ঝিঙ্গে ফিঙ্গে কবিতা – রানা জামান
বাজটাকে তেড়ে আসতে দেখে মোটেই ভয় পাচ্ছে না ফিঙ্গেটা। ও জানে ওকে দেখতে পেলে উল্টো লেজ গুটিয়ে পালাবে বাজটা। বরাবর এমনটাই হয়ে আসছে। তবু বাজগুলো তেড়ে আসে ফিঙ্গে দেখলেই। বাজটা চলে এসেছে কাছাকাছি। ফিঙ্গেটা আড়াল থেকে বের হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাজের উপর।
ফিঙ্গেটাকে নিচে পড়তে দেখে প্রফেসর মাসুদ বললেন, কিরে ঝিঙ্গে, আবার স্বপ্ন দেখছিলি? কত যে বাজ মারলি স্বপ্নে!
ঝিঙ্গে নামের ফিঙ্গে এক ঝটকায় পাখা ঝাপটা দিয়ে কক্ষটায় এক পাক উড়াল দিয়ে বসলো এসে চেয়ারের হাতলে। ফের একবার পাখা ঝাপটে বললো, তুমি আমাকে অনুমতি দাও প্রফেসর একটা বাজকে থাপ্পড় মেরে আসি!
তোকে নিয়ে হলো এই এক মুস্কিল! খালি মারামারি করতে চাস! সেজন্য তোকে ঘুম পারিয়ে রাখি। তুই ঘুমে গিয়েও স্বপ্নে মারামারি করিস! তোকে নিয়ে আমি কী করবো বলতে পারিস?
তুমি দিনে একবার বাজের সাথে মারামারির চান্স দাও, তাহলে আর স্বপ্নে মারামারি করবো না।
দিনে একবার মারামারির ব্যবস্থা করতে হলে আমাকে তোর মারামারি এরেঞ্জ করতেই ব্যস্ত থাকতে হবে! আমার আর কাজ আছে না?
তাহলে কী করতে বলো তুমি প্রফেসর?
সপ্তাহে একদিন। রাজি হলে ব্যবস্থা করবো, না হলে তুই তোর রাস্তা মাপ!
না না! ঠিক আছে! তোমার প্রস্তাবই ওকে। যে দৈনিক মারামারি করে, সে ভদ্র থাকে না! প্রথম মারামারিটা আজ হলে তোমার কোনো সমস্যা হবে প্রফেসর?
প্রফেসর মুখটিপে হেসে বললেন, এখন কোথায় গেলে বাজ পাওয়া যাবে বল্।
তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই প্রফেসর। আমাকে বাড়ির বাইরে যাবার ব্যবস্থা করে দাও। তুমি কী করেছো আমার শরীরে যে আমি বাড়ির বাইরে গেলেই পাখা দুটো অবস হয়ে আসে!
সেটা রহস্যই থাক। তুই আমার হাতে এসে বস। আমি তোকে বাইরে যাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সময় একঘন্টা।
ঝিঙ্গে ফিঙ্গে ছোট্ট উড়াল দিয়ে প্রফেসর মাসুদের ডান বাহুতে বসলো। প্রফেসর ঝিঙ্গেকে হাতের তালুতে বসিয়ে দুটো পাখায় বিশেষভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, এবার যা।
ঝিঙ্গে ফিঙ্গে টুক করে প্রফেসর মাসুদের কপালে চঞ্চুটা ছুঁইয়ে দিলো উড়াল। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে একটু থমকালো। এখন পাখা অবস হচ্ছে না! খুশিতে লম্বা উড়াল দিলো ফিঙ্গেটা। উড়ছে ফিঙ্গে উড়ছে। অনেক উঁচুতে তাকাচ্ছে আশেপাশে। খুঁজছে শিকার অর্থাৎ বাজপাখি। চোখে পড়ছে না। মনে মনে ভাবছে ঝিঙ্গে ফিঙ্গে: বাজ পাখি এক্সটিঙ্ক্ট হয়ে গেলো? এতো তাড়াতাড়ি! উপরে তাকিয়ে ওর থেকে অনেক অ-নে-ক উঁচুতে একটা বাজকে পাখা মেলে ভেসে থাকতে দেখতে পেলো। কিন্তু একি! আরো উঁচুতে উঠতে সাহস পাচ্ছে না ও। তাকিয়ে দেখে ইতোমধ্যে ও নেমে এসেছে অনেক নিচে। নিস্তেজ হয়ে ঝিঙ্গে একটা গাছের ডালে গিয়ে বসলো চুপচাপ। মনটা খারাপ হয়েছে বেশ ওর। এতোদিন বাড়িটা থেকে বের হয়ে বাজের কাছেই যেতে পারলো না!
একটা বন্য ফিঙ্গে ওকে দেখে এগিয়ে এলো। মুখোমুখি একটা ডালে বসে বললো, আমার নাম ফাইটার। তোমার নাম কী ফ্রেন্ড?
ঝিঙ্গে বললো, আমার নাম ঝিঙ্গে।
বাহ! সুন্দর নাম তো! শাকসবজির নামও রাখা যায় জানা ছিলো না! এখন থেকে আমার নাম দিলাম পটল।
পটল নাম নিও না!
কেনো? ওটাতে দোষ কী?
