কলম পাতুরি

ভাবনা আপনার প্রকাশ করবো আমরা

Home » সায়েন্স ফিকশন গল্প » অষ্টপদীর রক্তকাহন

অষ্টপদীর রক্তকাহন

অষ্টপদীর রক্তকাহন সায়েন্স ফিকশন গল্প – মৌলী কুন্ডু

ওকে গাইজ আমি আবার ফিরে আসব অনেক পাগলামি আর নতুন কোনো খাবার জায়গার ভিডিও নিয়ে.. ততক্ষণ দেখতে থাকো ক্রেজি বঙ.. মজা হয় এই চ্যানেলে..

ইউটিউবের জন্য ভিডিও রেকর্ডিংটা শেষ করল ফুড ব্লগার দীপ্ত। এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে পা রাখতেই তার চোখ পড়েছিল সামনের টেবিলে বসে থাকা এক অপূর্ব সুন্দরীর দিকে। অপেক্ষা করছিল কখন শুট শেষ হবে, তারপর সুন্দরীর সাথে গিয়ে আলাপ করবে। কিন্তু ভিডিও শুট শেষ হবার পর সুন্দরী নিজেই টেবিল ছেড়ে উঠে এসে তাকে বলল,

-”ও মাই গড , আপনি তো দীপ্ত। আমি আপনার চ্যানেলের সব ভিডিও দেখি। আপনাকে জাস্ট অসাধারণ লাগে। আমি কি আপনার সাথে একটা সেলফি নিতে পারি? আর একটা অটোগ্রাফ?”

দীপ্ত স্মার্টলি উত্তর দিল,

-”হ্যাঁ নিশ্চই। তোমার কি লাঞ্চ করা হয়ে গেছে? নাহলে আমরা একসাথে লাঞ্চও করতে পারি।”

-”হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো এখনও কিছু অর্ডার করিনি। আমি ভাবতেই পারছি না ক্রেজি বঙ দীপ্তর সাথে লাঞ্চ করতে পারব। আমার বান্ধবীরা শুনলে তো পাগল হয়ে যাবে।”

-”আচ্ছা তোমার নামটা তো জানা হয়নি। আর আপনা আপনিটা আমি কিন্তু পছন্দ করি না। পর পর লাগে। আমার কোনো ফ্যান কি করে আমার পর হতে পারে, তাই না?”

সুন্দরীর চোখ মনকে মুগ্ধ করে দেয়। সেই চোখে যেন চুম্বক লাগানো আছে। একবার সেই চোখের দিকে তাকালে আর অন্য দিকে চোখ ফেরানো যায় না। অসাধারন রূপ এই তরুণী সুন্দরীর। গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল, চোখ মুখ তুলি দিয়ে আঁকা, মাথার চুল ফুলেফেঁপে ছড়িয়ে আছে তার সোনালী দুগাল ঢেকে কাঁধের নিচে পর্যন্ত। অপর্যাপ্ত চুলের রাশি তাকে আশ্চর্য রূপবতী করে তুলেছে। তারচেয়েও বিস্ময়কর তার উন্নত বক্ষ সম্ভার। স্লিপলেস কালো ওয়ান পিসে তাকে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। সুন্দরীর শরীরের মধ্যে এক অদ্ভুত ঔদ্ধত্য আছে। দুচোখে নিবিড় মাদকতা। যা, যে কোনো পুরুষকে কুপোকাত করে দিতে পারে। সুন্দরী এবার হাঁসিতে জলতরঙ্গের সুর তুলে বলল,

-”আমার নাম তুলি। এবার থেকে শুধু তুমি। কেমন?”

এরপর দুজনের কথা চলতে থাকল, একসঙ্গে দুজনে লাঞ্চও করল। তুলি আর দীপ্ত দুজনেই খুব মিশুকে স্বভাবের। একে অপরের সাথে তাদের মিশে যেতে খুব বেশী সময় লাগল না।

ধীরে ধীরে দিন যায়। রাত জেগে ভিডিও চ্যাটে গল্প, ডিস্কো, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্টুরেন্টের মই বেয়ে দীপ্ত আর তুলির সম্পর্ক তরতর করে মগডালে পৌঁছায়। অর্থাৎ বিয়ের কথাবার্তার দিকে এগোয়। দীপ্তর ইউটিউব থেকে আয় কম হয় না। বাড়ি গাড়ি সবই করেছে এই ইউটিউবের ইনকাম থেকেই। আর তুলি বোটানিতে মাস্টার্স করার পর এখন সঠিক পেশার সন্ধানে আছে।

ঠিক হল এক রবিবার বিকালে দীপ্ত তার বাবা মা, জ্যাঠামশাই, জেঠিমা ও এক দাদা যাবে তুলিদের বাড়িতে বিয়ের কথাবার্তা বলতে। তুলিদের বাড়িটা শহরের বাইরে একটু গ্রাম্য জায়গায়। চারদিকে বাগান ঘেরা, অনেকটা ফার্ম হাউস ধরনের বাড়ি। আশপাশে জনবসতি বিশেষ নেই। সপরিবারে দীপ্তরা যখন সেখানে পৌঁছল তুলির বাবা মা খুব আন্তরিকভাবে তাদের অভ্যর্থনা করল। তারপর তাদের সামনে এতো রকমের খাবারের প্লেট সাজিয়ে দিল। চাইনিজ, মোগলাই, ভারতীয়, ইটালিয়ান। দীপ্তর জ্যাঠামশাই রসিকতা করে বললেন,

-”দীপ্ত না হয় হাঁড়িকাঠে গলা দিতে চলেছে। তার আগে ভালোমন্দ খেতে হবে। কিন্তু মশাই আমাদের তো সে পাঠ অনেক আগেই চুকেবুকে গেছে। তাহলে আমরা কি করে এই ফাঁসির খাওয়া খাব বলুন দেখি।”

তখন তুলির বাবা হেঁসে বলল,

-”আরে খেয়ে নিন মশাই। এরপর এই শরীরটাকে কত ঝক্কি পোহাতে হবে বলুন তো। এতো লোককে খাওয়ানো, কতো কান্ডকারখানা এখন করতে হবে খেয়েদেয়ে একটু গায়ের জোর বাড়াতে হবে তো।”

খাব না, খাব না করেও দীপ্তর পরিবারের সকলে চেটেপুটে সব খাবার খেল। এতো সুস্বাদু খাবার যে পৃথিবীতে কেউ বানাতে পারে, তা সেগুলো না খেলে বিশ্বাস করাই যায় না। খাওদাওয়া শেষ হতেই সকলের হাত পা কেমন ঝিমঝিম করতে লাগল। দীপ্তর বাবা মা তখন বললেন,

-”আমরা আজ তাহলে উঠি। এতো খাওয়া হল, এবার একটু ঘুম দরকার আমাদের।”

তুলির মা বলল,

-”তাহলে এখানেই ঘুমিয়ে পড়ুন না। আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব।”

-”না না সে হয় না। এবার আমরা উঠি।”

এই বলে সকলে উঠতে গেল। কিন্তু তারা অনুভব কি একটা পিচ্ছিল চটচটে জিনিসে তারা আটকে গেছে। তারা নিজেদের ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল। কিন্তু জিনিসটার মধ্যে এমনভাবেই তারা আটকে গেল যে কিছুতেই মুক্ত হতে পারল না। এবার তারা লক্ষ করল সামনে বসে থাকা তুলি আর তার বাবা মা বলছে,

-”বলেছিলাম না অনেক ঝক্কি পোহাতে হবে, অনেককে খাওয়াতে হবে। আমাদের সবাইকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তো এবার আপনাদের।”

