স্বপ্নভঙ্গ সায়েন্স ফিকশন গল্প – শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
ধীরে ধীরে চোখ খুলল কস্তুরী। মনে হল কেউ মাথায় বিলি কাটছে। কী আরাম! কস্তুরী চোখ মেলতেই থেমে গেল। চারপাশে কোমল আলো। মাথার ওপর ছাদজুড়ে ছড়িয়ে আছে আলোকবৃত্ত, কিন্তু চোখে লাগছে না। মৃদু শীতল বাতাস গায়ে লাগলেও শীত করছে না। ভারী মায়াবী আলো। দিন না রাত বুঝতে পারছে না। এক অনাবিল ভালোলাগা ও প্রশান্তির স্বর্গীয় অনুভূতি। একটা শব্দও হচ্ছে একটানা।
ডান পাশে চোখে পড়ল অসমতল দেওয়াল বেয়ে জলস্রোত নেমেছে। বুঝতে পারল তারই শব্দ। কিন্তু একটা যান্ত্রিক আওয়াজও যেন মিশে রয়েছে। পাশের একটা দেওয়াল জুড়ে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত নানা যন্ত্রপাতি। জলের তোড়ে একটা চাকাও ঘুরছে। পায়ের দিকে তাকাতে চোখে পড়ল বেশকিছু ছোট-বড়ো-মাঝারি ঘড়িযুক্ত ও ছোটছোট লাল-সবুজ আলো জ্বলা ছাইরঙা মস্ত ধাতব বাক্স, আর তার পাশে অজস্র তার ও দুটো মনিটর। এই প্রকাণ্ড যান্ত্রিক ব্যবস্থা মেঝে থেকে উঠে যেন সিলিং ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। ওটা যে একটা বৈদ্যুতিক ইউনিট তা স্পষ্ট। বাঁদিকে দেওয়ালের শেষে চোখে পড়ল একটা ঈষদালোকিত পথ বেরিয়ে গেছে। পাল্লাহীন দরজার আভাস পথের শুরুতে। আরও বাঁয়ে তাকাতে কিছু জামাকাপড় টাঙানো দড়ি, রড, আলমারি, তাক ও টেবিলে রাখা বাসনপত্র চোখে পড়ল। এদেইকের দেওয়ালটাও বাঁকানো অবতল, তাই এতকিছু কুলিয়ে গেছে। এগুলোর ওপর অসমান দেওয়ালটা ওপরে উঠে সিলিং-এর মস্ত বৃত্তাকার আলো পরিধি বরাবর স্পর্শ করেছে।
বলছে বটে সিলিং। কিন্তু এটা ঘর না কী, তাই তো বোঝা যাচ্ছে না। এতগুলো অসমান দেওয়াল! বাঁদিকের সাংসারিক জিনিষপত্র ছাড়া প্রতিটি দেওয়াল জুড়েই নানা যন্ত্রপাতি যেন পাথর ফুঁড়ে চেয়ে আছে। তারই মধ্যে কিছু ফার্ন জাতীয় গাছ, নাম না জানা ফুল আর সরুসরু জলের ধারা এই যান্ত্রিক কক্ষকে ভারী চমৎকার সাজিয়ে রেখেছে। কস্তুরীর মনে পড়ল, সে স্বপ্নে একটা গুহায় ঢুকে পড়েছিল। এখানটা তো সেই গুহারই আদলে। সেই স্বপ্ন কি ভাঙেনি? মাঝে এক অন্ধকার বিরতি শুধু বিস্মৃত।
একটি ট্যাঁপাটোঁপা মিষ্টিমুখো মেয়ে খাবারের ট্রে নিয়ে কস্তুরীর পাশে রাখল। “ওঠো, খেয়ে নাও। আমি নুডলস্ করেছি। কাল বাঁধাকপি সেদ্ধ তোমার ভালো লাগেনি মনে হল।” ইংরেজিতে বলল কথাগুলো। মুখটা মনে হল স্বপ্নে দেখেছিল।
