কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » সায়েন্স ফিকশন গল্প » মহাকাশে একদিন

মহাকাশে একদিন

মহাকাশে একদিন সায়েন্স ফিকশন গল্প – শ্যামল হুদাতী

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাড়িতে আর মন টিকছে না। বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন। কে নিয়ে যাবে তাকে ঘোরাতে? সকাল আটটায় বাবা মা দুজনেই অফিসে বেরিয়ে যান আর ফেরেন ঠিক রাত আটটা। সারাদিন বাড়িতে একা একা থেকে হাঁপিয়ে উঠেছি। কতক্ষণ আর টিভি দেখবে। আর একই ধরনের টিভি প্রোগ্রাম আর ভালো লাগেনা। তাই একদিন ঠিক করলাম দিদির বাড়ি ব্যাঙ্গালোরে যাবে। গতবার দিদির বাড়ি গিয়েছিলাম প্লেনে। বাবা তুলে দিয়েছিলেন। আর দিদি রিসিভ করেছিল ব্যাঙ্গালোরে। কোন কষ্টই হয়নি।

সোমবার আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলেন বাবা। দিদির সাথে ফোনে যোগাযোগ করে নিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে থেকেই।

জানলার পাশেই এক সিটে বসে বিট্টু বাইরের আকাশটা দেখতে দেখতে অনেকটা ভাবুক হয়ে গেলাম। এই গোটা আকাশটার ওপারে কি আছে আমরা এখনো পর্যন্ত ঠিকমতো আবিষ্কার করতে পারলাম না কেন? নিজেকেই বারবার প্রশ্ন করতে লাগলাম ।অনেক ভোরে সে উঠেছে । চোখে ঘুম ও চলে এসেছে।

ককপিটের কাছেই তার সিট ছিল। হঠাৎ মৃদু কোলাহল শুনতে পেলাম । প্লেনের পাইলটকে সরিয়ে একজন তার সিটে বসে আছে। পরে জানতে পারলাম দুই ভিনগ্রহী মানুষ প্লেনটাকে দখল করে নিয়েছে। যাকে আমরা হাইজ্যাক বলি। পরে জানতে পারলাম ভিনগ্রহী মানুষরা তাদের দেশে প্লেনটাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি শুনেই খুব উৎফুল্লিত হতে লাগলাম।

প্রথমে প্ল্যানটা চাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমার ঠাম্মার কথা মনে পড়ল। খুব ছোটবেলায় ঠাম্মা যখন ওই চাঁদে বসে থাকা চরকা চালানো বুড়ির গল্প বলত তখন ভাবতাম ওই ছোট্ট আলোময় গ্রহতে একটা বুড়ি একা গেল কি করে? আর শুধু গেল নয় – দিব্যি খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে বা কি করে? বড় হয়ে জানলাম কোন বুড়ি টুরি নয়। পাহাড় সমুদ্র হালকা প্রতিচ্ছবি কে কল্পিত বুড়ি ও চরকা বানিয়েছে কিছু গল্পকার। এও জেনেছি আরো পরে যে তাদের কোন প্রানের সন্ধান পাননি । পৃথিবীর মহাকাশচারীরা যারা কয়েক ঘন্টার জন্য স্পেস ক্রাফটে করে চাঁদে নেমে অবস্থান করেছিল।

আমরা বইয়ে পড়েছি চাঁদের তো মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের এক-এর ছয় অংশ, আর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এক-এর নয় অংশ। তাই হয়তো আমরা একটু বেশি হালকা হয়ে যাব।

