কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » সায়েন্স ফিকশন গল্প » পুতুলের সংসার

পুতুলের সংসার

পুতুলের সংসার সায়েন্স ফিকশন গল্প – দীপঙ্কর সাহা

-এক-

নার্স মণিকার সাথে দু’দিনেই বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল স্বাতীর। মণিকা রোবট। এই হাসপাতালের সমস্ত নার্সই অবশ্য রোবট, কথাটা একেবারেই জানতো না স্বাতী। 

হৃদযন্ত্রের অসুখে স্বাতী অনেকদিন থেকে ভুগছে। স্বপন একটি রোবট আনতে চেয়েছিল ওর পরিচর্যার জন্য। ডাক্তারের নির্দেশও ছিল সেই রকম, কিন্তু স্বাতীকে কিছুতেই রাজি করাতে পারেনি স্বপন। রোবট সম্পর্কে ওর মনে একটা অহেতুক আতঙ্ক ছিল এতদিন। 

হাসপাতালে ভর্তি হবার পর, ওর পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে নার্স মণিকার ওপর। মণিকা দু’দিনেই ওর বন্ধুত্ব অর্জন করে নেয়। তখনও স্বাতী বুঝতে পারেনি মণিকা রোবট। যখন বুঝলো, মণিকা ততদিনে ওর মন জয় করে নিয়েছে। 

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার দিন ডঃ সোম জানালেন, স্বাতীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার দরকার। ওর কয়েকটি স্নায়ুতন্ত্রী শুকিয়ে আসছে। স্বপন জানায় ওরা একটি রোবট নিতে প্রস্তুত, তবে সেটি হাসপাতালে তৈরি নার্স মডেলের হওয়া চাই, ঠিক রোবট-নার্স মণিকা যে মডেলের। 

-দুই-

দশ দিন পর রোবটটির ডেলিভারি পেল ওরা। ডেলিভারি বয় দিয়ে গেল একটা একটা ছয় ফুট বাই তিন ফুট সাইজের বিশাল বাক্স। বাক্সটি ভালো রকম প্যাক করা। ব্যস্ত হাতে স্বপন মস্তবড় বাক্সটি খুলে ফেলতে শুরু করে। একটি প্রমাণ আকারের পুতুল শুয়ে আছে বাক্সে, পুতুলটির পরণে নার্সের পোষাক, ধাতব শরীরের উপর ত্বক সদৃশ একটি নরম আচ্ছাদন পুতুলটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। সুন্দর পুতুলটির দিকে চেয়ে স্বাতী কেমন অস্বস্তি বোধ করতে থাকে, একটু পরেই এটি উঠে বসবে, ওর আদেশ পালন করতে তৎপর হয়ে উঠবে। 

ইন্সট্রাকশন বুকলেটটা পড়তে পড়তে স্বপন বলে, – সপ্তাহে একবার মোটামুটি আধঘণ্টার মতো চার্জ করে নিতে হবে, পিঠের ঠিক মাঝখানে পোষাকের নিচে একটা ঢাকনা দেওয়া খাপ আছে। খাপের মাঝে একটা ইন্ডিকেটরে কত পারসেন্ট চার্জ আছ দেখাবে। এছাড়া একটি মেন স্যুইচ আছে। রিচার্জেবল ব্যাটারি মোটামুটি ভাবে এক থেকে দেড় বৎসর চলবে। 

রঙচঙে বইটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বপন পুতুলটাকে ঠেলে ঘুরিয়ে দিতে চায়, বেশ ভারী পুতুলটাকে। বার কয়েক চেষ্টার পর ও পুতুলটাকে উপুড় করে শুইয়ে দিতে সক্ষম হয়। পিঠের ঠিক মাঝখানে যে ঢাকনা দেওয়া খাপ থাকার কথা, সেটার আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওর সাদা পোষাকের উপর দিয়েই। দ্রুত হাতে স্বপন ওটার ব্লাউজের বোতাম খুলতে শুরু করে। 