বাংলায় একটা বাগধারা আছে-পটল তোলা। যার অর্থ মারা যাওয়া। কেউ যদি তোমাকে বলে-এই পটলা, পটল তোল! তখন তোমার কেমন লাগবে?
ভালো লাগবে না! তাহলে তুমিই আমার নামটা ঠিক করে দাও ফ্রেন্ড।
ঢেঁড়স নামটা কেমন লাগে তোমার?
ঢেঁড়স?! ভালোই লাগছে! তাহলে এখন থেকে আমার নামাকরণ হলো ঢেঁড়স। এবার বলো ঝিঙ্গে ফ্রেন্ড, তুমি চুপচাপ এখানে বসে আছো কেনো?
ঝিঙ্গে একবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, বহুদিন পর আজ বের হলাম বাসা থেকে। বাজ খুঁজতে উপরে উঠার পর দেখি আর উঠতে পারছি না এবং কিভাবে নিচে নেমে এসেছি বুঝতেই পারলাম না।
ঢেঁড়স বিস্মিত হয়ে বললো, কী বলছো তুমি! এতোদিন তুমি ছিলে কোথায়?
এক পাগল বিজ্ঞানির বাসায়। কিভাবে ওখানে গিয়েছি বলতে পারবো না। শুনেছি উনি আমাকে মূমুর্ষ অবস্থা থেকে সুস্থ করে তুলেছেন।
দাঁড়াও, আমি তোমার পাখা দুটো দেখি।
ঢেঁড়স ঝিঙ্গের কাছে এসে বসলো। চঞ্চু দিয়ে নেড়ে ঝিঙ্গের পাখা দুটো ভালো করে পরখ করে বললো, সমস্যাটা চোখে ধরা পড়ছে না। তবে একটা সমস্যা আছে। এটা তোমার ঐ বিজ্ঞানি ছাড়া আর কেউ সারাতে পারবে না।
তুমি ওর কাছেই ফিরে যাও ঝিঙ্গে ফ্রেন্ড।
ঝিঙ্গে ঢেঁড়সের পুচ্ছতে একবার পুচ্ছ স্পর্শ করে উড়াল দিলো। উড়ার গতি অনেক ধীরে। ইচ্ছে করলে একটা শিশুও ওকে ধরে ফেলতে পারবে!
ঝিঙ্গে বাসায় ঢুকতেই প্রফেসর মাসুদ জিজ্ঞেস করলেন, কী হে ঝিঙ্গে! কেমন হলো তোর বাজ পেটানো?
ঝিঙ্গে চঞ্চু ফুলিয়ে বললো, তুমি এখনই আমার টৃটমেন্ট শুরু করো!
বেশ তো আছিস! তোর আবার কী হলো?
আমার কী হয়েছে মানে? আমি তো শেষ!
ক্ষোভ প্রকাশের দরকার নেই। কী হয়েছে খুলে বল।
কত আগ্রহ করে গেলাম বাজ তাড়াতে। কিন্তু বেশি উপরে উঠতে পারলাম না। যা-ও একটু উপরে উঠেছিলাম, তা থেকে কখন নিচে গেলাম টেরই পেলাম না। আমার ডানায় শক্তি নেই প্রফেসর। তুমি কী করেছো আমার ডানায় প্রফেসর?
তোমার ডানায় কোনো সমস্যা নেই। কিছুদিন রেগুলার ব্যায়াম করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু আমার ডানা এমন হলো কেনো?
তোর তো ডানাই ছিলো না!
আমার ডানা ছিলো না মানে? সব খুলে বলো আমাকে।
তোকে নদীর ধারে মারাত্মক আহত অবস্থায় পাই। তোর পাখা দুটো ছিলো কাটা। কিভাবে তোর পাখা কাটা গিয়েছিলো তুই বলতে পারিস নি। তোর স্মৃতি ভ্রষ্টও হয়েছে।
কী বলছো প্রফেসর! তাহলে এই ডানা?
আমার ল্যাবে তোর ডানা গজিয়েছি। অনেক দিন সময় নিয়েছে ডানা দুটো গজাতে। নতুন ডানা বিধায় এখনো উড়ায় প্রফেশনাল হয়ে উঠেনি। অনেক চেষ্টা করেও তোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারিনি। সরি ফর দিস!
এখন আমার ডানার কী হবে প্রফেসর? এভাবেই উড়ে যাবো মুরগীর চেয়ে একটু উপরে একটু বেশি গতিতে!
এক্সারসাইজ করতে হবে। সেজন্য একজন ইনস্ট্রাক্টর রাখতে হবে। ডোন্ট অরি। আমি ব্যবস্থা করছি।
রাতে সম্পাদকের সাথে কথা বলে একজন ইনস্ট্রাক্টর চেয়ে বিজ্ঞপ্তিটা পাঠিয়ে দিলেন প্রফেসর মাসুদ পত্রিকা অফিসে। সম্পাদক বিজ্ঞপ্তিটা পেয়ে সম্পাদনা করে ছাপিয়ে দিলো নিজ পত্রিকায়। সম্পাদক যথারীতি বিজ্ঞপ্তি থেকে ঝিঙ্গে ফিঙ্গে শব্দ দুটো বাদ দেয়ায় পরদিন প্রফেসর মাসুদের বাসার সামনে যত বেকার ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ছিলো ঐ শহরে, সবাই সিভি হাতে নিয়ে সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ঝিঙ্গে ফিঙ্গে কবিতা – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
নবমীর শেষরাত