মাথার পেছন থেকে আরেক মহিলা এসে গামছা ও পোশাক এগিয়ে দিয়ে বললেন, “যদি ভারমুক্ত হতে হয় এই দিকে যাও। একেবারে স্নান সেরে পোশাক বদলে আসতে পারো। খাবার ঠাণ্ডা হবে না।” এই কি চুলে আদুরে বিলি কাটছিল? একেও তো স্বপ্নে দেখল একটু আগে।
হাতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে কস্তুরী দেখল সে কোনও বিছানায় নয়, শুয়ে আছে মেঝের চেয়ে একটু উঁচু একটা সমতল পাথরে হাতে বোনা বেতের চাটাইয়ের ওপর। মাথার নীচে বালিশের পরিবর্তে ভাঁজ করা স্থানীয় তাঁতেবোনা চাদর। বসেই অনুভব করল ওর খিদে ও প্রাকৃতিক ডাক দুটোই পেয়েছে। গ্রহণের আগে বর্জন প্রয়োজন।
“প্রিসিলা, টেক হার টু বাথ। অ্যান্ড জিং, কীপ আওয়ার ফুড ইন রে। শি উইল হ্যাভ লাঞ্চ টুগেদার উইথ আস।” কৃষ্ণবর্ণা এক প্রৌঢ়া বললেন। এঁকেও স্বপ্নে দেখেছে।
প্রিসিলা নামটাও স্বপ্নেই শুনেছে মনে হল। একটা উচ্চালোকিত কুলুঙ্গির মধ্যে সবার খাবার রেখে দিল জিং। রশ্মিতে রাখা বলতে সম্ভবত এটাই বোঝানো হয়েছে। প্রিসিলাকে অনুসরণ করে ডানপাশের ঝরনা বওয়া ও মাথার ফুল-পাতা ছাওয়া দেওয়ালের মাঝে আরেকটা ভাস্বর ও প্রশস্ত পাল্লাহীন দ্বারপথ পেরিয়ে যেখানে পৌঁছোল, মনে হল যেন স্বর্গের উদ্যান। মাথার অনেক ওপর গুহামুখ থেকে সূর্যের আলো কয়েকটা দর্পণে ঠোক্কর খেয়ে ঝাঁপিয়ে নেমে পুরো জায়গাটা আলোয় স্নান করিয়ে দিচ্ছে। ক’টা বাজে কে জানে? এই প্রথম একটা জাগতিক প্রশ্ন মাথায় এল।
ওপারে ঝরনার নীচের চাকা বসানো ছোট গর্তের মূল অংশ এপারে এসে দেখা গেল বিরাট জলাধার। তার ওপর শত-শত ধারার জলপ্রপাত। এরই কিছুটা গুহার ফোকর দিয়ে ওপাশের দেওয়াল বেয়েও নেমে গর্তে জমেছে। এই খরস্রোতা প্রপাতের নীচে আরও দুটো ঘুরন্ত চাকা।
“টারবাইন?” শব্দটা আপনা থেকেই খুঁজে পেল কস্তুরী। তার মানে এটা নির্ঘাৎ একটা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
“সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎও আছে। চারদিকে যে আলো দেখছ, পুরোটাই আমাদের নিজস্ব ঘরোয়া উৎপাদনে চলছে।” প্রিসিলা যেন কস্তুরীর অসম্পূর্ণ ভাবনার উত্তরে বলল।
শুধু কি জল আর সূর্য? আরও কোনও অজানা শক্তির কথা, কিছু যন্ত্রপাতি ও একটা অতল গহ্বরের ছবি আবছা ভেসে উঠল কস্তুরীর মনে সদ্য ভাঙা স্বপ্নের স্মৃতি থেকে। সত্যিই স্বপ্ন তো, নাকি সত্যি?
“আর কোনও শক্তি আমরা ঘরোয়া কাজে লাগাই না।”
কস্তুরীর মন কি প্রিসিলা পড়ে ফেলছে নাকি এমনিই বলছে যা ওর ভাবনার সঙ্গে দৈবাৎ মিলে যাচ্ছে?
