ভালোবাসার শুভানুধ্যায় প্রেমের গল্প – সুপর্ণা আচার্য্য চক্রবর্ত্তী
সেদিন পিঙ্কি গিয়েছিল রিমার বাড়িতে, রিমার বার্থডে পার্টি সেলিব্রেট করতে। রিমার দাদা তন্ময় বিদেশ থেকে ডাক্তারি পাস করে সদ্য বাড়ি ফিরেছে তাই তার বাড়ি ফেরার পাশাপাশি রিমার জন্মদিন নিয়ে সকলের মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা ছিল। সকলেই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল। তন্ময় যেমন দেখতে বেশ সুন্দর স্মার্ট এবং হ্যান্ডসাম তেমন ব্যবহারও ভীষণ ভালো।
সে নিজেকে সাদামাটা রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে,পিঙ্কি রিমার বাড়ি যেতেই তন্ময় কোল্ডড্রিংসের গ্লাসটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “কেমন আছো পিঙ্কি?”আজ অবধি তো তোমার ডাকনাম টাই শুনে এলাম কিন্তু ভালো নামটা তো জানিই না; তুমি আমার বোনুর(রিমা) সেই ছেলেবেলার বন্ধু আর রিমা তো পিঙ্কি বলতেই অজ্ঞান” তন্ময় হা…. হা ….করে হাসতে হাসতে বলল।
পিঙ্কি বলল,”হ্যাঁ এটা সত্যি আমার ক্ষেত্রেও একই রকম । ওকে কোন কথা না বললে আমার পেটের ভাত যেন হজম হয় না , আসলে সবার সাথে তো সবার মনের মিল হয় না আমার সাথে ওর সম্পর্কটা ঠিক যেন ওই দুই আত্মার মতো”
যাই হোক কথায় কথায় অনেক কথা বলে ফেললাম । আমার ভালো নাম স্বাতীলেখা বসু, খানিকটা মুচকি হেসেই (পিঙ্কি) নামটা বলল।
তনমা বলল, “বাহ: নামটা তো খুব সুন্দর , ‘ স্বাতীলেখা’ , আচ্ছা বলতো তোমার নামের অর্থ কি?”
পিঙ্কি ওরফে স্বাতীলেখা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ,”এর অর্থ আমার ঠিক জানা নেই”।
তখন তন্ময় বলল,”স্বাতীলেখা কথাটির অর্থ হয় অনেক রকম তবে সেটা ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রে তোমার নামের অর্থ হল একজন যোদ্ধা, উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী এবং সুদর্শনা। এবার তুমি বলো এক্ষেত্রে তুমি কোনটার অধিকারী”।
পিঙ্কি মাথা নিচু করে রইল। তন্ময় জিজ্ঞেস করায় পিঙ্কি বলল, “প্রথমত আমি যোদ্ধা নই কারণ যোদ্ধা হতে গেলে যে শুধু যুদ্ধের প্রয়োজন তা কিন্তু নয় তার সাথে প্রচুর মনোবলেরও প্রয়োজন যা আমার কাছে শূন্য। দ্বিতীয়তঃ সুদর্শনা আমি চাইলেও হতে পারব না, কারণ তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন আমার গায়ের রং ব্যাস….এতটুকুই”।
