গড় মান্দারণ – সুমিতা নন্দী দে
দ্বাদশ শ্রেণীতে যখন পড়তাম, তখন আমাদের স্কুল থেকে ভূগোল বিভাগ থেকে একজায়গায় excursion-এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জায়গাটির নাম গড় মান্দারণ, এটি হুগলী জেলার অন্তর্গত।
আমাদের স্কুল থেকেই বাসটি ছেড়েছিল, সকাল ৭টায়। আমরা মোট ২৬ জন ছাত্র – ছাত্রী, ৫ জন শিক্ষক – শিক্ষিকা , ১ জন রাধুনী ও ১ জন হেল্পার মিলে গিয়েছিলাম। বাস যখন পৌঁছালো তখন ঘড়িতে ১০.৩০মিনিট বাজলো, একটা পিচ রাস্তার ধারে গাড়িটা থামলো। আমরা সবাই নেবে একটি সরু লাল মাটির রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলাম, সামনে একটা লোহার গেট, তার পাশে একটা টিকিট কাউন্টার। একজন শিক্ষকমশাই টিকিট কাটলেন, তবেই আমরা গেটের ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি পেলাম।
প্রায় ২০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই গড় মান্দারণ, যদিও ৫৪ বিঘা জমি এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে পরে। জায়গাটির বেশ খানিকটা অংশে পাঁচিল দেওয়া আছে। বড়ো বড়ো সবুজ ঘাসের ঢিবি রয়েছে এবং তার মধ্যে লম্বা লম্বা গাছ রয়েছে। আমরা একটা সমান জায়গা দেখে চট, শতরঞ্চি বিছিয়ে বসলাম, যদিও আমরা সবাই বাসের মধ্যেই টিফিন খেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সবাই একটু ক্লান্ত ছিলাম বলে একটু বিশ্রাম নিয়েনিলাম।
৩০ মিনিট বিশ্রামের পর, আমরা সবাই শিক্ষকমশাইদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম excursion এর কাজে। কিছু দূর হাঁটার পর দেখলাম একটা উঁচু জায়গা এবং সিঁড়ি আছে, আমরা সেই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। তারপর দেখলাম একটি কবর রয়েছে সেখানে, আর একজন মৌলবী, তিনি আমাদের সেই স্থান সমন্ধে কিছু তথ্য দিলেন, বললেন ” এই দূর্গটি মোঘল আমলে। শত্রুদের হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য এই দূর্গটি মোঘল আমলে তৈরী করা হয়। তার পাশ দিয়ে ক্ষুদ্রকায় আমোদর নদীকে কৌশলে পরিবর্তন করে পরিখা নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরো এলাকা জুড়ে এখনও বড়ো বড়ো ধ্বংসের স্তূপ দেখা যায়”। এই থেকেই এই অঞ্চলের নাম গড় মান্দারণ। আবার অনেকে বলেন এখানের মাদারি গাছের নাম অনুসারে জায়গাটির নাম গড় মান্দারণ। তিনি আরো বললেন এই সমাধিটা গৌড়াধি হোসেন শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজীর সমাধি। তবে এখন এই সমাধিটা গ্রামবাসীর কাছে পীরবাবা নামে পরিচিত।
এছাড়া আরো বললেন, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রচট্টোপাধ্যায় – এর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস “দূর্গেশনন্দিনী ” তে এই গড়ের অর্থাৎ গড় মান্দারণের উল্লেখ আছে। গল্পটি হল ওড়িশা পাঠানদের দ্বারা বিষ্ণুপুর রাজের সহিত সংযুক্ত গড় মান্দারণের দূর্গের রাজা বীরেন্দ্র সিং এর আক্রমণ ও দখলের আশপাশের গল্পকে কেন্দ্র করে। মোঘল জেনারেল মানসিং-এর পুত্র জগৎ সিং পাঠানদের প্রশবন করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেছিল। জগৎ শেঠ রাজা বীরেন্দ্র সিং-এর সুন্দরী কন্যা তিলোত্তমার প্রেমে পড়ে যান। পরে অবশ্য পাঠানরা দূর্গটি দখল করেছিলেন এবং রাজা বীরেন্দ্র সিংকে হত্যা করেছিলেন।
গড়ের ভিতরে একটা ছোটো জায়গায় কাঁটাতারের ঘেরা রয়েছে তার মধ্যে দুটি হরিণ বিচরণ করছে। এছাড়াও ছোটদের জন্য উদ্যান আছে। আর একজায়গায় বিভিন্ন রকমের পাখি, ফুলের বাগান আছে, আবার একজায়গায় দুটি ময়ূর খাঁচার ভিতর রাখা আছে। আবার একটা জলাশয় আছে। এই জায়গাটি খুবই সুন্দর আর শান্ত, যেনো প্রকৃতির ভীষণ কাছে আমরা রয়েছি।
আমরা গড় মান্দারণের পাশের গ্রামেও গিয়েছিলাম excursion এর কাজের জন্য। সেখানকার মাটির বাড়ি গুলো প্রায় দুতলা, আবার তিনতলাও আছে। তারপর ঘুরে ফিরলাম যখন, তখন প্রায় ২টো বেজে গেছে। আমাদের সবার জন্য রান্না করা হয়েছিল ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, মাছের কারী ও চাটনি। তারপর সবার খেয়ে দেয়ে উঠতে প্রায় ৩.৩০ মিনিট বেজে গেল, আর একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম ৪টের পর। খুবই ভালো লেগেছিল সেই দিনটা।
হাওড়া স্টেশন থেকেও গড় মান্দারণে আসা যায়। হাওড়া থেকে গোঘাট লোকাল ধরে, গোঘাট স্টেশনে নেমে মারুতি omni/ Toto করেও যাওয়া যায়।
গড় মান্দারণ সমাপ্তি – সুমিতা নন্দী দে
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন| এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
অদৃশ্য সৈকত চাঁদিপুর
পরবাসী টুসুর দেশে
কুমায়ুন পর্বতের উপত্যকা