ভূতডামর জিরো জিরো ওয়ান ডট কম ভৌতিক গল্প -গোবিন্দ মোদক
কম্পিউটারটা অন করে লিখতে যেতেই আজও সেই বিপত্তি — স্ক্রিন জুড়ে সেই ভৌতিক অদ্ভুতুড়ে আলোটা ছুটে বেড়াচ্ছে …। তারপর স্থির হলেই দেখা গেল একটা মড়ার খুলি আর দু’টো হাড় বিপদ সংকেত ঘোষণা করছে। তারপরই একটা ভূতুড়ে গলার আওয়াজ পাওয়া গেল — “সাবধান রাজীববাবু! এরপর ভূতের গল্প লিখলে কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য! হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ! সাবধান!” ভূতুড়ে গলাটি কিছুক্ষণ হি-হি-হি-হি করে হাসলো, তারপর স্ক্রিনটা স্বাভাবিক হয়ে হয়ে গেল। রাজীববাবু “যত্তো সব ভূতুড়ে ব্যাপার!” বলে আবার লেখালেখি শুরু করলেন।
রাত বারোটা বাজতেই আবার বিপত্তির শুরু! স্ক্রিনটা আবার ঘোলাটে হয়ে উঠলো এবং সেই ভৌতিক আলোটা আবার ছোটাছুটি করতে শুরু করল। তারপর আবার সেই মড়ার খুলি এবং দু’টি হাড়, নিচে লেখা — “খুব সাবধান! ভূতডামর জিরো জিরো ওয়ান ডট কম। হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ! সাবধান!” রাজীববাবুর হাসি পেল — এ সব ভৌতিক ঘটনা ঘটছে, নাকি কেউ তার সঙ্গে শয়তানি করছে তা তিনি বুঝতে পারলেন না। যাই হোক আজ এইমাত্র যে ভূতের গল্পটা তিনি লিখেছেন, সেই গল্পটা ই-মেইল করে পাঠানোর জন্য তিনি ই-মেইল খুললেন। ইমেইল খুলতেই দেখতে পেলেন তার ইনবক্সে মেসেজ এসেছে। মেইল পাঠিয়েছে [email protected] থেকে। অদ্ভুত ব্যাপার! এই নামে কোন ই-মেইল এড্রেস হয় নাকি! তিনি মেইলটা খুলতেই দেখলেন সেই মড়ার খুলি এবং হাড়; নিচে লেখা — “ভূতের গল্প লেখা বন্ধ কর। ভূতের গল্প লিখে বহুৎ নাম, টাকাপয়সা, যশ, প্রতিপত্তি কামিয়েছিস! এবার ভূতের গল্প লেখা বন্ধ না করলে মৃত্যু সুনিশ্চিত! হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ! সাবধান!” রাতদুপুরে এই রকম একটা রসিকতা তাঁর মোটেও ভালো লাগলো না। তিনি মেইলের প্রত্যুত্তরে লিখলেন — “তোদের যা খুশি কর! আমি ভূতের গল্প লিখেছি, লিখছি এবং লিখব”। এটা লিখে সেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেলেন একটা খল-খল-খল-খল অট্টহাসির আওয়াজ! ভয়ঙ্কর সেই হাসির আওয়াজে অন্তরাত্মা যেন শুকিয়ে যায়! জগতের সমস্ত প্রেতাত্মা যেন একসঙ্গে উপহাস করে হেসে উঠছে রাজীববাবুর উদ্দেশ্যে। রাজীববাবু এতো এতো ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প লেখা সত্বেও আজকের মতো এতো অসহায়তা বোধ করেননি কোনওদিন। তার ভেতরে কেমন যেন একটা ভয় ঢুকে যায়। কী করবেন তিনি! তাঁর নিজের পথেই চলবেন, নাকি ওই ভূতডামর জিরো জিরো ওয়ান ডট কমের শাসানি মতো লেখালেখি বন্ধ করবেন! তিনি ভেবে পান না!
এভাবে আরও কিছুদিন অতিবাহিত হয়। রাজীববাবুর চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে যায়। তার এই মানসিক অশান্তির কারণে দুই চোখের নিচে কালি জমে। উস্কোখুস্কো চেহারা এবং মানসিক অস্থিরতা দেখে তার শুভানুধ্যায়ীরা তার প্রকৃত কারণ জানতে চান। রাজীববাবু বলেন কোনও এক ভূতডামর ডট কম থেকে তাকে শাসানি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে ব্যাপারটি এড়িয়ে যায়, অনেকে আবার বলে সাবধান রাজীববাবু, অনেক তো ভূতের গল্প লিখেছেন, এবার একটু শান্ত হন। ভূতেদের নিয়ে রসিকতা সব সময় তো ভালো নয়!
রাজীববাবু কি করবেন ভেবে পান না। কিন্তু বিভিন্ন সম্পাদকের কাছ থেকে টাকার অফার এবং লেখার অফার দু’টোই আসছে, তাকে তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেন না। অগত্যা তিনি আবার ধীরে ধীরে লেখায় মনোনিবেশ করেন। এরকমই একদিন রাতে যখন যম্পেশ একটা ভূতের গল্প কম্পিউটারে টাইপ করছেন, তখন হঠাৎ করেই স্ক্রিন জুড়ে দাপাদাপি শুরু হয়। সেই মড়ার খুলি এবং হাড় দু’টি প্রবল বেগে নাচানাচি করতে থাকে। তারপর একটা ভূতুড়ে হাত বেরিয়ে রাজীববাবুকে টেনে নেয় কম্পিউটার স্ক্রিনের মধ্যে — তারপর তাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় এদিক-ওদিক। রাজীববাবু এক সময় খেয়াল করেন তিনি ছুটতে ছুটতে শ্মশানে এসে পড়েছেন। অজস্র ভূতের দল তাকে তাড়া করে আসছে — সাদা ভূত, কালো ভূত, পেত্নী, শাকচুন্নী, জিন, গবলিন, পিশাচ, স্কন্ধকাটা, বিকলাঙ্গ ভূত, দুর্গন্ধযুক্ত ভূত, চিমড়ে ভূত, সাহেব ভূত, কবন্ধ, সিড়িঙ্গে ভূত — নানাপ্রকার ভূতে তাকে তাড়া করে আসছে আর হাড় হিম করা একটা খল-খল-খল হাসির আওয়াজ পিলে চমকে দিচ্ছে! হঠাৎই মুখ থুবড়ে পড়ে যান তিনি। অমনি একটা ভয়ঙ্কর সাপ ….
ঝট করে ঘুম ভেঙে যায় রাজীববাবুর। তিনি দেখেন কম্পিউটারের সামনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ইস্! এতক্ষণ ধরে স্বপ্ন দেখেছেন তাহলে! একটু জল পান করেন রাজীববাবু। দু’চোখ কচলে নিয়ে আবার লেখায় মনোনিবেশ করেন। কালকের মধ্যেই লেখাটা জমা দিতে হবে। অনেক টাকা দিয়েছে এই লেখাটির জন্য। হঠাৎ স্ক্রিনের মধ্যে সেই অদ্ভুত আওয়াজ আবার ভেসে উঠে — “রাজীববাবু! লেখা বন্ধ না করলে কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য! আমরা জানি যে তোমার সাপে খুব ভয়। লক্ষ লক্ষ সাপের প্রেতাত্মা তোমাকে কিন্তু ঘিরে আছে। যে কোন মুহূর্তে তারা তোমাকে দংশন করবে। সাবধান! হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ! সাবধান!”
রাজীববাবু এসবে আমল দেন না, লিখতেই থাকেন। লেখা শেষে যখন লেখাটি ই-মেইল করে পাঠাতে যাবেন তখনই আবার তাঁর কম্পিউটারে [email protected] থেকে একটা মেইল আসে। তাতে ভূতুড়ে অক্ষরে লেখা — “আজ মৃত্যু নিশ্চিত! বিষে বিষে হবে তোমার প্রায়শ্চিত্ত! হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ!” তারপর তিনি দেখতে পান স্ক্রিনে একটা অপার্থিব ভয়াবহ প্রেতায়িত অবয়ব ভেসে উঠছে। মূর্তিটি মানুষ, নাকি ভূত, নাকি ভিনগ্রহী, নাকি কোনও কদাকার পশু — তা তিনি বুঝতে পারেন না। আস্তে আস্তে সেটি রাজীববাবুর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তার চুলগুলো ক্রমাগত লম্বা হতে থাকে — রাজীববাবু সভয়ে খেয়াল করেন তার তো সাধারণ চুল নয়, এক একটা চুল যেন এক-একটা লিকলিকে সাপ! সাপগুলো কিলবিল করে ওঠে — তারপর তার সারা গায়ে দংশন করতে থাকে! আঃ! তীব্র জ্বালা! লুটিয়ে পড়েন রাজীববাবু।
— তারপর ? তারপর ?
— তারপর আর কি ? রাজীববাবু একাই থাকতেন। পরদিন তার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেয়। থানা থেকে লোকজন আসে। তারা এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখতে পায় রাজীববাবুর কম্পিউটারটি খোলা রয়েছে — সেখানে একটা ভয়াবহ খুলির ছবি যার চোখ-মুখ-নাকের ছিদ্রপথে বেরিয়ে এসেছে অনেকগুলো কিলবিলে সাপ! আর নিচে পড়ে আছেন রাজীববাবু! তার সারা শরীরে অজস্র সাপে কামড়ানোর মতো চিহ্ন! আশ্চর্য! সাপে কামড়ালে সাধারণত একবারই কামড়ায়! কিন্তু এতোবার কোনও সাপে কামড়াতে পারে! নাকি কামড়েছে অন্য কোনও প্রাণী! নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও অজানা রহস্য!
যাই হোক, রাজীববাবুর মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তে রাজীববাবুর শরীরে কোনও বিষ মেলে না! আর এটাই চরমতম আশ্চর্য!
— তারপর? তারপর?
— তারপর আবার কি! ওই যে ভূতডামর জিরো জিরো ওয়ান এ্যাট জি-মেইল ডট কম!
ভূতডামর জিরো জিরো ওয়ান ডট কম ভৌতিক গল্প -সমাপ্ত
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
রাজবাড়ী রহস্য
ব্রহ্ম দৈত্য
প্রত্যাবর্তন