অতৃপ্ত মাতৃত্ব ছোটগল্প – সুপর্ণা আচার্য্য চক্রবর্ত্তী
গ্রামটির নাম শিমুলতলা। গ্রামটি বেশ জনবসতিপূর্ণ। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবি গ্রামটির পরিবেশে ভীষণ ভালো।গ্রামের জমিদার শ্রীযুক্ত দেব শংকর রায় চৌধুরী বেশ ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তিনি গ্রামের লোকেদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে থাকতেন, যেমন কারো মেয়ের বিয়ের জন্য অর্থসাহায্য আবার কারো জমিতে বীজ রোপণের অর্থ ইত্যাদি ইত্যাদি, মাঝে মাঝে আবার খাজনা মুকুবও করে দিতেন তিনি। জমিদার দেব শংকর এর তিন পুত্র এবং এক কন্যা। তারা সকলেই বিবাহিত, জমিদার মশায়এর ছোট ছেলের ছেলে মানে তার ছোট নাতি তার বড় আদরের ছিল; সে যেন তার প্রাণ ভোমরা, আদর করে তাকে মানিক বলে ডাকতেন। মাত্র বছর দুয়েকের মানিককে নিয়ে তার সারাটা দিন কেটে যেত, তার কাজের অর্ধেকটা জুড়ে ছিল মানিক ; এভাবেই চলতে থাকে বেশ কয়েকবছর, এখন মানিক প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য সে বিলেত যায় এবং সে যাবার পর জমিদার মশায় একাকী বোধ করতেন।
অবশ্য করবে নাইবা কেন? যাইহোক এর বছর তিনেক পর মানিক লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে ফিরে আসে; মানিককে কাছে পেয়ে জমিদারবাবু আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। মানিকের বাড়ি ফেরার আনন্দে তিনি গ্রামের লোকেদের মিষ্টি বিতরণ করেন।
অবশেষে জমিদার মশায় নাতির বিয়ে দিতে তৎপর হয়ে পড়েন। এদিকে নাতি দাদু কে বিবাহে অসম্মতি দিতে পারেনা। অবশেষে একরকম দাদুর জোরাজুরিতেই পাশের গ্রামের জমিদার মহেন্দ্র প্রতাপ এর কন্যা স্নেহলতার সাথে মানিকের বিবাহ হয়। এদিকে মানিকের মনের কথা মনেই রয়ে যায় আর নববধূর অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে লিসাকে সে ভুলে যায়।
লিসা হলো মানিকের প্রেমিকা মানিকের সাথে আলাপ তার বিদেশেই যখন সে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিদেশে যায় সেখানে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মানিক লিসাকে কথা দিয়েছিল সে ফিরে আসবে আর লিসাও মানিকের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে।
কিন্তু মানিকের না ফেরায় সে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত মানিকের গ্রাম শিমুলতলায় চলে আসে সেখানে পৌঁছে সে মানিকের বাড়ির খোঁজ করে, সবকিছু যে তার কাছে নতুন অচেনা কিছুই জানেনা সে তার ব্যাপারে শুধু মানিকের গ্রামের নাম আর তার দাদুর নাম কিন্তু তাও সে দাদুর নাম এখন মনে করতে পারছে না।
এদিকে লিসার কথাবাত্রা পোশাক-আশাক চালচলন এসব নিয়ে গ্রামের লোকের মধ্যে কৌতূহল বেধে যায়। সেই সময় জমিদার মশাইয়ের নায়েব সেই পথ দিয়ে যেতে গিয়ে গ্রামের রাস্তায় ভিড় দেখে সেখানে উঁকি দিতেই তিনি দেখলেন যে মহিলা পশ্চিমি পোশাক পরিহিত সম্ভবত অন্তঃসত্ত্বা। নায়েবমশাইকে দেখে গ্রামের লোকেরা নায়েবমশাইকে সব বলেন। নায়েব লিসাকে জিজ্ঞাসা করলেন,” কোথায় যাবে মা ,কার বাড়ি এসেছ তুমি” উত্তরে লিসা বলে,”মাই নেম ইজ লিসা এন্ড আই এম কামিং ফরম লন্ডন টু ভিজিট মাই বয় ফ্রেন্ড,” তখন নায়েবমশাই বলেন “হু ইজ ইউর বয়ফ্রেন্ড”। লিসা বলল “হিজ নেম ইজ মিস্টার রুপেন্দ্র রয়চৌধুরি” এই নাম শুনে অবাকহয়ে গেলেন এবং জমিদার মশায়ের কাছে লিসাকে নিয়ে গেলেন ।এসব কথা শুনে জমিদারের পায়ের তলার মাটি সরে গেল কিন্তু তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না, অবশেষে জমিদার মশায় এর একটি উপায় বের করলেন তিনি ওই মেয়েটিকে জমিদারের অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা করলেন মেয়েটিও থাকতে রাজি হয়ে যায়।