জলাধারকে বাঁয়ে রেখে সোজা এগিয়ে যেতেই আরেকটি ধারা ও তার নীচের বহতা জলে উপচানো গর্ত যেন প্রাকৃতিক শাওয়ার আর বাথটাব। তার ডানপাশে একটু তফাতে উঁচু পাথরের বেদীর ওপর নুড়ি বসিয়ে এমন আকৃতি দেওয়া আছে, যে সেটাকেও ইন্ডো-ইওরোপিয়ান কমোডের প্রতিনিধি বলে চিনে নিতে অসুবিধা হল না।
দুটি খাঁজের মাঝে ঝুলন্ত একটা মোটা শেকড়ের ওপর শুকনো জামা ও গামছা ঝুলিয়ে রেখে প্রিসিলা বলল, “আশাকরি কিছু বোঝাতে হবে না। ওখানে সাবান, শ্যাম্পু, মাটি সবই আছে। দরকার মতো ব্যবহার কোরো।”
কস্তুরী বেগ ভুলে মোহিত হয়ে দেখতে লাগল। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে রক-গার্ডেন প্রায়ই দেখা যায়। এ যেন স্নানঘরে তার আরও শিল্পিত সংস্করণ।
“উই ফলো ইন্ডিয়ান পার্সোনাল হাইজিন হিয়ার। অ্যান্ড ডোন্ট ওয়ারি। নান উইল কাম হেয়ার আনটিল ইউ ফিনিশ। বাট ডোন্ট ডিলে। উই আর ওয়েটিং ফর ইউ ইন লাঞ্চ।” প্রিসিলা চলে গেল।
খেতে বসে এক নীলনয়না মধ্য চল্লিশের স্বর্ণকেশীর সঙ্গে চোখাচোখি হতেই যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কস্তুরীর স্বপ্নালু ভালোলাগার ঘোর খানখান হয়ে গেল। অনুভব করল সে স্বপ্ন দেখছে না, যে মুখগুলো স্বপ্নদৃষ্ট মনে হচ্ছিল, তারা সকলেই বাস্তব। আর সে নিজে এদের মাঝখানে কার্যত বন্দী।
মনে পড়ে গেল, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের খনি এলাকায় জনশ্রুতি অনুযায়ী ‘দানোগুহা’য় স্থানীয় মেয়েদের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য ভেদ করতে এসেছিল সে। এখন নিজেই সেই দুষ্টচক্রে হারিয়ে যেতে বসেছে। নারীপাচারের কিনারা করা কাস্টমস্ অফিসারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু মানুষ হিসাবে অনেকে দায় এড়াতে পারে না। বুকের ভেতরটা খালি হয়ে গেল। তার সার্ভিস রিভলভার, মোবাইল, বাঁশের লাঠি – সব কোথায় গেল? কাউকে খবর দিতে পারবে না। কী যেন নাম বলেছিল এরা? হ্যাঁ, ‘প্রোজেক্ট উমোজা’। শেষে প্রোজেক্ট উমোজা নামের র্যাকেটে চালান হতে চলেছে কাস্টমস্ অফিসার কস্তুরী দাশগুপ্ত!
বলির পশুকে যেমন ভালোমন্দ খাওয়ানো হয়, সাজানো হয়, ফাঁসির আসামীকে যেমন শেষ ইচ্ছা পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়, তেমনি কস্তুরীকেও হয়তো জাহান্নামে পাচারের আগে যত্ন-আত্তির করা হচ্ছে। আচ্ছা তাকে কোনও ড্রাগের নেশায় ডুবিয়ে কল্পসুখে সব ভুলিয়ে রাখেনি তো? ঐ নীলনয়না নাকি ইউক্রেনীয় বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী না ছাই! এই খাণ্ডারনীই কস্তুরীর হাত খপ করে ধরে এই মরণগুহা থেকে পালাতে বাধা দিয়েছিল। নাম বলেছিল নাতালিয়া। তারপর “ইউ মে গো নাও”বলে হাত ছাড়তেই সব অন্ধকার।
“কী হল কস্তুরী? খাওয়া শুরু করো। তোমার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম।” দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চারণে বাংলায় বললেন আগের কৃষ্ণকায় প্রৌঢ়া। তিনিই এই প্রকল্পের প্রধান; অন্তত তেমনটাই বলা হয়েছিল কস্তুরীকে জ্ঞান হারানোর আগে।
“স্নান করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলেছ। ডিলেইড লাঞ্চ করছি আজ। আমরা সবাই কিন্তু খুব ডিসিপ্লিন মেনে চলি। অনেক কাজ আছে, উমোজায় যেতে হলে স্বাস্থ্য পারফেক্ট রাখা দরকার যাতে ডিকোডিং-এর সময় কোনও ডিফরমেশন না হয়।” পরিষ্কার বাংলায় বলল এক তরুণী। বেশ টরটরে। পুরুষমানুষের ওপর বেজায় খাপ্পা ভঙ্গিতে অনেককিছু বলছিল কাল। অবশ্য কাল না পরশু সময়টা গুলিয়ে গেছে। কিন্তু এই মনোভাব নিয়ে কি নারীপাচারের সহায়ক হতে পারে কেউ? নাকি সবটাই অভিনয় ছিল কস্তুরীকে বশীভূত করার জন্য?
