আন্ধেরা কায়েম রহে ভৌতিক গল্প – নিনিয়া সুকথা (সৃজনী)
প্রথমাংশ:-
“তুমি সেই একই রকম রয়ে গেলে অম্লানদা,এত বছর হয়ে গেল, একেবারে পাল্টালেনা” কথাক’টা বলেই , হরিদার চায়ের দোকানে, তার ঠিক উল্টো দিকে বসা, অম্লান মিত্তিরের দিকে চোখ সরু করে তাকাল সুধাকর।
অম্লানের অবশ্য এইসব দিকে বিশেষ হেলদোল নেই। সেতো আর সুধাকরের মতন ন্যাকাচন্দর নয়! আর ভূতভুতুড়ি ইত্যাদিতে তার বিশেষ বিশ্বাস নেই, সুধা’র মতন অমন ভীতুর ডিম হলে কি আর তিনি অমন রাতবিরেতে গিয়ে শ্মশানেমশানের ইলেকটিরি চুল্লি অবধি মেরামতি করতে পারতেন? আর এই সেনবাড়ী!? এ তো তার, বাঁয়েহাতের খেল!
চুপচাপ চা খেয়ে, দাম মিটিয়ে সেনবাড়ীর পথ ধরলেন পোড়খাওয়া ইলেকট্রিক মিস্ত্রি অম্লান মিত্তির। গাঁ গেরামের সবাই অবশ্য তাকে “মিত্তিরবাড়ীর কুলাঙ্গার” বলেই বেশি চেনে।
আজ, কার্তিক পূর্ণিমার রাত। গোল থালার মত চাঁদ ওঠে, যাত্রাভঙ্গের মাঠের ওপর এই পটেশ্বরীতে প্রতি পূর্ণিমায়। কিন্তু আজ বিধি বাম! আজ নাকি চন্দ্রগ্রহণ। যাত্রাভঙ্গের মাঠের ওপর লালচে রঙের গ্রহণলাগা চাঁদটা দেখে,সেটাকে কেমন যেন, পোকায় কাটা আর অসুস্থ মনে হচ্ছিল তার।
আস্তে আস্তে,সেই ফ্যাকাসে লালচে আভায় সঠিক পথ চিনে তিনি ধীরেসুস্থে পৌঁছে গেলেন, এই আলো আঁধারির লুকোচুরির খেলার মধ্যেও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকা সেনবাড়ীর কাছে।
বাড়ীটা নয় নয় করেও প্রায় পাঁচশো বছর পুরনো। দুর্গের আকারের ,ছোট ছোট চৌখুপী জানলা আর প্রকান্ড সব কলাগেছে থাম যেন আষ্টেপৃষ্ঠে অজগরের মতন জড়িয়ে ধরেছে বাড়ীটাকে।
সদর দরজা দিয়ে না ঢুকে, ভাঙাচোরা খিড়কি দিয়ে ভিতরবাড়ীতে ঢুকলো অম্লান। দরজা খুলে,হাতে লন্ঠন ধরে আগেভাগেই দাঁড়িয়ে ছিল অভয় ওরফে অভয়চরণ, এবাড়ীর খাস চাকর।
ইদান্তি পুজো আচ্চা না হলে, এ বাড়ীতে কেউ পা ঠেকায় না।তাই বেশীরভাগ সময় অভয় ই এ বাড়ীকে যক্ষের মতন আগলে রাখে।
সবে সবে জগদ্ধাত্রী পুজো গেছে, আর মায়ের পুজোর সময়েই কিনা বাড়ীর আদ্যিকালের পুরনো ইলেকট্রিক লাইনে গড়বড়। তাই পুজোর পর পর, সময় করে এ বাড়ীতে এসে লাইন চেক করার কথা বলেছিল অভয়, তাইই আজ আসা।
কুপকুপে অন্ধকার সারা বাড়ী জুড়ে, অভয়চরণের লন্ঠনের নিবু নিবু আলোতে সে আঁধার আরো যেন বিকট ঠেকল তার চোখে। খ্যানখ্যানে গলায় অভয় তাকে বলল, ” কই হে বাপু, ইলেকটিরি, অমন হাঁ করি ডেঁইরে থাকলি হবে, ঝপ করি এসো দিকিনি, ছোটবাবু তোমারে মিটারঘরে নিয়ি যাতি বলে গেচেন “।
নিজের হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে লন্ঠনের আলো অনুসরণ করে,মিটার ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল সে। আধো আবছায়া অন্ধকারে কীরকম একখানা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি।
অবশেষে মিটারঘরের কাছে এসে থামলো অভয়চরণ। এতক্ষণ দরকার ছিলনা। তবে এখন একান্তই দরকার।তাই নিজের পাঁচ ওয়াটের গামদো এভারেডি টর্চটা হাতড়ে নিজের টর্চটা বার করল অম্লান।
