প্রচ্ছদ ছোটগল্প – সাহানা হাজরা
বইয়ের প্রচ্ছদটি এত সুন্দর হয়েছে যে দেবী ভেবেই পেল না সে কিভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ওঁনার বানানো এই প্রচ্ছদটি যে বইয়ের সে বইটিতে বিশিষ্ট সাহিত্যিক অম্লান গঙ্গোপাধ্যায় ,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,আনন্দশঙ্কর রায় প্রমুখের লেখা প্রকাশিত হবে। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে কেউ-ই জানত না কে এই প্রচ্ছদটি বানিয়েছেন। যিনি বানিয়েছেন তাঁর কৃতিত্ব যে কতখানি সেটি জানানো বিশেষ জরুরী জেনে দেবী একটি পরিকল্পনা করে। তার বন্ধু সাগরেদ, কয়েকজন লেখক-লেখিকাদের নিয়ে বইটি প্রকাশের পূর্বমূহুর্তে সে একটি পার্টির আয়োজন করে। সেই পার্টিতে সকল লেখক-লেখিকা না থাকলেও কয়েকজনকে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করবে,আর পরিচয় করাবে সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়ের সাথে।ওঁনাকে ডেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে।দেবী ফোন করে সকলকে আহ্ববান জানায়।দেবীর চারজন সুহৃদ বন্ধুর কো-অপারেশন সে আশা করেছিল। কিন্তু সে হতাশ হল।ব্যাপারটি ঘটল এইরকম –
ফোনের ওপারে কিছু কথোপকথন-
প্রথম ফোন –
দেবী- হ্যালো প্রিয়দারঞ্জন বাবু ?
প্রিয়দারঞ্জন – হ্যাঁ,বলছি বলুন।
দেবী-নমস্কার।আপনার শরীর কেমন আছে ?
প্রিয়দারঞ্জন-চলছে……মোটামুটি।
দেবী-আপনার লেখা প্রকাশ হতে চলেছে আগামী চৌঠা আশ্বিন। আপনাকে খবরটি জানানোর সাথে-সাথে আর একটি রিকোয়েস্ট আছে।
প্রিয়দারঞ্জন –বলুন।
দেবী-৩রা আশ্বিন বইটির প্রচ্ছদের সাফল্যে একটি ছোট পার্টির আয়োজন করেছি আমার বাড়িতে।সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আপনার আমন্ত্রণ রইল।
প্রিয়দারঞ্জন –অবশ্যই যাব।
দেবী-ধন্যবাদ।
দ্বিতীয় ফোন-
দেবী-হ্যালো,আবাহন বাবু ?
আবাহন বাবু- ‘না’,আমি ওঁনার ওয়াইফ বলছি।
দেবী-‘ও শুকলতাদি ?কেমন আছেন ?
শুকলতা দেবী-ভালো।বলো তোমার খবর কি ?
দেবী-ভালো ।আপনাকে ইনফ্যাক্ট আবাহন বাবুকেও,ওঁনাকে আলাদা করে যদিও আমি বলব।আগামী ৩ রা আশ্বিন আপনাদের আমার বাড়িতে আমন্ত্রণ।
শুকলতা দেবী-কী উপলক্ষ্যে ?
দেবী-আমাদের নতুন বইয়ের প্রচ্ছদের সাফল্যে।
শুকলতা দেবী-অবশ্যই,অবশ্যই।
দেবী-সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আবাহন বাবুকে যদি পাওয়া যেত।
শুকলতা দেবী-তার আর দরকার নেই।আমি ওঁনাকে বলে দেব।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
দেবী-আচ্ছা।ধন্যবাদ।
তৃতীয় ফোন
দেবী-হ্যালো ,সংহিতা ?
সংহিতা – হ্যাঁ,বলো।
দেবী – সংহিতা শোনো,আগামী ৩রা আশ্বিন,থার্ড অক্টোবর আমার বাড়িতে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ চলে এস।
সংহিতা- কেন ?কেন ?হঠাৎ তলব ?৪ঠা তেই তো আমাদের বই প্রকাশ হতে চলেছে।
দেবী-এস না এলেই জানতে পারবে।
সংহিতা-আচ্ছা,দেবী যাব।
চতুর্থ ফোন
দেবী- হ্যালো ,সাগর ?
সাগর গাঙ্গুলী –হ্যাঁ ,সাগর গাঙ্গুলী বলছি।বলুন।
দেবী-মাফ করবেন আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে।
সাগর গাঙ্গুলী-না,না ঠিক আছে বলুন।
দেবী-থার্ড অক্টোবর ,৩রা আশ্বিন আপনার আমন্ত্রণ আমার বাড়িতে।
সাগর গাঙ্গুলী – কি উপলক্ষ্যে?