এরমধ্যে হঠাৎ করে রিমা দৌড়ে এসে পিঙ্কিকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বলল, “আ.. আর রে কখন এলি বলবি তো চল .. চল কেক কাটা হবে। তোর জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোকে ছাড়া কিভাবে কেক কাটবো।”
তন্ময় রিমা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,”আমি ওর সাথে গল্পে এমনই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম তাই বুঝতে পারিনি। রিমা তন্ময় কে বলল “দাদাভাই তুইও চল তাড়াতাড়ি.. তাড়াতাড়ি আয়.. উফ্ তোকে নিয়ে আর পারা যায় না”।
এরপর কেক কাটা দিয়ে বার্থডে সেলিব্রেশন আরম্ভ হলো। পিঙ্কি এক জায়গায় চুপ করে বসে রইল, আসলে অনেক লোকের ভিড়ে ও নিজেকে কেমন যেন একটা গুটিয়ে রেখেছিল। আসলে রিমা অবস্থাপন্ন পরিবারের মেয়ে কিন্তু তাও ওর (রিমা) মধ্যে কখনো তার ছাপ দেখেনি পিঙ্কি। এমনকি রিমার পরিবারের লোকজন ও পিংকি কে খুব ভালোবাসে। রিমার বাবা-মা পিঙ্কিকে একা চুপ করে বসে থাকতে দেখে ওর,(পিঙ্কি) কাছে এসে বলল “যাও তুমি একটু আনন্দ করো এখানে চুপ করে বসে আছো কেন?”পিঙ্কি বললো, “না ….না আন্টি, আমি এখানেই ঠিক আছি”।
“আসলে ওসবে আমি কমফোর্টেবল নই দূর থেকেই ভালো লাগছে। কত এনজয় করছে রিমা আজ; তাই না আন্টি!”উত্তরে রিমার মা বলল “হ্যাঁ ঠিকই বলেছ। এত বছর পর ওর দাদা বাড়ি ফিরে আসার আনন্দেই ও আত্মহারা…. হাসতে হাসতে রিমির মা বললেন।
চারিদিকে কত আলোর রোশনাই.. কত খাবার দাবার আরো কত আয়োজন এসব নিজের মনে মনে ভাবতে থাকে পিঙ্কি। রিমা আজ এত আনন্দ করছে তা দেখে পিঙ্কিও খুব খুশি হয়েছে।
গত বছর যা কষ্ট পেয়েছিল মেয়েটা এমন প্রাণ খোলা হাসিখুশি মেয়েটা ভালোবেসে কি ভুলটাই না করতে যাচ্ছিল। আসলে রিমা দেবব্রত নামে একটি ছেলেকে ভালোবাসতো ছেলেটি আইটি সেক্টরে কাজ করতো। একবার তাদেরই এক কমন ফ্রেন্ডের বিয়েতে দুজনের আলাপ হয় ,প্রথম প্রথম ভালোলাগা তারপর শুরু হয় ভালোবাসার কিন্তু শেষমেষ তা বিয়ে অবধি গড়ায়নি। ছেলেটি তার বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের এবং তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। ওনারা চেয়েছিলেন তাদের ইচ্ছানুযায়ী দেবব্রত বিয়ে করুক। দেবব্রত ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান আর রিমা কায়স্থ তাই রিমাকে তাদের অপছন্দ। উনারা রিমার মুখের উপর বলেন,”ব্রাহ্মণ হয়ে অব্রাহ্মণের হাতের জল খাওয়া মহাপাপ…. এটা জানো তো?”
এরপর থেকে রিমা লক্ষ্য করতে থাকে যে দেবব্রত অনেক কম ফোন করে, প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে বলাও যায়। এমনকি রিমা ফোন করলে রিসিভ পর্যন্ত করে না যদিও বা রিসিভ করে আগের মত সেরকম ভাবে কোন কথা বলতো না। এভাবে চলতে চলতে একদিন রিমা তার ধৈর্যের সব সীমা অতিক্রম করে ফেলে এবং সরাসরি দেবব্রতকে জিজ্ঞেস করে “তুমি কি আমায় বিয়ে করতে চাও শুধু হ্যাঁ অথবা না সেটা আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দাও; এত ইগনোরেন্স আমি টলারেট করতে পারছি না”।
তখন দেবব্রত উম.. উম.. করতে করতে বললো,” তুমি আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করবে আশা করি। আসলে বাবা-মা চান একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে আমার বিয়ে দিতে। তারা চান তাদের মনের এই আশা আমি পূরণ করি তাই আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না”।
প্রত্যুত্তরে রিমা বলল, তুমি তোমার বাবা মাকে কষ্ট দিতে চাও না খুবই ভালো কথা দায়িত্ববান ছেলের ভূমিকা পালন করছো তুমি। কিন্তু আমি ! জোর করে কি তোমার কাছে গিয়েছিলাম? ছুটে এসেছিলে তুমি আমার কাছে”। এর উত্তরে দেবব্রত বলে, “ওসব থাক ….সেসব এখন অতীত, তাই এসব ঘেঁটে লাভ নেই আসলে আমারই ভুল হয়েছে তোমার মত বেজাতের মেয়ের সাথে প্রেম
করা আর যেটা সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট কথা ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই আশা করব তুমি আর ফোন বা মেসেজ করে আমায় বিরক্ত করবে না যদি তা করো আমি ব্লক করে দেবো”।
নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এই সকল কথা শুনে রিমা কান্নায় ভেঙে পড়ল, ভরা রাস্তার মাঝখানে কিছু লোকজন সব হাঁ করে আমাদের দিকে চেয়ে রইল । প্রায় উন্মত্ত রিমা কে কোন রকমে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে পিঙ্কি সামনে থাকা একটি পার্কে নিয়ে গিয়ে বসালো। পিংকি জানে রিমা কে সে বোঝাতে পারবে না কিন্তু তাও ওর ভিতরে জমে থাকা প্রাকৃত যন্ত্রণা ভাগ করে ওকে একটু আশ্বস্ত করে বলবে,” বন্ধু তুই একা না আমি আজীবন তোর পাশে ছিলাম…. আছি ..থাকবো”
ওখানে বসে রিমা কে বোঝানো অসম্ভব জেনেও ওকে পিংকি অনেক বোঝায় এবং সেই লক্ষ্য করে রিমা নিজেকে কিছুটা সামলেছে। ঠিক পরের দিনই আঙ্কেল ফোন করে জানায় রিমার পালস পাওয়া যাচ্ছে না মেয়েটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।
এরপর রিমার বাড়িতে এসবের কারণ জানতে চাইলে পিঙ্কি রিমার বাবা মাকে সব ঘটনা জানায়। সেদিনের পর থেকে রিমার পরিবারের কাছে পিঙ্কি খুব দামী হয়ে ওঠে। পিঙ্কি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বাবা গানের শিক্ষক ও মা গৃহবধূ পিংকি দিদি রিঙ্কি বিবাহ যোগ্যা কিন্তু টাকার অভাবে তার বিয়ে দিতে অক্ষম তার (পিঙ্কি) বাবা।
তাই পিংকি চাই যাহোক করে এমএসসি টা পাস করে একটা চাকরি পাওয়া যাতে সে সংসারে ও দিদির বিয়ের জন্য অর্থ জোগাড় করে বাবাকে একটু সাহায্য করতে পারে । অপরদিকে
রিমা দাদা তন্ময় পিঙ্কির স্নিগ্ধতায়
মুগ্ধ হয়ে যায় পিংকির মধ্যে একটা ভদ্র নম্র পবিত্রতার ছাপ আছে যা আজকালকার মেয়েদের মধ্যে দেখা যায় না।তন্ময় একবার ভাবে পিঙ্কিকে গিয়ে সটান ভালোবাসার প্রস্তাব দেবে কিন্তু পরক্ষণে ভাবলো না এখনই নয় আরো কিছুদিন যাক ততদিনে সে একটু সেটেল হয়ে নিক। রিমার দাদা তন্ময় মিলে থেকে ডাক্তারি পাস করে এসেছিল তাই সে খুব তাড়াতাড়ি চাকরিটা পেয়ে গেল। তন্ময় এবার করে নিজের সব স্বপ্ন পূরণ করতে থাকলো। প্রথম সে একটি সুন্দর বাড়ি বানালো, দামি গাড়ি ইত্যাদি তারপর সে ঠিক করল তার বোন কে সব জানাবে কিন্তু ঠিক তার পরের দিন ঘটলো উল্টো এক ঘটনা।
রিমা দাদার কাছে এসে কাঁদবে কাঁদতে বলল, “দাদা জানিস পিঙ্কি আর ইউনিভার্সিটিতে আসছে না, ওর কোন খবর পাচ্ছি না ঠিকমতো”।অবাক বিষয়ে জিজ্ঞেস করল “কেন রে?”