এই বলে তারা এক অপার্থিব অট্টহাঁসি শুরু করল। আর তাদের হাস্যরত হাঁ মুখটা বিশাল বড় হতে শুরু করল। সেই মুখ দিয়ে কিলবিলিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগল লালচে কালো রঙের আট পা বিশিষ্ট মাকড়শার মতো অসংখ্য জীব। সেগুলোর একেকটার ব্যাস পনেরো ষোলো সেন্টিমিটারের কাছাকাছি। সেগুলো বেরিয়ে আসতেই তুলি আর তার বাবা মায়ের দেহগুলো, খুলে রাখা পোশাকের মতো নেতিয়ে পড়ে থাকল। সেই মাকড়শার মতো জীবেরা ছেয়ে গেল দীপ্তর পরিবারের সকলের শরীরের উপর। ততক্ষণে সপরিবারে দীপ্তর হাত পা নাড়ানোর মতো অবস্থা নেই। কিভাবে যেন তাদের সব অঙ্গপ্রতঙ্গ অসার হয়ে গেছে। এমনকি তাদের বাকযন্ত্রও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তবে তখনও তাদের দেহে প্রাণ রয়েছে। জীবন্ত অবস্থাতেই মাকড়শাগুলো কোনো অদ্ভুত পদ্ধতিতে দেহ থেকে চামড়া ছাড়াতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে পড়ে রইল চামড়া ছাড়ানো খাসির মতো লাল দগদগে ছ’টা দেহ। দেহগুলোতে তখনও হৃদপিন্ড ধুকপুক করছে। শরীরের জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনকারী যন্ত্রগুলো পুরোপুরি সচল। মাকড়শাগুলো সেই দেহগুলোকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভরে রাখল এক বিশেষ ধরনের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে। তারপর পুরো ফার্মহাউসটা ধীরে ধীরে প্রবেশ করল মাটির ভেতর। কিছুক্ষণ আগেও যে সেখানে একটা সুন্দর দোতলা বাড়ি, বাগান ছিল তা পারতপক্ষেও কারোর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। বদলে সেখানে পড়ে থাকল এক ফালি ধূ ধূ করা ফাঁকা মাঠ।

লাল বাজারের ডিটেক্টিভ ডিপার্টমেন্টে আবার চাঞ্চল্য। শহর থেকে আর একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সপরিবারে নিখোঁজ। বিখ্যাত ইউটিউবার দীপ্ত সান্যালের জারতুতো দিদি রিপোর্ট করেছে, গত পরশু দীপ্ত, তার বাবা মা, জ্যাঠামশাই ও জেঠিমা আর তাদের ছেলে বেরিয়েছিল দীপ্তর বান্ধবীর বাড়িতে বিয়ের পাকা কথা বলবে বলে। কিন্তু তারপর থেকে তাদের কোনো খবর নেই। তাদের সকলের ফোনও সুইচড অফ। লালবাজারে এই নিয়ে এরকম ছ’ টা কেস এসেছে। এই কেসের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়েছে ইন্সপেক্টর রুদ্র সাহার ওপর। রুদ্র এর আগে বেশ কয়েকটা জটিল খুনের কেস হ্যান্ডেল করেছে। বয়স তেত্রিশের কাছাকাছি। সুন্দর সুঠাম চেহারা। এখনও বিয়ে করেনি। রুদ্রর জুনিয়র অতুল তাকে বলল,

-”স্যার আমার মনে হয় এটা কোনো মধুচক্রের কেস। সুন্দর কম বয়সী ছেলেদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তারপর নিজেদের আসল ডেরায় টেনে নিয়ে যায়।”

-”না অতুল তাহলে পরিবারের এতগুলো লোককে নিয়ে এরা কি করবে ! আর যতগুলো মিসিং কেস হয়েছে সবগুলোতেই কিন্তু প্রায় ছয় থেকে কুড়িজন পর্যন্ত লোক একসাথে মিসিং হয়েছে।”

-”হ্যাঁ স্যার ঠিক বলেছেন। সিরিয়াল কিলিংও হওয়া সম্ভব না। কারণ তাহলে এতজন মানুষের লাশ একসাথে লোপাট করা তো মুখের কথা নয়। এক যদি এমন সাইকো কিলার হয়, যে মেরে সবার মাংস প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলে।”

-”মজার ব্যাপার নয় অতুল। এরকম কিন্তু অনেক নজির আছে। বি সিরিয়াস.. ইভেন আমার তো মনে হচ্ছে এরকম কিছুই..যাকগে শোনো আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে। সেই ভাবেই কাজ এগোনো যাক।”

কিছুদিনের মধ্যেই রুদ্রর প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হল।

