অদৃশ্য সৈকত চাঁদিপুর ভ্রমন কাহিনী – সুমিতা নন্দী দে
আমাদের বেড়ানোর গন্তব্যে দীঘা প্রায় অনেকবারই যাওয়া হয়ে গেছে, তাই এবার মার্চ মাসে ঠিক করলাম অজানা কোনো সমুদ্র সৈকতে। আমার মেয়েরা যেহেতু ছোট তাই বেশি দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। ঠিক করলাম অদৃশ্য সৈকত চাঁদিপুর- এ যাবার।
আমাদের ট্রেন হাওড়া স্টেশনে থেকে ৮:৩৫am ফালাকনামা এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার আধ ঘণ্টা আগেই পৌঁছে গেছিলাম। ট্রেন সঠিক সময়ে ছাড়লো, আমরা নেমেছিলাম বালাসর স্টেশনে ১১:৫০am , ট্রেন ১০ মিনিট মতো লেট ছিল। স্টেশনেই অনেক অটো দাড়িয়ে ছিল, সেখান থেকেই একটা অটো করে চলে গেলাম আমাদের হোটেলে। হোটেলে আসতে সময় লাগলো চল্লিশ মিনিট মতো।
আমাদের হোটেলটা ছিল ওটিডিসি’র পান্থ নিবাস। আমাদের হোটেলের বারান্দা থেকেই সমুদ্র দেখা যাচ্ছিল। হোটেলে এসে সবাই খুব ক্লান্ত ছিলাম আর খিদেও পেয়েছিল তাই তাড়াতাড়ি স্নান করে দুপুরের খাবার সেই হোটেলেই খেয়ে নিলাম। দুপুরে যেহেতু ভাটা থাকে, তাই আর সমুদ্রে গেলাম না, চাঁদিপুর বীচেই প্রথম দেখলাম যে ভাটার সময় জল প্রায় ৫ কিমি পর্যন্ত দূরে চলে যায়, যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে মনে হবে। দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৫টায় বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্র দেখার জন্যে। আর হোটেল থেকে বেরিয়েই সুন্দর বসার জায়গা আছে, আর সামনেই সমুদ্র। আমরা প্রথমে গেলাম এ.পি.জে. আব্দুল কালাম পার্কে। এই পার্কটি একদম হোটেলের কাছে ও সমুদ্রের পাশে, এই পার্কটি বানানো হয়েছে মিসাইলম্যান এ.পি.জে. আব্দুল কালাম স্যারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। আর এই বীচেই মিসাইল টেস্ট করার জন্যে নানান মিসাইল উৎক্ষেপণ করা হয়।
তারপর সমুদ্রের দিকে হাঁটতে লাগলাম, কিছুটা দূরে জলের দেখা পেলাম । আমার মেয়েরা তো বেজায় খুশি, কারণ ওদের ছোটো ছোটো পায়ে সমুদ্রের জল এসে পা ধুয়ে দিচ্ছে। তারপর আসতে আসতে সূর্যাস্ত হতে শুরু করেছে, দিনের আলো একদম হালকা হয়ে সে এক অপূর্ব দৃশ্য , কারণ সূর্যের শেষ আলোর আভা সাদা মেঘের মধ্যে পড়ে দ্বিগুণ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই চাঁদিপুর বীচটায় একদমই কোলাহল কম, সবাই ছড়িয়ে ঝিটিয়ে যে যার মতো সমুদ্রের পার ধরে হাঁটছে, কেউ পারে বসে গল্প করছে, গুটি কয়েক দোকান পাট বসেছে। বাচ্চাদের খেলার দোকান , শাঁখার দোকান, মাছের দোকান , বিভিন্ন খাবার দোকান ইত্যাদি সব বসেছে। আর সেখান থেকে আমরা ফুচকা, পাপড়ি চাট খেলাম, মেয়েদেরকে বেলুন কিনে দিতে ওরা খুব খুশি হলো, বেশ কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর আমরা হোটেলে ফিরে এলাম, ঘড়িতে দেখি ৯ টা বেজে গেছে। আমরা ডিনার অর্ডার করলাম, মেয়েরা যেহেতু ভাত খায়, তাই আমরা ভাত, ডাল, সবজি আর ডিমকারী নিয়েছিলাম।
পরের দিন, সকাল ৬ টায় উঠে একবার সমুদ্র দর্শনে গেলাম, গিয়ে দেখি জোয়ার আসছে ধীরে ধীরে। তাই বেশিক্ষণ থাকলাম না। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে চা আর ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। ৮ টার সময় একটা অটো ভাড়া করে সাইটসিন করার জন্যে, আর মার্চ মাসে এত গরম সেজন্যেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে গেলাম রাধাকৃষ্ণের মন্দির, সেখানের মন্দিরের উপরের অংশ কিছুটা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মত, পাশে একটা বড় বাধানো পুকুর আছে, তাতে আবার রঙিন মাছ আছে। মন্দিরের ভিতরে রাধা-কৃষ্ণ সহ নানান দেবদেবীর মূর্তি কারুকার্য করা ও সুন্দর রং করা আছে। মন্দিরের পাশে একটা বাচ্চাদের পার্কও আছে, এর প্রবেশ মূল্য আছে।
তারপর আমরা গেলাম বুড়িবালাম নদীর তীরে, এই নদী তীরে যে কত ইতিহাস আছে, কারণ নদীর ওপাশের জঙ্গলেই বাঘা যতীনের সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল, যেটা বুড়িবালামের যুদ্ধ নামে পরিচিত। সেই যুদ্ধের কথা ভাবলে সত্যি শিহরিত হতে হয়, আর এখন শুধু জঙ্গলটাই সাক্ষী হয়ে আছে। আর স্মৃতিবহন করে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে।
এরপর আমরা গেলাম বুড়িবালাম নদীর মোহনায়, আর মোহনা মানেই বিভিন্ন ধরনের মাছ দেখা অর্থাৎ ফিশিং হার্বার। তবে এখানে খুব সকালে এলেই মাছ দেখা যায়, বেলায় সব ট্রলার নিয়ে মাঝিরা মাছ ধরতে চলে যায়। আমরা এইসব ঘুরে যখন হোটেলে এলাম তখন মাত্র ঘড়িতে ১০:৩০ মিনিট।
হোটেলে চেক আউট ১১ টায়। আর আজকেই যেহেতু আমাদের ফেরার দিন তাই আর কোথাও গেলাম না, চলে গেলাম সমুদ্র স্নানে। জল অনেক দূরে চলে গেছে, কোনো রকমে গা ভিজিয়ে এসে আবার স্নান করে নিলাম সবাই। হোটেলে বলেই রেখে ছিলাম, কিছুক্ষনের জন্য এখানে থাকবো।
আমরা বেরোলাম ১২:৩০ মিনিটে। আমাদের ট্রেন ১:৫০ মিনিট ফালাকনামা এক্সপ্রেস, বালাসোর থেকে, তাই হোটেলে লাঞ্চ করিনি, ট্রেনে লাঞ্চ করেছিলাম। ট্রেন হাওড়া এসে পৌঁছাল অনেক দেরিতে, কারণ ট্রেন অনেক লেট ছিল। যাইহোক সব শেষে আমাদের ভ্রমণটা খুবই সুন্দর ছিল।
অদৃশ্য সৈকত চাঁদিপুর ভ্রমন কাহিনী – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
প্রচ্ছদ
কায়দায় জীয়ন কায়দায় মরণ
পিরীতি কাঁঠালের আঠা