রিমা বলল “জানিনা এদিকে আমি ওকে ফোন করেছি বহুবার হয় ও ফোন রিসিভ করেনি আর না হয় ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে। বাড়িতে গেলে ওর ,বাড়ির লোক বলছে তারা কিছুই জানে না ও নাকি ইউনিভার্সিটি যাওয়ার টাইমে বাড়ি থেকে বেরোয় খুব চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য দাদা”।
তন্ময় বলল “দারা! এতো ভাবিস না আমি আছি তো, আমি ওকে খুব ভালোবাসি রে তোর কাছে ওর কথা শুনেছি বা দেখেছি এর আগে কখনো অনুভূতি আসেনি কিন্তু সেদিন তোর জন্মদিনের পার্টিতে ওর সাথে কথা বলে বুঝেছি পবিত্র একটা মেয়ে সারা জীবন একসাথে। হঠাৎ কি হল! তা আমার বোঝার বাইরে”
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায় কিন্তু পিঙ্কির কোন খোঁজ নেই রিমা আবার পিঙ্কির বাড়িতে যায় এবং সঙ্গে তার দাদা তন্ময়ও। পিংকির বাবা জানায় ইউনিভারসিটির এক্সাম পিস সংসার টানাটানি এবং বড় দিদির বিয়ের জন্য ও নাকি একটা চাকরির সন্ধান পেয়েছিল। যা দিয়ে ওদের সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল তাই সে এখন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজে মন দিয়েছে ও আর কখনো ইউনিভার্সিটি যাবে না সঙ্গে পিঙ্কির বাবা এটাও জানায় ও কোন সরকারি হসপিটালে কাজ করে।
ওর জন্যই আমরা কয়েকদিন যাবৎ একটু মাছ ভাত খেতে পারছি আর আমার হাতে ও (পিঙ্কি) ৭০০ টাকা গুঁজে দিয়ে বলল “এটা বাজার খরচা ও সংসারের টুকিটাকি জিনিসপত্র আনার জন্য রাখো”, এ কথা বলে মেয়েটা বেরিয়ে গেল।
তন্ময় বলল, “আচ্ছা ….আপনি কি বলতে পারবেন কোন হসপিটালে কাজ করে?” উত্তরের পিঙ্কির বাবা বললেন উনি কিছুই জানেন না।
এরপর শুরু হয় বিভিন্ন সরকারি হসপিটালগুলোতে খোঁজ; কিন্তু পিঙ্কির কোন খোঁজ মেলেনা। এদিকে পিঙ্কি আবার রিমার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি রেখে দিয়ে বাবাকে বলে গেছে যে রিমা এলে যেন এই চিঠিটা ওকে দিয়ে দেয়, এর সপ্তাহ দুয়েক পর ঘটে এক বিরাট অঘটন পিংকির বাবা হঠাৎ রিমাকে একদিন সন্ধ্যেবেলা ফোন করে বলল “রিমা, তোমাদের বাড়ি থেকে পিঙ্কি আছে?”উত্তরের রিমা বলে, ” না তো আজ তো বহুদিন হয়ে গেল ওকে দেখিনি, কেন কি হয়েছে আঙ্কেল?”। পিঙ্কির বাবা উত্তরে বলেন ,”প্রায় এক সপ্তাহের কাছাকাছি হতে এলো পিঙ্কি বাড়ি ফেরেনি ; অনেক খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ মেলেনি”। বলে হাউমাউ করে ফোনের মধ্যে কাঁদতে থাকে।