অস্বস্তি ভরা দৃষ্টি মেলে স্বাতী এতক্ষণ দুর থেকে দেখছিল পুতুলটিকে, এবার ও এগিয়ে এসে স্বপনের হাত টেনে ধরে, 

-সরে যাও, আমি দেখছি। 

অর্থপূর্ণ হাসি হেসে স্বপন সরে যায়। ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া ছিল। স্যুইট অন করতেই পুতুলটা নড়েচড়ে ওঠে। হঠাৎ ভয় পেয়ে স্বাতী ছিটকে সরে যায় পিছনে।

রোবটটি উঠে বসে, মুখে ঈষৎ হাসি ফুঁটিয়ে বলে, – নমস্কার, আমার নাম মণিকা।

স্বপন খুশি হয়, স্বাতীর মণিকা প্রীতির কথা ওরা ভোলে নি। 

-আমি স্বাতী হালদার, এ আমার স্বামী স্বপন। 

স্বাতীর অপ্রস্তুত জবাব শুনে হেসে ফেলে স্বপন। 

এরপর চার মাস কেটে গেছে। রোবট মণিকা ওদের সংসারে একজন নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। রোবট শব্দটা এখন ওদের দুজনেরই বেশ কানে লাগে। মণিকা সাথে ওদের পার্থক্য সামান্যই। প্রতি সপ্তাহে একবার চার্জ করে নিতে হয়, আর জীবন্ত দেহের উষ্ণতা নেই ওর স্পর্শে। মণিকার শীতল ধাতব ছোঁয়ায় প্রথম দিকে চমকে উঠতো স্বাতী, এখন মানিয়ে নিয়েছে। মণিকা একাধারে ওর বন্ধু ও অক্লান্ত সেবিকা। ওর মনোযোগে এক মূহুর্তেরও ত্রুটি নেই। 

বিগত চার মাসে স্বাতীর শরীর আরো খারাপ হয়েছে। এখন ও কদাচিৎ বিছানা থেকে নামে। ডাক্তারের আশঙ্কা সত্যি, ওর অধিকাংশ স্নায়ুতন্ত্রী ক্রমশ শুকিয়ে আসছে। স্বাতী নিজেও সেটা এখন অনুভব করতে পারছে। 

ডক্টর সোম মাঝে মাঝেই এসে ওকে চেক-আপ করে যান। ডাক্তারের একঘেয়ে সান্ত্বনা বাণীও দিন দিন কেমন যেন উষ্ণতা শুন্য হয়ে পড়ছে। স্বাতীর হাত পা সহ সর্বাঙ্গ ক্রমে ক্রমে অসাড় হয়ে পড়ছে। ওর মনে ভয়, এইভাবে চললে, কিছুদিনের মধ্যেই ও তো সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বে। 

কিন্তু একথা সাহস করে ডক্টর সোম বা স্বপনকে মুখ ফুঁটে বলতে ভয় পায় স্বাতী। হয়তো ওর আশঙ্কাই সত্যি বলে প্রমাণিত হবে। 

-তোমাকে দেখে আমার হিংসা হয় মণিকা। কেমন সুন্দর কর্মক্ষম তুমি! রোগা দুর্বল বিছানায় শয্যাশায়ী বলে আমায় বোধহয় তুমি করুণার চোখে দেখ! 

একদিন বিকাল বেলা মণিকার তৈরি চা খেতে খেতে বলছিল স্বাতী। মণিকার মধ্যে মিথ্যা কথা বলার কোনও প্রোগ্রাম লেখা নেই। সে স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দেয়, 

-হ্যা, দেখি তো! তবে একা তোমায় নয়, তোমাদের সবাইকে। তোমরা মানুষ জাতটা এক অদ্ভুত জীব। ব্যাথা, আঘাত, দুঃখ, কষ্ট এসব তোমাদের লেগেই আছে। জীবন ভরে তোমরা শুধু একটা অনিশ্চয়তা বয়ে বেড়াও।