সুন্দর যুবক পুরুষদেরই বেছে বেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জোগাড় করে কালপ্রিটরা। তাই পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি সোশ্যাল মিডিয়ায় রুদ্রর ফেক আইডি তৈরী করে ফেলল। আর তার ফলয়ার্স, সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও কয়েক দিনের মধ্যে আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। সবই সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের বদান্যতায়। এরপর রুদ্রকে প্রায়ই দেখা যেতে লাগল বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, পাবে, ডিস্কোয়। যেখানে যেখানে কোনো গোপন অভিসারের হাতছানি লুকিয়ে থাকতে পারে সেরকম কোনো জায়গাই বাদ থাকল না। আর সেই হাতছানির ইশারা পেতে দেরিও লাগল না । কিছুদিনের মধ্যেই এক ডিস্কোথেকে তার দেখা হল নিশা নামের এক নীল নয়না সুন্দরীর সাথে। সেই নীল চোখের দিকে তাকিয়ে রুদ্রর মনে হয়, ওই চোখ যেন তার শরীর থেকে সমস্ত খারাপ অনুভূতিগুলোকে টেনে বার করে, তার বদলে ভরে দিয়েছে এক দারুন আনন্দের অনুভূতি। আর নিশার রূপের বর্ণনা, রুদ্র যদি কবিতা লিখতে পারতো তাহলে একটা পুরো বই ভরিয়ে ফেলতো কবিতায়। পৃথিবীতে সব সুন্দরীর কিছু না কিছু খুঁত থাকতে পারে। কিন্তু নিশা একেবারে নিখুঁত, মারকাটারি ফিগার আর সেরকমই চোখা চোখ, নাক মুখের গঠন। কয়েকদিনের মধ্যেই রুদ্র, নীলনয়না সুন্দরীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করল। এমনকি সে যে একটা প্ল্যানের পার্ট হিসাবে কাজ করছে সেটাও ভুলে গেল। নিশার প্রেমের মাদকতায় বুঁদ হয়ে এক রাতে আচ্ছন্ন গলায় সে বলল,

-”আমার পক্ষে আর তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। আমি এই উইকেন্ডেই তোমার বাড়িতে যাব বিয়ের কথা বলতে।”

-”বেশতো এসো। তুমি তাহলে কতজনকে নিয়ে আসবে?”

-”তোমায় তো আগেই বলেছি। আমি অর্ফ্যান। অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছি। আত্মীয় পরিজন কেউ নেই। আমি নিজেই যাব তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে।”

-”তুমি একা আসবে? কেন ওই ইউটিউবে যাদেরকে নিয়ে ভিডিও করো তোজো, রক্তিম, অতুল তাদেরকে তো সঙ্গে আনতে পারো।”

এই প্রথম রুদ্রর মনে নিশাকে নিয়ে সন্দেহ দেখা দিল। সে ভেবেছিল নিশা হয়তো কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নয়। যারা ছেলের বাড়ির লোকেদের নিয়ে গিয়ে গুম করে দেয় তারা হয়তো অন্য কেউ হবে। কিন্তু অনেকজনকে নিয়ে নিশার আসতে বলার ব্যাপারটা তার ভালো লাগল না। রুদ্র আবার বলল,

-”একগাদা লোকজন নিয়ে যাবার দরকার কি। ওরা তো কেউ আমার নিজের লোক নয়। তবে আমাকে ভালবাসে বলে বিয়ের সময় তো সবকিছু ওরা করবেই। এখন আর ওদের বিব্রত করার কি দরকার বলো..”

অভিমানী গলায় নিশা বলল,

-”আমি কিছু শুনতে চাই না। তোমার একা আসা চলবে না মোটকথা। আমার বাবা মা লোকজন পছন্দ করেন। তোমায় তো আগেই বলেছি। তুমি তোমার বন্ধুদের নিয়ে আসবে।”

-”আচ্ছা তবে তাই হবে। নিয়ে যাব ওদের।”

এবার নিশা শান্ত হলো। একটা লোভ যেন ফুঁটে উঠল তার গলায়।

-”ভিডিও শুটের সময় তো তোমার সাথে আট জন থাকে ওদের সবাইকে আনবে কিন্তু।”

-”আনব।”

রুদ্র একটু মুষড়ে পড়ল। তার মনে হয়েছিল এমন সুন্দর মেয়েটা, এতো মিষ্টি যার স্বভাব সে কখনই অপরাধী হতে পারে না। রুদ্রর মন দোলাচলে দুলতে থাকল। হতে পারে নিশার বাড়ির লোক সত্যিই লোকজন পছন্দ করে। সে একেবারে একা বিয়ের কথা বলতে গেলে খারাপ ভাববে। রুদ্র সত্যিই নিশাকে খুব ভালবেসে ফেলেছিল।

নির্দিষ্ট দিনে তার টিম মেম্বারদের নিয়ে সে রওনা দিল নিশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তার যদিও পুলিশ ফোর্স নেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু তার সিনিয়র রমেন মিত্র বললেন,

