে জুড়ে দিয়েছে। মনোরঞ্জনের নাট্য নিকেতন। চলতি বিষয়ের নাটক পাবলিক খুব ভালোবাসে। মনোরঞ্জনের নাটক পাবলিক খুব তাড়াতাড়ি খায়। ফুচকা খাওয়ার মত, তেঁতুলের টক জলের মত।

      সেদিনের শো হবে কোলাঘাটের রঙ্গম প্রেক্ষাগৃহে। আটশো দর্শকের হল হাউসফুল। নাটকের নাম ‘বিবস্ত্র পিঙ্কি’। বিবস্ত্র কথাটাই মহাভারতের আমল থেকে থেকেই ক্যাচি। বুড়ো-বুড়িরা মহাভারত পড়তে শুরু করে ওই দ্রৌপদীর বস্ত্র আখ্যান থেকে। আর পিঙ্কি এযুগের রাধা, এযুগের আধার বদনাম হয়েছিল কিনা এখন ও সেই তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ পায়নি। কিন্তু এই যুগের রাধা ‘পিঙ্কি বদনাম হুই তেরে লিয়ে’ সবাই জানে। আবার পিঙ্কি ছেলে না মেয়ে সে নিয়ে কোর্টকেস। পিঙ্কি নামেই নাটক, জিভে জল আসার মত টক। টক আরও সুমধুর হওয়ার কারণ, নাটকের প্রয়োজনে এই নাটকের নায়িকা ন্যুড হয়ে বস্ত্র পরিধান করবে।

      সবাই জানে সবকিছু পিছনেই পিছন থেকে কৃষ্ণ কলকাঠি নাড়ে। গোপিনীদের লুকিয়ে রাখে। আবার দ্রৌপদীকে বস্তা বস্তা যোগান দেয়। এই নায়িকার বস্তা বস্তা বস্ত্র মনোরঞ্জন নাট্য নিকেতনের যে টিনের বাক্স ছিল সেই কালো ট্রাঙ্কটাই আনতে ভুলে গেছে ছোট হাতির চালক শ্রীকেষ্টদা। এখন আর সময় নেই সেই ট্রাস্ট নিয়ে প্রাণ নিয়ে আসার। পাবলিকের কানে গেলে মনোরঞ্জনের কান মুলে সুদে আসলে উশুল করে মনোরঞ্জন করে নেবে। দর্শকদের কাছে  নাটক করতে এসে এই প্রথম মনোরঞ্জন মুখ চুন করে বসে আছে। ড্রাইভার কৃষ্ণদা বলল, কিছু চিন্তা করবেন না মনাদা, আমি আপনার সঙ্গে আছি। কৃষ্ণদা মনাদার কানে কানে কি মন্ত্র দিল কে জানে! মনাদা মাথা চুলকে বলল, নাটক ঠিক সময়ে শুরু হবে।

      নাটকের লাস্যময়ী চিত্তাকর্ষক কুশলীরা হাত জড়ো করে স্টেজ থেকে নেমে এসে বত্রিশটা দাঁত বার করে হল এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত গজগামিনী চালে গেল – দয়া করে আপনারা মুঠোফোন মানে মোবাইল ফোনটা বন্ধ করে রাখুন। ভিলেন রাহু অন্ধকারে চাদর দিয়ে হল ঢেকে দিল। অন্ধকারেই চোখ জ্বেলে রেখেছে দর্শকরা। অন্ধকারেই বিবস্ত্র হওয়ার মাহেন্দ্রাক্ষণ। অন্ধকারেই গোলমাল পাওয়ার উপযুক্ত সময়। একটা একটা মেয়ে কেঁদে ওঠে বলে – কি লোক মশাই আপনার বাড়িতে ম-বোন নেই, লজ্জ্বা করে না? মেয়েটা এক দাড়ি মুখ ওর জামা টেনে ধরে ধরেছে। দুজন ভদ্রপোশাক পরা উঠতি নায়ক টানতে টানতে মঞ্চের উপর নিয়ে এলে, সঙ্গে সেই মেয়ের সব দেখে অতি সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবকদলের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। নাটকের উদ্যোক্তা কোলাঘাট হনুমান ক্লাব। ক্লাবের বদনাম, ক্লাবের শো দেখতে এসে শীলতাহানি। বেশ কয়েকজন ফাইটার হাত লাগাল। স্টেজে লঙ্কাকাণ্ড। দাড়িওয়ালা শ্বাস টানলেন, শ্বাস ছাড়লেন এবং দুবার ফুঁপিয়ে কাঁদলেন, কোন কথা বললেন না দাড়িওয়ালা। খেয়ে দাড়িওয়ালা কিছু বলতে চান। ফাইটাররা শুনতে চায় না। আপার কাট, লোয়ার কাট ঘুঁষি মুড়ি-মুড়কি মত পড়ছে। যে ছেলে দুটো টেনে নিয়ে গিয়ে ছিল, তারা চিৎকার করে বলতে থাকে – কাকে মারছেন? মারা বন্ধ করুন, উনি মনোরঞ্জনবাবু নাটকের প্রধান চরিত্র। নাটকটা ভালোভাবে জমাবার জন্যে দর্শকাসনে থেকেই নাটক করতে করতে স্টেজে উঠেছিলেন। নায়িকার ধ্যাবড়া কাজল চোখ নাচ নাচতে বলে, বিশ্বাস করুন সব সত্যি কথা। মনোরঞ্জনবাবুর মাঞ্জা দেওয়া দাড়ি ঝুলে গেছে। কপালে ফুলে গেছে। মুখে মাইক ধরে বলে এমত অবস্থায় উপর নাটক করা যায় না। তাও আমি একটা নাটক ইতিমধ্যে আপনাদের সামনে পেশ করছি। পৃথিবীখ্যাত অন্যতম নাটক। এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংক্ষিপ্ততম নাটক। যা ১২১টা শব্দে লিখিত। লিখেছেন স্যামুয়েল ব্রেখেট। নাটকের নাম ‘ব্রেথ’। শ্বাসটানা, শ্বাসছাড়া, দুবার অস্ফূট কান্নার শব্দ, কোন সংলাপ নেই।

নাটক ছোটগল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!