রিমা এমনকি রিমা পরিবার ভীষণ আঘাত পায় এ খবর শুনে। রিমার বাড়ির লোকেরা বলছে যে সে যদি বলে যে সে কোন হসপিটালে কাজ করে তাহলে ওকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হতো না এটা নিতান্তই পিঙ্কির বোকামো ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে তন্ময় ও মানসিকভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ল পিঙ্কি তার জীবনের প্রথম ভালবাসা তাই তাকে হারাতে সে (তন্ময়) নারাজ। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল যেভাবেই হোক পিঙ্কিকে সে খুঁজে বার করবেই। এর ঠিক দিন দুয়েক পর হসপিটাল থেকে ফোন এলো ইমারজেন্সি কেস আছে যেভাবেই হোক পৌঁছতে হবে না হলে পেসেন্ট কে বাঁচানো অসম্ভব। অগত্যা…. না চাইতেও তন্ময়কে যেতে হল।
সত্যিই ভাগ্যের কি পরিহাস, হসপিটালে গিয়ে পেশেন্টের কেস ফাইল পরতে গিয়ে তন্ময় একটু হকচকিয়ে গেল। ফাইলে সে কার নাম দেখছে!! ‘ স্বাতীলেখা সেন’ ‘ ‘ কিন্তু কে এই স্বতিলেখা?’ তন্ময় দৌঁড়ে গেল পেসেন্ট দেখতে নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য এবং গিয়ে দেখলো তার কৌতূহল সত্যিই।এই পেসেন্ট আর কেউ নয় এ যে তার ভালোবাসা তার প্রথম প্রেম পিঙ্কি।এরপর পিঙ্কির দ্রুত ট্রিমেন্টের ব্যবস্থা নেওয়া হলো special কেস হিসেবে। ডিটেইলস কেস ফাইল পড়তে পড়তে তন্ময় দেখল পিঙ্কি বহুবার ব্লাড দিয়েছে, অতিরিক্ত হারে ব্লাড দেবার কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে ক্রমশ সাথে তীব্র জ্বর কাশি শ্বাসকষ্ট। পালসরেট খুবই কম। তন্ময়ের ডাকে আরো অনেক সিনিয়র ডাক্তার ছুটে আসেন তন্ময়কে সাহায্য করার জন্য। ওনারা জানান ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না আসে তবে সে সারা জীবনের মতো কোমায় চলে যাবে কি যাবে। এ কথা শুনে তন্ময় নিজেকে স্থির রাখতে পারল না। সে তার বোধ বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে এমনকি তার নিজস্ব পরিচয় ও সে ধরে রাখতে পারছে না তন্ময় লক্ষ্য করছে পিঙ্কির শরীরে হার কটা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই এবং ও শরীর ক্রমশ নীল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে এক ফোটা রক্ত যে তার শরীরে নেই । তন্ময় সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত আনার ব্যবস্থা করল যেভাবেই হোক পিঙ্কিকে ফেরাতেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে সেলাই স্টার্ট করে দিল ডাক্তার এর কারণ তার শরীরে খাবারের প্রচুর ঘাটতি ছিল। লোকমুখে যা শোনা গেছে তা হল মাথা ঘুরে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাবার ফলে মাথা ফেটে গিয়ে সেখান থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে লাগল। সে সকল দৃশ্য নাকি অতি মর্মান্তিক ছিল। রক্তশূন্য শরীরে পিঙ্কি পুরো ফুলে গেছে। অবশেষে অনেক চেষ্টার ফলশ্রুতি স্বরূপ ২৪ ঘন্টার মধ্যে পিঙ্কির জ্ঞান ফিরে আসে, জ্ঞান ফিরতেই সে দেখল সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষগুলো ,তার মধ্যে রয়েছে তার প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু রিমা।