মণিকার কন্ঠস্বরে কোনও আবেগ বা উত্তাপের লেশ নেই। শীতল হাতে ও স্বাতীর হাতটি টেনে নেয়, – আমার বুকে হাত দিয়ে দেখো, তোমাদের মতো কষ্ট বা আঘাতের কোনও ছাপই এখানে পড়ে না। 

মণিকার পোষাকের আড়ালে একগুচ্ছ শীতল ধাতব কুন্ডলী অনুভব করে স্বাতী, শঙ্কিত মনে হাতখানি এক ঝটকায় টেনে নেয়। 

মণিকা বলে যেতে থাকে, – আমার একটা হাত বা ভেঙে যাক, পাল্টে নিলেই আমি আবার পূর্ণ কর্মক্ষম হয়ে উঠি। অথচ তোমাদের কারো পা ভাঙলে, সেই খোঁড়া পা নিয়েই তোমরা বেঁচে থাকবে। পালটে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তোমরা তা নেবে না! 

-হাত পা পালটে নেওয়া মানে? তুমি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের কথা বলছো? আমার এই প্রায় নির্জীব হাত পা গুলো, যদি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করে যদি পালটে নিতে পারতাম, তাহলে কিন্তু আমি অমত করতাম না। সেদিন ডক্টর সোমের চোখের দৃষ্টি দেখে আমার কেমন ভয় করছিল। উনি অবশ্য শুধু বললেন আরও বেশি করে বিশ্রাম নিতে। আমার এই বিশ্রামের আর শেষ নেই। 

স্বাতী সশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মণিকার কাছে ওর গোপন করার কিছুই নেই। 

-তোমার ঘুমের ওষুধ খাওয়ার সময় হলো। 

মণিকা ওকে ওষুধ খাইয়ে দিতে থাকে। 

-চার-

হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট রোবটটির দিকে অনিশ্চিত পায়ে এগিয়ে যায় স্বপন। সম্পূর্ণ বিচলিত ও বিভ্রান্ত লাগছে ওকে। অসংলগ্ন স্বরে ও বলতে শুরু করে, – আমার স্ত্রী স্বাতী হালদার… … মানে একটু আগে আমি অফিসে আপনাদের ফোন পেলাম… 

-হ্যা, আপনার স্ত্রী স্বাতী হালদার এখানেই আছেন। আজ দুপুরে উনি হঠাৎ বিপজ্জনক রকম অসুস্থ ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। ভাগ্যিস আপনি বাড়িতে একটি নার্স রোবট রেখেছেন! রোবট মণিকাই আপনার স্ত্রীকে ঠিক সময় মতো এখানে নিয়ে এসেছে। নয়তো কি হতো বলা যায় না, হয়তো এতক্ষণে সব শেষ হয়ে যেতে পারতো। 

-কি একটা অপারেশনের কথা বললেন, টেলিফোনে ঠিক বুঝতে পারলাম না। অপারেশনটা কি খুবই জরুরি? 

-হ্যা, নিশ্চয়ই! নয়তো ডক্টরদের মতে, শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে এক সপ্তাহের বেশি ওনাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। 

-কোন ডক্টর দেখছেন ওকে? আমি কি ওনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? 

-হ্যা, নিশ্চয়ই! কিন্তু এই মূহুর্তে তো তা সম্ভব নয়, কারণ উনি এখন হসপিটালে নেই। 

-ওকে যে ডক্টর দেখছিলেন এতদিন, আমি আসার পথে সেই ডক্টর সোমের খোঁজ নিয়েছিলাম, তিনি এখন শহরে নেই। 

-আপনার চিন্তার কিছু নেই, উনি আগে যে হসপিটালে ছিলেন, আমরা সেখান থেকে সব রিপোর্ট আনিয়ে নিয়েছি। হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরের চিকিৎসার সব ডিটেলস আমরা নার্স মণিকার থেকে এবং তার দেখানো কাগজ পত্র ও মেমোরি ইউনিট থেকে পেয়ে গেছি। ডক্টর আপনাকে জানাতে বলেছেন, আজ রাতের মধ্যে অপারেশনটা করতে না পারলে, রোগী আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবেন। এর পরে আর কিছু করার থাকবে না! 

স্বপনের দিকে একটা ছাপানো ফর্ম এগিয়ে দিতে দিতে রোবটটি বলতে থাকে, – অবশ্য অপারেশনটা হবে কি হবে না, সেটা আপনি ঠিক করবেন। আপনার মত না থাকলে অপারেশন হবে না। 

দুঃশ্চিন্তা ও উদ্বেগে স্বপনের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কম্পিত হস্তে ও ফর্মটায় সই করে দেয়। 

-ও বেঁচে যাবে তো? মানে সেই রকম কোনও ভয় নেই তো? স্বপনের কন্ঠে উৎকন্ঠা। 

-হ্যা, বেঁচে যাবেন, ডক্টরদের সেই রকম অভিমত। তবু কিছুটা ঝুঁকি তো কিছুটা থাকবেই! 

-আমি ওকে একটু দেখতে চাই। কোথায় আছে স্বাতী? 

-দুর থেকে দেখতে পারেন, কাছে যেতে মানা আছে ডক্টরদের। উনি এখন ঘুমাচ্ছেন। 

স্বাতীর ঘরের দরজা বন্ধ। কাচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ঘুমন্ত স্বাতীর মুখে এক প্রশান্ত হাসি লিপ্ত হয়ে আছে। ঘরে একজন নার্স এক চেয়ার টেবিলে বসে কিছু করছেন। স্বাতীর চেহারা দেখে স্বপন একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে। 

সেদিন সারারাত ব্যাপি অপারেশন চলেছিল। পরদিন ভোরে স্বপন কে জানানো হয় যে অপারেশন সফল হয়েছে, ডাক্তাররা সবাই খুশি। কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। কম করেও সাত আট দিন লাগবে একটু সুস্থ হতে। 

স্বাতীকে এই কদিন যাবৎ একটি বারও চোখের দেখা দেখতে পায় নি স্বপন। ডাক্তার দের কড়া নিষেধ আছে, রোগীর ধারেকাছে কাউকে যেতে দেওয়া চলবে না, যতদিন না পেশেন্ট সুস্থ হয়ে ওঠে। 

কদিন যাবৎ রোজই দুই তিন বার করে হাসপাতালে ফোন করেছে স্বপন, একদিন জবরদস্তি হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে দেখা করতে চেয়েছিল স্বপন। কিন্তু নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। পেসেন্টকে সম্পূর্ণ আইসোলেশন চেম্বারে রাখা হয়েছে। দেখা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অবশ্য হাসপাতাল থেকে রোজই একবার করে খবর দেওয়া হয়েছে, স্বাতীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, কয়েক দিন পরেই বাড়ি পাঠানো হবে। 

-পাঁচ-

দিন দশেক পরে স্বপন অফিসে একটা জরুরি কাজে ব্যাস্ত, বিকাল বেলা হাসপাতাল থেকে হঠাৎ ফোন এলো, স্বাতীকে একটু আগে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সে রোবট মণিকার পরিচর্যায় আছে। মণিকাকে সমস্ত নির্দেশ বিশদ ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

হঠাৎ একটু খুশির ছোঁয়ায়, স্বপন চঞ্চল হয়ে ওঠে, সহসা মনে হয় কতো দিন ও দেখেনি স্বাতীকে। ফোন ছেড়েই ও বাড়ির পথে গাড়ি ছুটিয়ে দেয়। ট্রাফিকের নিয়ম কানুন তুচ্ছ করে ঝড়ের বেগে ছুটে চলে ওর গাড়ি, কয়েক মিনিটে পৌঁছে যায় বাড়ির দোরগোড়ায়। 

বেল টিপতেই দরজা খুলে দেয় মণিকা।

-স্বাতী কোথায়? 