জমিদারের তত্ত্বাবধানে লিসা বেশ ভালই আছে তার খাবার-দাবার আদর আপ্যায়ন এর কোনো ত্রুটি যেন না হয় সেদিকে জমিদার মশায় নিজে খেয়াল রাখতেন। প্রথম প্রথম বেশ ভালই লাগছিল, ভালভাবেই কাটছিল তার দিনগুলো। সবই ঠিক আছে কিন্তু রুপেন্দ্র কে কেন দেখতে পাচ্ছে না সে, দাদু কেন রুপেন্দ্রর সাথে তার দেখা করাচ্ছেন না এটা নিয়ে তার মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে।
দু-তিনদিন হয়ে গেল সে এসেছে অথচ রুপেন্দ্র একবারও তার সাথে দেখা করতে এলো না। লিসা ভাবল দাদু এলে দাদুকে এসে জিজ্ঞাসা করবে ইতিমধ্যে দাদু এলেন তার খবর নিতে তখন রুপেন্দ্র কথা জিজ্ঞাসা করে কিন্তু জমিদারদের শংকর কিছুই না বলে কথা এড়িয়ে যান।
যতদিন না লিসার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় ততোদিন সে এখানেই থাকবে এমনটাই জমিদারবাবুর ইচ্ছে আর মানিককে তিনি জমিদারির কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে তাকে সর্বদা ব্যস্ত করে রাখেন।
নতুন বউয়ের আগমনের খবর পেয়ে, জমিদারবাবুর গুরুদেব একদিন আসেন নতুন বউ মাকে দেখতে এবং তাঁকে আশীর্বাদ করতে। নাত বউকে দেখেই তিনি ভীষণ চিন্তিত হয়ে তাকে বললেন “তোমার জীবনে বড় ঝড় ঘনিয়ে আসছে, সামনে তোমার বড় বিপদ সাবধানে থেকো মা তোমায় একটি ফুল দিচ্ছি ,এটি সর্বদা তুমি তোমার কাছে রাখবে।” স্নেহলতা বলল-‘আচ্ছা গুরুদেব ‘এই বলে সে অন্তঃপুরে চলে গেল গুরুদেবের একথায় নতুন বউ খুব একটা গুরুত্ব দিলো না এবং হাসির ছলে ফুলটা সে রেখে দিল। অপরদিকে রুপেন্দ্র কে না দেখতে পেয়ে লিসা মরিয়া হয়ে ওঠে এবং তাকে একপলক দেখার জন্য জান-প্রাণ ছটফট করে ওঠে।
অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও কোন কাজ হয়না জমিদার দেবশঙ্করের মনে দাগ কাটে না। লিসা ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে দেশে ফিরে যাবে, এদিকে স্নেহলতা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে সারাদিন ধরে তার ভীষণ বমি ও প্রচণ্ড জ্বর হয় ডাক্তার ডাকলে তিনি জানান নতুন বউ মার পেটের ব্যামো হয়েছে এবং সারতে সময় লাগবে।
এভাবে কি মোটামুটি কিছুদিন সব ঠিকই চলছিল এবার লিসার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। জমিদারবাবু নতুন বৌমার অসুখকে সকলের কাছে তার মা হবার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রদর্শন করেন ঠিক তার সপ্তাহখানেক পর লিসা এক ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। ছোট্ট শিশুটির মধ্যে তিনি তার নাতি মানিককে খুঁজে পান, আজ তিনি খুব খুশি কিন্তু তিনি মনে মনে ভাবেন লিসা বেঁচে থাকলে তার এই খুশি আর খুশি থাকবে না।
এই পুত্র সন্তান তো তার, ওর শরীরে জমিদার বংশের রক্ত বইছে। এই শিশু তার, লিসা তার কেউ নয়, সুতরাং লিসা কে বাঁচতে দেওয়া যাবে না তাই একদিন রাতের অন্ধকারে খাবারে বিষ মিশিয়ে লিসাকে হত্যা করেন জমিদার মশাই ও এই পাপ কাজে তার সহযোগী ছিল তার নায়েব।
জমিদার ও নায়েব ষড়যন্ত্র করে লিজা কে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহটি তাদের পাশের বাগানে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। যাতে ঘুনাক্ষরেও কেউ এ কথা জানতে না পারে আর শিশুটিকে স্নেহলতার কাছে নিয়ে যায় এবং শিশুটিকে তার নিজের সন্তান ভেবে লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়। স্নেহলতা ছোট্ট শিশুটিকে পেয়ে খুব খুশি সে আর কোন প্রশ্ন না করে শিশুটিকে কোলে তুলে নিল ঠিক তখনই আচমকা কোন কারণ ছাড়াই তার ঘরের আলো নিভে গেল এবং একটা দমকা হাওয়া এসে নতুন বউ মার ঘরের সব জিনিস ভেঙে চুরমার করে দিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবাই ব্যাপারটি এড়িয়ে যায় কিন্তু এরপর থেকে ঘুরতে থাকে বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক সব ঘটনা।
