বিদেশী বউ ছোট গল্প – জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
সমীরণবাবুর মনটা রাত্রি থেকেই একদম ভালো নেই।উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না যে বাবু, মানে ওনার একমাত্র ছেলে অতলান্ত নতুন বিয়ে করা বউ নিয়ে আমেরিকা থেকে ভোররাত্রে বাড়ি ফিরছে;সেটা ওনার ক্ষেত্রে আনন্দের না দুঃখের খবর।
সমীরণবাবু কলকাতা থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সারাজীবন বিজ্ঞান আর অঙ্ক পড়িয়েছেন।ভালো শিক্ষক হিসেবে এলাকায় ওনার যথেষ্ট সুনাম।ওনার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে বিদেশে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।মাঝে মাঝে পূজা বা কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলে তারা এখনো পায়ে হাত দিয়ে ওনাকে প্রণাম করে কুশল বিনিময় করে।তবে সমীরণবাবু সারাজীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হলেও ধ্যানধারণায় কেমন যেন একটু প্রাচীনপন্থী।ওনার স্ত্রী রমলা উচ্চ মাধ্যমিক ফেল। হলে কি হবে সাংসারিক বুদ্ধিতে নিজের স্বামীকে বলে বলে গোল দেবেন।বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসার পর আর পড়াশোনা বিশেষ এগোতে পারেননি।তবে গানবাজনার চর্চাটা এখনো ধরে রেখেছেন।পাড়ার বা অন্য কোথাও অনুষ্ঠানে লোকেদের অনুরোধে রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ভালোই গান।ওনাদের একমাত্র আদরের সন্তান বাবু চিরকালই পড়াশোনায় ভালো।ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দুবছর ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করে ,সেসব ছেড়েছুড়ে তিন বছর আগে মাস্টার্স করতে আমেরিকা গেল।আর সেখানেই পড়বি তো পড়, পড়লো এক নীলচোখের মেমের চক্করে।বাবু হয়তো দেশের বাড়িতে ফিরেই আনুষ্ঠানিক বিয়ে করতো কিন্তু বাধ সাধলো কোরোনা।অনেক চেষ্টা চরিত্র করেও দেশে ফেরা গেল না।ওদিকে মেয়ের তরফের হুড়োতাড়া।বাবু অবশ্য সবই বাড়িতে জানিয়েছিল।সমীরণবাবুর একটু আপত্তি থাকলেও, ওনার স্ত্রী আর আপত্তি করেননি।কারণ উনি ভালোই জানতেন আপত্তি করলে আর কে শুনছে।
গত বছর বোস্টনে কি একটা চাকরি পেয়ে বাবু জানালো যে ও লোলোকে বিয়ে করবে।লোলো নামটা শুনে সমীরণবাবু তো প্রথমে চমকে উঠেছিলেন।মেমসাহেবের এমন হুলোমার্কা বিতিকিচ্ছিরি নাম।ছবিতে তো লোলোকে বেশ টুকটুকে পরীর মতো দেখতে লাগে।ওর বাবা-মা কি অশিক্ষিত যে মেয়ের এমন নাম রেখেছে?বাবুকে আবার এ সব কথা বলাও যায় না;যদি রাগ করে।
মুশকিলআসানটা বাবুই করলো।একদিন কথা প্রসঙ্গে ফোনে বললো,”আমার বান্ধবীর ভালো নাম ললিটা।আমি আর আমার বন্ধুরা আদর করে লোলো ডাকি।”
রমলা মনে মনে ভাবেন আর হাসেন এই ভেবে যে এই সেদিনের লাজুক ,বইয়ে মুখ গোঁজা বাবু, গাল টিপলে এখনো নাকি যার দুধ বেরোয় সে কিনা বান্ধবীকে আদর করে কি নামে ডাকে সেটা বাবা-মায়ের কাছে বলছে।মেয়েটা সম্পর্কে ওনারা কিছুই জানেন না।অজানা-অচেনা জায়গায় গিয়ে বাবু কোনো বাজে চক্করে জড়িয়ে পড়ছে কিনা সেই নিয়ে রমলা ভীষণ চিন্তিত হন।পাশের বাড়ির ঝুমার মা,তৃনা আবার কোথা থেকে খবর এনেছে যে বাঙালি ছেলেরা নাকি বিদেশি মেয়েগুলোর ফর্সা রঙের প্রেমে পড়ে।যত সব ঝি-আয়া-মেথরানী মেয়েগুলো নিজেদের ফর্সা রঙের জৌলুস দেখিয়ে জুয়েল ছেলেগুলোকে পাকড়াও করে।সত্যিকারের ভালো পরিবারের মেয়েরা নাকি নিজেদের দেশের ছেলেদেরকেই বিয়ে করে।এটা শোনার পরেই রমলার মনটা আরো দমে গেছে।ছেলেকে এসব কথা তো আর জিজ্ঞাসা করা যায় না।তাও একদিন ফোনে বাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন ,” হ্যারে, মেয়েটার বাপ-মা কি করে?”
” বাপ -মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে।দুজনেই আবার নিজেদের নতুন সংসার পেতেছে।তবে লোলো আলাদা থাকে।এখানেই একটা স্কুলে চাকরি করে।”
স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি না মেঝে পরিষ্কারের চাকরি করে সেটা আর চক্ষুলজ্জার খাতিরে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে পারলেন না।মনকে প্রবোধ দিলেন -যাক, নিজে যখন পছন্দ করে বিয়ে করছে তো বউয়ের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
আসার একমাস আগে বাবু ওর মাকে ফোন করে বললো,” মা ,বাথরুমে একটা কমোড লাগিয়ে নিয়ো।বাড়িতে প্লাস্টিক পেন্ট আর পুরোনো লাইটগুলো চেঞ্জ করে এল ই ডি লাগাও।”
প্রায় পঁচিশ বছরের পুরনো বাড়ি।নীচে একটা গুদাম ঘর,রান্নাঘর আর বাথরুম।ওপরে দুটো শোবার ঘর,ঠাকুরঘর আর বারান্দা।দুটো ঘরেরএকটা সমীরণবাবুদের আর দক্ষিণ দিকের অন্যটা ছিল ছেলের ঘর।বহুদিন পর পুরো বাড়িটাই কিছুটা সারিয়ে সুরিয়ে রঙ করানো হলো।সমস্যা হলো বাথরুম নিয়ে।নিচের তলায়একটা মোটে বাথরুম।দুজনের সংসারে তাতেই ভালোভাবে চলে যেত।সিঁড়ির নীচে একটা বাথরুম বানিয়ে তাতে কমোড বসানো যায় কিনা সেটা নিয়ে অনেক গবেষণা হলো।কিন্তু মাথা ঝুঁকিয়ে বসতে সমস্যা হবে।এখন বাবু আর ওর বউ কদিনের জন্য এলেও সকালে সমস্যা দেখা দিতে পারে আন্দাজ করে সমীরণবাবু ওনার এক প্রমোটার ছাত্রকে বাড়িটা দেখিয়ে আরেকটা বাথরুম দোতলায় ছেলের ঘরের লাগোয়া বানাতে চেয়েছিলেন ।কিন্তু তাহলে ঘর ভেঙে ছোট করে বানাতে হবে।ওর আবার হ্যাপা অনেক,খরচও বেশি।রমলা কিছুতেই নিজেদের ঘরটাকে ছোট করতে রাজি নন।সুতরাং নিচের তলার ওই সবেধন নীলমণি একটা বাথরুমেই চালাতে হবে।দুজনের প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবুর কথামতো ওটাতেই কমোড বসানো হলো।বাবুর আসার তখন বেশ কদিন দেরি।সমীরণবাবু ও ওনার স্ত্রী কমোড ব্যবহার করতে গিয়ে নাজেহাল হলেন।কমোডে বসলে পেট ঠিক পরিষ্কার হয় না।দুজনেই রাত্রে ইসবগুলের ভুষি গিলতে লাগলেন। ঠিক হলো , খরচ যাই হোক না কেন, ছেলে-বউ ফিরে গেলে আবার পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যাবেন।মশার উৎপাত কাটাতে জানলায় নেট বসলো।ছাদে নতুন টবে পুরোনো গাছগুলোই শোভা পেতে লাগলো।পাশের বাড়ির ঝুমা ওর আদরের বাবুদা আর মেমসাহেব বউয়ের জন্য ইউ টিউব দেখে নতুন নতুন রান্না শিখতে লাগলো।
বাবু আগেই বলে দিয়েছিল যে মাঝরাত্রে এয়ার পোর্টে আসার দরকার নেই।ও আর লোলো ভাড়ার গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়িতে ভোর বেলায় হাজির হবে।যেমন কথা তেমনই কাজ।ভোর ছটায় বাড়ির দরজায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনেই দোতলা থেকে সমীরণবাবু আর রমলা নীচে গেটের কাছে নেমে এলেন।রমলা মনে করে ঠাকুরের তাক থেকে শাঁখটা নিয়ে এলেন।শঙ্খধ্বনি দিয়ে নতুন বউকে তো বরণ করতে হবে।ওনারা এসে দেখেন বাবু গাড়ির থেকে দুটো পেল্লায় সাইজের সুটকেস নামাচ্ছে।সুন্দরী, একটু মোটাসোটা,ফর্সা লোলো জিন্স আর লাল টি শার্ট পরে সুটকেস নামাতে স্বামীকে সাহায্য করছে।কোনো জড়তা নেই।ওদের সবাই কে দেখে ভুবনমোহিনী হাসি দিলো।হাতদুটোকে বুকের কাছে জড়ো করে ঘাড়টা একপাশে হালকা ঝুঁকিয়ে সবাইয়ের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে মিষ্টি করে ” নমস্তে” বললো।
ইতিমধ্যে পাড়ার নেড়িকুকুরগুলো লোলোকে দেখে উৎসাহী হয়ে শুঁকতে শুরু করতেই লোলো ওদের মাথায়-গলায় হাত বুলিয়ে আদর শুরু করলো।
রমলা সেসব দেখে বলে উঠলেন,” ইস, ছি ছি।সকাল সকাল নেড়ি ছুঁলো।”
এবার বাবু ওর মায়ের গলা পেয়ে ওর বউকে সাবধান করে জানালো যে একটা কুকুরেরও ভ্যাকসিন দেওয়া নেই।লোলো আবার বেওয়ারিশ কুকুর দেখেনি।তাই একটু অবাক হয়ে বরের দিকে আবার নেড়িগুলোর দিকে তাকালো।
পাশের বাড়ির ঝুমা,ঝুমার মা, পাড়ার বুলটিপিসি আর ওনার মেয়ে সবাই যেন এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য বসে ছিল।সবাই এসে গাড়ির চারপাশে বাবু আর লোলোকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে।ঝুমা রমলার হাত থেকে শাঁখটা কেড়ে নিয়ে বাজাতে শুরু করলো।
লোলো এসব দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বাবুর হাতটা চেপে ধরতেই বাবু যেন নিজের বাবা-মা আর চেনা পরিচিতদের সামনে একটু লজ্জা পেল।লোলোর হাতটাকে সরিয়ে রেখে ও একটা সুটকেস টানতে টানতে বাড়ির ভিতর ঢুকতে লাগলো।সমীরণবাবু অন্য সুটকেশটা টানতে যেতেই লোলো হাত দিয়ে বারণ করে বলে উঠলো ,” আই উইল ডু ইট”।তারপর শ্বশুরকে ভারী সুটকেশটা টানতে না দিয়ে নিজেই ওটা ঘড়ঘড় করে টানতে টানতে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলো।সমীরণবাবু মনে মনে খুশি হলেন।যাক পাড়ার লোকেরা তো দেখলো নতুন বউটা নিজের কাজ নিজেই করে।আতুপুতু বঙ্গবধুর মতো ঘোমটা দিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে ভারী সুটকেশটা নিজেই টেনে ঘরে তুললো।মনে মনে ভাবলেন নিজের কাজ নিজে করেই পশ্চিম আজ এত এগিয়ে গেছে।
ওদিকে রমলা কিন্তু ভিতর ভিতর চটে গেলেন।ওনাকে পাত্তা না দিয়ে বউ ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলো।নিদেনপক্ষে নেলপলিশ লাগানো সুন্দর ফর্সা আঙুল গুলো নাড়িয়ে একটা “হাই” পর্যন্ত করলো না।ওনার সব রাগ ছেলের ওপরে গিয়ে পড়লো।কিরকম পড়াশোনা জানা উচ্চশিক্ষিত ছেলে হয়েছে?সামাজিক রীতিনীতি পর্য্যন্ত ভুলতে বসেছে।বাপ মাকে প্রণাম করে নতুন বউ নিয়ে ঘরে ঢুকতে হয় সেটাও ভুলে গেছে।লোলো নাও জানতে পারে।কিন্তু ওকে রীতিনীতি শেখানোর দায়িত্ব তো বাবুর ছিল।লোলোকে পাখিপড়ার মতো সব লোকাচার শিখিয়ে আনা কি উচিত ছিল না?
ছলছল চোখে ওনার মনে পড়লো ,এই বাবুই ছোটবেলায় কারণে অকারণে ওনাদের কত পা ছুঁয়ে প্রণাম করতো।ও কেন প্রথমেই লোলোর সাথে বাবা-মায়ের পরিচয়টা করালো না?স্কাইপে পরিচয়ই কি সব?
ওদিকে ঘরের ভিতর ঢুকে লোলো ওর শ্বশুরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়েছে ওদের ঘরটা কোথায়।সিঁড়ি দিয়ে দুটো সুটকেসই ও দোতলায় টেনে তুলে ফেললো।সমীরণবাবু আর রমলা ভ্যাবাচেকা মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন।
ঘন্টা তিনেক পরে দেখা গেল বাবু একটা সুটকেস হাট করে খুলে বসেছে।পাশে বাবা-মা,ঝুমা আর ওর মা আর সাথে কাজের বউ প্রজাপতি সবাই কৌতুহলী চোখে সুটকেসের পানে চেয়ে আছে।সুটকেসের গভীরে কতো রহস্য লুকিয়ে আছে আর বাবু সে সব রহস্যের জট কিকরে খোলসা করছে সেটা নিয়ে সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা।বাবু কাউকে সাবান,কাউকে সেন্ট বা জামা; সুটকেস থেকে বার করে একে একে দিতে লাগলো।একগাদা চকলেট সবাইকে ভাগ করে দিল।মাকে একটা ভেনিটি ব্যাগ আর বাবার জন্য ব্যাটারি চালিত দাড়ি কাটার যন্ত্র বার করতেই সবার নজর লোলোর দিকে গেল।লোলো একটা কামড়ানো আপেলের ছবি দেওয়া মোবাইল ফোনে বাড়ির আনাচে কানাচের ছবি তুলতে ব্যস্ত।ও বাড়ির কোনায় নাকি একটা আরশোলা দেখেছে।আরশোলা খাটের তলায় ঢুকতেই প্রবল উৎসাহে লোলো খাটের তলায় ছবি তুলতে ঢুকে পড়লো।
” মা, আজ রাত্রে আমরা হোটেলে থাকবো ভাবছি।লোলো তো এই গরমে কাহিল।তারপর জেট ল্যাগ।কালকে সকাল সকাল আমি আবার চলে আসবো।” বাবুর মুখে দুপুরে খেতে বসে এই কথা শুনে সমীরণবাবু আর ওনার স্ত্রী স্তব্ধ হয়ে গেলেন।রমলার বুক বেয়ে একটা চাপা কান্না উঠে এলো।অনেক কষ্টে ওটা সামলে বললেন,” দক্ষিণের দিকের জানালাটা হাট করে খুলে দিস আর ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিলে আর গরম লাগবে না।দরকার হলে নীচের টেবিল ফ্যানটা তোদের মাথার কাছে রেখে দিস।”
” চারিদিকে এতো আওয়াজ, লাউড স্পিকারে হরিনাম সংকীর্তন,আশেপাশের বাড়ির লোকেদের মধ্যে ঝগড়ার শব্দ রাতে ঘুমোতে দেবে না।আমরা এতটা জার্নি করে এসেছি।ভীষণ টায়ার্ড।” বাবু যুক্তি দিয়ে মাকে বোঝায়।
সমীরণবাবু বুঝলেন বাবুকে বাধা দেওয়া মুশকিল।এই বয়সে জোরাজুরি করে কি বিবাহিত সন্তানকে আটকানো যায়?তাছাড়া ওর যুক্তিটারও জোর আছে।
লোলোর সকালে আরশোলার ছবি তোলা হয়ে গেছে।দুপুরে খাওয়ার পর ও হটাৎ ঘরের সিলিংয়ে একটা টিকটিকি আবিষ্কার করলো।ওর সে কি উত্তেজনা টিকিটিকিটাকে নিয়ে।যেন জ্যান্ত ডাইনোসর দেখতে পেয়েছে।টিকটিকিটার পিছন পিছন ছবি তুলতে ছুটলো।কখনো চেয়ারে উঠে, কখনো খাটে দাঁড়িয়ে টিকটিকির দিকে মোবাইল ক্যামেরা তাক করে ছবি তুলতে লাগলো।টিকটিকিটাই লোলোকে ঘর থেকে বারান্দা, আবার বারান্দা থেকে অন্য ঘরে নিয়ে চললো।লোলোর উত্তেজনা মারাত্মক বেড়ে গেছে।
পশ্চিমাকাশে টুপ করে সূর্যদেব ডুব দিতেই অন্ধকার ঘনিয়ে এলো।এখানে ভোল্টেজ ওঠানামা করে।সন্ধ্যার মুখেই কম ভোল্টেজের কারণে আলোগুলো টিমটিম করে জ্বলে।রাত দশটায় সব স্বাভাবিক হবে।বাবু একটা ব্যাগে ওদের দুজনের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।মায়ের সন্ধ্যা বেলায় শঙ্খ বাজানোর একটু পরেই ও বেরোবে।নীচের ঘরে সমীরণবাবু আর ওনার ছেলে বসে আছে।রমলা সন্ধ্যপ্রদীপ দিয়ে এসে বসলেন।লোলো দুপুরে একটু শুয়ে নিয়েছিল।এখন আবার নতুন উৎসাহে মোবাইল হাতে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে টিকটিকি খুঁজছে।মশা মারার কচ্ছপ ধুপ জ্বলতে দেখে লোলো ওর নীল চোখগুলো বড় বড় করে ফেললো।ইতিমধ্যে পাশের বাড়ির চোর বেড়ালটা দুধের খোঁজে বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে।লোলোর চোখ ওটার দিকে পড়লো।
বাবু লোলোকে বললো ,” হানি, এবার আমাদের বেরোতে হবে।রাত্রে হোটেলে থাকবো।কাল আবার এখানে ফিরবো।”
লোলো ওর বড়ো বড়ো চোখে সবার দিকে একটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,” কেন হোটেলে কেনো? আমি এই সুন্দর জায়গাটা ছেড়ে এখন কোথাও যাবো না।আমার অনেক ছবি তোলা বাকি।”
ঠিক সেই সময়তেই সিলিং এ ঘুরতে আসা টিকিটিকিটা জোরে ডেকে উঠলো
‘টিক,টিক,টিক’
সমীরণবাবু বিজ্ঞানের ছাত্র আর ছাত্রদের বিজ্ঞানই পড়িয়ে এসেছেন।ওনার মনে পড়লো ছোটবেলায় মা-মাসীদের বহুবার বলা কথাটি” টিকটিকির ডাক শুভ ঘটনার লক্ষণ”। যেটা কিনা উনি চিরকাল অবিজ্ঞান বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আজ এই সন্ধ্যাবেলায় ওনার সেই কথাটাই ভীষণভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো।বাবুর বউয়ের জন্য হঠাৎই ওনারা গর্ব অনুভব করলেন।
বিদেশী বউ ছোট গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভরুয়া
উদ্বর্তিনী
নীলবাস্প