আলো ও আঁধার ছোট গল্প – পিনাকী দত্ত
সৌম্য একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্কের বেশ উচ্চপদে রয়েছে। ও আজ প্রাণপণে চেয়েছিল বাড়ি ফিরতে। দু সপ্তাহ হয়ে গেল বাড়ি যেতে পারেনি। মা খুবই অসুস্থ। এই যায় কি সেই যায়।
এর আগে কোনরকমে দুদিনের জন্য ছুটি ম্যানেজ করে ও বাড়ি গিয়েছিল। তখনই দুজন আয়ার ব্যবস্থা করে এসেছে। কারণ নিজের স্ত্রী মণিদীপাকে ও ভালো করেই চেনে। ও মায়ের জন্য কিস্যু করবে না। যদিও মুখে অবশ্য সেকথা বলেনি।
আয়া দুজনকে অবশ্য খুবই ভালো পেয়েছে। পয়সা বেশি চার্জ করেনি। তাই মণি বাধা দেয়নি।
নইলে মণি যা হিসেবি। কিছুতেই আয়া রাখতে দিত না। রাতের আয়াটিকে যেহেতু সন্ধ্যা সন্ধ্যা করে চলে আসতে বলা হয়েছে সেহেতু সে ডিনারটা ডিমাণ্ড করেছে।
মণি গাইগুই করলে সৌম্য বুঝিয়েছিল, আয়া যত দেরি করে আসবে ততই কিন্ত তোমার রিস্ক। কারণ এর মধ্যে মা পায়খানা পেচ্ছাপ করলে তোমাকেই পরিষ্কার করতে হবে।
সঙ্গে এও বলেছিল, বাইরের লোক খাবে। তাই একটু রান্নাবান্না কোরো।
সৌম্যর মনে পড়ে, প্রথম যখন ওদের বিয়ে হল তখন যেখানেই পোস্টিং হত ও মণিকে সঙ্গে নিয়ে যেত।
আসলে মা-ই একরকম জোর করে পাঠিয়ে দিত। মা বলত,’বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর দূরে থাকা একদমই ঠিক নয়।’
সকালে দুজনে মিলে বাজারে যেত। টাটকা দেখে শাক, সবজি, মাছ,ফল কিনত।
কিন্তু মণি এত দরদাম করত যে, তা দেখে সৌম্য লজ্জায় পড়ে যেত।
একদিন তো চাল কিনতে গিয়ে এক কাণ্ডই ঘটাল।
দোকানদার কেজিতে একপয়সাও কমাবে না।
মণিও ছাড়বে না। শেষে চালের টেম্পার ঠিক আছে কি না সেটা দেখার অছিলায় মণি কিছুটা চাল মুখে পুরে দিয়ে দিব্যি চিবুতে লাগল।
সৌম্য উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, আরে পেট ব্যথা করবে তো ?
মণি হেসে বলল, চাল খেলাম কেন জান ? শালার দোকানদার এক পয়সাও কমালো না। তাই ভাবলাম চাল খেয়ে যতটা সম্ভব ওর লস করা যায়।
সৌম্য স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।
সৌম্য একটা সিগারেট ধরালো। ঘড়িতে দেখল দশটা ছুঁই-ছুঁই। অফিস থেকে আসতেই লেট হয়ে গেল । শনিবার, তবু নিস্তার নেই। কাজের এত প্রেসার যে,সৌম্য সারাদিনে বাড়িতে একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পায়নি । তাই বাসায় ফিরে সিগারেটটা শেষ করেই ছেলেকে ভিডিওকল করল।
ফোনের গোটা স্ক্রিন জুড়ে তাতানের হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও ইয়াব্বড় একটা মুরগির লেগপিস ভেসে উঠল। সৌম্য একটু অবাকই হলো।
সৌম্য ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল, বেটা তুমি আজ চিকেন খাচ্ছ? আজ তো রোববার নয় ?
মণি সংসারের হাল ধরেই ঘোষণা করেছিল -‘সপ্তাহে একদিনই চিকেন হবে আর সেটা রবিবার।’
এতবছরে একদিনও এর অন্যথা হয়নি মানে অন্যথা হতে দেয়নি মণি।
তাতানের বয়স সাত বছর হলেও জিভের জড়তা এখনো যায়নি। ও আধো আধো ভাবে বলতে লাগল –
‘এখন থেকে লোদ থনিবাল লাতে কলে তিকেন হবে। মা বলেতে।’
কিন্তু কেন রে ?
‘তালে লাতেল বেলা আয়ামাতিকে আল তিকেন দিতে হবে না। আয়ামাতি থনিবাল লিলামিত থায়।
আল আয়ামাতি থনিবাল আমাদেল বালিতে থাবে না বলেতে।’
কেন রে ?
‘মা তিকেন লালনা কলে যে।
দানো বাবা, আয়ামাতির কতা থুনে মা থুব থুতি হয়েতে।’
ধপ করে সোফার উপর বসে পড়ল সৌম্য। গোটা শহরটা নিওন আলোয় ভেসে যাচ্ছে। ওর নিজের ঘরেও আলোর বন্যা।
সৌম্যর একটাই আফসোস ।
ইস্ ! মানব মনের অন্ধকার দূর করার জন্যও যদি এরকম একটা নিওন আলোর খোঁজ পাওয়া যেত।
আলো ও আঁধার ছোট গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না