এবং বের করেই সরাসরি, মিটার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো সে। একটেরে ঘরটা কুপকুপে অন্ধকার। আর তার টর্চের আলো সরাসরি পড়ল সেই ঘরে থাকা মিটারবাক্সের ওপর। কোথা থেকে একগাদা বাদুড় আর চামচিকেরা একেবারে ঝাঁক বেঁধে উড়ে এল তার
দিকে। আর তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে, সবকিছু ছেড়েছুড়ে মিটারঘর থেকে বেরিয়ে অম্লান দিল, দে ছুট।
একদৌড়ে মিটারঘর খিইয়ে দক্ষিণ দিকের একটা ঘরে ঢুকে পড়ল সে। ভয়ে তখনও বুকটা ধকধক করছে তার। ঘরটা বেশ বড় মনে হচ্ছে। এদিক সেদিক দেখে, হাতড়ে হাতড়ে লাইটস্যুইচ খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করল অম্লান।
” এইই যে, এই তো” হাতের আন্দাজে একটা আদ্যিকালের স্যুইচবোর্ড খুঁজে বের করে আলো জ্বালাবার চেষ্টা করল সে। তিনবারের মাথায় অবশেষে সফল হল সে।
ভেবেছিল, এবারেও মিটার ঘরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। কিন্তু নাহ্ এবারে তেমন কিছুই ঘটল না, সত্যি বলতে কী। তবে একটা অদ্ভূত জিনিষ লক্ষ্য করে সে বেশ খানিকটা অবাকই হল বটে!
আর, হবে নাই বা কেন!? প্রকান্ড এই ঘরের দেওয়ালজোড়া বিশাল বিশাল বড় সব তৈলচিত্র আর তাদের প্রত্যেকটি বেশ দামী দামী বোম্বাই চাদরে আপাদমস্তক ঢাকা। শুধু মাঝেমধ্যে কয়েকটার ফ্রেম চাদরের ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকিঝুঁকি না মারলে ধরা দুঃসাধ্য প্রায়।
এতগুলো চাদর ঢাকা ফ্রেমের মাঝে কেন জানি না,ওপাশের দেওয়ালের মাঝখানে রাখা শালঢাকা ছবিটা যেন টানছিল তাকে।
অন্যসব ছবির থেকে যে এটা আলাদা সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিল অম্লান। কারণ, ছবিটার গায়ে মুড়ে রাখা ছিল একখানা বেশ দামী কালো জমির ওপর সোনালী সুতো তুলে কাজ করা কাশ্মীরি শাল।
বলাই বাহুল্য ওই শালের লোভেই অগ্র পশ্চাৎ ভাবাভাবি না করে, একটান মেরে, ছবির ফ্রেমের গা থেকে একটানে শালখানা খুলে ফেলল সে।
আর খোলবার সঙ্গে সঙ্গেই ছবিখানা প্রথম দেখে, কী একখানা অজানা আতঙ্কে শরীরটা শালকাঠের মতন শক্ত হয়ে উঠল তার।
#দ্বিতীয়_পর্ব
প্রমাণ আকারের ছবিটা কাঁচা বয়েসী এক লম্বা চওড়া তান্ত্রিক কী কাপালিক গোছের কারোর। ইয়া লম্বা চওড়া চেহাড়া, কাঁধখানা চ ওড়া একখানা সোমত্ত ষাঁড়ের মতন, শাস্ত্রের ভাষায় একেই কি বৃষস্কন্ধ বলে? মিটমিটে হলদে প্রায় নিবু নিবু বাল্বের আলোতে এই কথাটাই মাথায় আসছিল অম্লানের। ছবির সাধুর মাথায় বাদামী হয়ে আসা জটাজুটের পাহাড়, মুখের আকার হরতনি ছাঁদের। একসময় বোধহয় গায়ের রঙ চড়চড়ে ফর্সা ছিল, রোদে পুড়ে তামা রঙের চমক লেগেছে তাতে। সরু কোমড়ে আঁট করে বাঁধা খেঁটো ধুতি।
সরু টিকটিকে নাকের নীচে গোঁফ দাড়ির পাহাড়। আর প্রশস্ত ললাট ভরা ত্রিপুন্ড্রের নীচে টানা টানা একজোড়া… না, না একজোড়া বললে ভুল হবে।বলাই বাহুল্য , একটা চোখ। কারণ ছবির সাধুর বাম চোখটার জায়গায় কালো অতল গহবর।
হাত জোড়া বেশ লম্বাটে প্রায় জানু ছোঁয় ছোঁয়। পায়ের গোড়ালি নিচু, দুপা জড়ো অবস্থায়,ঠিক অবিকল পদ্মফুলের মতন দেখতে লাগছে।
একমনে নিক হয়ে তৈলচিত্র টা দেখছিল সে। সত্যিই বড্ডো ভাল আঁকার হাত ছিল এ বাড়ীর চিত্রশিল্পীর, না হলে কি আর এত সজীব, এত জীবন্ত লাগতে পারে !
যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিল সে। হঠাৎই একটা দমকা হাওয়ায় সেই ঘোর একেবারে কেটে গেল তার। কালবৈশাখীর মতন দমকা হাওয়া বইছে সারা ঘরে। “কী হচ্ছে এসব, হঠাৎই” মাথাটা যেন কাজ করতে বন্ধ করে দিয়েছে অম্লানের। হঠাৎই ঠাঁই করে ঘরের একমাত্র বাল্বটা ফাটার আওয়াজ হল, আর সঙ্গে সঙ্গে যেন অলক্ষ্য থেকে ভেসে এলো একটা বীভৎস রক্ত জল করা অট্টহাসি।
#তৃতীয়_পর্ব
এই প্রথম, জীবনে এতখানি ভয় পেল অম্লান। তবে শুধু ভয় বলে ভয় নয়। ভয়ঙ্কর সর্বগ্রাসী হাড়হিম করা এক অদ্ভূত রকমের ভয়। যার সূচনা আছে, কিন্তু অন্ত নেই। তখন সারাটা ঘর ভরে গেছে গহীন অন্ধকারে। আর সেই নিঃসীম অন্ধকারে তখন উন্মাদের মতন বেরোবার জন্য মাথা খুঁড়ে মরছে সে। আর সেই বীভৎস অট্টহাসি, তার যেন বিরাম নেই আজ।
হারা অম্লানের স্বভাবজাত নয়। তাই হাড় হিম করা ভয়ের পরিবেশের মধ্যেও যতটা সম্ভব মাথা বরফ শীতল রেখে সর্বশক্তি জড়ো করে সে তীব্র চিৎকার করে উঠল অভয়দা!!! বলে।
সত্যিই ঈর্ষা করার মতন ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে বটে সে! নৈলে কালা অভয়চরণ এই ভয়পাতালের দরজা ঠেলে হ্যাজাক হাতে এমনিভাবে ঢুকত না বটে। তার একেবারে মুখের কাছে হ্যাজাকের আলো ধরে একেবারে গনগনে আগুনে চোখে তাকে দেখল অভয়চরণ, আর তারপরেই তার হাত ধরে হিড়হিড়িয়ে টানতে টানতে,ওই ঘরটা থেকে বাইরের বারান্দার দিকে তাকে প্রায় ঠেলে ফেলে দিয়ে, বিড়বিড় করে কী একটা মন্ত্র বলতে বলতে সজোরে কপাটখানা দড়াম করে এঁটে দিল সে।
আর তারপর তার ডান হাতটা ধরে প্রায় হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে, প্রাসাদের ভগ্নপ্রায় অংশটার থেকে এনে দাঁড় করালো ওখানকার বৈঠকখানায়। যেখানে জায়গায় জায়গায় চোক ওয়ালা টিউব বসানো আর আলো ও অপেক্ষাকৃত জোরালো।
আর তারপরেই তাকে হিসহিসে কন্ঠস্বরে, সাপের মতন ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, ” ওদিক পানে মিটারঘর ছাড়ি আপনারে আর কোতাও যেতি বলিচি!? অ্যাঁ, ও ঘরে আপনারে কে যেতি বলল, নাকি পুরনো মহল ভেবি চক্কুদান করতি গে” ” ছিঃ ছিঃ থুক্কুড়ি,থুক্কুড়ি , রামো রামো” বলে তার দিকে থু থু করে বেশ একদলা থুতু ছিটিয়ে দিল অভয়।
আমতা আমতা করে এসব করার কিছু একটা সাফাই দিতে চাইল অম্লান, কিন্তু অভয়চরণের রাগী মুখটা দেখে, মনের কথা মুখের কথা মাখামাখি হয়ে গিয়ে,নিজের মধ্যেই পাকাপাকি হয়ে রয়ে গেল তার।