-উপরের বেডরুমে, …শুয়ে আছে। শুনুন আপনাকে আমি একটা কথা …… 

মণিকার কথায় কর্ণপাত না করে, এক ছুটে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় স্বপন। বেডরুমে ঢুকতেই দেখে স্বাতী চোখ বুঁজে শুয়ে আছে বিছানায়, একটি সাদা চাদরে সর্ব শরীর ঢাকা, শুধু মুখখানি দেখা যাচ্ছে। গলার কাছে জড়ানো একটা ব্যান্ডেজের অংশ উঁকি মারছে চাদরের আড়াল থেকে। 

-কেমন আছো স্বাতী? স্বপন ব্যাস্ত স্বরে জানতে চায়। 

স্বপনের গলার স্বরে স্বাতী চোখ মেলে চায়, ওর দৃষ্টিতে একটু উৎকন্ঠা। স্বপন ততক্ষণে ওর শয্যা পার্শ্বে এসে দাড়িয়েছে। 

-মণিকা সব বলেছে তোমায়? 

-কি বলবে মণিকা? কেন, কি হয়েছে? 

-বলেনি? কিন্তু আমায় যে বললো সব বুঝিয়ে বলবে তোমায়? …. স্বপন, আমি … আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। দিন দিন আমি এত দুর্বল হয়ে পরছিলাম। মণিকা একদিন ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের কথা বলছিল, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, ভেবেছিলাম সত্যিই বোধহয় ….. তারপর সেদিন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাওয়ার পর, আর কিচ্ছু জানি না, …. 

-কি হয়েছে স্বাতী, তোমাকে এত বিচলিত দেখাচ্ছে কেন? 

স্বপন স্বাতীর বাহুতে হাত রাখে, স্পন্দন হীন শীতল হাত স্বাতীর। 

-এ কি এত ঠান্ডা কেন তোমার হাত? এ … কি! স্বাতীর হাত বেয়ে স্বপনের স্পর্শ ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে, ওর চোখ ক্রমশঃ বিস্ফারিত হয়ে উঠছে। সাদা চাদরের নীচে কোনও পোষাক পড়ে নি স্বাতী, তার প্রয়োজন ছিল না। চাদরের তলা দিয়ে হাত এগিয়ে নিতে নিতে স্বাতীর বুকে হাত রাখে স্বপন। চেনা ধাতব কুন্ডলীর পরিচিত শীতল স্পর্শে ভয়ানক চমকে ওঠে ও, মূহুর্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো হাত ছিনিয়ে তুলে নেয়। 

-না… আ… আ। সশঙ্ক আর্তনাদ তুলে উন্মাদ এক আতঙ্কে স্বপন ছিটকে সরে যায় খাট থেকে। 

-স্বপন ….. স্বাতী উঠে বসতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। ওর শরীর থেকে ততক্ষণে চাদরের আবরণটি খসে পড়েছে। 

-না… আ… আ… ভয়ঙ্কর আতঙ্কে স্বপন উন্মত্তের মতো ঘর থেকে ছুটে বেড়িয়ে যায়, চোখ খুলে রাখার মতো সাহস নেই ওর! অন্ধকার সিড়িতে ধাপ ভুল করে, নিচে গড়িয়ে পড়ে ওর অচেতন দেহটা। 

আহত, অচেতন স্বপনের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে মণিকা। তারপর দ্রুত হাতে ফোন তুলে নেয়। 

-হ্যালো হাসপাতাল? আপনাদের পেশেন্ট স্বাতী হালদারের স্বামী স্বপন হালদার এক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি কমপ্লেক্স ফ্র্যাকচার, … বেঁচে গেলেও সারা জীবন বিকলাঙ্গ হয়ে থাকতে হবে তাকে, …. না মাথায় কোনও চোট নেই, সম্পূর্ণ অক্ষত আছে। …. আজই অপারেশন সম্ভব?…. ধন্যবাদ। এই মূহুর্তে এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিন। …. কি বললেন সই? …. হ্যা, ওর স্ত্রী স্বাতী হালদার সই করার মতো সুস্থ হয়ে উঠেছেন এতক্ষণে। 

পুতুলের সংসার সায়েন্স ফিকশন গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!