রিমা পিঙ্কিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো।বন্ধুকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুজনেই।
অতঃপর তনময় তাদেরকে শান্ত করলো এবং এই আশ্বাস দিল যে পিঙ্কি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। এরপর তন্ময় রিমাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল এবং পিঙ্কির বাবা মাকে বলল “আপনারা এবার পিঙ্কির সাথে কথা বলুন”। পিঙ্কির এই করুণ দশা দেখে পিঙ্কির বাবা-মা দিদি কেউই আর চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। পিঙ্কির বাবা জিজ্ঞেস করল “কেন এমন করলি তুই? কেন নিজেকে আর আমাদেরকে এতো কষ্ট দিলি?”পিঙ্কি চুপ করে রইল এসব কথা বলার সময় এখন নয়। আগে দরকার ওর সুস্থ হয়ে ওঠাটা সবাই ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে তন্ময়
পিঙ্কি কে খেতে দিল, স্যালাইনের জন্য পিংকি খেতেও পারছিল না দেখে তন্ময় পিঙ্কিকে খাইয়ে দিল। সারাদিন সে হসপিটালে পড়ে থাকত আর সময়মতো তাকে ওষুধ দেওয়া তার দেখাশোনা করা ইত্যাদি করে থাকতো। এতে পিঙ্কি খুব ইতস্তত বোধ করতে থাকে। তন্ময়ের এই ব্যবহার দেখে তাকে এতটা যত্ন করে সুস্থ করে তোলার জন্য তন্ময়ের প্রতি তার শ্রদ্ধা জন্মালো এবং ভালোলাগা জন্ম নিল।
যখনই তন্ময় ঘরে ঢুকতো পিঙ্কিকে দেখতে তখনই যেন তার হৃদকম্পন বেড়ে যেত মনের মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হতো। সে নিজেই বুঝতে পারলো যে তন্ময় কে সে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু মনে মনে স্থির করলে একথা কাউকে বললে বা বুঝতে দিলে চলবে না এমনকি রিমাকে তো নয় ই, বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে যে। বামন হয়ে চার ধরার ক্ষমতা তার নেই সাধ থাকলেও সাধ্য নেই যে তার। সে ভাবল যদি সে তন্ময়ের থেকে দূরে থাক থাকে তবে এসব তার মনের মধ্যে আসবে না তাই তার বাবা তাকে দেখতে আসতেই সে (পিঙ্কি) বলল,” বাবা ডাক্তার কে বলো না আমায় যেন তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়, এখানে তোমাদের সবাইকে না দেখতে পেয়ে আমার মন খারাপ হচ্ছে”।
পিংকির বাবা ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলে তন্ময় বলে এখনই ওকে ছুটি দেওয়া সম্ভব নয় ও শরীরের মনে প্রচুর ক্ষত। সারতে সময় লাগবে। তন্ময় দেখল পিংকির একটু হাওয়া বদলের প্রয়োজন। সে যদি পিঙ্কির মনকে অন্য দিকে ডাইভার্ট করতে পারে তবে সে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবে। এর দিন পনেরো পর পিঙ্কির ছুটি হল।
বাড়ি ফিরতেই রিমা প্রত্যেকদিন আসতো একটি করে গোলাপ আর একটা চকোলেট হাতে। পিঙ্কি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রিমা বলে,” মিষ্টি সম্পর্কে সূচনত মিষ্টি দিয়েই করতে হয় তাই না!”