বাড়ির মধ্যে কেউ যেন ঘুরে বেড়ায়। কারো গভীর আর্তনাদ। মনে হয় যেন কেউ তার কোন জিনিস কেড়ে নিয়েছে। রাত হলেই চারিদিক কেমন যেন থমথমে হয়ে যায়, বাড়ির দরজায় কে যেন ঘা দেয় গভীর রাতে।
আবার কখনোবা জমিদার মশায় নাম ধরে কেউ ডাকে ক্রুদ্ধস্বরে। এসব কিছু কারো চক্ষু এড়ায় না। যখনই খোকন সোনার খাবার সময়, খিদের জ্বালায় কাঁদে তখনই কোত্থেকে খাওয়া চলে আসে স্নেহলতা এসব কিছুই বুঝতে পারে না একদিন ছোট্ট সোনা দুধ বিড়াল খেয়ে নেয় রান্নাঘর থেকে, খোকন সোনা খিদের জ্বালায় কাঁদতে থাকে। ঠিক তার পরের দিন সকালে দেখা যায় বিড়ালটিকে যেন কেউ ঘাড় মটকে মেরে ফেলেছে বিড়ালটি সারা শরীরে অজস্র নখের আঁচড়।
রক্তাক্ত শরীরটাকে কে যেন খুবলে খুবলে মাংস তুলে নিয়েছে এসব ঘটনা দেখে নতুন বউ জ্ঞান হারায় এবং তার ছোট সোনার জন্য আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
সকলে মিলে ধরাধরি করে তাকে ঘরে নিয়ে যায় কিছুক্ষণ পরে তার জ্ঞান ফেরে কিন্তু জমিদারবাবু এসব কিছুই বুঝতে পারে না এটা কি হচ্ছে ; কোথায় এমন ঘটনা তো আগে কখনো ঘটেনি তবে ……এভাবে প্রতিদিন একের পর এক নানা ঘটনা ঘটতে থাকে ।কখনো দেখা যায় রান্নাঘরে হঠাৎ করে উনুন জ্বলছে আবার কখনো বা রান্নাঘর বাসনপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জমিদারবাড়ির এসব কথা চাউর হতে খুব একটা দেরি হল না ফলে প্রাণভয় এক এক করে সব চাকর বাকরেরা পালিয়ে যায়।
একদিন রাতে স্নেহলতা ঘরে তার ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়েছিল, তার স্বামী মানে মানিককে তখন জমিদারীর কাজে শহরে যেতে হয়েছে হঠাৎ তার মনে হলো কেউ যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং অঝোর নয়নে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
নতুন বউ জিজ্ঞাসা করল কে…. কে তুমি?? কেন এসেছ এখানে?? কিন্তু সামনের সেই ছায়ামূর্তি কোন উত্তর না দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আবার স্নেহলতা অনুভব করলো কেউ যেন তার ঘরে পায়চারি করছে আর কাঁদছে। নতুন বৌমা আলো জ্বালতেই … কোথায় কেউ তো নেই তবে কি সে স্বপ্ন দেখেছে না এসব তার মনের ভুল?
একদিন নতুন বউ স্নান করতে গেছে খোকা ঘরে একা ঘুমোচ্ছিল হঠাৎ করে কান্নার শব্দ শোনা গেল নতুন বউ দেখল তার ছেলে একা একা হাসছে যেন ওর সাথে কেউ কথা বলছে। এসব কথা জমিদারবাবুর কানেও পৌঁছোয় কিন্তু তিনি কোনো গুরুত্বই দেন না, রাতে কে যেন ঘরে এসো নতুন বউকে বলে, ‘তুমি আমার ছেলেকে ফিরাইয়া দাও’ নতুন বউ বললো কেন? তখন লিসা বলল যে এই সন্তানটি তার ।নতুন বউয়ের বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে ওঠে এরই মধ্যে আবার হঠাৎ সিড়ি থেকে পড়ে যান জমিদারমশাই এবং তার বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যায়। এ সবকিছুই স্বাভাবিক ব্যাপার নয় সেটা স্নেহলতার বুঝতে সময় লাগলো না।
সে তখনই গুরুদেবের দেওয়া ফুলটি তার ছেলের মাথার কাছে রেখে দেয়। এদিকে জমিদার মশায় তার অদৃষ্টকে দোষারোপ করতে থাকেন কিন্তু কিইবা করার.. এ যে তার কৃতকর্মের ফল এবার ঘটল এক বিরাট অঘটন, সেদিন রাতে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বিদ্যুতের ঝলকানি তার মধ্যে কি যেন দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যুতের ঝলকানিতে তা আরো স্পষ্ট।সে দেখলো একটি মেয়ে পশ্চিমি পোশাক পরিহিত, চুল গুলো উস্কখুস্ক ,চোখের মনি সাদা,গাল থেকে ফেনা বেরোচ্ছে,দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, স্নেহলতা জিজ্ঞাসা করলো তুমি কি চাইছো আমার থেকে? কেন ভয় দেখাচ্ছো আমায়?