“অন্তরা, ও আজ প্রথম। গিভ হার টাইম টু অ্যাডজাস্ট।” এক প্রৌঢ়া বললেন।
কস্তুরীর খাওয়া নিরাপদ মনে হল না। বলল, “আমার খেতে ইচ্ছা করছে না। সময়ও নেই। আমাকে যেতে হবে। অনেক কাজ আছে। সবাই খোঁজাখুঁজি করছে।” বলতে গিয়ে খালি পেট মোচড় দিয়ে উঠল।
“পার্বতী আম্মা তোমাকে অ্যাডজাস্ট করতে বলেছেন। নির্ভয়ে খেয়ে নাও। জিং খুব ভালো রান্না করে। রশ্মি থেকে বাইরে আনা হয়েছে সদ্য, গরম গরম থাই নুডলস্…।” বললেন এক শ্বেতাঙ্গ মধ্যবয়সী মহিলা। ভারী স্নিগ্ধদর্শন। মাথার চুল প্রিসিলার মতো সোনালি নয়, ঘন কালচে বাদামী।
এরা সকলেই কি মনের কথা টের পায়? কস্তুরী যে খেতে ভরসা পাচ্ছে না সেটা বুঝেই কি নির্ভয়ে খেতে বলা? এর নাম সম্ভবত স্টেলা। একে একে সবার ঘোষিত নামই মনে পড়ল। পার্বতী কন্নড়, অন্তরা বাঙালী, বৃন্দা শ্রীলঙ্কান, স্টেলা স্প্যানিশ, জিং থাই, নাতালিয়া ইউক্রেনীয় আর প্রিসিলা মার্কিনী। ভিনগ্রহে যাওয়ার মহাকর্ষ সুড়ঙ্গের গালগল্প যদি মিথ্যেও হয়, তবু গুহার ভেতরে এই স্থাপত্য ও যন্ত্রের ময়দানবীয় আয়োজন, আস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র, এতএত কম্পিউটার, আর গুহার মধ্যেকার অতলান্ত খনি বা গহ্বর ঘিরে নিজেদের গল্পের হলোগ্রামিক ইন্দ্রজাল রচনা – এতকিছু যাঁরা পারেন তাঁরা যে বিজ্ঞানী, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভালো মানুষ কিনা সন্দেহ আছে। গ্রহান্তরে মেয়েদের ভালো রাখার নাম করে পরিকল্পিত শয়তানি করছে না পাগলামো, সেটাও পরিষ্কার নয়।
“খাবারে কিছু মেশানো নেই কস্তুরী। এই দেখো, আমরা সবাই খাচ্ছি। ওকে, ইউ ক্যান সোয়াপ ইউর বউল উইথ এনিওয়ান ওয়ান অফ আস।” টরটরি বলল নরম গলায়।
প্রবল খিদে পেয়েছে চোখ চাওয়ার পর থেকেই। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে স্নানের পর তা তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে। সামনে থাই নুডলস্ স্যুপের সম্মোহনী হাতছানি। কস্তুরী অন্যদের খেতে দেখে নিজের বাটি তুলে নিল। জিং এতক্ষণ গোরুচোরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার প্রসন্ন মুখে তার পাশে বসে খেতে শুরু করল।
কস্তুরী বলা যায় গোগ্রাসেই খেয়ে ফেলল সবটা। কয়েক রকম ফল দিয়ে স্যালাড বানানো আছে। সেটাও পেটে চালান করে থামল। তারপর বলল, “ফুড ওয়াজ় এক্সেলেন্ট। খিদেও পেয়েছিল জবরদস্ত। কিন্তু এবার আমায় যেতে হবে। আমাকে প্লীজ় বিদায় দিন। আমার মোবাইল আর রিভলভার ফেরত দিন। যদি মনে করেন বুলেটগুলো খুলে নিতে পারেন। কিন্তু সার্ভিস রিভলভার খোয়া গেলে আমার চাকরি থাকবে না।”
“নো ওয়ে। ইউ আর নাও আ পার্ট অফ আওয়ার প্রোজেক্ট।” নাতালিয়ার কাঠকাঠ মন্তব্য।
“হাও ক্যান ইউ ডিসাইড দ্যাট উইদাউট মাই কনসেন্ট?” কস্তুরী রেগে গেল।
“উই নীড মেনি মোর স্ট্রং অ্যান্ড কারেজাস লেডিজ় লাইক ইউ।” প্রিসিলা উত্তর দিলেন।
“বাট আই ডোন্ট ওয়ানট্ টু ইউজ় মাই কারেজ হেয়ার। মাই …”
স্টেলা স্নিগ্ধ কণ্ঠে যোগ করলেন, “বিসাইডস্ উই ক্যাননট রিস্ক আওয়ার সিক্রসি। ইজ়নট্ ইট? উই হ্যাভন্ট ইনভাইটেড অর ট্র্যাপড্ ইউ টু দিস প্লেস। হ্যাভ উই?”