এরপর রিমা ওর বাবার অনুমতি নিয়েই পিঙ্কিকে নিয়ে বেড়াতে যেত সাথে থাকতো তন্ময়ও। এভাবে চলতে চলতে এখন পিঙ্কি অনেকটা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এলে পিঙ্কিকে তন্ময় জিজ্ঞেস করল যে সে এতদিন সবাইকে না বলে কোথায় যেত ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তরে পিঙ্কি বলল বাড়ির অর্থাভাব একটু কমানোর জন্য নিজের এক্সাম ফিস দেবার জন্য টাকা উপায়ের মাধ্যম হিসেবে সে বিভিন্ন হসপিটালে রক্তদান করতো ।
এভাবে সে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করে বাবাকে দেয় সংসার খরচের জন্য আর কিছুটা নেয় ফিস জমা দেওয়ার জন্য এরপর যেদিন এই হসপিটালে এসে রক্ত দেয় সেদিন শরীর ছিল ভীষণ দুর্বল আর তার সাথে প্রচুর জ্বর নিজেকে সামলাতে না পেরে সিটি থেকে পড়ে যায় কিন্তু সে বুঝতে পারে তার মাথায় লেগেছে কিন্তু তার চোখ অন্ধকার হয়ে এল তারপর আর কিছু সে জানে না। এসব কথা বলে পিংকি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে, তন্ময় পিঙ্কির হাত দুটো ধরে বলে “আমি আছি স্বাতীলেখা”(পিঙ্কি), আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি, ভালো লেগেছে তোমার ওই স্নিগ্ধতা, পবিত্রতাকে। মন ছুঁয়েছে তোমার পবিত্রতা। কিন্তু তুমি যে এতো কষ্টের মধ্যে আছো সেটা ভুলেও আমাদেরকে জানতে দাওনি এমনকি তোমার বন্ধুকেও নয়”।
“তোমাদের এই অর্থাভাব আমি দূর করে দেবো কথা দিলাম….কথা দিলাম তোমার দিদির বিয়ের সমস্ত ভার আমার আর কথা দিলাম সারাটা জীবন আমি তোমার পাশে হাতে হাত রেখে পথ চলবো….. পারবে না আমায় গ্রহণ করতে?
পিঙ্কি বলল,’ কিন্তু…… আমি….’ তন্ময় পিঙ্কির ঠোঁট আঙুল দিয়ে থামিয়ে বলে ,”আজ থেকে এখন থেকেতোমার আমার বলে কিছু নেই, যা আমার.. তাই তোমার। ভালোবাসি তোমায়.. ভীষণ ভালোবাসি”।
“আমার অনেক দিনের স্বপ্ন যে আমার বানানো নতুন বাড়িতে তোমায় নিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দুজনে দুজনার কাপে চুমুক দিয়ে শুরু করব আমাদের ভালোবাসার প্রথম ধাপ”।
তন্ময়ের মুখে এই কথা শুনে পিঙ্কি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না দৌঁড়ে গিয়ে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরল। দুজনে দুজনকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করলো এবং পিঙ্কি (স্বাতীলেখা) বলল, “সত্যি তুমি কোনদিন আমায় ছেড়ে দেবে না। এভাবেই শক্ত করে বাঁধনে বেঁধে রাখবে আমায়”। তন্ময় বলল”কথা দিলাম”। এ কথা বলে তন্ময় পিঙ্কির ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করল, পিঙ্কির শরীরে যেন তড়িৎ গতি খেলে গেল।
কুয়াশা মাখা গোলাপ দেখতে যেমন বড়ই মধুর তেমনি তোমার আলিঙ্গন করার মুহূর্ত যেন বড়ই মধুর।
পিংকির জীবনের সমস্ত কুয়াশা ভেদ করে নতুন সূর্যের আলো জাগ্রত হল। এরপর দুজনের বাড়ির সম্মতিতে তন্ময় ও পিঙ্কি ওরফে স্বতিলেখার বিবাহ স্থির হয়। তন্ময় পিঙ্কির সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে দেয় এবং সকলের সামনেই গালে চুম্বন এঁকে দিল। সকল গুরুজনেরা আশীর্বাদ করলো এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা অভিনন্দন জানালো। তন্ময়ের ভালোবাসায় পিঙ্কির জীবন ভরে গেল।
প্রশ্ন জাগে মোর মনে….
তবে নাকি বিয়ের পর ভালোবাসা কমে যায় না তা কিন্তু নয় ভালবাসার সংজ্ঞা ঠিক এরকমই…. যদি তা সত্যিই ভালোবাসা হয়। ‘ ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে যে রাখে’ ।
ভালোবাসার শুভানুধ্যায় প্রেমের গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
জ্বর
ভুবন যায় ভুবন আসে
প্রেম চিরন্তন