চোখটা কুঁচকে, ফস্ করে একটা লালসুতোর মেরিবাবা বিড়ি ধরার অভয়, তারপর খানিকক্ষণ সুখটান টেনে, বাঁকানের পাশে গুঁজে ,রাগী গলায় বলল, ” কী করেছেন,কাকে খেপিয়েছেন, কিছু ধারণাও আছে আপনার”? ছিঃ ছিঃ ছিঃ অম্লানবাবু, একটা সামান্য, দামী শালের লোভে এলেকার লোকের এত্তোবড় সব্বোনাশ করলেন? আপনি না ভদ্দরলোকের বাড়ীর ছাঁ” দাঁত কিড়মিড় করতে করতে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে তারপরেই দম নিল অভয়চরণ।
আর তারপরেই গলাটা আরেকটু খাটো করে প্রায় স্বগতোক্তির ভঙ্গিতেই সে একদৃষ্টিতে অম্লানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওই তেলছপিটা বাবা রুদ্দুআতের, সেই ইংরেজ আমলে, সে বহুকাল আগে উনি এ বাড়ীর বড় ছাবাল ছিল, পরে সাদুসংগো করতি হেমালয়ে যেয়ে তেরানতিক দীক্কে নেয়,পরে গুরুর নিদ্দেশে ফিরে এসি এ বাড়ীর ওই ঘরটা একন যেকানি, ওই কানি পিচেশের সাদনা করতেছেল। ও সাদনা করার সময় আলো জ্বালতি নেই নাকি, সাদকের ধুনি ছাড়া। তা এ বাড়ীর এক লতুন নায়েবের ছাবাল কিনা সেসপ জানত না। তা ভুল করি লাল্টুন ধরি ওকানে লাটিম খুঁজতি চলি যায়, আর তারপর থেকিই ওনার একটা চোখ কানা হয়ি যায়… আর তারপর…”
গল্পটা বলতে বলতেই অদ্ভুত ভাবে নিজেকে চুপ করিয়ে নেয় অভয়চরণ। আর তারপরেই অম্লানের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,” তুমি একন এখান থেকি যাও, তাতেই তোমার মঙ্গল, আজ রাতে সাবধান থেকো কেমন, বাকিটা তোমার কপালে যা আছে… ” এই বলে তাকে চুপচাপ খিড়কির দিকে ঠেলে পাঠিয়ে দিল সে, আর ওই বাড়ীর চৌকাঠ ডিঙোনোর আগেই অম্লান দেখলো, কখন যেন, তার হাতে গুঁজে দিয়েছে একটা শক্তিশালী টর্চ।
আর, তারপর সেনবাড়ীর রাস্তা ছেড়ে, এই ঘোর অমাবস্যার রাতে একখানা মাত্তর টর্চ সম্বল করে নিজের বাড়ীর পথ ধরলেন শ্রীল শ্রীযুক্ত বাবু অম্লান মিত্তির। তবে আজ কিন্তু এই ফাঁকা শুনশান রাস্তায় তিনি একা নন, আজ তার পিছু নিয়েছে এক ছায়া, যা কিনা অমাবস্যার রাতের চাইতেও আরো গহীন আঁধারের স্থায়ী বাসিন্দা।।
#তৃতীয়_পর্ব
সেনবাড়ী খিইয়েই প্রথম পড়ে যাত্রাভঙ্গের মাঠ। এই মাঠে খেলাধুলা করেই বেড়ে উঠেছেন অম্লান। তবে আজকের মতন এর আগে এত অচেনা আর এত আদিম ভয়াল লাগেনি এই মাঠটাকে তার। হঠাৎই পিছনে একটা বিকট কানফাটানো আওয়াজ শুনে, নিজের অজান্তেই যেন পা দুটো থমকে, থেমে গেল অম্লানের। ” কীসের শব্দ হচ্ছে?” কৌতূহল প্রবলতর হচ্ছে কিন্তু পিছনে ফিরে তাকানো ও তখন সাহসে কুলোচ্ছেনা তার।
