নবমীর শেষরাত ছোট গল্প – সাহানা হাজরা
আজ নবমীর শেষ রাত।শেষ রাত আর এক জনের জীবনেও।সেদিন যে এমন একটা রাত আসতে পারে তণ্বী বোধহয় কল্পনাও করতে পারেনি।ভয়ানক সেই রাত আজ তণ্বী ভাবলেই তার শরীর শিউড়ে ওঠে।সেদিন তণ্বীর ঘরে তণ্বী একা গানের একটা সুর সে কিছুতেই তুলতে পারছিল না। ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতে তণ্বীর ধারেকাছে কেউ আসতে পারত না।এই নিয়ে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রায়ই সুরের লড়াই লাগত।কখনও তণ্বী জিতত, আর কোনোদিন শ্রাবন্তী।তণ্বী কোনোদিনও হার মেনে নেয়নি শ্রাবন্তীর কাছে।দুজনেই একই জায়গায় গানের তালিম দিতে যেত।ঠুংরির লড়াইয়ে প্রতিবার শ্রাবন্তীর কাছে হেরে যেত।তবুও সে থেমে যায়নি।তণ্বীর বাবা একজন নামকরা গায়ক।তণ্বী তার বাবার কাছেই বেশীর ভাগ তালিমটা নিয়ে নিত।সেই রাতে তণ্বী তার বাবাকে রাতের খাবার দিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার আগে বাবাকে বলে – “বাবা আমি আজকে আর তালিম নেব না।আমি একাই তালিম নেব।” তণ্বীর বাবার একটা সখ হল প্রতি রাতে রবি ঠাকুরের গান শোনা।গান না শুনে তিনি ঘুমোতেন না।ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতের পাশাপাশি রবি ঠাকুর কে তিনি ভুলে যেতে পারেন না। প্রত্যেকদিনের মতই তণ্বী ঘরে ধূপ জ্বালিয়ে,একটা ক্ল্যাসিক্যাল গান রেডিওতে চালাতে গেলে তণ্বীর বাবা থামিয়ে দেন।
সুপ্রতিমবাবু বলেন – “তণ্বী মা আজ আমি চিরপরিচিত একটা গান শুনতে চাই। যে গান টা সকলে জানে।”
তণ্বী জিজ্ঞেস করে – “কোন্ গান বাবা?” সুপ্রতিমবাবু বলেন – ” সেই যে গানটা, যেটা তোকে প্রথমবার শিখিয়েছিলাম।” রবি ঠাকুরের যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙল ঝড়ে। “তোর মনে নেই?”(সচকিত ভাবে তণ্বীর দিকে তাকিয়ে)।তণ্বী বলে – হ্যাঁ বাবা মনে আছে।
তণ্বীও সুর দিল – সব যে কালো হয়ে গেল…..
তণ্বী হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল – “কেনো বাবা? তুমি তো খুব অচেনা গান গুলোই বেশী শুনে থাকো। যেগুলো সকলের কাছে চেনাপরিচিত নয়। তাহলে আজ কেনো?”
সুপ্রতিমবাবু সঙ্গে – সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে বলেন – “আহঃ তণ্বী মা যা বলছি তাই কর্।” উনি বুঝতে পারছিলেন ওঁনার শরীর ভালো বোধ হচ্ছে না।খামোখা তণ্বীর ব্যাতীব্যস্ততা তিনি মেনে নিতে পারবেন না। বাবার কথামতো তণ্বী ঘরের দরজাটা ভিজিয়ে দিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়। ধূপের গন্ধে ম ‘ ম ‘ করছে সারাবাড়ি।আজ তণ্বী ঠুংরির তালিম শেষ করে তবে উঠবে। মেজাজটাও ভালো আছে।
রাত ১১ টা বেজে ৫ মিনিট।তণ্বী দৌড়ে যায় পাশের ঘরে।রেডিওয় গান চলতেই থাকে –
“চলে যাবি এই যদি তোর মনে থাকে
ডাকব না, ফিরে ডাকব না -“
সেই রাতে তণ্বীর জীবনে ঘনিয়ে আসে ঘোর অন্ধকার।তার কলিজা ছিঁড়ে রক্ত বের হয়ে আসার অপেক্ষা।এমনই রাত নেমে এল তণ্বীর জীবনে।তার বুকের পাঁজর গিয়েছিল, মনে হয়েছিল সে আর থাকবে না।চিরকালের জন্য সে সেই বাড়ি থেকে বিদায় নেবে।এমনই ভয়ার্ত আর্তনাদ ছিল তার।
মৃদু হাওয়া পর্দায় এসে ধাক্কা দিলে ভাসমান পর্দা যেমন শূন্যঘরে একটা নিঃসঙ্গ মানুষের একাকিত্বতাকে দূর করে। ঠিক তেমনই সেই রাতে তণ্বীর জীবনে নেমে এসেছিল একাকিত্বতা।যা তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। যেটা তণ্বী সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলে। তার বাবাকে।সেই প্রথমবার তণ্বী ঠুংরির তালিম একা শেষ করতে পেরেছিল।তণ্বী জিতেছিল।
নবমীর শেষরাত ছোট গল্প – সমাপ্তি
যে কেউ তাদের লেখা জমা দিতে চান। অনুগ্রহ করে আমাদের লেখা জমা দিন পৃষ্ঠায় জমা দিন এবং যারা লেখা জমা দিচ্ছেন। পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন।
অন্যান্য
বাংলার রূপের সাত সতেরো
সাগর দেখার স্বপ্ন
হঠাৎ