পার্বতী বললেন, “তুমি আমাদের কাজকর্ম দেখে আগে কনফিডেন্স পাও, আমাদেরও বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠো। তারপর অবশ্যই নিজের কাজে যেতে পারবে। তোমার মনে এখনও ছাড়া পেলেই লোক-লস্কর ডেকে এনে আমাদের ধরিয়ে দেওয়ার বাসনা। তাতে যে হিতে বিপরীত সেটা এখনও বুঝতে পারছ না। অন্তত সেটুকু আগে বোঝো।”
কস্তুরী এবার ভেঙে পড়ল, “আমি কথা দিচ্ছি, আই উইল কিপ মাই মাউথ শাট। আপনারা নিজেদের কাজ করুন, আমাকে আমার কাজে যেতে দিন। আমার কাজ কয়লার চোরাচালানের হদিশ দেওয়া। সেটাই করব। আর কোনো ব্যাপারে প্রোঅ্যাক্টিভ হয়ে মাথা ঘামাব না। পৃথিবীতে অজস্র মেয়ে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে, আমার কী? আমি…”
তর্ক করে লাভ নেই। স্বর্গীয় পরিবেশটা বন্দীশালা মনে হল। অসহায় গলায় বলল, “আপনাদের বুঝতে হলে তো আমাকে এখানেই থাকতে হবে, অন্য কোথাও পাঠালে চলবে না।”
“তোমার সময়ও হয়নি। টাইম-স্পেস ট্রাভেল করা মুখের কথা নয়। শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি দরকার। যারা না জেনে অ্যাক্সিডেন্টালি পৌঁছে গেছে, গেছে। কিন্তু অনিচ্ছা নিয়ে গেলে এনকোডিং-এর পর ওখানে মস্তিষ্কের সমস্যা হতে পারে। শরীরও অ্যাফেকটেড হতে পারে।” পার্বতী বললেন।
কস্তুরীর বুকে চেপে থাকা পাথরটা যেন বারো আনা হালকা হয়ে গেল – সে পাচার হচ্ছে না। এরপর আস্থাভাজন হয়ে উঠে ঠিক কোনও ফাঁকে পালাবে।
বৃন্দা বললেন, “বাই দ্যাট টাইম এখানে কিছু কাজ শেখো। আমরা দৈনন্দিন ঘরের কাজগুলো ভাগ করে নিয়েছি। তোমাকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। তুমি রান্নার বাসন ধোয়া আর ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ পারবে তো?”
বুকের পাথরটা আবার ভারী হয়ে এল। একজন কাস্টমস্ অফিসারকে দিয়ে এরা ঝিয়ের কাজ করাতে চায়? ইস্! ডাক্তারি পড়া ছেড়ে এই চাকরি করছে। মা-বাবা সবসময় ওকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। উত্তর-পূর্ব ভারতে সেনার বিশেষ অধিকার, তার অপব্যবহার, ক্রমাগত অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নবাদী কার্যকলাপ – সব মিলিয়ে জটিল গোলকধাঁধা। তার ওপর সার্বিক বাঙালি বিদ্বেষ তো আছেই যাতে দু’ হাজার উনিশের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পেট্রলাহূতি দিয়েছে। মায়ের মনে দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দেওয়ার এত ভয়ানক পরিণতি? কিন্তু শাস্তি তো মা-বাবাই পাচ্ছেন। মেয়ের খবর না পেলে তো… । অর্কও কি ফোন করেছে এর মধ্যে?
“বাই দ্য ওয়ে, পালানোর চিন্তা করে লাভ নেই।”
বৃন্দা মনের কথা টের পাওয়াতে আর অবাক হল না কস্তুরী। এরা সবাই চিন্তা পড়তে পারে। সে যদি অর্কদীপের সঙ্গে ঘনিষ্টতা কিংবা উল্টোপাল্টা কিছু ভাবে, তাহলেও এরা টের পেয়ে যাবে! ছিছি! মনের চিন্তারও গোপনীয়তা থাকবে না?