-” মিসিং পরিবারের অবশিষ্ট সদস্যরা জানিয়েছিল এরকম একটা লোকেশনেই তাদের বাড়ির লোকজন গেছিল। আমরা তাই ওই জায়গায় গিয়ে খোঁজখবরও করি। কিন্তু সেখানে তখন কিছু পাওয়া যায়নি। এই মেয়েটাও যখন সেম লোকেশনে যেতে বলেছে। আমাদের সবরকম ভাবে তৈরী হয়ে যেতে হবে।

-”তাই যাব স্যার।”

রুদ্র রাজী হলেও তার কথায় যেন প্রাণ ছিল না।

রুদ্র আর আরও তিনজন পুলিশ অফিসার যাদের মধ্যে ছিল রমেন মিত্র, অতুল রায় আর সুকান্ত কুন্ডু নিশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। তাদের পিছনে ছিল একদল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। গন্তব্যে পৌঁছতেই নিশার বাবা মা সাগ্রহে রুদ্রদের আপ্যায়ন করল। কিছু কথাবার্তার পর তাদের সামনে হাজির করল প্রচুর খাবারদাবার। কিন্তু রুদ্ররা কিছু খেতে রাজি হল না। রমেন মিত্র বললেন,

-”আসলে কাল একটা নতুন রেস্টুরেন্টের inogrationএ রুদ্রর নেমন্তন্ন ছিল। আর আমরাও গেছিলাম। free তে নানারকম খাবার পেয়ে রাক্ষসের মতো গিলেছি। ফল যা হবার তাই হয়েছে। আজ সকাল থেকে বুঝলেন কিনা..”

এই বলে রমেন মিত্র একটু বোকা হাঁসি হাঁসলেন। নিশার মা তখন বলল,

-”একটু তাহলে চিড়ে মেখে দিই। আমার হাতের চিড়ে মাখা আপনি শুধু খেয়ে দেখুন একবার। একবার খেলে আবার চাইবেন। আর পেটের জন্যও খুব ভালো।”

তখন রমেনবাবু কি বলবেন কিছু বুঝতে না পেরে পেট চেপে বললেন,

-”ইয়ে বাথরুমটা কোনদিকে?”

তখন নিশার বাবা একটু হেঁসে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন সিঁড়ি দিয়ে দোতলায়। রমেন মিত্রর পেছনে তিনি হাঁটছিলেন। হঠাৎ রমেনবাবুকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-”আরে দেখুন তো আপনি কিছু খেলেন না। এখন আপনাকে কতো কষ্ট ভোগ করতে হবে।”

রমেন মিত্র অবাক হয়ে বললেন,

-”না খাবার জন্য আর কি কষ্ট! খেলে বরণ কষ্ট..

কথাটা তিনি শেষ করতে পারলেন না। নিশার বাবা মুখটা হাঁ করলেন। সেই হাঁ যেন ভয়ংকর রকমের বড় হয়ে গেল। আর কালো অতল হাঁ মুখ থেকে বেড়িয়ে আসতে লাগল ভয়ংকর দর্শন লাল কালো রঙের মাকড়শা। নিশার বাবার চামড়াটা নেতিয়ে পড়ে গেল মেঝের ওপর। রমেনবাবুর মাকড়শার ফোবিয়া ছিল। তিনি এক মারণ চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

আর তার চামড়াটা অদ্ভুত কায়দায় তুলে ফেলতে লাগল মাকড়শাগুলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ চামড়া তুলে নিয়ে মাকড়শাগুলো রমেনবাবুর চামড়া ছাড়ানো দেহটা বয়ে নিয়ে যেতে লাগল। রমেনবাবুর তখন জ্ঞান ফিরে আসে আর তিনি এক গোঙানির মতো চিৎকার করতে শুরু করলেন। সেই চিৎকার নীচে রূদ্রদের কানেও পৌঁছল। সেটা শুনে অতুল সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

-”আমি দেখি রমেন কাকার কি হলো? তিনি এইভাবে কেন চিৎকার করছেন?”

