গল্প হলেও সত্যি ছোট গল্প – বিদ্যুৎ মিশ্র
বিশ্বরূপ বাবু খুব বড়ো ডিগ্রিধারী ডাক্তার না হলেও গ্রামের মানুষের কাছে তিনি খুব কাছের মানুষ।গ্রামের গরিব মানুষ যখনি কিছু অসুবিধে হয় তার কাছেই ছুটে আসে।তিনিও যথা সাধ্য সাহায্য করেন।শুধু অসুস্থ বলে নয় তিনি অর্থ দিয়েও গ্রামের গরীব মানুষদের সাহায্য করে থাকেন।তাই এক কথায় সবাই তাঁকে খুব সমীহ ও সন্মান করে।
এমনি একবার গ্রামে হঠাৎ করে কলেরার উপদ্রোপ দেখা দিলো।তখন বর্ষাকাল, রাস্তা ঘাট জলে থই থই।যোগযোগ বিছিণ্ন হয়ে গেছে।গ্রামের মানুষ প্রায় মারা যেতে লাগলো। সবাই হাজির হলো বিশ্বরূপ ডাক্তারের কাছে। “একটা উপায় বার করুন।যে করেই হোক।” বিশ্বরূপ বাবু নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো, কিন্তু এক সময় ঔষধের অভাব দেখা দিলো।সদর শহরে যেতে হবে ঔষধ আনার জন্য। রাস্তা ঠিক নেই, কিভাবে শহর যাবেন তাই নিয়ে সমস্যা।
একদিন সক্কাল সক্কাল তিনি বাক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন শহরের উদ্দেশ্যে।সারাদিন কাজ সেরে যখন ফিরছেন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো। তার মাঝে এক দুই পশলা বৃষ্টিও হয়ে গেছে। সাথে বড়ো বক্সে ঔষধ।সেটাই মাথায় তুলে তিনি পায়ে হেঁটে আসছেন।
গ্রামে ঢোকার আগে একটা বেনেদের বস্তি আছে,তার পাশেই শ্মশান।বিশ্বরূপ বাবু দেখতে পেলেন সেখানে চিতা জ্বলছে।বেশ কিছু মানুষের জটলা। তিনি সোজা নিজের বাড়ির দিকে পা চালালেন।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।
বাড়ির কাছে এসে দেখলেন, রাখোহরি দরজার কাছে দাড়িয়ে। জিগ্গেস করার আগেই বিশ্বরূপ বাবুর পা ধরে রাখোহরি কেঁদে আকুল।
-বাবু তাড়াতাড়ি চলেন, আমার মেয়েটার কলেরা ধরেছে।এখুনি না গেলে বাঁচানো যাবে না।
বিশ্বরূপ বাবু তখুনি ব্যাগটা বাড়ির ভেতরে রেখে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র নিয়ে রাখোহরির সাথে বেরিয়ে পড়লেন।
বাড়ির মধ্যে দেখে অবাক হলেন একটি বছর আটেকের একটি মেয়ে ভীষণ রুগ্ন ও সত্যিই আশংকা জনক অবস্থায় রয়েছে। তিনি তাড়াতাড়ি চিকিত্সা শুরু করে দিলেন।
– একটু গরম জল দাও। বলে তাকিয়ে দেখেন রাখোহরি নেই।খুব অদ্ভুত।সারা রাস্তা সাথেই এলো ।তারপরে কোথায় গায়েব হয়ে গেছে। অগত্যা তিনি নিজেই চুলো জ্বেলে জল গরম করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি চোখ তুলে চেয়ে তাকালো।
বিশ্বরূপ বাবু পকেট থেকে ও আর এস পাওডার বার করে বললো ।
-এই নাও জলের সাথে গুলে খাবে।
ঠিক সেই সময় গ্রামের বেশ কিছু লোক এসে বাড়িতে ঢুকল।ওরা ডাক্তার বাবুকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেছে।
-আপনি কি করে জানলেন। রাখোহরি আর ওর মেয়ে দুজনেই খুব অসুস্থ।
-আমাকে রাখোহরি ডেকে আনলো এখুনি ।
-সেটা কি করে হবে?
– কেনো ??
– সারাদিন কলেরায় ভুগে বিকেলে সে মারা গেছে।ওকে তো আমরা এখুনি জ্বালিয়ে নিয়ে আসছি।
শেষ কথা টা শোনার পর বিশ্বরূপ সেখানেই বসে পড়লেন।
-তোমরা ভুল বলছো। আমি তো রাখো হরির সাথেই এলাম। সেই আমাকে বললো, তার মেয়ে খুব অসুস্থ। এখুনি না গেলে বাঁচানো যাবে না। আর সত্যি তাই।এখুনি না এলে হয়তো অঘটন ঘটে যেতে পারত।
তখন আর কারো বুঝতে বাকি রইলো না মৃত্যুর পরেও নিজের মেয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য রাখোহরি ডাক্তারের কাছে ছুটে গেছিলো। সবাই নিশ্চুপ।শুধু ঘরের এক কোনে প্রদীপের আলো টা ধিকি ধিকি জ্বলছে।
গল্প হলেও সত্যি ছোট গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
শ্রাবণ সন্ধ্যা
শাস্তি
তিতির কান্না