লিসার আত্মা বলল “আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দাও”
নতুন বউ বলল ‘তোমার সন্তান’ ‘/তোমার সন্তান মানে?
হ্যাঁ ও আমার ছেলে, জমিদার দেবশঙ্কর আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে এবং আমার সন্তানটিকে তোমায় দিয়ে দিয়েছে। আর আমি হলাম সেই হতভাগা নারী যে কিনা তার সন্তানকে বুকের দুধ অবধি খাওয়াতে পারেনি, তাকে স্পর্শও করতে পারেনি।
আর সবশেষে বলি আমি হচ্ছি সেই নারী যে কিনা তোমার স্বামীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছে।
স্নেহলতা জিজ্ঞাসা করে “আমি তোমার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছিনা তুমি পরিষ্কার করে বল” তখন লিসা বলে যে সে মানিকের প্রাক্তন প্রেমিকা বিলেতে পড়তে গিয়ে তাদের আলাপ এবং সে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে আর তাকে ফিরে পাওয়ার আশা দিয়ে মানিক দেশে ফিরে আসে। তার জন্য চিন্তাগ্রস্থ হয়ে সেখানে আসে আর তার সাথে ঘটে এই নির্মম অত্যাচার। তার বাচ্চাটিকে একটিবার দেখার জন্য তাকে একটিবার স্পর্শ করার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাই তার আত্মা শান্তি পাচ্ছে না।
তার বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য সে তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে আগলে রাখছে। একথা শুনে নতুন বউ আর
চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। সে বলে “তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার পাশে আছি আমি তোমার সাহায্য করবো।” পরের দিন মানিক শহর থেকে ফেরে,
নতুন বউ লিসাকে বলে এবার মানিক ও তার দাদুকে এই অন্যায়ের শাস্তি পেতেই হবে।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে মানিক ঘুমোতে যায় কিন্তু হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায় এবং প্রচণ্ড চিৎকার করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। চিৎকার শুনে নতুন বউ দৌড়ে আসে এবং জিজ্ঞাসা করলে মানিক বলে যে সে বাজে স্বপ্ন দেখেছে, একটি মেয়ে এলোমেলো চুল এবং তার মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে এবং বলছে সে কেন তার সাথে বেইমানি করল ? কেন মেরে ফেলল। নতুন বউ জিজ্ঞাসা করল কে? কে সে? চিনতে পারছ কি তাকে ? উত্তরে মানিক বলল হ্যাঁ মুখটা যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে আমার তবে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না।
হঠাৎই একদমকা হাওয়া এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল মানিক কে। সেদিন রাতে মানিক যখন ঘুমোচ্ছিল তখন লিসা ঘরে এলো এবং বলল রূপেন্দ্র আমায় চিনতে পারছো না? রুপেন্দ্র নামটি শুনে মানিক খাট ধরে উঠে পড়লো এবং দেখল যে তার সামনে লিসা দাঁড়িয়ে। লিসাকে দেখে মানিক অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। বলল “তুমি এখানে কবে এলে? কেমন আছো তুমি?”
লিসা এর কোন উত্তর না দিয়ে সোজা তার গলা টিপে ধরল আর বলল “তোমার জন্য আমার মৃত্যু হয়েছে আমি মৃত। আমার সন্তানের জন্য আমার আত্মা শান্তি পাচ্ছেনা।আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তুমি তোমার দাদু। তোমাদের আমি ছাড়বো না। এই শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে। তখন নতুন বউ লিসার হাতে-পায়ে ধরল ও স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইলো এবং শেষ পর্যন্ত লিসা তাদের ছেড়ে দিলো।
মানিক তখন ক্ষমা চাইলো আর এক অপরাধী লিসার হত্যাকারী জমিদার মশায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং বাগানের পেছন থেকে লিসার দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর রূপেন্দ্র ও স্নেহলতা দুজনে মিলে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে ও তার আত্মা শান্তি লাভ করে।
অতৃপ্ত মাতৃত্ব ছোটগল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
বসন্ত ফেরে