এই বলে সে ওপরে দৌড়ে গেল। আর লাল কালো মাকড়শাগুলো তার অবস্থাও রমেনবাবুর মতোই করল।

অতুল ওপরে যাওয়ার সাথে সাথে হাজার হাজার লাল কালো মাকড়শা তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এবার নিচের তলায় নিশার মা তৎপর হয়ে বলল,

-”বড্ড মশা ম্যাটটা জ্বালাই।”

তিনি বোতাম টিপতেই চারদিক ভরে গেল কিরকম একটা অপার্থিব গন্ধে। ওপরতলা থেকে তখন অতুলের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। রুদ্র আর সুকান্ত একসাথে উঠতে গেল। কিন্তু উঠতে পারল না কোনো পিচ্ছিল চটচটে জিনিসে তখন তারা আটকা পড়েছে। নিশা বলল,

-”আর ওঠার চেষ্টা করে লাভ নেই রুদ্র। তোমরা আটকা পড়ে গেছো।”

রুদ্র নিশাকে ভাঙা গলায় বলল,

-” আমি তোমাকে বিশ্বাস করে ভালবেসেছিলাম নিশা। কারোর কথার ওপর বিশ্বাস ছিল না আমার। কিন্তু তুমি একি করলে..তবে তুমি শাস্তি পাবে। বাইরে পুরো পুলিশ ফোর্স আছে। তারা একটু পরেই ভেতরে আসবে।”

-”তাই নাকি! তুমি একেবারে বরযাত্রী নিয়ে এসেছো? ও রুদ্র আমি যে কি খুশি হয়েছি। এই উপলক্ষে তোমাকে এক্ষুনি স্টোর রুমে নিয়ে যাব না। তুমি দেখো বসে বসে এবার কি হয়।”

সুকান্ত বাইরের ফোর্সকে মেসেজ করে দিয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনী তখন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ল। আর সেই বাহিনীর মোকাবিলা করতে কোথা থেকে যেন কিলবিলিয়ে বেরিয়ে এলো কোটি কোটি মাকড়শা। পুলিশ ফোর্স তাদের ওপর গুলি চালাতে লাগল। কিন্তু গুলিতে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। টিয়ার গ্যাসেরও ওদের ওপর কোনো প্রভাব পড়ল না। নিশার মায়ের চামড়ার ভেতর থেকে ততক্ষণে হাজার হাজার মাকড়শা বেরিয়ে সুকান্তকে কুপোকাত করেছে। যে পুলিশ ফোর্স এসেছিল তাদের অবস্থাও ততক্ষণে একই রকম হল। মাকড়শাগুলোর শরীর এত শক্ত বর্মের মতো আবরণে ঢাকা যে কোনরকম আঘাতের প্রভাব তাদের ওপর পড়ে না। রুদ্র লক্ষ করল এই মাকড়শার মতো প্রাণীগুলো কাউকে প্রাণে মারে না। শুধু মানুষের শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে অবশিষ্ট শরীরটা বাড়ির ভেতরে কোনো গোপন স্থানে নিয়ে যায়। রুদ্র তখন নিশাকে বলল,

-”এদেরকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? আর তোমরা কারা?”

নিশা বলল,

-”আগে তোমার প্রথম প্রশ্নের দিই। রুদ্রর শরীর তখন অচল, অনড়। নিশার একটা ইশারায় বেশ কিছু মাকড়শা তার শরীরটাকে বয়ে নিয়ে চলল একটা ঘরে। সেই ঘরের মেঝের ওপর একটা সয়ংক্রিয় দরজা ধীরে ধীরে খুলে গেল। মাকড়শাগুলো রুদ্রর দেহটা নিয়ে সেই দরজা দিয়ে নিচে একটা ঘরের মধ্যে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। সেখানে শয়ে শয়ে কাঁচের মতো স্বচ্ছ কোনো জিনিসের বাক্সের মধ্যে লাল দগদগে মানবদেহ রাখা রয়েছে। বিশাল একটা যন্ত্রের সঙ্গে নল দিয়ে বাক্সগুলো যুক্ত হয়ে আছে। বাক্সের ভেতরে থাকা মানুষগুলো সকলেই জীবিত। বহু মানুষের সম্মিলিত গোঙানির শব্দে রুদ্রর কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। রুদ্র বলে উঠল,

-”ওহ কি ভয়ংকর এদের এভাবে কেন বাঁচিয়ে রেখেছো তোমরা?”