“আমরা শুধু আমাদের সম্পর্কে সামনের মানুষটা কী ভাবছে, সেটুকুই অনুমান করতে পারি। সুতরাং সেদিকে ডোন্ট্ ওয়ারি। বি ইউথ আস, ফলো আওয়ার ডিসিপ্লিন, তুমিও পারবে একদিন।”
কস্তুরী লজ্জায় আরক্ত হয়ে উঠল। বলল, “আমার মা-বাবা দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে যাবে। তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমার মোবাইলটা দিন। আপনাদের সামনেই কথা বলব।”
অন্তরা বলল, “এই গুহায় মোবাইল টাওয়ার কাজ করে না। উই আর ইউজ় আ ডিফারেন্ট সিগনালিং সিস্টেম ইউটিলাজ়িং ডার্ক এনার্জি টু কমিউনিকেট ইউথ দ্য রেস্ট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। আম্মা পারমিশন দিলে কথা বলিয়ে দেব। তোমার নম্বরটা দিও। সেই নম্বর থেকেই ফোন পাবেন ওনারা।”
মাথার ওপর বৃত্তাকার আলো ক্রমশ ম্লান হয়ে নিভেই আবার ভাস্বর হয়ে উঠল। জ্বলে উঠল আরও কিছু বৈদ্যুতিক আলো। গুহার মধ্যেও টের পাওয়া গেল সূর্যাস্ত হতে চলল। প্রশ্ন করে সংক্ষেপে জানল, গুহার ব্যবহৃত অংশে আকাশে দিনের আলো থাকতে সেটাকেই সরাসরি বা পেরিস্কোপের প্রতিফলিত করে প্রবেশের পথ করে যথাসম্ভব ব্যবহার করা হয়। বাকি প্রয়োজন সৌরবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুতে মেটে।
আচ্ছা, সৌরবিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেলগুলো কোথায় বসিয়েছে? কারও চোখে পড়ে না? আর এত অয়্যারিং ফিটিং সাতজন মহিলা মিলেই বা করল কীভাবে? তাদের মধ্যে অন্তরা ও জিং ছাড়া বাকিরা তো চল্লিশোর্ধ্ব। অন্তরার প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন প্রিসিলা নিজের চলভাষে কাউকে ফোন করে প্রযুক্তিবিদ ও কারিগরদের দলকে আসতে বলল যন্ত্রপাতি মেরামতি ও নতুন কিছু স্থাপনের জন্য। এদের জাল তাহলে ভালোই ব্যাপক।
========== এরা একই প্রকোষ্ঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শোয়, একই ঘরে খায়, পারলে স্নানও একসাথে সেরে নেয়, সংসারের কাজ করে পালা করে। যদিও গুহার প্রতিটি খানাখন্দেই প্রযুক্তির ছোঁয়া, তবু অতল গহ্বর সংলগ্ন প্রকাণ্ড মনিটর ও ডিশ অ্যান্টেনা বসানো প্রশস্ত জায়গাটাই মূল গবেষণাগার বোঝা যায়। সেখানে সকলেই যায় — কখনও একসাথে, কখনও যে যার মতো। কস্তুরীকে যখন প্রোজেক্ট উমোজার অংশ হতেই হয়েছে, তখন সে বিজ্ঞানীদের কাজের মেয়ে হয়ে থাকবে কেন, সতীর্থ হবে। কিন্তু সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও এইসব যন্ত্রপাতি বোঝে না। শুধু এইটুকু বুঝেছে, উমোজা গ্রহের অভিকর্ষ বল পৃথিবীর ষাট শতাংশ বলে সেখানে বেশ উঁচু পর্যন্ত লাফিয়ে ওঠা যায়, ওপর থেকে পড়লেও ততটা লাগে না, হাঁটাচলা একটু ভাসা-ভাসা দেখায় ইত্যাদি। প্রজনন বলতে পরীক্ষামূলকভাবে আপাতত জিন ক্লোনিং-এর পরীক্ষা সফল হয়েছে। আরও কয়েকটি মেয়ে গর্ভবতী। তবে আপাতত পৃথিবী থেকে দুর্গত মেয়েদের উদ্ধার করে পুনর্বাসন দেওয়াটাই উদ্দেশ্য, কন্যা উৎপাদন নয়। পুরুষের অভাবে নাকি সেখানে হিংসা নেই। কোনও মেয়ের আচরণে উগ্রতা দেখলেই তাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু কয়েকজনকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরানোর পর দেখা গেল পৃথিবীতে তাদের মানসিক ও শারীরবৃত্তীয় পুনর্গঠন ঠিকমতো হয়নি। তাই কস্তুরীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে উমোজায় পাঠানো হয়নি। কস্তুরীকে মাঝেমাঝে শুধু এইসব দৃশ্য দেখার জন্য ডাকা হয়। উমোজার দূরত্ব থেকে আলো আসতে সাধারণভাবে মাসখানেক লাগে। কিন্তু মহাকর্ষ-সুড়ঙ্গ পথে আসে বলে মাত্র সাত মিনিটে সিগন্যাল পৌঁছে যায়। এই ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব বোধগম্য হয়নি। যখন দৈত্যাকার মনিটরে এই ছবিগুলো ভেসে ওঠে তখন যে গহ্বরকে ওরা মহাকর্ষ সুড়ঙ্গের পথ বলছে, তার থেকে একটা মৃদু কিন্তু গম্ভীর গুমগুম শব্দ ভেসে আসে যার অভিঘাতে ঈষৎ কম্পন টের পাওয়া যায়। কতদিন এখানে বন্দী আছে হিসাবে নেই। কেউ বলে না, কস্তুরীও ক্রমশ জানার তাগিদ হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শোয়ার ঘরের আসবাব ও যন্ত্রপাতি ঝাড়পোঁছ করছে কস্তুরী। পার্বতী গবেষণাগার থেকে হঠাৎ দ্রুত শয়নকন্দরে এলেন। বললেন, “কস্তুরী, এক্ষুণি খবর পেলাম একসাথে ছয়জন মেয়ে নিখোঁজ। চারজন চাকমা, দু’জন বাঙালি। পাবলিক থেকে পুলিস জঙ্গলে হারানো, দানোগুহা এসবের গল্প ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে এরা কেউই আসেনি। এলে তুমিও দেখতে। কাস্টমস্ অফিসার সাম লালডেঙা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছে, ওদের এক মহিলা অফিসারও নিখোঁজ। খুব ডেয়ারিং মেয়ে। কিন্তু খুব সম্ভব নারী পাচার চক্রের হদিশ পাওয়ায় তাকেও অপহরণ করে হয়তো চালান করা হয়েছে। তুমি এই নিউজ় লিংকটা পড়ে দেখো। বাট ইউ নো, দিস ইজ় টোটালি রং। যদিও ওরা আমাদের সন্ধান পায়নি, তবু এই সাংঘাতিক অভিযোগটা আমাদের গায়ে লাগছে। আমরা পারলে মেয়েদের রেসকিউ করি। তেমন হাজারখানেক মেয়ে এখন উমোজায় সানন্দে আছে; তুমি ছবি দেখেছ, কথাও বলেছ তাদের সঙ্গে। ট্রাস্ট মি, ছবিটা ভার্চুয়াল হলেও মর্ফড নয়। তুমি ফিরে যাও। ইওর ডিপার্টমেন্ট নীডস্ ইউ। তুমি মেয়েগুলোর সন্ধান করো। আমরা গোপনে সাহায্য করব, কিন্তু অফিশিয়ালি কাজটা তোমার পক্ষেই সম্ভব। হারানো মেয়েরা উমোজায় না যেতে পারুক, অন্তত নিজেদের ঘরে তো ফিরুক।” অভাবনীয় প্রস্তাবে কস্তুরী অভিভূত। সত্যি বলছেন তো আম্মা? পার্বতী আবার বললেন, “আমরা হয়তো ঝুঁকি নিচ্ছি। বাকিরা ভরসা পাচ্ছে না। ভাবছে তুমি আমাদের সন্ধান দিয়ে দেবে। যদিও আমাদের কাছে যে শক্তি আছে, সেটা আত্মরক্ষার কাজে লাগালে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু ধ্বংস করা তো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি। তুমি তোমার কাজ করো। পারলে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা নিয়মিত অ্যাবুউজ়ের শিকার মেয়েদেরও আইডেন্টিফাই করে রাখো। তারপর যদি মনে করো আমরা মেয়েদের নারকীয় জীবনের বেটার বিকল্প দিতে পারি, তাহলে এখানে নিয়ে এসো।” পার্বতী কস্তুরীকে আলিঙ্গন করে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেলেন। কস্তুরীর চোখ বুজে এল। মায়ের স্নেহস্পর্শের চেয়েও বেশিকিছু যেন। একে একে সকলেই বুকে জড়িয়ে বিদায় দিল। অন্তরা কেঁদে ফেলল। কস্তুরীর অনুভূতি বলল, এটাই ‘ইউনিভার্সাল সিস্টারহুড’ – ‘বিশ্ব-ভগ্নীত্ব’ অন্তরা যার কথা প্রথম দিনই বলেছিল, কিন্তু দানোগুহায় যার অস্তিত্ব কস্তুরী বিশ্বাস করতে চায়নি! সচল মোবাইল, রিভলভার, লাঠি সবই ফেরত পেল। ==========
টাওয়ার পেতেই মাকে ফোন করল। চলভাষের ক্যালেন্ডার বলল পাক্কা দুই সপ্তাহ অন্তর্ধানে ছিল। মায়ের জেরার উত্তরে বলল, জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘপথ হেঁটে কোয়ার্টারের ফিরতে বিকেল গড়িয়ে গেল। দরজায় তালা দেখে কস্তুরীর চাবির কথা মনে পড়ল। যা! ঢুকবে কী করে? ভাগ্যক্রমে জিনসের পকেটে হাত ঢোকাতে পেয়ে গেল।
কাজের লোকেরা তাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তাদের মুখেই শুনল, দানো গুহায় আরও ছয়টি মেয়ের হারিয়ে গেছে। কয়েকজন বিদেশী মহিলাকে নাকি মেয়েদের সম্মোহিত করে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে। তারা নাকি নানা অদ্ভুত যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোরে। তারা কিছু মেয়েকে বশ করে অন্য মেয়েদের ধরে আনতে পাঠায়। তারপর বন্দী মেয়েদের নারীমাংসের বাজারে চালান করে। কয়েকটা র্যাকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের সঙ্গে এই মহিলাদের যোগশাযোশ আছে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কস্তুরীর সম্মোহিত ভাব কেটে গেল। তাহলে কি মেয়েগুলোকে ঐখানেই কোথাও লুকিয়ে রাখা আছে? অত বিস্তীর্ণ গুহা-জালকের মধ্যে অজস্র অলিগলি, অজস্র ফাঁকফোকর। সেখানে একশোজনকে লুকিয়ে রাখাও অসম্ভব নয়। এই জন্যই তাহলে পার্বতীরা তাকে মুক্তি দিয়ে বারবার দুঃখী মেয়েদের ধরে আনার কথা বলছিল? মহাকর্ষ সুড়ঙ্গ, উমোজা গ্রহ সব তাহলে ভাঁওতা?
