ভিখুর ভূত দর্শন ভৌতিক গল্প – অভিষেক ব্যানার্জি
আজ টিউশন থেকে ফিরতে অনেকটা দেরী হয়ে গেলো ভিখুর । ভিখুর অবশ্য একটা গালভারী ভালো নামও আছে, সৌমাল্য উপাধ্যায় । ভিখুর দাদু সাধ করে নামটা রেখেছিলেন , আজকাল অবশ্য ওই নামটা পরীক্ষার খাতা ছাড়া কোথাও বড় একটা ব্যবহার হয় না । ভিখুর নাম এবার ভিখু কবে থেকে হলো কেই বা রাখলো সেটা সে জানে না । ভিখুর ভূতে বড়ই ভয় তবুও বৃষ্টির দিনে মায়ের হাতে বানানো তেলেভাজা মুড়ি কাঁচা লঙ্কা মেখে খেতে খেতে দাদুর মুখে গা ছমছমে ভূতের গল্প শুনতে তার মন্দ লাগে না । দাদু বাড়িতে না থাকলে মাঝে মধ্যে বাবার মোবাইলে ইউ টিউবে তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলোও তার সব শোনা । হ্যাঁ, ভূতে ভয় লাগে ঠিকই কিন্তু গল্প শোনার নেশা ভিখু ছাড়তে পারে না । ভিখুর বয়স সাড়ে তেরো, তার ভাই বান্টির বয়স আট । বান্টি আজকাল একাই একটা ঘরে শোয় তবে এই ভূতের ভয়ের জন্য ভিখু আজও তার বাবার সাথে এক ঘরে শোয় । এ নিয়ে বাড়িতে তাকে অনেক কথাও শুনতে হয় । কী দরকার বাপু ওসব ভূতের গল্প শোনার যখন এতই ভয় । কথাটা ঠিক ভিখুও সেটা মনে মনে মানে , কিন্তু এই ভূতের গল্প শোনার বা পড়ার আনন্দ অনেকটা ইস্কুলের সামনে রতনদার ঠেলার ঝালমুড়ি খাওয়ার আনন্দের মত। ভূতের গল্পে যেমন ভূত কোনো আগাম জানান না দিয়েই আসে, ঝালমুড়ির কাঁচা লঙ্কা গুলোও সেরকম । কখন দাঁতে লেগে ঝাল লেগে যাবে সেটা আন্দাজ করা যায় না । সে যাই হোক, আজ বড় দেরী করে ছাড়লেন নিতাই বাবু । সামনে পরীক্ষা আসছে তাই গোটা পাঁচ অঙ্ক বেশি বোঝাতে গিয়েই দেরী । ভিখুদের বাড়িটা তাদের গ্রামের অন্য প্রান্তে । আজকাল গ্রামগুলোকে ঠিক গ্রাম বলা যায় না। বিদ্যুৎ সংযোগ , পাকা সড়ক সবই আছে তাদের গ্রামে । লোডশেডিং অবশ্য মাঝে মধ্যে হয় , তবে আধ এক ঘণ্টার বেশি না । সাইকেলের প্যাডেল আরো জোরে চালিয়ে ভিখু বাড়ির দিকে প্রায় উড়েই যাচ্ছিল বাড়ির দিকে । ওদের বাড়ির ঠিক আগেটায় একটা খালি টিনের চাল দেওয়া বাড়ি , দীনেশদার মুদির দোকান । অন্য দিন টিউশন থেকে ফেরার সময় সেটা খোলাই থাকে আজ ভিখু দূর থেকে দেখল সেটায় আলো নেই । অনেক দেরী হল , এত রাতে দোকান কি খোলা থাকে । দোকানের কাছে আসতে না আসতেই হটাৎ ঝুপ করে রাস্তার বাতিগুলো নিভে গেল । ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না ভিখুর । ঠিক এই ভাবেই দাদুর এক বন্ধুর সাইকেলের পেছনে হটাৎ এক ভূতের উদয় হয়েছিল । গল্পটা দাদুর কাছে বহুবার সে শুনেছে, আজ কি মরতে যে তার সেটা এখন মনে পড়ল এটা ভাবতে ভাবতে ভিখু যেই না টিনের চালের দোকানটার পাশে এসেছে হঠাৎ দেখল চালের ওপরে দুটো জ্বলজ্বলে চোখ ঠিক তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে । ওরে বাবা গো বাঁচাও কে আছো বলে ভিখু সাইকেল নিয়ে সেখানেই যাকে বলে পপাত চ মমার চ । তার হেঁড়ে গলায় চিৎকার শুনে দাদু বাবা ছুটে এলেন হাতে টর্চ নিয়ে । মুদি দোকানের এক দুটো বাড়ি পরেই ভিখুদের বাড়ি । আজ কি ভাগ্যে বেজায় গরম থাকায় আর তার ওপর লোডশেডিং হওয়ায় তাদের সদর দরজা খোলাই ছিল হওয়া বাতাস আসার জন্য । ভিখুকে মাটি থেকে তুলে বাবা জিজ্ঞেস করলেন কী রে, ভূত দেখলি নাকি । ভিখু থর থর কাঁপা হাতে টিনের চাল টা দেখিয়ে দিল, চোখদুটো এখনও ওখানেই স্থির । টর্চের আলো ফেলতেই বাবা আর দাদু হো হো করে যাকে বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন । টর্চের আলো অনুসরন করে ভিখু যা দেখল এবার তারও পড়ে গিয়ে হাত পা ছুলে যাবার ব্যথা ভুলে হাসিই পেল । টর্চের আলোর যে ভূতের ওপর পড়েছে তিনি আর কেউ নন , ভিখু দেরই পড়ার ছাগল মধুসুন্দরী । টর্চের আলোয় বিরক্ত হয়ে সে বলে উঠলো ম্যা এ এ এ..!
ভিখুর ভূত দর্শন ভৌতিক গল্প – সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
রাজবাড়ী রহস্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন