অনুপমা ছোট গল্প – সাহানা হাজরা
প্রথম পর্ব
এথেন্স থেকে ফেরা
সাতাশ বছরের যুবক প্রশান্ত সবেমাত্র লণ্ডন থেকে ফিরেছে তার সদ্য বিবাহিতা বউ লরেন্সকে নিয়ে। লরেন্স এসেই দেখে অনুপমা বেশ গুছিয়েই রেখেছে ওর আর প্রশান্তের ঘর।প্রশান্ত সেই যে গিয়েছিল লণ্ডন।ফিরে এসে দেখছে ওদের বাড়িতে কাজ করতে আসা সেই ছোট্ট অনু আজ এতবড় হয়ে গেছে।
‘কিরে অনু আজ অনেকদিন পর তোকে দেখছি।বেশ বড় হয়ে গেছিস যে।’ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাকরিটা ছেড়ে সবেমাত্র কলকতায় এসেছে লরেন্সকে নিয়ে।ওখানেই বিয়ে করেছে পাশ্চাত্য শিক্ষিতা রমণী লরেন্সকে।প্রশান্তের মা যোগমায়াদেবী একজন খুব মমতাময়ী,দয়াময়ী নারী।তিনি কোনদিনই অনুকে প্রশান্তের থেকে ছোট করে দেখেননি।তিনি সবসময় অনুকে নিজের মেয়ের মতই দেখে এসেছেন।
‘কিরে লরেন্স পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিস তো?’
‘হ্যাঁ প্রশান্ত দা,এ চলছে।’
‘জানো লরেন্স ওকে আমি ছোটবেলা থেকে পড়িয়ে আসছি।সেই যখন প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এসেছিল।আমাকে দাদাবাবু বলে ডাকত।’
‘ওহ্ টুমিই অনু ?হামি টো টোমার নাম কটবার ওর মুখে শুনেছি।’হেসে বলে লরেন্স।
যোগমায়া দেবী প্রশান্তের এই বিয়ে মেনে নেয় সহজেই।তিনি কখনই তাঁর ছেলের কথার
খেলাপ করেননি।
‘ম্যাডাম প্রশান্তদার জন্য কি হব এবেলা একটু বলবেন প্লিজ ?।’
‘হ্যাঁ ,টুমি কি খাবে ?হামাকে বলটো।’লরেন্সের কথার উত্তরে প্রশান্ত বলে বসে অনু তো জানে আমি কি খাই।
প্রশান্তের এই কথায় অনু একটু লজ্জিত হয়ে পড়ে।আর বলে –’জানি,কিন্তু তুমি তো এতগুলো বছর এানে ছিলে না।সেক্ষেত্রে তোমার পছন্দ-অপছন্দেরও বদল ঘটতে পারে।’
‘না অনু তেমন কিছু পরিবর্তন ঘটেনি।’এই বলে লরেন্সের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসে।
‘ও টো রাটে ভাট খায়।আর টার সাটে দুহ্টো রুটিও ঠাকে।হামি টো টাই করটাম যখন লণ্ডনে ছিলাম।মাছ,মাংস,ডিম খুউব একটা পাওয়া যায়না।তাই ভেজ খাবারই বেশি খাওয়া হত আমাদের।ও ডইহি খুউব পসণ্ড করে।’
লরেন্সর এই রকম কথায় অনু হাসেনি।তবে প্রশান্তর মনে তার জন্য যে একটা গভীর প্রেম লুকিয়েছিল সেটা অনু জানত।অনু কোনোদিনই সেটা বুঝতে দেয়নি কাউকে।সে নিজেও না বোঝার ভান করেছিল অনেকবার।
‘এই ওয়ান পিসটা তোমার জন্য অনু।দেখো পছন্দ হয় কিনা।’
“হ্যাঁ,কেন হবে না অনুর পছন্দ।দেখাও না ওকে।”বলতে বলতে প্রশান্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
লরেন্সের কাছে ব্যাপারটা খুব একটা ভালো ঠেকেনি।সে সেই মূহুর্তে কিছু না বললেও অনুর প্রতি প্রশান্তের সুপ্ত ভাবনা সম্পর্কে সে জানত।লরেন্সকে যখনই ভালোবাসতে গেছে তখনই অনুকে পেয়েছে।
অনু ওয়ান পিস টা দেখে বলে -“না ওর পছন্দ নয়।”
প্রশান্ত বলে – “কেন,পছন্দ নয় কেন?”অনু বলে – “না,প্রশান্ত দা আমি এটা পরতে চাই না।”
লরেন্স প্রশান্তকে দেখে বলে -“তুমি এত উত্তেজিত হোয়ো না।ও পরতে চাইছে না যখন তখন আর কি করবে।অামিই বরং…”
কথা থামিয়ে দিয়ে অনু বলে -প্রশান্ত দা আমাকে সেই ছোটবেলা থেকে পড়িয়ে আসছে।লরেন্স অনুর এই কথায় হেসে বলে – “হ্যাঁ,আমি জানি।”
“তুই কি পড়বি অনু?আজও তোকে পড়াতে পারি আমি।”প্রশান্তের কথায় অনু বলে পড়ব তবে তোমার কাছে নয়
লরেন্সের কাছে।
লরেন্স হেসে উত্তর করে “হ্যাঁ,আমিই এবার থেকে ওকে পড়াবো।ইংরাজী পড়াবো আর আমাকে ও বাংলা পড়াবে।”
“ডু ইউ লাইক দ্যাট অনু ?”
” ইয়েস লরেন্স।উই আর ফ্রেন্ডস্।”
দ্বিতীয় পর্ব
অনুর বিয়ে
পাঁচ বছর পর……
১৩ ই বৈশাখ……
অনুর বিয়ে……
লরেন্স এখন খুব ভালো বাংলা বলতে শিখে গেছে।বাড়িতে এত হৈ-হুল্লোড় যে লরেন্সকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।লরেন্সের হাতেই অনুর বিয়ের সব দায়িত্ব।লরেন্স এতদিনে সব শিখে গেছে।সব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালোভাবে মিশে গেছে।অনুর বিয়ে হচ্ছে সেই লণ্ডনে।যেখানে একসময় লরেন্স ছিল।এথেন্সে তার এক ভাইয়ের সাথে লরেন্স বিয়ের ঠিক করেছে।লরেন্স অনুকে উচ্চশিক্ষিতা করে তুলেছে।অনু যেমন তাকে পারিবারিক মূল্যবোধ সম্পর্কে অবগত করেছে,ঠিক তেমনই অনুকেও লরেন্স চেয়েছে কিছু ইংল্যাণ্ডীয় কালচার সম্পর্কে অবগত করাতে।ওখানকার কালচার,বিয়ে সবরকম অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানিয়েছে সে অনুকে।প্রবাসে দূর্গাপূজো সম্পর্কেও অনুকে জানিয়েছে।দূর্গাপূজোয় লরেন্স কি করত না করত।গান জানে ভালো লরেন্স।রবীন্দ্রসঙ্গীতও তার নখদর্পণে।
লরেন্সের উদ্যোগে অনুর সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় ডেভিডের।যোগমায়া দেবী এই বিয়েতে ছিলেন না।তিনি গিয়েছিলেন তাঁর বোনের মেয়ের বিয়েতে।প্রশান্তের বাবা গিয়েছিলেন পারিবারিক বিজনেস সূত্রে হাজারদুয়ারীতে।ফিরতে দু-তিন দিন সময় লাগবে।অনুর বিয়েটা ঘটা করে লরেন্স আর প্রশান্তই দেয়।প্রথমের দিকে প্রশান্তের অমত থাকলেও পরে মেনে নেয়।লরেন্স তার চাওয়া-পাওয়া গুলো বুঝত।তার মনের খোরাক লরেন্স মেটাতে পেরেছিল।
তৃতীয় পর্ব
আবার এথেন্সে
একটা বড় ফ্ল্যাট।বড়-বড় দুটো বেডরুম।একটা ডাইনিং স্পেস,একটা বড় রান্নাঘর,বাথরুম আর ভেতর দিকে আছে একটা বিশাল বড় ড্রয়িং রুম।যেটাকে অনু স্টাডিরুম বানিয়েছে।কি নেই সেই রুমে।ড্রয়িং রুমে ঢুকেই সামনে কাঁচের একটা বড় টেবিল,তার সামনে সোফা।পাশে আছে একটা বড় বইয়ের আলমারি।সাতটা তাকের আলমারিতে বই সারি-সারি ভাবে সাজানো।সামনের তাকেই আছে ‘ইউরোপ যাত্রা’,’লণ্ডন ডায়েরি’ ইত্যাদি বই।
সাত বছর…..
অনুর লেখা বই ‘সিলিকন ভ্যালি।’
“নমস্কার।আসুন।”এই বলে কিট্টি দরজাটা খোলে।কিট্টি হল অনুর পরিচারিকা।পি.এ ও বলা যেতে পারে।কিট্টি অনুদের ফ্ল্যাটের সবরকম কাজকর্ম করে থাকে।সকাল বেলা থেকে রুটিন মেইনটেইন করা তার কাজ।আরব তো অনুকে নিয়ে খুবই কনসার্ন।সে সবসময়ের জন্য কিট্টিকে অনুর জন্য রেখেছিল।অনুকে লণ্ডনে নিয়ে আসার পর থেকেই ডেভিড এত খুশি ছিল যে,ডেভিড তার প্রাক্তন বান্ধবী জিলেটের কথা ভুলেই গিয়েছিল।অনুর ভালোবাসায় ডেভিডের এতটা পরিবর্তন ঘটেছিল যে লরেন্সও এতটা ভেবে উঠতে পারেনি যে তার ভাই ডেভিডের এতটা চেঞ্জেস আসবে।লরেন্স জানত জিলেটের ব্যাপারটা।সে নিজে ডেভিডের পুরোনো ঘটনাগুলো অনুকে বলেছিল।জিলেট ছিল একজন খুব জনপ্রিয় গায়িকা।এথেন্স শহরের এক বিখ্যাত বার ডান্সার এন্ড সিঙ্গার।সেই বারেই জিলেটের সাথে প্রথম ডেভিডের পরিচয় ঘটে।জিলেট ছিল খুবই সফ্ট হার্টেট একজন মেয়ে।এথেন্সের বার ডান্সার এণ্ড সিঙ্গার ইন্ডিয়ায় পাত্তা পাবে না।একরকম বলতে গেলে ইন্ডিয়ায় পতিতা নারী হিসাবেই তাকে ধরে নেওয়া হয়।তাদের মর্যাদা দেওয়া হয় না।লরেন্সকে প্রথম থেকেই প্রশান্ত এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে জানিয়ে রেখেছিল।লরেন্স ইন্ডিয়ার কালচারে পরিপূর্ণ তো ছিলই তার সাথে-সাথে তার ডেভিডের মূল্যবোধের হানি ঘটতে দেয়নি লরেন্স।সে কখনই মেনে নেয়নি জিলেটকে।মনে-মনে জিলেটকে সাপোর্ট করলেও মূল্যবোধ তাকে কোনো এক জায়গায় জিলেটের সাথে ডেভিডের সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি।তবে ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ নামক ব্যাপারটা লরেন্সকে খুবই ভয়ভীত করে রেখেছিল।যে কারণে প্রশান্তের সাথে বিয়ে নিজের ভাই ডেভিডের সাথে প্রত্যেকদিন যোগাযোগ রাখা।যা কিনা লরেন্সকে বাধ্য করেছিল জিলেটের থেকে ডেভিডকে আলাদা করতে।জিলেটও সেটা জানত।সেইজন্য লরেন্সের একবার বারণেই সে কোনোদিনও আর ডেভিডের সাথে যোগাযোগ করেনি।
ডেভিড ছিল খুবই মর্ডান একজন পুরুষ।পুরোনো মূল্যবোধ যেমন তার মধ্যে ছিল,তেমনই সে নতুনকে অ্যাকসেপ্ট তাড়াতাড়ি করতে পারত।সে কোনোদিনই বাস্তবতা থেকে দূরে সরে থাকেনি।’রিয়ালিস্টিক ম্যান’ বলে প্রশান্ত তাকে ডাকে।’রিয়ালিজম’ কি জিনিস সেটা ডেভিড বুঝিয়ে দিয়েছিল জিলেটের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।পরকীয়তায় সে যদি চলেই যেত তাহলে পারিবারিক মূল্যবোধে আঘাত হানত।তার দিদি লরেন্সকে সে জিলেটের ব্যাপারে জানাতই না।ডেভিড সেটা করেনি।অনুকে পাওয়ার পর থেকে ডেভিডের মধ্যে আরোও বদল ঘটতে থাকে।অনু ডেভিডের জীবনের এক ক্ষুদ্র আলোক বিন্দু।যে আলোক বিন্দু থেকে ডেভিডের জীবনের সামগ্রিকতা।
চতুর্থ পর্ব
অনুপমার অ্যাচিভমেন্ট
কিট্টিকে অনুর দেখভালের জন্য ডেভিডই বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।কিট্টি ছিল অনুর সবসময়ের সঙ্গী।তার সখী।যেখানেই যেত কিট্টিকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত।কিট্টিও ছিল এথেন্সের একজন খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে।তার কাছে যেন এথেন্স শহর ছিল হাতের মুঠোয়।ফ্ল্যাটের একটা ঘরে কিট্টি একা থাকত।
দরজা খোলার পর…..
“হোয়্যার ইজ ডঃ অনুপমা ডেভিড ক্রিস্টেল?”
“উনি ভেতরে।আপনারা আসুন।”
ভেতরের স্টাডিরুম……
দুটো বড়-বড় বইয়ের আলমারি।একটা ফোর সিটের সোফা,দুটো সিঙ্গেল সিটের সোফা।সামনে কাঁচের একটা মস্ত বড় টেবিল (টি-টেবিল)।
অনুপমা একটা বই হাতে নিয়ে পড়ছিল।
“গুড ইভিনিং আসুন।”এই বলে বইটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে দুটো হাত জড়ো করে নমস্কার সূচকে ওঁনাদের স্বাগত জানায়।
“আসুন,বসুন ডঃ ম্যান্ডেলিন,ডঃ মার্গারেট,ডঃ ইমলি অ্যান্ড ডঃ ডেনিম প্লিজ টেক সিট।”
“ও ইয়েস,ইয়েস থ্যাঙ্ক ইউ।”
“কিট্টি ফোর কাপ কফি উইথ স্ন্যাকস্।”
অনুর কথায় কিট্টি কিচেনে যায়।
আপনার লেখা সিলিকন ভ্যালির এত বড় জনপ্রিয়তার পর এবার আপনার সাথে আমাদের পাঁচজনের সম্পাদনার ব্যাপারে ডিসকাশটা চালিয়ে যেতে চাই।এই বলে ডঃ ইমলি ডঃ মার্গারেটের দিকে তাকায়।ডঃ ইমলি খুব স্বচ্ছন্দে বাংলা বলতে পারে।
“ওহ্ ইয়েস হোয়াই নট।”এই বলে অনু সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে।
ডঃ মার্গারেট অনুপমার এই হতচকিতভাবে উঠে পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করায় অনুপমা বলে-
“প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।আপনারা বসুন। আমি একটু ভেতরের ঘর থেকে আসি।”
এদিকে কিট্টি কফি আর তার সাথে স্ন্যাকস্ নিয়ে চলে আসে।
কিট্টি সকলের সামনে অনুপমাকে ম্যাডাম বলেই সম্বোধন করে।বাকি সময় কিট্টির ছাড়।সে অনুপমাকে ‘ক্যাপটিভ’ বলে ডাকত।এই ক্যাপটিভ বলার কারণ বারংবার জিজ্ঞেস করেও অনুপমাকে কিট্টির কাছে হার মানতে হয়েছে।
যতক্ষণ অনুপমা ভেতরের ঘরে ছিল ততক্ষণই কিট্টি -ই সকলকে আপ্যায়ণ করছিল।সচরাচর কিট্টি এটাই করে থাকে।
প্রায় দশ মিনিট পর……
অনুপমা ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এল।হাতে চারটে গিফট্ প্যাক।
“একি কিট্টি ওঁনারা এখনও কিছু নেননি।একি ডঃ ম্যান্ডেলিন,ডঃ ডেনিম প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।একটু দেরি হয়ে গেল।আপনারা স্ন্যাকস্ তো নিন।”এই বলে অনুপমা এসে তার সিটে বসে।
“না,না,আপনি একদম ব্যস্ত হবেন না ডঃ ক্রিস্টেল।উই আর অ্যাবসোলিউটলি কমফরটেবল।”
ডঃ ডেনিম কিট্টির দিকে তাকিয়ে বলে ” ইউ ক্যান জয়েন উইথ আস।প্লিজ ডোন্ট হেজিটেড।”
কিট্টি সবসময়ই অনুপমার কাছের সঙ্গী।অনুপমার সবরকম মিটিং -এ কিট্টিকে থাকতে হয়।কিট্টির কিছুই তেমন কাজ থাকে না।শুধুমাত্র অনুপমার হাতের ফাইলগুলো কিট্টি পাস করে নতুন অভ্যাগতদের হাতে দিয়ে দেয়।এই ফাইল দেওয়া-নেওয়ার কাজটা কিট্টি করে থাকে।
ডঃ ডেনিমের কথায় কিট্টি বসে পড়ে একটা সিটে।আর বলে- প্লিজ,যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে আমাকে বলবেন।
প্রথম সাক্ষাতেই ডেনিমের নজরে পড়ে যায় কিট্টি।ডেনিম মানুষটা খুব একটা ভালো প্রকৃতির ছিল না সেটা ধরেই নেওয়া যায়।তার এমন কিছু আচরণ ছিল যেটা কিট্টির কাছে বিরক্তির উদ্রেক করেছিল।তার কিছু কথাবার্তা,আচরণ যেগুলো কিট্টি কোনোদিনই সহ্য করতে পারত না।সে অনুপমাকে ইশারায় ব্যাপারটা জানাতে চেয়েছিল।কিন্তু অনুপমা বুঝেও সেই মূহুর্তে না বোঝার ভান করে।
কফি ইস্ ভেরি টেস্টি অ্যান্ড স্ন্যাকস্ টাও অসাধারণ বানিয়েছেন আপনি কি যেন নাম আপনার?হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।এই বলে ডেনিম কিট্টির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
স্ন্যাকস্ খুবই টেস্টি।ডেনিমের এমন কথায় অনুর খটকা না লাগারই কথা।
অনুপমা বলে – কিট্টি আমাদের খুব ভালো স্ন্যাকস্ বানাতে পারে। ও এইসবে খুবই এক্সপার্ট।এতে জাস্ট ক্রিম উইথ স্যালাড আছে।দ্যাটস্ অল।
“আপনি কি আর একটা নেবেন?”কিট্টির এই কথায় ডেনিম বলে-“ওহ্ ইয়েস।আই ওয়ান্ট টু সি ইওর কিচেন।মে আই মিসেস ক্রিস্টেল?
অনুপমা এই কথার কোনো উত্তর দিতে পারল না।শুধু বলল”হোয়াই নট”।কিট্টি তুমি নিয়ে যাও মিস্টার ডেনিমকে।উনি দেখতে চাইছেন।গো…..গো……।
কিট্টি ভেবেছিল অনুপমা কিট্টির ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।কিন্তু কিট্টির কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই এই ব্যাপারে।সে আর কথা না বাড়িয়ে ডেনিমকে কিচেনে নিয়ে গেল।
************************
“এগুলোর কি প্রয়োজন ছিল বলুন তো মিসেস ক্রিস্টেল।”
ইমলির কথায় সায় দিল ডঃ মার্গারেট।
এ গুলোর প্রয়োজন আছে বৈকি !!! রাখুন।
চারটে গিফট প্যাকে চারটে শিবলিঙ্গ ছিল।
মার্গারেট প্রথম খুলল তার গিফট্ প্যাকটা।খুলেই আশ্চর্য হয়ে গেল।সে অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল –
“হোয়াট ইস দিস্???”
অনু শান্তস্বরে জবাব দিল।দিস্ ইস্ কলড শিবলিঙ্গ।
“সিব লিঙ্গ?”
“নো শিব লিঙ্গ।”
ডঃ মার্গারেটকে শিবলিঙ্গের ‘স’-এর বদলে ‘শ’-করাতে প্রায় পনেরো মিনিট লেগে গেল।
“আপনি খুব ভালো স্টুডেন্ট ডঃ মার্গারেট।ডু ইউ নো দ্যাট???”
“ওহ্ থ্যাঙ্ক ইউ ফর দিস্ শিবলিঙ্গ।”মার্গারেটের এই কথায় অনুপমা বলল আপনাকে একটা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই।
“উষ অভরথনা???”
হেসে অনুপমা বলল-“ইয়েস ওয়ার্ম ওয়েলকাম।”
“ওহ্ থ্যাঙ্ক ইউ ডঃ ক্রিস্টেল।”
“আমাদের ইন্ডিয়ায় কেউ কারোর বাড়িতে গেলে গিফট্ নিয়ে যায়।যদি কোনো অনুষ্ঠান থাকে তবে।এখানে নিয়মটা একটু অন্যরকম।এটাই কালচার।”অনুপমার কথায় ডঃ ইমলি বলল –
“যেটা আপনি সহজেই রপ্ত করতে পেরেছেন।”
ডঃ ইমলি অনুপমাকে একটু ঈর্ষান্বিত চোখেই দেখত।যদিও ইমলির লেখা ‘ড্যানিশের ফার্স্ট লিভিং উইথ’-বহু চর্চিত একটা বই।
অনুপমার এই জায়গায় পৌঁছতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল বৈকি! সে কথা মনে করলেই অনুপমার হৃদয় ক্যাকটাস বিদ্ধ হয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।হৃদয়ের অঝরের রক্ত সামলাতে-সামলাতে তার বছর খানেক লেগে যায়।যাক সে কথা।তবু অনুপমা হার মানতে শেখেনি বলেই আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে।
*********************
“প্লিজ ইউ ডোন্ট টাচ মি।”
“হোয়াই??? এতে দোষের কি দেখছো তুমি কিট্টি?
“নাহ্।প্লিজ ইউ স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি।এই বলে কিট্টি খানিক হন্তদন্ত ভাবেই অনুপমার মিটিংয়ে ফিরে আসে।অনুপমার নজরে এই সব পড়লেও সে কিট্টিকে গুরুত্ব দেয়নি।ততক্ষণে অনুর চারজনের সাথে একটা ফাইল সাইন করা হয়ে গেছে।নেক্সট মিটিং – টা যে হবে মার্গারেটের বাড়িতে সেটাও ফাইনাল।
এ কি ডেনিম কি ব্যাপার !!! কোথায় ছিলেন আপনি এতক্ষণ ??? ম্যান্ডেলিনের কথায় ডেনিম বলে –
“ও টেমন কোনো ব্যাপার নয়।আপনাদের সাইন হল??? প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড আমিটো সাইন করেই রেখেছিলাম।ডঃ ক্রিস্টেলের বাকি ছিল।এই বলে অনুপমার সাথে হ্যান্ডসেক করতে যায় ডেনিম।
অনু হ্যান্ডসেকও করে।অনু জিজ্ঞেস করে কিট্টিকে ডেকে ডেনিমের আপ্যায়ণে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা।
কিট্টিকে কিছু বলতে না দিয়েই ডেনিম উত্তর করে।
“ওহ্ ইয়েস ডঃ ক্রিস্টেল।আমার কোনো প্রবলেমই হয়নি।ইউ মেড ইজ ভেরি গুড।এই বলে তার কোর্টের পকেট থেকে একটা ছোট্ট শিশি বের করে মুখে ঢালল।
এই কথায় অনুপমা বলল ‘থ্যাঙ্ক ইউ।সি ইজ ভেরি শাইফুল মাইন্ডেড।
এই অ্যালকোহল ছাড়া ডেনিম থাকতে পারে না।সে নিয়েই থাকে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর।অনেক সময় বেশি বোটল ক্যারি করা যায় না।সেকারণে গন্ধ শুঁকেই তাকে নেশাগ্রস্ত হতে হয়।কিট্টিকেও সে এই নেশা ধরানোর চেষ্টা করেছিল।সে মূহুর্তে সে ফেলিওর ছিল।
অনুপমার “সি ইজ ভেরি শাইফুল মাইন্ডেড”এই কথাটা ডেনিমের ভালো লাগলেও কিট্টির ভালো লাগেনি।তবে কিট্টি এইসব সহ্যে অভ্যস্থ ছিল ।অনু তাকে দয়া করুক এটা কিট্টি চাইত না।আর কিট্টিও এই ব্যাপারে অনুকে কোনো কথা বলেনি।অনেক বই যে অনু লিখেছে তাও নয় এই তার প্রথম বই।কিট্টির অভ্যস্থ হওয়ার পিছনে ছিল তার প্রাক্তন প্রেমিক গিজ।গিজের সাথে লিভ টুগেদার করত কিট্টি।এইসব ব্যাপার অনু জানে।তবে মনে রাখার আর প্রয়োজন বোধ করে না।কিট্টিও আর এই নিয়ে কোনো কথা বাড়ায় নি কোনোদিন।লিভ ইনে থাকার সময় কিট্টিকে গিজ আংটিও পরায়।সেই আংটি আজও কিট্টির হাতে আছে।গিজ যে কতগুলো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে সেটা কিট্টি জানে।
অনুপমা যে একজন বিজনেস ম্যানের বউ।বিজনেসের সব ফাইল অনুপমার সাইন ছাড়া চলে না।মার্গারেট,ডেনিম এরা ডেভিড আর অনুপমার বিজনেস পার্টনারও বটে।ডেনিমের মত মানুষদের জৈবিক প্রবৃত্তি এই কিট্টিরাই তো মিটিয়ে আসে।তবে এই কিট্টি একটু অন্য ধরনের।সে ডেনিমের কাছে যাবে কিন্তু ধরা দেবে না।কিট্টি আর অনুপমা একে অপরকে যতটা বোঝে ততটাও বোধহয় অনুর হাজব্যান্ডও অনুকে চেনে না।
অনু কিট্টিকে নিয়েই ডেনিমের বাড়ি যাবে এই ব্যাপারটা এঁনারা চার জনেই জানত।ডেনিম কিট্টিকে একরকম অর্ডার করার মতই সকলের সামনে বলে ডঃ ক্রিস্টেলের সাথে যাওয়ার পরে ডেনিমের সাথে তাকে কনট্র্যাক্টে সাইন করতে হবে।
অনু এই কথায় হতবম্ব হয়ে যায়।সে ভেবে পায়না।এরপর সে কি বলবে !!! অনু কিট্টিকে ছাড়া থাকেনা।এদিকে বিজনেসের ফাইলে ডিল সাইন হয়ে গেছে।অনু এক মূহুর্তের জন্যও ভেঙে পড়েনি।সে জানত পরিস্থিতি সামাল দিতে একমাত্র কিট্টিই পারবে।প্রয়োজনে কিট্টিকে কি করতে হবে কিট্টিরও অজানা ছিল না।কিট্টিও ‘ইয়েস’ বলে দেয়।কিট্টির এই কথায় ডেনিম তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে – “ইউ আর ভেরি স্মার্ট।আই লাইক ইউ।”
পঞ্চম পর্ব
লরেন্সের বাড়ি
‘দ্য রুট অফ ন্যাশানাল হাইওয়ে।’ কিট্টির প্রথম ডায়েরি।কিট্টি এখন দিল্লিতে।সেই ঘটনার একমাস পর কিট্টি দিল্লিতে চলে আসে।সেখানে লরেন্সের সাথে তার দেখা হয়ে যায়।কিট্টি খবর পায় গিজ আর এথেন্সে নেই।সে এখন দিল্লিতে আছে।গিজের খোঁজে কিট্টি চলে আসে দিল্লিতে।দিল্লিতে গিজকে সে খুঁজে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।শেষ পর্যন্ত তার আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে ‘লরেন্স হাউস’।লরেন্সের সাথে দেখা হওয়ার পর কিট্টি লরেন্সের সাথে অনুপমার মিল খুঁজে পেত।সেই প্রথম অনুপমার সাথে সে মিলিয়ে দেখত কোথাও একটা সাদৃশ্য আছে অনুপমার সাথে লরেন্সের।প্রায় ছয়মাসের মাথায় খুঁজে পায় লরেন্স আর প্রশান্তের সহযোগিতায় গিজকে।এরপর প্রায় দু’মাসের মত কিট্টি ‘লরেন্স হাউস’-এ গিজকে নিয়ে থাকে।ওখানে থাকাকালীন লরেন্সের সাথে আলাপচারিতায় কিট্টি বলে ফেলে অনুপমার কথা।অনুপমার কথা বলায় প্রথমে লরেন্স অতটাও বুঝে উঠতে পারে নি যে,এ কোন অনুপমা ??? ভেবেছিল হবে কোনো অনুপমা।এথেন্স তো এতবড় একটা শহর।সেখানে কি আর কিট্টি প্রশান্তের অনুপমাকে খুঁজে পাবে??? কথায় – কথায় কিট্টি অনুপমার আত্মীয়দের প্রসঙ্গকেও টেনে আনে।এইভাবে অনুর সম্পর্কে লরেন্স প্রায় সবটা না হলেও কিছুটা জানতে পারে।আর বুঝতে পারে যে এ সেই অনুপমা!!! প্রশান্তের অনুপমা।ইমফ্যাচুয়েশন আর লাভ এই দুয়ের মধ্যে কিছুটা হলেও সূক্ষ্ম বিভেদ থেকে যায়।অনুকে প্রশান্তর ভালো লাগত।সেই থেকে সুপ্ত ভালোবাসার সূত্রপাত ঘটে বলা যেতে পারে।কিন্তু লরেন্সকে প্রশান্ত যে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সেখানে কি ভালোলাগার ব্যাপারটা থেকে করেছিল?নাকি শুধুমাত্রই সেক্সুয়্যালিটি থেকে একটা বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধকরণ ঘটেছিল।এই প্রশ্ন আজও লরেন্সকে কুরে -কুরে খায়।
লরেন্সকে প্রশান্ত সব দিয়েছে।তার মন,শরীর এমনকি দিল্লীতে লরেন্সের নামে একটা বাড়ি পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছে।তবুও কোথাও একটা কিছু না থাকা ব্যাপারটা লরেন্সের কাছে থেকেই গেছে।
অনুপমা ছোট গল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
ভরুয়া
উদ্বর্তিনী
নীলবাস্প