আবার চাঁদে থেকে অন্য এক গ্রহে পৌঁছে গেলাম। সেখানে এক অদ্ভুত ধরনের গাড়ি চোখে পড়ল। গাড়িগুলো ছোট ছোট প্লেন বলা চলে, দেখতে অনেকটা হেলিকপ্টারের মত। দু চাকার গাড়িগুলো লোকজন তোলে চওড়া রাস্তা বরাবর খানিকটা ছুটে হঠাৎ বিশাল দুটো ডানা মেলে হুশ্ করে উড়ে গেল আকাশে। সাইকেল রিক্সা অটো ট্যাক্সি এমনকি বাসের মতো কোনো যানবাহন চোখে পড়ল না। এখানে দিব্যি হালকা শরীরে এক দু কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া কোন ব্যাপারই নয়। এখানে অবাক হলাম পাখিদের দেখে। পাখিদের ডানা নেই বললেই চলে। আমার মনে হয় পাখিরা ডানা কম ব্যবহার করার ফলে ডানা ছোট হয়ে গেছে। ওরা ছোট ডানা মেলেই উড়ে বেড়াচ্ছে বেশ। পাখিদের শরীরগুলো মানুষের তুলনায় অনেক হালকা। তাই ওদের ওড়াও খুব সহজ।

পার্কে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড। ছোট ছোট রংবেরঙের ফুলের গাছ সাজানো আছে পার্কের চারদিকে। ফুলগুলো এত সুন্দর দেখতে – হাত দিতেই হয়! ফুলগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে হাতে ধরতে গেলাম – ফুরুত ফুরুত্ করে ছোট্ট পাখিদের মতো ফুলগুলো উড়তে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ ওড়ার পর মাটিতে চুপসে যাওয়া বেলুনের মত ঝরে ঝরে পড়লে ফুলগুলো। বেশ মজার! পার্কের পেছন থেকে সারি সারি আপেল কমলালেবু গাছে ভর্তি। কেউ কোনো ফল ধরছেওনা আর খাচ্ছেও না ।
এইসব গাছ দেখে আশ্চর্য হলাম এবং ততই অভিভূত হতে লাগলাম। এই যেন এক অবাক জায়গা।

কুকুর বিড়ালের মত পৃথিবীর পোষ্য , ছোট ছোট জন্তগুলো যেন স্বভাব চেহারায় আদলে একটু আলাদা। বেশ ভারী লোমশ শরীরে পাগুলো তুলনায় ছোট ও মোটা। বেশ আস্তে আস্তে চলে। কিন্তু ছোটা শুরু করলে তা কিছুক্ষণের মধ্যে ওড়ায় পরিণত হয়। ওই শরীর নিয়ে ওরা কখনো কখনো উড়তে শুরু করে। কিছুটা ওড়ার পর ওরা যখন নামতে চায় সামনে পা দুটো কেমন যেন জয়েন্ট খুলে হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় কিছুটা বসার ভঙ্গিতে। ওড়া আস্তে আস্তে থেমে যায়।

ঘুরতে ঘুরতে আমরা চলে আসলাম জলাশয় বা পুকুরগুলোর কাছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের বয়স এক থেকে দু’বছরের মধ্যে দিব্যি সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে জলে মধ্যে। মাধ্যাকর্ষণের শূন্য জায়গায় ভর শূন্য দেহে সাঁতার না কেটেই অনায়াসেই যে কোন প্রাণী সাঁতরাতে পারে জলে। পৃথিবীর একের নয় অংশ ওজনের মানুষদের কাছে জলে ভেসে বেড়ানোটাই স্বাভাবিক।

একটু দূরে আরেকটা জলাধার। আমাদের ইচ্ছে হলো জলে নামার। কিন্তু গেটে বাধা পেলাম । দুজন পোশাকধারী সিকিউরিটি জানাল, ” জলের তাপমাত্রা বেশ কম, প্রায় বরফের কাছাকাছি শূন্য ডিগ্রির মতো”। তবে জলে নামার আগে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেওয়ার জন্য এমন একটা ইনজেকশন দেওয়া হয় যাতে জলের কম তাপ সহজেই পরিবাহী হয় শরীরের।

আমি এক ইনজেকশন নিয়ে কস্টিউম পরে যেই জলে ঝাঁপ দিলাম – প্লেনের সিট থেকে গড়িয়ে পড়লাম মেঝেতে। ঘুম ভেঙ্গে গেল। উফ্ দারুন সুন্দর! চাঁদ ও অন্য এক গ্রহের দৃশ্য, লোকজন।

মহাকাশে একদিন সায়েন্স ফিকশন গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!