পথশিশু অনুগল্প – সঞ্জীব হালদার
সোনারপুর প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের
ধারে এক বছর তিন কি চারের শিশুকে রোজই দেখি মায়ের কোলে করে মার্বেলের মেঝেতে বসে আছে। শিশুটির মা নিত্যযাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে। একদিন শিশুটি দেখি মায়ের পাশে বসে পাউরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে । দেখে মনে হল খিদে ও অপুষ্টিতে ভুগছে। আমি একটি বিস্কুটের প্যাকেট শিশুটির হাতে দিলাম। মাঝেমধ্যে যখনই এদিকে আসি ঐ শিশুটিকে ওখানেই দেখি মায়ের কোলে বসে আছে। আমিও তাকে প্রতিবার কোনও না কোনও খাবার কিনে দিয়ে যাই। সেবার দূর্গা পূজোয় আমার এক সহকর্মী শিশুটিকে নতুন জামা দিয়েছিল। এভাবে শিশুটির প্রতি কেমন যেন মায়া জন্মে গেল এক বছরের মধ্যে। আরও এক দুমাস পর হঠাৎ করে ঐ প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের ধারেকাছে শিশুটিকে আর দেখা গেল না। আমি আরও বার দুয়েক ঐ স্থানে আসলাম কিন্তু কোনও খোঁজ পেলাম না শিশুটির। আশপাশের দোকানীরাও কোনও খোঁজ দিতে পারল না। একরাতে দুঃস্বপ্নে দেখি প্লাটফর্মের অদূরেই এক পার্কের পাশের রাস্তায় শিশুটি না খেতে পেয়ে মারা গেছে । আমি ঘুমের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠি, ” অসম্ভব”
বছর দুই ঐ প্লাটফর্মে আমার যাওয়া হয়ে ওঠে না। একদিন আমার ঐ সহকর্মীর আমন্ত্রণে আবার সোনারপুর যাওয়া হল। সেই টিকিট কাউন্টারের ধারে নতুন এক শিশু ও তার মা বসে আছে ভিক্ষা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। আমি একটি পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে যখনই হাত বাড়িয়ে দিতে যাব তখনই ছেঁড়া প্যান্ট পরা খালি পায়ে বছর ছয়েকের এক ছেলে এসে আমার হাতটা ধরে বলল,
“কাকু ভালো আছো?”
“অনেক দিন পরে এলে?
আমায় বিস্কুট দেবে না?”
আমি হতভম্ব হয়ে মৃদু কন্ঠে বললাম,
“তুই কি করে জানলি আমি বিস্কুট দেবো?” ছেলেটি শুধু বলল, “আমি জানি ।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম , ” তুই কোথায় থাকিস ?” সে বলল , “ঐ যে পার্কের ধারে ঝুপড়িতে থাকি কাকু।”
আমি বিষণ্ণ মনে চেয়ে রইলাম প্লাটফর্মের গাড়িটার দিকে। ছেলেটি কখন যেন চলে গেছে। আমাদের দেশে এরকম পথশিশু অনেক আছে।
পথশিশু অনুগল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না