তাও কৌতূহলের গরজের বালাই বড় বালাই, তাই কাঁপতে কাঁপতে কোনোরকমে টর্চ লাইটটা তাই করে পিছনে ফিরে তাকাল অম্লান। আর পিছন ফিরে সে যা দেখল, তাতে তার হাত আর পা ভয়ে পেটের ভেতরে আমূল সেঁধোবার জোগাড় হল।
হাত পায়েরই বা আর দোষ কী? তার থেকে প্রায় হাতখানেক দূরত্বে শূণ্যে ভেসে আছে একটা ছয় ফিট চার ইঞ্চির পুরুষ শরীর। এই শরীরের অধিকারী কে অবশ্য তিনি খুব ভালো মতন চেনেন, কারণ ইনিই তো খানিকক্ষণ আগে সেনবাড়ীর সেই নিষিদ্ধ কক্ষের তেলছবির সাধু রুদ্রনাথ। অবিকল সেই একই নাকনক্শা।
শুধু তফাৎ একটাই, রুদ্রনাথের অবশিষ্ট চোখের মণির রঙ এখন চড়চড়ে সাদা, আর তার মাথাটা দেহের সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঘোরানো।
প্রচন্ড ভয়ে একটা বিকট চিৎকার করে জ্ঞান হারালেন অম্লান মিত্তির।
#শেষ পর্ব
নষ্ট করার মতন বিন্দুমাত্র সময় বা স্পৃহা কোনোটিই বরাবরের মতন রুদ্রনাথের ছিল না, এখনও নেই বৈকি। গুরুদেবের অত্যন্ত বাধ্য ছাত্র ছিল সে চিরটাকাল। তাঁর ই নির্দেশে অসম্ভব কে সম্ভব করতে অত্যন্ত কঠিন সাধনা, রক্তপিশাচ বশীকরণ করতে বসেছিল সে। মনে আশা ছিল, দেনার দায়ে রুগ্ন জমিদারবাড়ি দেখবে আশার আলো,ধনসুখ।সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। শুধু সেদিন যদি ওই নতুন খেরেস্তান নায়েব হ্যারল্ড নবনাথ মিত্তিরের ছেলে, চার্লস শুভনাথ তার সাধনক্ষেত্র অপবিত্র না করত কৌতূহলের বশে, অনেককিছুই হয়তো অন্যরকম হতো।
গুরুদেবের অভিশাপে তাকে খোয়াতে হতো না তার চোখ,রুষ্ট পিশাচ দ্বারা নিজের পরিবারের অমঙ্গল সাধন রুখতে জীবন্ত সমাধি নিয়ে, তেল ছবির মধ্যে আটকে রাখা একটুকরো জীবন্ত অন্ধকার হয়ে হাহাকার করতে হতো না।
তবে, আজ তার শাপমোচন হয়েছে, সেই খেরেস্তান ছোকরার রক্ত ই আবার ফিরিয়ে এনেছে তাকে। আর দেরি নয়, এখনি সাধনায় বসতে হবে।
হতচেতন অম্লানের পেটের উপর সুপ্ত বজ্রাসনে বসে তার বাঁ চোখ টা সবে উপড়াতে যাবেন রুদ্রনাথ, হঠাৎই টর্চের আলোটার দিকে নজর গেল তার। কী যেন বলেছিলেন গুরুদেব, স্বয়ং এর মধ্যে যোগাগ্নি অথবা হোমাগ্নি জ্বালাতে হবে, তার বাইরে বাকি অগ্নির কোনো স্থান নেই। টর্চটা আছাড় মেরে ভাঙতে ভাঙতে তিনি বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলেন “সির্ফ ঔর সির্ফ অন্দর কি জ্যোত জ্বলতি রহে, পর বাহার অন্ধেরা কায়েম রহে”।।
আন্ধেরা কায়েম রহে ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
রাজবাড়ী রহস্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন