একা অণুগল্প – শ্যামশ্রী সরদার
ট্রেনে বসে হাঁপ ছাড়ে প্রতিমা। মোবাইলটা দেখে। নাইট ছিল, কাল। একটা মিসড কল, লাল রঙের। জল খেয়ে শান্ত হয়ে হাত ঠেকায় লাল হয়ে যাওয়া নম্বরের গায়ে। ওদিকের ভারি গলাটা তার পছন্দের। নীহারের সাথে ট্রেনেই আলাপ। ভাসতে ভাসতে ক্লান্ত লাগলে যে ভেলায় উঠে হাত পা ছড়িয়ে বসা যায়, মনের কথা বলা যায়, রাগ হলে বেশ দুকথা শুনিয়ে দেওয়া যায়… এই গলার মালিক, নীহার বিশ্বাস,সেই ভেলা। তবে লক ডাউন নতুন করে জীবন চিনিয়েছে। একটা জায়গায় মানুষ একা, এক্কেবারে একা। কিছু না থাকলে হারানোর কিছু থাকে না। এই যে কাজ বন্ধ হল, তারা মা ছেলে কোনরকমে বেঁচে রইল তো। কত মানুষ অক্সিজেনের অভাবে, হাসপাতালে বেডের অভাবে মারা গেল, সে বেঁচে রইল ছেলেকে নিয়ে। এই যে ফোনের ওপাশের মানুষটার সাহায্য সে সময় সে ফিরিয়ে দিল,তাতে প্রতিমার দায় থাকল না কারোর প্রতি। একলা জীবনকে সে ভালোবেসে ফেলল।নীহার বন্ধু হয়ে থাক, আর কিছু না।কারোর উপর ভর দিয়ে চলা আর পারবে না সে। “কাল রাতে ফোন করেছিলে?”
” হুম, ধরলে না তো”
” ঘুমিয়ে পড়েছিলাম গো। বলো।’
” আজ পার্লার যাবে না?”
” হুম”
“আমি তোমাকে যে কথা বলেছিলাম, ভাবলে কিছু?”
” অনেক ভাবলাম। আমি আর নতুন করে বিয়ে শাদি করব না গো। ছেলে বড় হচ্ছে। ওকেই পড়াশোনা শেখাব, মানুষ করব। আমি ছাড়া কে আছে ওর?”
” আমি আছি। আমরা দুজনে ওকে মানুষ করব।’
” না গো, আর ওসব হয়না। বন্ধু হয়ে থেকো “
ফোন কাটে প্রতিমা। জানলায় মাথা রাখে। নীহার কে সে কিছুতেই বলতে পারবে না, তার কাজের জায়গা, পার্লার কাম বিউটি স্পা তে কাস্টমার কমে যাওয়ায় লক ডাউনের পর রাতের ডিউটি বেশি আসছে। না নিলে চাকরি থাকবে না। রাতের পুরুষ কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করাই তার কাজ এখন। ছেলের জন্য, সংসারের জন্য সে এটা করছে। নীহারের জানারও দরকার নেই, হাত ধরারও দরকার নেই।
সারা রাতের ধকল, ঝিমুনি আসে। হাত ধরে, ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল তার ছেলের বাবা। প্রতিমা এখন একাই সমুদ্র স্নান করে, স্বপ্নে। একাই বাড়িতে তালা দিয়ে চাবি রাখে নিজের কাছে।
একা অণুগল্প – সমাপ্তি
আপনাদের লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে জমা দিতে গেলে, অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা-জমা-দিন মেনু-তে ক্লিক করুন ও নিজেকে Author হিসেবে Register করুন এবং আমাদের পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
দমকা হাওয়ায়
চা বাগানের জালিয়াত
পথশিশু