নিশার মুখে একটা হাঁসির ভঙ্গি ফুঁটে উঠল। গলায় একটা মাস্টারি ভাব ফুটিয়ে তুলে সে বলল,

-”এদের বাঁচিয়ে না রাখলে খাবার পাব কোথা থেকে? তোমাদের শিরায় বয়ে চলা গরম রক্ত আর মাংস তো আমাদের খাদ্য। তবে বেশিদিন তোমাদের এইভাবে থাকতে হয় না। এইভাবে তোমাদের বেঁচে থাকার আয়ু বড় জোর এক বছর। যখন এখানকার কেউ শেষ অবস্থায় পৌঁছায় আমাদের বেশ বড়সড় একটা ভোজ হয়। আমরা পেট ভরে তাকে খেয়ে শেষ করি সেদিন।”

-”তোমরা কারা? তোমাদের এই গ্রহের প্রাণী বলে তো মনে হচ্ছে না।”

-”আমরা এই গ্রহেরই প্রাণী। তোমাদের আর আমাদের সৃষ্টিকর্তা একই। তবে আমাদের সৃষ্টি হয়েছিল তোমাদের অনেক আগে। । আমরা তোমাদের বহু আগেই বিজ্ঞানে অনেক গুণ উন্নতি করি। আমরা বিজ্ঞানের যে স্তরে পৌঁছেছিলাম, সেই স্তরে পৌঁছতে তোমাদের এখনও বহু বছর লাগবে। আমাদের আবাস মাটির নিচে।”

-”কিন্তু তোমরা থাকলে তো আমাদের বিকাশ হতো না। তোমরা ধ্বংস হয়েছিলে কিভাবে? আর ফিরে এলেই বা কি করে?”

-”আমরা কখনও ধ্বংস হইনি। তবে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় আমরা শীতঘুমের মতো দশায় চলে গেছিলাম। পৃথিবীকে গরম করে তোমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছো। আমাদের আবার জাগিয়ে তুলেছো তোমরা।”

-”মানুষ সৃষ্টি হবার আগে তোমরা পৃথিবিতে এসে থাকলে তখন খেতে কি? আর বেছে বেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ছেলেদেরকে কেন টার্গেট করো তোমরা?”

-”আমরা কৃত্রিম উপায়ে নিজেদের খাদ্য তৈরি করতে পারি। কিন্তু যেখানে এতো খাদ্যের ছড়াছড়ি সেখানে বেকার কেন কষ্ট করতে যাব বলো। আর তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পুরুষরা সহজ শিকার। পুরুষদের মোহিত করে টেনে আনা সহজ। মেয়েরা এত সহজে ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সুন্দর পুরুষ খুঁজে বার করি কারণ তাদের সুন্দর চামড়া দিয়ে সুন্দরী নারী দেহ তৈরী করা যায়। হ্যাঁ আমরা এরজন্যই তোমাদের চামড়াগুলো আগে তুলে রেখে দিই। এক একটা চামড়া একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। তোমাদের জালে ধরার জন্য আমরা মানুষের মতো দেহ ধারণ করি। দেহগুলো তোমাদের চামড়া দিয়েই বানাই। আমাদের শিকার ধরা হয়ে গেলে এই বাড়িশুদ্ধু সব কিছু মাটির নিচে চলে যায় কিছুদিনের জন্য। তোমরা হাজার চেষ্টা করেও তার ফলে আমাদের সন্ধান পাও না। নাও এবার অনেক কথা হয়ে গেছে। তোমাকে বেশী কষ্ট দেব না। আফটার অল তোমাকে ভালবাসি ডিয়ার।”

এই বলে নিশা রুদ্রর শরীরে একটা ইনজেকশন পুষ করল। রুদ্রর দুচোখ তখন ঘুমে বুজে এলো। নিশার শরীরের আবরণ ছেড়ে এবার কিলবিলিয়ে বেরিয়ে এলো মাকড়শা সদৃশ জীবেরা। তারা ছেয়ে ফেলল রুদ্রর সারা শরীর। সবকিছু শেষ হবার আগে রুদ্র নিজের ফোনটা পকেট থেকে বার করে তড়িঘড়ি একটা মেসেজ করল।

লালবাজারে রুদ্রর ফোন থেকে একটা মেসেজ এলো। “এদের মৃত্যু শীতলতায়।”

অষ্টপদীর রক্তকাহন সায়েন্স ফিকশন গল্প – সমাপ্ত

আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।

error: Content is protected !!