হঠাৎ রাঁধুনীর হাতে একটা খবর-কাগজ দেখে চোখ আটকে গেল। শিরোনাম ‘সৌরশক্তির সন্ধানে বাঙালি বিজ্ঞানী পেলেন মহাকর্ষ সুড়ঙ্গের হদিশ’। রাঁধুনীকে খাবার আনতে বলে কস্তুরী কাগজটা চেয়ে নিয়ে পড়তে বসে গেল।
সংবাদের সারসংক্ষেপ হল: বৈশাখী রক্ষিত নামের এক বিজ্ঞানী নিজের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে অভিনব গবেষণা করতে গিয়ে নিজের ডিশ অ্যান্টেনায় ‘ডার্ক এনার্জি’ ধরে ফেলেন। ডার্ক এনার্জি হল ব্রহ্মাণ্ডের মহাস্ফীতির জন্য দায়ী একরকম অজানা শক্তি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কৃষ্ণগহ্বর থেকেও এমন অজানা শক্তি বিকীর্ণ হয়। এর ফলে তাঁর বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। অনুরূপ দাবি ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বর্তমান বিভাগীয় প্রধান জন্মেজয় সান্যাল আর তাঁর ছাত্র সূর্য সেনাপতির যুগ্ম গবেষণাপত্রেও করা আছে। বৈশাখী রক্ষিত নিজের গবেষণা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে একটি সেমিনার উপলক্ষে পাঠাতে গিয়ে জানতে পারেন এই গবেষণাটি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। প্লেজিয়ারিজ়মের দায় পড়েন বিজ্ঞানী তথা আসানসোল বনোয়ারিলাল ভালোটিয়া কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপিকা। তিনি ও তাঁর স্বামী আসানসোল আদালতে সূর্য সেনাপতি যিনি বৈশাকীর সহকারী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু হতাশায় ডুবে নিজের বরাবর-স্থিত বাড়ি ও গবেষণাগার বিক্রি করতে গিয়ে নিজের একটি সিসিটিভি ফুটেজে ছবির পরিবর্তে এক অসীম দীর্ঘ অদৃশ্য পথের সন্ধান পান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বৈশাখী রক্ষিতের অনুমান এই অসীম-দীর্ঘ পথটি সম্ভবত সৃষ্টি হয়েছে কোনও তীব্র মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কারণে। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘মহাকর্ষ সুড়ঙ্গ’ বা ‘গ্র্যাভিটেশনাল টানেল’। এই অসীম মহাকর্ষ বলের উৎস সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হলেও সুড়ঙ্গটি অসীম দূরত্ব থেকে পৃথিবীর সুমেরুবৃত্তের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করে কুমেরুর দিকে বিস্তৃত হয়ে নিউজ়িল্যান্ড দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভারতে আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য এলাকা হয়ে বাংলাদেশের কক্সেসবাজার পর্যন্ত স্থলভাগের অভ্যন্তরে সনাক্ত করা গেছে। তারপর বঙ্গোপসাগরে জল তলা দিয়ে দক্ষিণে চলে গেছে।
তিন-চারবার পড়ল প্রতিবেদনটা ভালো করে বুঝতে। মহাকর্ষ সুড়ঙ্গ তাহলে সম্ভব ?
স্বপ্নভঙ্গ সায়েন্স ফিকশন গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বেজি এখন অনেক তেজি
শ্যামলী
স্বপ্ন পূরণ