দেবী – আগামী ৩ রা আশ্বিন আপনাদের আমার বাড়িতে আপনার আমন্ত্রণ। বইয়ের প্রচ্ছদের সাফল্যে।
সাগর গাঙ্গুলী – ঠিক আছে। অবশ্যই যাব ম্যাডাম।
৪ঠা আশ্বিন……
সন্ধ্যে ৭ ঘটিকা –অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান শুরু।
রাত ৯ ঘটিকা- অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।
‘এত সুন্দর প্রচ্ছদের ভাবনা।প্রচ্ছদের অঙ্কনও এত সুন্দর।প্রচ্ছদের ডেসক্রিপশনও এত সুন্দর যে আমার কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। কনটেম্পরারি আর্টে ওপর তোমার কনসেপ্টের বাহবা দিতে হয় দেবী।’
‘ধন্যবাদ ম্যাডাম।আপনাদের লেখার ওপর ভিত্তি করেই তো আমার এই প্রচ্ছদের পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন।আপনাদের আশীর্বাদ না থাকলে সেটা সম্ভব হত না।’
সংহিতার অনেকটা সাহায্য না থাকলে এটা সম্ভব হত না।থ্যাঙ্ক ইউ সংহিতা তোমাকে স্পেশালি।
ক্ল্যাপিং…..
আপনারা তাহলে এবার পার্টি এনজয় করুন।কিছু অসুবিধে হলে আমাকে ডাকবেন।
‘সংহিতা তোমার কনসেপ্ট আর আমার কনসেপ্ট না মিললে আজ এই সাফল্য আসত না।দেবীর এই কথায় সংহিতা বলল-‘না,না আমার ছোট একটা সাহায্য ছিল।তুমিই তো সবটা করেছো।’
প্রচ্ছদে এক বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটার ছবি।এই কনসেপ্টটাই তো মুখ্য।বইয়ের কভারের রঙ আমি সিলেক্ট করেছিলাম।তোমার অ্যানালিসিসের তারিফ না করে পারছি না।যেন বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ঘটল।’হাসতে হাসতে কথাগুলো সংহিতা দেবীকে বলল।
‘না,না অবদান কোনো অংশে কম নয়।কভার নীল রঙের শেডে নিয়ে আসা কম কথা নয়।’দেবীর এই কথায় সংহিতা বলল-‘তোমার অ্যানালিসিসটা আমাকে বলো দেবী।’
‘ওঁনাদের লেখা পাওয়া মানে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনই করা।আর সেই বইয়ের প্রচ্ছদ বানানো মানে বুঝতে পারছো কত বড় ব্যাপার !!! হাসতে হাসতে দেবী উত্তর দেয়।
আমার কাছে কনটেম্পোরারির অনেক কনসেপ্ট আছে।যেমন-‘আয়নায় নিজেকে চেনা’, ‘মুখোশের আড়ালে’, ‘বাঘে-ছায়ে ভালোবাসা’, ‘রঙ চেনা’-এইগুলোর আলাদা-আলাদা অ্যানালিসিসও আছে।যে গুলোর ওপর আমার একটা বই প্রকাশ করতে চলেছি।নাম-‘আর্ট’।
এর ছবিগুলো আঁকছে ঋতব্রত মজুমদার।তুমি এখানে নতুন অতিথি।তোমার সঙ্গে ঋতব্রতর পরিচয় করিয়ে দেব।এই বইয়ের কভার আঁকিয়েছিলাম।তোমার কনসেপ্ট আমি কিছুটা হলেও বুঝেছি।ওঁনারা সমুদ্র।এই বইতে ওঁনাদের লেখা এক বিন্দু বৃষ্টির জলকণা দিয়ে বুঝিয়েছো।কনসেপ্ট বেশ ভালো।
আমার গাছের কনসেপ্টে ‘শেষ বসন্ত’-এর জন্য তোমাকে দরকার।অ্যানালিটিক্যাল থিসিসটা পেলে পরবর্তী প্রচ্ছদের জন্য ভালো হবে।দেবী বলল।
দেবীর সঙ্গে কথা বলে সংহিতার বেশ ভালো লাগল।বলল-তোমার সঙ্গে ঋতব্রতর আলাপ করিয়ে দেব খুব তাড়াতাড়ি।
থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ সংহিতা ।দেবী বলল।
এইভাবে রাত ৯ টা নাগাদ প্র্চ্ছদের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
শুকলতা দেবী-আসছি তবে সুচরিতা।
সুচরিতা দেবী- হ্যাঁ,আসুন।
সংহিতা –আসছি আমি ম্যাডাম (পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে)
সুচরিতা দেবী-হ্যাঁ,এসো।
সকলের যাবার পর…..
দেবী-ম্যাডাম ,আপনার পায়ের ধূলো আমার বাড়িতে পড়েছে।এই আমার কাছে অনেক।
সুচরিতা দেবী-না,না সেরকম কিছু ভেবো না।তোমার বানানো পায়েসটা খুব ভালো হয়েছিল।
দেবী-ধন্যবাদ ম্যাডাম।ম্যাডাম আপনার এই প্রচ্ছদটির পিছনে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে।
সুচরিতা দেবী-মুচকি হেসে উত্তর করে ,তেমন কিছু না।আমার বেশ ভালোই লেগেছে।
দেবী- আপনার লেখাটা ম্যাডাম এই বইতে তিন নম্বরে রাখা হয়েছে।
সুচরিতা দেবী-আমি প্রচ্ছদটি নিয়ে খুব আপ্লুত।
দেবী-ম্যাডাম আপনার আশীর্বাদ না থাকলে কিছুই এগোতো না।তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।(পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে দেবী)।
সুচরিতা দেবী-আজকে তবে আমি এলাম ।নীচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
দেবী-হ্যাঁ চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।(দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল)।
প্রচ্ছদ ছোটগল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
গল্প হলেও সত্যি
কায়দায় জীয়ন কায়দায় মরণ
পিরীতি কাঁঠালের আঠা